কন্যাকে ছেলের সমান উত্তরাধিকার দান! এটা সুবিচার তো নয়ই বরং পুরুষের প্রতি ভয়ানক অবিচার!
লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ০৯ মার্চ, ২০১৪, ০৬:২৭:৫৪ সন্ধ্যা
পিতার জীবনে পুত্র যত ভূমিকা রাখে কন্যার পক্ষে তার সমান ভূমিকা রাখা সম্ভবপর হয়ন; এই আধুনিক যুগেও সম্ভবপর হয়ে উঠেনি। অথচ পুত্রের সমান ভূমিকা না রাখার পরও কন্যাকে ছেলেদের সমান উত্তরাধিকারী বানানো পুরুষের প্রতি শুধু জুলুম নয় বরং ইতিহাসের নিষ্ঠুর নির্যাতনের সমান!
ছেলেরাই পিতার বিপদে আপদে বেশী ভূমিকা রাখে:
দেখুন, পিতা-মাতার বিপদে প্রথমেই ছেলের অর্জিত অর্থ কাজে আসে। পিতার মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলেই পিতার রেখে যাওয়া ঋণের দায়িত্ব নেয়! পিতার মৃত্যুকালে তার কোন অছিয়ত তথা মৃত্যু-পরবর্তীতে বাস্তবায়ন করতে হবে এমন কিছুর ওয়াদা থাকলে তা একমাত্র ছেলেদের কেই বলে যায়। ছেলে না হলে নাতীকে দায়িত্ব দিয়ে যায় তবু এই দায়িত্ব কন্যার উপর রেখে যায় না। পিতা যতই অর্থশালী হোক, শারীরিক বিপদে পড়লে একজন প্রকৃত মুসলিম সন্তান তার নিজের অর্থ দিয়েই, পিতা-মাতার সেবা করতে উৎসাহী হয়। পিতার মৃত্যুর পর পিতার নাবালক ছেলে-মেয়েদেরকে দেখা শোনার জন্য নিজের বড় ছেলেদের জিম্মায় রাখা হয়। মা নিজেও কখনও মেয়ের বাড়ীতে গিয়ে উঠে না। সকল মায়েরা ছেলের সাথে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং এবং ছেলের আয় থেকেই কন্যাকে উপহার পাঠাতে চেষ্টা করে! কখনও কখনও বোনেরা নিজের ছেলে তথা ভাগিনার জন্য পর্যন্ত ভাই থেকে সুযোগ আদায় করে নেয়। পিতার অবর্তমানে মা তার যাবতীয় অভাব, অনুরোধ, আপত্তি, অভিমান ছেলের সাথেই করে থাকেন। ছেলে পারুক কিংবা না পারুক মায়ের আবদার বোনের অভিলাষ পূরণে সর্বদা চেষ্টা করে থাকে।
কন্যারা পিতার বিপদে ঝুঁকি, আপদে ভার নিতে পারেনা:
বিপরীতে কন্যা পিতার কাঁধের উপর চড়ে ২০ বছর পার করল কোন প্রকার অনুদান ব্যতিরেকে। যখন সে কন্যা স্বাবলম্বী হয়, তখন স্বামীর হাত ধরে অপরের ঘরে চলে যায়। কন্যা বিয়ের পরে স্বামীর ঘরে যাবার পরে পিতা ও ভ্রাতা দু জনেই ঋণের জালে আবদ্ধ হয়! যখন পিতা ও ভ্রাতা কন্যার বিয়ের জন্য করা ঋণ পরিশোধে ব্যস্ত সময় কাটায় সেই একই সময়ে কন্যা স্বামীর সংসারের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যায়। যে কন্যার জন্য করা ঋণ পিতা ভাই পরিশোধে মনোযোগ দেয়, সেই কন্যা তখন পিতার দুরবস্থার অংশীদার হতে পারেনা। ভাইয়ের সমান কোন কাজে পিতার সাথে অংশীদার না হয়েও পিতার মৃত্যুর পর যদি ভাইয়ের সমান সুযোগ দাবী করে এটা হবে পুত্রের জন্য জুলুম! আর কন্যা যা পাবে সেটা হবে অবিচারের মাধ্যমে হস্তগত। এটা কোন অবস্থাতেই উত্তম বণ্টন রীতি হতে পারেনা। লাভ যদি সমান পাইতে হয় তাহলে শ্রমও সমান দিতে হবে এটাই তো পৃথিবীর রীতি।
কন্যারা ছেলেদের মত দায়িত্ব নিতে গেলে কি সমস্যা হবে:
কোন কন্যা বিয়ে করে স্বামীর ঘরে যেতে পারবেনা। তাকেও তার ভাইদের মত পিতা-মাতার মৃত্যু পর্যন্ত কাছে থাকতে হবে। পিতা-মাতার যাবতীয় কাজে ঠিক ছেলেদের মতো সাহায্য, প্রয়োজনীয় সেবা, সহযোগিতা দিতে হবে। কেননা ছেলেরা চিরদিন পিতা-মাতার দুঃখে দুর্দশায় কাছে থাকে। যেহেতু মেয়েরাও ছেলের সম্পদের অংশীদার হবে, তাহলে কন্যাদের পুরোপুরি ছেলেদের মত দায়িত্ব নিতে হবে। পিতার টাকায় ভর না করে ছেলেদের মতো কন্যারাও স্বাবলম্বী হয়ে বিয়ে করতে হবে। ছেলেরা আয় রোজগার করে তার বৃহৎ একটা অংশ পিতার হাতে তুলে দেন। পিতা সন্তানের টাকা নিজের সম্পদের সাথে মিশিয়ে আরো বাড়িয়ে তুলেন যাতে করে ছেলে পিতার অবর্তমানে অর্থের অভাবে কষ্টে না পড়েন। সে হিসেবে মেয়েরাও চাকুরী-ব্যবসা করে অর্জিত অর্থ পিতাকে দিতে হবে। কোন অবস্থাতেই তার স্বামীর সংসারের জন্য খরচ করতে পারবেনা।
কন্যা আয় করে স্বামীকে নয় পিতাকে দেয়াই বাঞ্চনীয়:
যদি কন্যা পিতাকে তার আয় করা অর্থ না দেয় এবং ছেলেই শুধু পিতার সাথে; তাহলে পিতার ব্যবসায়ে ছেলের লগ্নি করা পূঁজির টাকা পিতার মৃত্যুর পর, বিনা পূঁজিতে বোনের পকেটে চলে যাবে; এটা হবে চরম অন্যায়। ছেলেরা সর্বদা পিতার সাথে তার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। পিতার কর্মস্থান সচল রাখে, রুটি-রোজগারের চাকা সচল রাখেন। দেশের একজন কৃষক তার ছেলেকে নিয়ে, হাল চাষ, ধান কাটা ও বহন করা, নৌকা টানা, মাছ ধরার কাজ করে। ব্যবসায়ী, চায়ের দোকান, লেদ মেশিন ওয়ার্কশপ, সুতার মিস্ত্রি, ঠেলা গাড়ী, গাছ কাটা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে ছেলেকে সাথে রাখেন। সেই হিসেবে, যেহেতু মেয়েরা ভাইয়ের অর্ধেক সম্পত্তির ভাগীদার হবেন, সেহেতু মেয়েরা মায়ের সাথে ঘরের ভেতরে না থেকে, ছেলে যে পরিমাণ সহযোগিতা পিতাকে দিয়েছে, কন্যারাও অনুরূপ অর্থনৈতিক সুবিধা পিতাকে পাইয়ে দিতে তার পাশে মাঠে, ঘাটে, ক্ষেত, খামারে থাকতে হবে। নতুবা, ছেলে শারীরিক কঠোর শ্রম দিয়ে যে পরিমাণ ভাগ পাবে, মেয়ে ঘরে মধ্যে বসে থেকেই তার সমান ভাগ ভাগিয়ে নিবে! এই নীতি শুধু চরম অন্যায় নয়, একপেশে ও হঠকারিতাও বটে। ফলে ন্যায় বণ্টনের অভাবে, কোন ভাই নিজের স্বার্থের কারণে, কোন বোনের অস্তিত্বকে হুমকি মনে করবে।
উপসংহার:
উপরের কথাগুলো কুড়াল দিয়ে কোপানোর মত সোজা লাইনের যুক্তি হিসেবে বলেছি নিশ্চয়ই বোনদের প্রতি ঘৃণার কারণে নয়। তাছাড়া ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন নারীরা ভাইয়ের সম্পদের সমান চেয়ে আন্দোলন করছে না। যারা করছে, তাদের কাছে ইসলাম সমর্পকে কোন জ্ঞান নাই। আছে শুধু, ইসলাম সম্পর্কে একরাশ হিংসা; যার কারণে তারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ইসলামের ভুল ভ্রান্তি তালাশ করে। মূলত মেয়েদের কে ২০ বছরের মধ্যে স্বামীর বাড়ীতেই যেতে হয়। বরং ঐ বয়সে তাদের পিতার বাড়ীতে থাকতে চাওয়া অন্যায়! স্বামীর ঘরে তাদের ভূমিকা পুরুষের মত না হলেও, সেটা পুরুষের চেয়ে কম নয়! মেয়েদেরকে এই গুরু দায়িত্ব পিতার ঘরে নয়, বরং স্বামীর ঘরেই পালন করতে হয়। নতুবা এই সমাজ ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে। সে কারণে আল্লাহ নিজেও তাদের উপর পিতা মাতার ভরন পোষণের দায়িত্ব দেননি। তারা তাদের মত করে স্বামীর সংসারে আপন হয়ে যাবে, সেখানে আরেকটি নতুন সংসারের উৎপত্তি হবে। যেহেতু পিতা-মাতার বিপদে, আপদে, প্রয়োজনে তাদের ভূমিকা রাখার দরকার পড়েনা এবং যেহেতু পিতার কাছে ছোটকালে কিছুদিনের জন্য হলেও; তাদের সেবা-যত্ন, আদর সোহাগ দিয়ে, তাদের মন জয় করেছিলেন। সে হিসেবে কন্যারা পিতার সম্পত্তির হকদার হয়। কন্যারা জীবনের এক তৃতীয়াংশ অংশ অসহায় অবস্থায় কাজ বিহীন ভাবে পিতার ঘরে বসবাস করে। স্বাবলম্বী অবস্থায়, দুই তৃতীয়াংশের অধিক সময় কাজ সহ স্বামীর ঘরে থাকে। এই পরিসংখ্যানে পিতাকে প্রদেয় ভাইয়ের কর্মের তুলনায় বোনদের প্রদেয় কর্ম অনেক কম! দুনিয়ার হিসেবে অনুযায়ী পিতার সম্পদে বোনেরা ভাইদের তুলনায় অনেক কম সম্পদের ভাগীদার হয়। তারপরও আল্লাহ কন্যাদেরকে ভাইদের অর্ধেক সম্পদের মালিক করেছেন, এটা আল্লাহর অনুপম দয়া, ভালবাসা, রক্তের নিদর্শন ছাড়া আর কিছু নয় এবং আল্লাহ প্রদত্ত এটাই যুক্তিযুক্ত ও সুষ্ট বণ্টন। কেননা আজ যারা এসব নিয়ে আন্দোলন করছেন তাদের যদি বলা হত, পিতার প্রতি প্রদেশ শ্রম অনুযায়ী বণ্টন কর, তাহলে তারা কন্যাদের কে দশ ভাগের এক ভাগও দিতেন কি না সেটা সন্দেহ আছে।
বিষয়: বিবিধ
১৯৫২ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ সুন্দর গুরুত্বপুর্ন পোষ্টটির জন্য।
এখন থেকে নিজের ভাত-কাপড় নিজে জোগাড় করবে। সন্তান লালন-পালন নিজে করবে - কারণ সন্তানতো আমি পেটে ধরিনি। এটা তোমার দায়িত্ব।
মন্তব্য করতে লগইন করুন