জ্বিন ধরতে হাঁটের আয়োজন! এক পিকুলিয়ার মানুষ, পর্ব-৪ (রোমাঞ্চকর কাহিনী)

লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ৩১ মার্চ, ২০১৪, ০৪:৪২:৫৭ বিকাল



বাংলায় হাট-বাজার বলে কথা আছে, ইংরেজিতে ও ‘হাট’ শব্দটির ব্যবহার আছে। মূলত: উপরে ছনের ছাউনি চারিদিকে খোলা অস্থায়ী ছোট ঘরকে ইংরেজিতে ‘হাট’ বলে। ছোটকালে গ্রামের হাট গুলো এভাবেই দেখেছি। ছন-বাঁশের অপ্রতুলতায় হাট এখন ইট দিয়েই বানানো হয়। সম্ভবত ইংরেজ শাসনামল থেকেই বাংলাদেশের হাট-বাজার শব্দগুলো বাংলা হিসেবেই ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে আমি যে হাঁটের কথা বলছি এটা সে ধরনের কোন ‘হাঁট’ নয়! এই হাঁট হল জ্বিন-ভূত-প্রেত, দৈত্য-ডাকিনী দৌড়ানোর এক মহা আয়োজনের নাম। একমাত্র ‘হাঁটের’ মাধ্যমেই উপরোক্ত অশুভ শক্তিকে চূড়ান্তভাবে পাকড়াও কিংবা বন্ধী করা যায়। একজন কিংবা কয়েকজন সম্মিলিত বৈদ্যের সমন্বয়ে হাঁট বসাতে হয়! বৈদ্য যদি জ্বিন-ভূতকে বন্ধী করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই জ্বিন চিরদিনের জন্য বৈদ্যের শত্রুতে পরিণত হয় এবং সেই দুষ্ট জ্বিনের দ্বারা অবিরত ক্ষতির মাধ্যমে বৈদ্যের জীবনাবসান হয়! দুনিয়ার নিয়ম হল ঝুঁকির কাজে টাকা বেশী! তাই দক্ষ বৈদ্যরা এই ধরনের ঝুঁকি নিতে অনেক টাকা দাবী করে। সুস্থ কিংবা অসুস্থ দুই ধরনের মানুষের জন্য দুই ভাবে হাঁট বসানো যায়। প্রথম পদ্ধতিটি জ্বিনে আক্রান্ত মানুষের জন্য প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে জ্বিনে আক্রান্ত অসুস্থ মানুষটিকে হাঁটের অনুষ্ঠানে রাখতে হয়। তারপর বৈদ্য বিশেষ পদ্ধতিতে তন্ত্র-মন্ত্র পড়ে দুষ্ট জ্বিনকে সেই অনুষ্ঠানে আসার জন্য আহবান করতে থাকে। অনুরোধ করে, প্রলোভন দেখায়। এতে ব্যর্থ হলে জোড় করে তাকে ধরে আনার চেষ্টা করা হয়! এখানে যেহেতু জোরাজুরির ব্যাপার আছে, সেহেতু তাকে ধরতে বড় কোন শক্তির সাহায্য নিতে হয়। অবাধ্য জ্বিনকে জোড় করে ধরে আনতে জ্বিনের রানী ‘মগধইশ্বরী’র সাহায্য নেওয়া হয়! বেয়াড়া জ্বিনকে বাধ্য করার জন্য ‘মগধইশ্বরীর’ রয়েছে প্রচণ্ড ক্ষমতা! তার সাহায্যে যে কোন জ্বিনকে বন্ধী করা সম্ভব! অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় কেন সে মানুষের উপর ভর করেছে? কি তার অভিলাষ? কিসের বিনিময়ে সে চলে যাবে, ইত্যাদি। এই ঘটনায় বৈদ্য নিজে মানুষ ও জ্বিনের মাঝে শর্ত পূরণের মধ্যস্থতা করে। শর্ত পূরণ হলে জ্বিন মানুষটিকে ছেড়ে চলে যায়! এই পুরো অনুষ্ঠানটির নাম ‘হাঁট’।

দ্বিতীয় পদ্ধতিটি সুস্থ রোগীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন কিছু মানুষের উপর সরাসরি জ্বিনের উপদ্রব-উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়না! এক কথায় বলতে গেলে যাকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে অসুস্থ মনে হয়না। ডাক্তার কবিরাজ যার কোন নির্দিষ্ট রোগ খুঁজে পায়না। তবে সাধারণ জনগণের কাছে ঐ ব্যক্তির কিছু আচরণ অসুস্থ কিংবা অদ্ভুত লাগে, তার জন্য দ্বিতীয় পদ্ধতির মাধ্যমে হাঁট বসাতে হয়। এই পদ্ধতিতে রোগ অজ্ঞাত থাকে, কোন জ্বিনে তাকে পাকড়াও সেটাও অজ্ঞাত থাকে। তাই ব্যক্তির সমস্যাটি যদি জ্বিনের কারণে ঘটে, তাহলে সেই জ্বিনের পরিচিতি, নাম-ধাম, ঠিকানা জানাটা দরকার হয়ে পড়ে। তার একটা বিহিত করতে কিংবা পরামর্শ নিতে জ্বিনদের রানী ‘মগধইশ্বরী’ কে হাজির করার প্রয়োজন হয়। তিনিই বলে দিবেন কোন জ্বিনের কারণে এটা ঘটছে, প্রয়োজনে খোদ রাণীই জ্বিন আসামীকে ধরে এনে হাজির করবে এবং সমস্যার একটি সুরাহা করবেন।

বলা বাহুল্য আমার সমস্যা ছিল এই ক্যাটাগরির অন্তর্গত! তাছাড়া এটা কোন যেন তেন ধরনের জ্বিন হাজিরা নয়! রীতিমত জ্বিনের রানী আসবে! তাই আয়োজন টা একটু রাজকীয় ধরনের হয়! মনে করিয়ে দেওয়া ভাল, হাঁট বসানোর শুরুতে, বৈদ্য একটা চেয়ার কিংবা উঁচু চৌকিতে আসন বানিয়ে নেন। দেখতে অনেকটা ছোট-খাট সিংহাসনের মত। ধুপ-আগরবাতি, সুঘ্রাণ-মোমবাতি, কাঁচা ফুল, হরেক রকম মূল, নানা রঙ্গের ফল, কিছু গোলাপ জল, সাত পুকুরের পানি, স্বর্ণ খচিত পান দানী, দিয়ে সুন্দর করে আসনটি সাজাতে হয়! এখানেই মগধইশ্বরী উপবেশন করবেন। তুলা রাশির একজন মানুষ তাদের নিজের মত করে পবিত্র হয়ে আসনের সামনে ধ্যানমগ্ন হয়ে বসবেন! বৈদ্য ধ্যানমগ্ন ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে তন্ত্র-মন্ত্র পড়তে থাকবেন। বৈদ্যের ভাষায় তুলারাশির এসব ব্যক্তিদের নাম হল ‘গাছা’। ধ্যানের এক পর্যায়ে জ্বিন-ভূত কিংবা তাদের রাণী এই ব্যক্তির উপর ভর বা আছর করবেন। তখন ভর করা মাত্র ধ্যান মগ্ন ব্যক্তির আচরণে বিরাট পরিবর্তন ঘটে এবং এই ব্যক্তির মুখ দিয়েই জ্বিন বা জ্বিনের রাণী সকল কথার উত্তর দিবেন। ধ্যানে সক্ষম তুলা রাশির এই মানুষ গুলোর যথেষ্ট কদর এবং পুরো অভিযানে তিনি একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ভুল বুঝবেন না! উপস্থিত মানুষেরা কিন্তু নিজের চোখে জ্বিন দেখতে পাবেনা! ধ্যানে বসার পরে একটা পর্যায়ে গেলেই জ্বিন ধ্যানমগ্ন মানুষটিকে দেখা দেন এবং তার সাথে কথা বলেন। বলা বাহুল্য, উপস্থিত মানুষ কিন্তু জ্বিনের কথার আওয়াজ শুনতে পাবেন না, কেননা তিনি আকার ইঙ্গিতে ধ্যান মগ্ন মানুষটির সাথে তথ্য বিনিময় করেন। সেজন্য ধ্যান মগ্ন মানুষটিকে হতে হয় অতীব আকলদার! কেননা আকলদার মানুষেরাই ইশারার ভাষা বুঝতে পারে। সেক্ষেত্রে বে-আকল মানুষ হলে জ্বিনের ইঙ্গিত বুঝতে ব্যর্থ হবে, ফলে সব প্রচেষ্টাই ভণ্ডুল হবে।

বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমার জন্য হাঁট বসাতে হবে। তাই বিভিন্ন বৈদ্যদের সাথে কথা বললেন। এক বৈদ্যের দাবী একেক ধরনের দাবী। এই কাজে বৈদ্য একাকী নয়, তার একটা লাট-বহর থাকে। যার বহর যত বড়, তার খ্যাতি তত বেশী! ফলে তার দাবীও তত অধিক। তাদের একজনের দাবী ছিল এমন, তিনি গাড়িতে চড়েন না, নৌকায় উঠেন না, ঘোড়াতেও বসেন না। সকল বদ জ্বিন তার শত্রু, অধিকতর নিরাপত্তার জন্য সে একপ্রকার লটকানো চৌকিতে চারজন মানুষের কাঁধে চড়ে চলাফেরা করে! ত্রিশ মাইল দূর থেকে তাকে এভাবে আনতে হবে আবার এভাবেই ফেরত পাঠাতে হবে। তার সকল লাট বহরকে প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানীয়, নিরাপত্তা দিতে হবে। বাবার পক্ষে এই লাট-বহর আনা সম্ভব নয় বলা হল। যাক, বাবার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার মূল্য হিসেবে মনোরঞ্জন বৈদ্য নিজেই এগিয়ে এলেন, তিনিই আমার জন্য হাঁট বসাবেন। শর্ত একটি! এই মহা আয়োজনের খরচ দিবেন আমার বাবা আর অনুষ্ঠান টি করতে হবে মনোরঞ্জন বৈদ্যের বাড়ীতে! মনোরঞ্জন বৈদ্যের বহু দিনের আকাঙ্ক্ষা মা 'মগধইশ্বরী' -কে একদিন তাদের বাড়িতে আনবেন! এর ফলে তাদের বাড়ি বিত্ত-ঐশ্বর্যের ভারে নুয়ে পড়বে! বহু দিনের আকাঙ্ক্ষা হৃদয়ে পোষণ করেছেন, অর্থ কড়ির অভাবে সেটা করতে পারেন নি। আমার বাবা যদি অর্থায়ন করেন তাহলে তিনিই ঝুঁকি টুকু নিতে রাজি আছেন। মনোরঞ্জন বৈদ্য জাতে হিন্দু এবং আমার ক্লাস মেট ‘অনু রানীর’ পিতা আর ‘রাধা রানীর’ চাচা! এই দুই ঝগড়াটে ছাত্রীর অত্যাচারে স্কুলে আমার ক্লাস ক্যাপ্টেনের কাজ করতে সমস্যা হয়। আর তাদের বাড়িতেই আমার চিকিৎসা হবে! দুই বজ্জাত ছাত্রীর কথা বাবাকে বললাম এবং বুঝালাম তারা আমার এসব গোপনীয় কথা দেশে দেশে করবে। বাবা আমাকে বললেন "তুমি নিজেই সেখানে অন্য দশজন দর্শকের মতই একজন হয়ে সেখানে থাকবে"। সেখানে তোমার কোন ভূমিকা নাই, ভয়ও নাই।

শনিবার গভীর রাত্রিতে অমাবস্যার নিকষ কালো অন্ধকারে মহা ধুমধামের সহিত হাঁট বসানো হল। পুরো হিন্দু বাড়ীতেই এক মহা আনন্দ। মহিলারা সবাই সুন্দর পরিষ্কার কাপড় পড়ে প্রস্তুত! সেই মাহেদ্রক্ষণের অপেক্ষায়, যখন মা মগধইশ্বরী আমার চিকিৎসার উছিলায় এই গ্রামে তাদের বাড়ীতে পা রাখবেন! ব্যক্তিগত উপকার হয়ত আমার হবে! তবে এই জনপদে জ্বিন রানীর পা পড়ার উছিলায়, সকলের ঘরে ঘরেও প্রাচুর্য ফিরবে, এই সুযোগ কে হাতছাড়া করে। এটাই তাদের প্রত্যাশা, এটাই তাদের মূল প্রাপ্য। তাই রানীকে সু-স্বাগতম জানাতে তাদের এই আগাম প্রস্তুতি। আমি বাবা, ভাই ও অন্যান্য আত্মীয় সহ হিন্দু বাড়িতে পৌছার আগেই সেখানে সব কিছু প্রস্তুত হয়েছিল এবং সবাই রাত্রি দ্বি-প্রহরের অপেক্ষায় ছিল। ততক্ষণে আমার তন্দ্রা এসে পড়েছিল, হঠাৎ কাঁসার ঝঙ্কার, সিঙ্গার ফুঁৎকার, মৃদঙ্গের আওয়াজ ও লুলু-ধ্বনির কোলাহলে সচকিত হয়ে উঠলাম! মুহূর্তেই তন্দ্রা পালিয়ে গেল, একদল মানুষ বৈদ্যের ইঙ্গিতে এক প্রকার আহবান মূলক গান শুরু করেছেন। তখন বুঝতে পারলাম এই লাইনেও শিল্পীর প্রয়োজন আছে! এক কবি ও সুরকার জারি গানের স্টাইলে গান শুরু করেছেন। সেই গান আর শেষ হয়না, জ্বিন হাজির করার অনুষ্ঠানের গানের কলিতে ও যে এত কথা, এত সুর দরকার, তা আগে জানা ছিলনা! কোন কবি এই বন্দনা সঙ্গীত বানিয়েছেন প্রশ্ন করে কোন উত্তর তো পেলাম না, বলা হল বেশী প্রশ্ন না করতে বরং আমাকে জানালো হল আজকের রাত্রিতে সবাই আমাকে প্রশ্ন করবেন? আর আমাকে সবার উত্তর দিতে হবে! অজানা জগতের এসব কথার কিছুই বুঝলাম না। ওদিকে ধ্যানে পড়া মানুষটিকে বৈদ্য মাঝে মধ্যে প্রশ্ন করতে থাকলেন আপনি কি কিছু দেখতে পাচ্ছেন? তার সাবলীল উত্তর অন্ধকার দেখছি। গান, খঞ্জনা, মৃদঙ্গ আরো জোড়ে বেজে উঠে। সাথে সাথে ধ্যানকারীও দুলতে থাকে। সবাই কিছু একটা অনুমান করার জন্য বারবার আমার দিকে তাকায়! রাত কতক্ষণ হয়েছে অনুমান করা কঠিন। তবে আহবান কারীদের আহবানে কোন ছেদ নাই, কবিতা তখনও শেষ হয়নি, ধ্যানকারী নেতিয়ে পড়ার পর্যায়ে কিন্তু তিনি কিছুই দেখছেন না! হঠাৎ ধ্যানকারী বলে বসলেন তিনি অনেক দূরে আলোর কিঞ্চিত ঝিলিক দেখতে পাচ্ছেন! বৈদ্য বললেন সেদিকে যাও। ধ্যানকারী আলোর উৎসের সন্ধানে যেতে রইলেন। তিনি যত সামনে যায় আলো আরো দূরে চলে যায়! এভাবে ধ্যানকারী অনেক দূর পর্যন্ত আলোর পিছনে ঘুরলেন অবশেষে তিনি কোন একজনের দেখা পেলেন। ধ্যানকারী তাকে ডাকলেন তবে তিনি ধরা দিতে রাজি নয়, তার বেজায় গোস্বা! তিনি ইঙ্গিতে বুঝাচ্ছেন, তাকে মানুষের কাছে আনার জন্য যত চেষ্টাই করা হোক সে আসবে না। ধ্যানকারী জানালেন মনে হচ্ছে, এই জ্বিনটি তাদের সম্প্রদায়ের মাঝে বহু বড় জ্ঞানী! ধ্যানকারীর উদ্দেশ্যে জ্বিনটি আকারে ইঙ্গিতে অনেক কিছু বলছেন, কিন্তু তিনি এসবে আগা-মাথা কিছুই বুঝছেন না। এভাবে কতক্ষণ চলল তার ঠিক নাই, এক পর্যায়ে ধ্যানকারী ঘেমে ভিজে গেলেন। তার অন্তরে ভয় ধরে গিয়েছে এই দীর্ঘ পথ তাকে আবার ফিরে আসতে হবে, কিভাবে ফিরবেন এই ভয় তাকে পেয়ে বসেছে। সোজা কথা জ্বিনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে তবে সেই বুদ্ধিমান জ্বিনকে ধরাটা কঠিন হবে।

বৈদ্য সিদ্ধান্ত পালটালেন! পুরো দলটি হঠাৎ আবেদন নিবেদনের পদ্ধতিতে হঠাৎ পরিবর্তন আনলেন! গান, সুর, তাল ও বাক্যে প্রয়োগের ধরণ পালটিয়ে ফেললেন। বৈদ্য ধ্যানকারীকে বললেন, তুমি যে যায়গায় আছ সেখানেই থাক, মা মগধইশ্বরীর কাছে নালিশ জানাতে হবে। সবাই সমবেত সূরে একতালে মগধইশ্বরীকে ডাকতে শুরু করলেন। মগধইশ্বরীকে ডাকতে কতটুক কাতর হওয়া লাগে, কত নীচে নামা লাগে গানের সুরে তার সবটাই প্রয়োগ করে যাচ্ছিল বৈদ্য ও তার দলবল। ওদিকে ধ্যানকারী এই বলে চিৎকার করেই চলছেন, তিনি অন্ধকারে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন! তার ভয় লাগছে! ফলে বৈদ্য মহাবান মন্ত্র পড়া শুরু করলেন। এই মহাবানের মাধ্যমে ‘মগধইশ্বরী’ জানতে পারেন, কেউ একজন গুরুতর সমস্যায় পড়েছেন। তার গুরুতর কাজ থাকলেও সেটাতে বিরতি দিয়ে হলেও ধ্যানকারীর আহবানে ছুটে আসেন। একপর্যায়ে ধ্যানকারী খুশিতে উত্তেজিত হয়ে বললেন, অনেক সঙ্গী-সাথী নিয়া এক রমণী তার দিকে আসিতেছেন। এই নারীর মত অতীব সুন্দরী কাউকে তিনি অতীতে দেখেন নাই।

কিন্তু একি! তিনি তো অন্যদিকে হাঁটা ধরেছেন! বৈদ্য চিল্লায়ে বললেন ব্যাটা করলি কি! পথ আগলে ধর। অনুনয় করে বল টিপুর সমস্যা হয়েছে, এ থেকে রক্ষার উপায় জানতে, তাদের দেওয়া আসনে যেন একটি মুহূর্তের জন্য বসে। রাণীকে রাজী করাতে অনেক লম্বা কাহিনী ও ঘটনা প্রবাহের এক পর্যায়ে অগত্যা রানী ধ্যানকারীর অনুরোধে, বৈদ্যের অনুনয়ে রানীর জন্য আসন পাতা বাড়িতে আসলেন। তিনি বাড়িতে এসেছেন কিন্তু ঘরে না ঢুকে ঘরের বাহিরে একটি পেয়ারা গাছের উপর বসলেন! মুহূর্তেই পুরো পরিবেশ টাই ভূতুরে আকার ধারণ করল। উপস্থিত কারো মুখে কোন কথা নাই, ধ্যানকারী অবিরাম এক প্রকারের আচরণের মাধ্যমে ঢুলতে থাকলেন। বাহিরে ঝুপ ঝাপ ধরণের কিছু একটার আওয়াজ শোনা গেল। গাছ নড়া চড়ার আওয়াজ বলে মনে হল। এখন রাত্রির কোন প্রহর চলছে অনুমান করা গেলনা। ধারণা করলাম নিশুতি রাতের মাঝামাঝি তো হবেই। ঠিক সেই মুহূর্তে অনেক মহিলার লূ লূ ধ্বনি উঠল। বুঝতেই পারি নাই গভীর রাত্রিকে বাড়ির ভিতরে এত মহিলার আগমন ঘটল কখন! বুঝলাম রানীর আগমন প্রতীক্ষায় সারারাত ধরে তারা নির্ঘুম অপেক্ষায় ছিল। তাদের লুলু ধ্বনী শেষ হল। রানীকে ঘরে আসার অনুরোধ করা হল। কিন্তু কি এক কারণে রাণী ঘরে না ঢুকার জন্য বেঁকে বসলেন! অনেক প্রচেষ্টার পরে জানা গলে, সিংহাসনে যথাযথ জিনিষ উপস্থিত করা হয়নি বলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। রোগীর জন্য প্রশ্নের উত্তর তো বাদ! সিংহাসনে কাঁচা হলুদ রাখা হয়নি কেন সেই প্রশ্নের উত্তর আগে জানতে চাইলেন! ঠিকই তো! এত জিনিষের মাঝে কাঁচা হলুদ নাই। মহিলারা যে যার মত নিজেদের ঘরে দৌঁড়ালেন! এতজনের ঘরে কাঁচা হলুদ তো দূরের কথা, নিশুতি রাতে কারো ঘরে এক চামচ গুড়ো হলুদ পর্যন্ত পাওয়া গেলনা। রানী বেজায় গোস্বা হলেন, তিনি কোন কথা না বলে চলে গেলেন। এই ব্যর্থতায় ধ্যানকারী বেহুশ হলেন, বৈদ্য বেজার হলেন, আমার বাবা হতাশ হলেন, মহিলাদের কেউ কেউ কাঁদলেন, পুরো প্রক্রিয়াটি এভাবে ভণ্ডুল হবার জন্য আমার ভাগ্যের উপর দোষ চাপালেন। বৈদ্য নিপুণ হাতে লিস্ট করে, প্রতিটি আইটেম সঠিক ভাবে কেন আনে নাই, এই প্রশ্ন সবার অগোচরে অজ্ঞাত রয়েই গেল। চলবে..........

আগের পোষ্ট জ্বিনের ফাজলামী বন্ধে সুন্দর শাহের সিলায় গমন: পাঠ-৩ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

প্রথম পোষ্ট: এক পিকুলিয়ার মানুষ! (রোমাঞ্চকার কাহিনী- ভূমিকা পর্ব)

বিষয়: বিবিধ

২০৬৩ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

200871
৩১ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:১৫
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন : আপনারে ধ্যানে বসানো উচিত ছিল তাহরে জ্বীনের কথাগুলো হু ব হু শুনতে পেতাম। আহারে কি জিনিস যে মিস করলাম।
ধন্যবাদ।
৩১ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৭
150576
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অন্যত্র আমি ধ্যানে বসেছিলাম, তবে আমার ধ্যানে কাজ হয়নি। ধ্যানের আগ্রহ ছিল, যথেষ্ট অধ্যয়ন করেছিলাম। পত্রের মাধ্যমে শহীদ আল বুখারী তথা মহাজাতক সাহেবে জানালে তিনি প্রশিক্ষণ নেবার জন্য উপদেশ দেন।

তখনও দেশে মেডিটেশন কোর্স গুলো চালু হয়নি। ৯০ দশকের শেষ দিকে মেডিটেশন করার প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়তে থাকে। আমি অন্য কারণে প্রশিক্ষণ শালায় গিয়ে মেডিটেশন করিনি। অনেক ধন্যবাদ।
200899
৩১ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বাপরে!!!
আমার এক আত্মিয় এর বাড়িতে এরকম একজন মহিলা ছিলেন। তিনি মুসলিম। সেখানে ঢোল বাজিয়ে গান করে জ্বিন আহবান করা হতো। তবে আমরা কেউ ওখানে উপস্থিত থাকলে নাকি জ্বিন আসতনা। কারন আমরা অবিশ্বাসি বা নাপাক!
মগধেশ্বরি যে জ্বিনের রানি সেটা জানতামনা। পটিয়ার মগধেশ্বরি মন্দিরটার খ্যাতি জানতাম পাঁঠি বলির জন্য। সৈয়দ মুজতাবার আলির এক লেখায় পড়েছি পাঁঠা কাটে পাঁঠি নাচে,পাঁঠা বলে তোর জন্য মগধেশ্বরি আছে।
৩১ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৭
150603
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ, জ্বিন কে মুসলমানেরা বিশ্বাস করলেও হিন্দু কিংবা মুসরিকেরা ভূত, প্রেত, যোগিনী, ডাকিনী বিভিন্ন নামে অভিহিত করে। মগধঈশ্বরী মূলত জ্বিনের রানীকে বুঝিয়ে থাকে। অনেক জায়গায় হিন্দুরা মগধঈশ্বরীর নামে মন্দির বানায়, যেমনটি আপনিও বলেছেন।

এই মন্দির গুলো হবার ভিন্ন ভিন্ন গাঁথা পাওয়া যায়। যেমন একটি মন্দির বানাবার শর্তে জ্বিন কোন মানুষ থেকে তার আছর তুলে নেবার শর্ত দেয়।

যাক সামনের অধ্যায়গুলোতে এই ব্যাপারগুলো পরিষ্কার হবে। ভৌতিক বিষয় জানতে কারো আগ্রহ কম থাকে কাউকে পেয়ে বসে। যেমনটি আমার হয়েছিল।
200930
৩১ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৩
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : জ্বিনের অস্থিত্বের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু জ্বির হাজির করার প্রশ্নে নানা রকমের গোঁজামিল দেখা যায় বিভিন্ন সময়।
০১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:৫৩
150845
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : গোঁজামিলই হল এই ব্যবসার মূল পূঁজি আসল অমিল। অনেক ধন্যবাদ।
200948
৩১ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩১
গেরিলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:৫৪
150846
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : ইতিবাচক মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
200968
৩১ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৪
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। এক নিশ্বাসে পড়লাম । মনে হছ্ছিল আপনার সাথে আমিও বসে আছি।
০১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:৫৫
150847
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনি পড়ার সময় মন ধ্যান চিন্তা একমুখি রাখতে পারেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। অনেকেই তা পারেনা, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
০১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:১৯
150874
সিকদারর লিখেছেন : ভুল বললেন এটা আপনার লেখনীর যোগ্যতা । আপনাদের গুনি লেখকরা এই ভাবেই পাঠকদের আটকে ফেলে তার লেখার জগতে ।Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
০১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:২৬
150878
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : বদ্যন্যতা আপনাকে অনেক বড় ও মর্যাদাবান করবে। আপনার প্রতিউত্তরে জন্য আবারো ধন্যবাদ।
200970
৩১ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৮
শেখের পোলা লিখেছেন : অপেক্ষায় থাকলাম৷ জ্বীনের রাণী দেখার শখ আমারও কম নয়৷
০১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:৫৫
150849
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সামনের দিনগুলোতে হয়ত দেখাও হয়ে যেতে পারে। ধন্যবাদ।
206740
১২ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১১:৫৭
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : মগধইশ্বরীকে ডাকতে কতটুক কাতর হওয়া লাগে, কত নীচে নামা লাগে গানের সুরে তার সবটাই প্রয়োগ করে যাচ্ছিল বৈদ্য ও তার দলবল।- এতটা কাতর যদি আমরা আল্লাহর সামনে হতাম তাহলে অনেক অনেক বেশি লাভ হত Thinking Thinking
১৩ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:২১
155463
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ আমার লিখা থেকে আমাকে কোটেশন দেবার জন্য।
১৩ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:৫১
155485
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : কোটেশনের পর মন্তব্য আছে, আপনি সম্ভবত দেখেননি।
১৩ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:০৫
155507
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আমি ধরে নিয়েছিলাম সেটাও আমার লিখার অংশ বিশেষ!

একবার চিন্তাও করছিলাম আমিতো বর্ণনা ধর্মী লিখতে যাচ্ছিলাম, মন্তব্যতো কোথাও করেছি বলে মনে পড়েনা! তলিয়ে দেখলে হয়ত বুঝা যেত, আবারো অসংখ্য ধন্যবাদ।
208045
১৫ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:২০
নেহায়েৎ লিখেছেন : দেরীতে পড়লাম ভাইয়া। শিরকী কান্ড কারখানা মনে হইতাছে!? গ্রামে জ্বীন ছাড়ানো টুকটাক আমিও দেখেছি। আমাদের এলাকায় এক পীর আছেন উনি এইসব কাজ করেন।
১৫ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:২২
156720
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : এই সব কিছুকে চিকিৎসা মনে করে মানুষ ব্যাপক ভাবে প্রতারিত হয়। আমি এমন তিন জনকে জানি, যারা শুধু তাবিজ বিক্রি করে আট তলা, ছয় তলা ভবনের মালীক বনেছেন। সম্পদের মালীক হয়েছন এমন বহুজনকে চিনি।
218162
০৬ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৪
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : এসব কারবার গ্রামের সবচেয়ে শিক্ষিত পরিবারে হতে দেখছি। অনেক কিছু মনে পড়ে গেল। যতটুকু পর্ব শেষ হয়েছে অনুগ্রহ পূর্বক পরের পর্বের লিঙ্ক দিয়ে দিবেন যাতে ১ম থেকে যারা শুরু করে আমার মত অলসরা সহজে পড়তে পারে।
০৬ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৪০
166236
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : দেখা যাবে সময় করে লিঙ্ক দিয়ে দিব।
১০
264708
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১১:১৪
আফরা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ ।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:১৮
208478
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
১১
305901
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:১৪
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : এত জিনিষের মাঝে কাঁচা হলুদ নাই !!!! হা হা হা ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File