বাংলা আমার মাতৃভাষা, মেঘের আড়ালে ঢাকা
লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৫:৫৯:২৫ বিকাল
১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩০তম অধিবেশনে ২১শে ফেব্রুয়ারি’কে সার্বজনীন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ইউনেস্কোর ঘোষণায় বলা হয়: Linguistic and cultural diversity represent universal values that strengthen the unity and cohesion of societies. অর্থাৎ “সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভাষা সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। মাতৃভাষার প্রচলন কেবল ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং বহু ভাষাভিত্তিক শিক্ষাকেই উৎসাহিত করে না, তা ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উন্নয়ন ও অনুধাবনের ক্ষেত্রেও অবদান রাখে।”
রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত, সফিউলদের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছি মহান মাতৃভাষার অধিকার। বিগত ৬২ বৎসর ধরে বাংলার মানুষেরা ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেছে, পালন করেছে শহীদ দিবস হিসেবে। আজ আমরা সেই শহীদ দিবসকেই পেয়েছি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। সেদিন আমাদের দেশপ্রেমিক ও মহৎপ্রাণ ভাইয়েরা মাতৃভাষার জন্য যদি ন্যায়সঙ্গত দাবী আদায় ও জাতির মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে উজ্জীবিত না হতেন; তাহলে আজকের এই সম্মান তো সুদূর পরাহত ছিল। বাংলাদেশ নামের একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রের কল্পনা করাও দুষ্কর হতো।
বর্তমান দুনিয়াতে প্রায় ৬ হাজারের অধিক ভাষা মানুষের কথ্য ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিচার বিশ্লেষণে শ্রুতি মধুরতার দিক বিবেচনায়, আন্তর্জাতিক বিচারে বাংলা ভাষা, প্রথম কাতারের শ্রুতি মধুর ভাষা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছে। সহজে রপ্ত যোগ্য ভাষা হিসেবে বাংলাকে ৫ম ধারায় রাখা হয়েছে। সিয়েরা লিওন সরকার, ২০০২ সালের ২৭শে ডিসেম্বর ফরাসীর পাশাপাশি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলা ভাষা আজ মর্যাদার আসনে বসেছে, পরিচিতি ছড়িয়েছে বিশ্বের চারিদিকে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যে মাধ্যমে নোবেল পুরষ্কার অর্জন করেছে ১৯১৩ সালে। সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অস্কার পুরষ্কার পেয়েছে ১৯৯২।
ইংরেজি, স্প্যানিশ ও ফরাসী ভাষাগুলো উপনিবেশিক ভাষা! উপনিবেশিক শাসক গন তাদের শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে, নিজেদের সুবিধার্থে, উক্তর জনপদের জনসাধারণকে তাদের ভাষা শিখিয়েছে। একদল গোলামী মনস্ক অভিজাত শ্রেণী তৈরি করতে, উপনিবেশ বাদিরা স্থানীয় মানুষদের তাদের ভাষা শিখতে উৎসাহ জুগিয়েছে এবং সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। বাংলাদেশে ইংরেজি ভাষার প্রচলনও হয়েছে সে একই কায়দায়। উর্দু একটি সামরিক ভাষা, এটি কোন জাতির নিজস্ব ভাষা নয়। সেটাকেও উপনিবেশিক কায়দায় বাংলার জনগণের কাঁধে তুলে দেবার প্রচেষ্টা হয়েছিল। ইংরেজি ভাষার অবস্থান তৈরিতে ব্রিটিশ রাজত্বের প্রভাবকে কাজে লাগানো হয়েছিল, সেভাবে ফরাসী ভাষার জন্য ফ্রান্স সরকারের ভূমিকা ছিল। সিয়েরা লিউনে বাংলার গ্রহন যোগ্যতার জন্য কোন প্রভাবকে কাজে লাগানো হয়নি। সেখানকার নাগরিক বাংলাকে ভালবেসেছে নিজেদের মতো করে, এটি বাংলা ভাষার একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিনা লাভে হৃদয়ের আগ্রহ দিয়ে নিজ দায়িত্বে শিখা ভাষার মধ্যে; আরবি ও গ্রীকের পরেই বাংলা ভাষাও একটি।
বাংলাভাষার রয়েছে একটি করুন অতীত ইতিহাস। নানা ঘাত প্রতিঘাতের মাঝে এই ভাষাকে পৃথিবীর বুকে টিকে থাকতে হয়েছে। মধ্য যুগের সেন বংশের আমলে বাংলা ভাষাকে পক্ষী ভাষা হিসেবে নিন্দিত ও ঘৃণা করা হত। সরকারী কর্মচারীরা বাংলা ভাষা ব্যবহার ও শব্দ উচ্চারণ করলে চাকুরী হারানোর সাথে কপালে নির্যাতন জুঠত। বাংলা ভাষায় কথা বলার অপরাধে শত শত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দেশান্তরী হতে হয়েছে। পাকিস্তানীরা যেভাবে বাংলার উপর উর্দুকে চাপাতে চেয়েছিল, বহিরাগত রাজা বল্লাল সেন সেভাবে বাংলার উপর সাংস্কৃতিকে চাপাতে চেয়েছিল। জোর করে সংস্কৃতি ভাষা চালু করতে ভারত থেকে শত শত পণ্ডিত আনা হয়েছিল। সংস্কৃতি ভাষা চাপিয়ে দিতে হেন জুলুম বাকী রাখেনি যা সেন বংশ বাংলায় করেনি। স্থানীয় অসহায় হিন্দু-মুসলিম বাবা আদমের (শহীদ ধর্মপ্রচারক, মুন্সী-গঞ্জের রামপালে সমাধি) পতাকা তলে হাজির হয়েছিল, বল্লাল সেনকে হঠাতে। বল্লালের করুন মৃত্যুর পর, তার সন্তান লক্ষণ সেনও নির্যাতনের একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন, ফলে সহসা তিনি জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। বখতিয়ার খলজি মাত্র সতেরো জন সৈন্য নিয়ে বাংলায় হাজির হলেও, তার বিরুদ্ধে লড়াই করার মত সৎ সাহস পর্যন্ত তাদের লোপ পেয়েছিল। লক্ষণ সেন দুপুরের খানা খাওয়াত অবস্থায়, পলায়ন করতে বাধ্য হন। ভাষা সহ নানাবিধ আচরণে তারা এমন জন-বিচ্ছিন্ন হয়েছিল।
এর পরে বাংলায় সুলতানি আমল শুরু হলে, ভাষা নিয়ে বাংলার মানুষের জিল্লতির অবসান হয়। সুলতানি আমলে মুসলিম শাসকেরা বাংলাকে আবারো রাষ্ট্রীয় মানে তুলে আনেন। লক্ষণীয় বিষয় ছিল, সেন রাজারাও বিদেশী ছিলেন এবং তাঁরা বাংলা ভাষাকে উচ্ছেদ করেন। আবার সুলতানি বংশের সুলতানেরাও বিদেশী ছিলেন, তবে তাঁরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করেছিলেন! এমনকি এসব সুলতানেরা বাংলাভাষা শিখেছেন এবং সে ভাষায় সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলতেন। এই আমলে কৃত্তিবাস ওঝাকে ‘রামায়ণ’ ও কাশীরামকে ‘মহাভারত’ বাংলায় অনুবাদ করার জন্য রাষ্ট্রীয় অনুদান দেওয়া হয়। ঘৃণিত বাংলা তথা পক্ষী ভাষায় রামায়ণ-মহাভারতকে বাংলায় অনুবাদের অপরাধে কৃত্তিবাস ও কাশীরামকে ‘সর্বনাশা’ উপাধি নিয়ে আজীবন অভিসম্পাত পেতে হয়। শ্রী দীনেশ চন্দ্র সেন তার লিখিত ‘বঙ্গ ভাষা ও সাহিত্য’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন “আমাদের বিশ্বাস মুসলমান কর্তৃক বঙ্গ বিজয়ই, বঙ্গভাষার সৌভাগ্যের কারণ হইয়া দাঁড়াইয়াছিল”।
ভাষা জাতি স্বত্বার সেতু বন্ধন তৈরি করে এবং সর্বদা অটুট বন্ধনে তা দৃঢ় রাখে। তবে আমরা এমন এক ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের প্রতিবেশী যারা সর্বদা আমাদের অবহেলা, অবজ্ঞা এবং কদর্য ভাষায় আক্রমণ করে। একদা পশ্চিম বঙ্গের সেরা বাংলা শিক্ষিত রাজনৈতিকেরা পূর্ব বাংলাকে প্রায় উষ্ঠা মেরে আলাদা করেন। এখন তারাই কবিতায় সূরে আফসোস করছেন “তেলের শিশি ভাঙ্গল বলে খোকার উপর রাগ কর, তোমরা যারা বুড়ো খোকা দেশটাকে যে ভাগ কর”। বোকামির মাশুল তারা কড়ায়-গণ্ডায় হাসিল করছে, নতুন করে মিলিত হবার প্রবণতাও বাংলা ভাষার টানেই সৃষ্টি হচ্ছে। চির শত্রু পূর্ব জার্মানি ও পশ্চিম জার্মানির মাঝখানের প্রতিবন্ধক বার্লিন দেওয়াল চূর্ণ করে পুনরায় আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়েছিল ভাষার টানেই। উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া নীতির প্রশ্নে বিভক্ত, নতুবা বহুবার চেষ্টা হয়েছিল তারা এক ও অবিচ্ছেদ্য থাকবে ভাষার কারণে। এশিয়া ও আফ্রিকার আরবি ভাষাভাষী জাতি গোষ্ঠীর নাড়ীর টান একই সূতায় বাঁধা শুধুমাত্র আরবি ভাষার কল্যাণে।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো এক সময় ইউরোপের কলোনি ছিল। বর্তমানে সেখানে ফরাসী, পর্তুগীজ, স্প্যানিশ, ইংরেজি ভাষায় কথা চলে। আবার এই সব ভাষা গুলো ল্যাটিন ভাষা থেকেই উৎপত্তি। সে কারণে আমেরিকার দুটি মহাদেশের বিশাল অঞ্চলকে ল্যাটিন আমেরিকা বলা হয়। অর্থাৎ এ সমস্ত দেশগুলো ল্যাটিন ভাষারই সন্তান। ভাষার সূত্র ধরে একটি জাতিকে কব্জায় রাখা অনেক সহজসাধ্য। যার ফলে পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর ব্রিটিশ সরকারের আদেশে পাঠ্য-শিক্ষা সিলেবাস রচনা করতে গিয়ে, শুধুমাত্র সংস্কৃতি শব্দ বহুল প্রবন্ধকেই প্রাধান্য দেন। ফলে হিন্দু সাহিত্যিকদের লিখাই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত হয়। আরবি, ফারসি, উর্দু, তুর্কি শব্দযুক্ত প্রবন্ধ তালিকা থেকে বাদ দেন, ফলে মুসলিম সাহিত্যিকদের লিখা কৌশলে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করেনি। যেভাবে বাংলা ভাষা আরবি, ফারসি থেকে উৎপত্তি হয়নি সেভাবে বাংলায় সংস্কৃতি শব্দের প্রভাব থাকলেও সরাসরি সংস্কৃতি থেকেও উৎপত্তি হয়নি। এর ফলে দুই বাংলায় দুই ধরনের বাংলা ভাষা ব্যবহার শুরু হয়। সাধু চলিত নামে দুভাবে পৃথক হয়ে যায়। একটি হিন্দু তথা সংস্কৃতি ভাষা নির্ভর, অন্যটি মুসলিম সাহিত্য নির্ভর ভাষা হয়ে যায়। ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও জনগণের শ্রদ্ধার উপর ভিত্তি করে কখনও নতুন করে দেশ, ভূখণ্ড ও জাতির সৃষ্টি হয়। সে কারণেই বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে বাংলা ভাষায় নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরও; মহাত্মা গান্ধীকে লিখিত অনুরোধ করেছিলেন শুধু হিন্দিকেই যেন রাষ্ট্রভাষা করা হয়! যেখানে ভাষার এত গুরুত্ব, সেখানে সর্বদা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা অবিরত থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
আজ সারা দুনিয়ার মানুষ আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে সম্মানিত করলেও; আমরা করে চলছি অবহেলা। বাংলাদেশে আজো বাংলা টিভি চ্যানেল গুলোতে প্রতিনিয়ত ভুল উচ্চারণ শুনতে শুনতে; শুদ্ধ শব্দটিকে ভুলতে বসেছি। বিশুদ্ধভাবে বাংলা ভাষা জানা থাকা স্বত্বেও হাস্য-পদ উচ্চারণে, ভুল ইংরেজি বলার প্রকোপ বাড়ছে। বিদেশী ভাষা শিখার কথা বলে, নোংরা-বিশ্রী, কদর্য অঙ্গ ভঙ্গির-হিন্দি সিনেমা দেখা হচ্ছে। নিজের প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য প্রকাশ করতে, স্প্যানিশ ও ফরাসী ভাষার অহমিকা দেখানো হচ্ছে। নিজেকে খুবই উঁচু জগতের জ্ঞানী ও বিদ্ধান ব্যক্তি বুঝাতে ঘরে ইংরেজি ও চীনা ছবির সংগ্রহ বাড়ানো হচ্ছে। বহু ভাষাবিধ জ্ঞান-তাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মত অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও ভাষা বিজ্ঞানীও কখনও অন্যের ভাষা নিয়ে এ জাতীয় কপটতা করতেন না। এটা বড় পরিতাপ ও দীনতার বিষয়!
২১শে’র বেদীতে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়, সেখানেও ভুল বানান লিখা হয়। জীবিতদের সম্মান নাইবা দিতে পারলাম, শুদ্ধ শব্দ লিখে যদি মৃতদের প্রতিও সম্মান দেখাতে না পারি; তাহলে বড় অন্যায় করা হবে তাদের ত্যাগের প্রতি। বাংলাদেশের মানুষেরা দেশে-বিদেশে মাতৃভাষা বাংলা শিখানোটাকে হেয় ও সেকেলে মনে করছেন। ভাষার প্রতি টান না থাকলে মাটির প্রতিও টান থাকেনা; দেশ-প্রেম তৈরি হয়না। ইংরেজি শিখে তৃতীয় শ্রেণীর মর্যাদা নিতে উৎসাহ বোধ করা হয়, অথচ মায়ের ভাষা বাংলা শিখে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পেতে চায়না। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. এফ, রহমান, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি নজরুল, ড. অমৃত সেন, ড. ইউনুছ সহ আরো অনেকেই বাংলা পড়েই পৃথিবী খ্যাত হয়েছেন। নিজেদের শিক্ষাগত অদক্ষতা, সময়ের বিচারে অনুপযোগী গুন-মানহীন শিক্ষা, মানুষ তৈরির কারিকর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো এর দায়ভার, ভাষাগত দুর্বলতার উপরে তুলে দিয়ে আপাতত শান্তির ঢেঁকুর তুলতে পারলেও, অচিরেই নিজেদের স্বকীয়তা হারিয়ে, বিজাতীয় অস্তিত্বের মাঝে বিলীন হওয়া খুব দূরের ব্যাপার নয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন "আমি তোমাদিগকে বিভিন্ন গোত্র, বংশ, বর্ণ ও ভাষার বিভক্তি করে সৃষ্টি করেছি; যাতে করে তোমরা একে অন্যকে চিনতে-জানতে পার। সূরা রূম: ২২”। ভাষা নিয়ে আল্লাহর এই কথা থেকে আমরা দূরে চলে গিয়েছি। আমরা হীনমন্যতার কারণে নিজের ভাষার উপর অন্যের ভাষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি। নিজেরাই স্ব-ইচ্ছায় অন্যের গোলামে পরিণত হয়ে যাচ্ছি। লুকিয়ে থাকা সম্রাজ্য বাদীরা সর্বপ্রথম ভাষা ও সংস্কৃতি দিয়েই একটি জাতিকে, স্বীয় ভিত্তি থেকে নাড়াতে চায়। এটাই সম্রাজ্যবাদী উপনিবেশ বাদীদের প্রধান ও মোক্ষম অস্ত্র। তাই এখনও সময় আছে সজাগ হবার। শুদ্ধ উচ্চারণে বিশুদ্ধ বাংলা বলার জন্য প্রচেষ্টা থাকতে হবে। বিশেষ করে প্রতিটি টিভি চ্যানেলের খবর পাঠকদের ভাষা, উচ্চারণ প্রয়োগে বিটিভি’র ভূমিকা থাকা উচিত। বাংলা শব্দ উচ্চারণের জন্য বাংলা একাডেমীর অডিও সিডি প্রকাশ করা জরুরী। বাংলায় সুন্দর বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারার উপর জোড় দেওয়া উচিত। সংসদ, আদালত, সচিবালয়ে ব্যবহারিক বাংলা ভাষা প্রয়োগের শ্রেষ্ঠতম স্থান ঘোষণা করা উচিত। বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে দেশকে পবিত্র ও মুক্ত রাখতে হবে। নতুবা বাংলাভাষা আজকে যে আকাশের উচ্চতায় সম্মান পেয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে মূল্যহীন হয়ে পড়বে। বাংলাভাষার উজ্জ্বলতা কখনও প্রকাশ পাবেনা, কেননা তখন তা চিরদিনের জন্য মেঘের চাদরে ঢাকা পড়বে।
বিষয়: বিবিধ
৩১০৪ বার পঠিত, ৫৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাজ্জাকাল্লাহ খায়ের
ধন্যবাদ টিপু ভাই কে অনেক সুন্দর তথ্য সমৃদ্ধ লিখার জন্য।
আযাদ সম্পাদক,সাংবাদিক মরহুম শামসুদ্দিন আবুল কালাম এর আত্মজীবনিতে পড়েছি পাকিস্তান স্বাধিন হওয়ার পরই মাওলানা আকরাম খান এর নেতৃত্বে একটি ভাষা সংষ্কার কমিটি হয়েছিল। ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ও তার সদস্য ছিলেন। তারা সংস্কৃত বহুল বাংলার পরিবর্তে সহজ বাংলা ভাষার একটি রুপরেখা প্রনয়ন করেছিলেন। মজার ব্যাপার একই সময়ে পশ্চিম বাংলায় ও ডঃ সুনিতী চট্যোপাধ্যায় এর নেতৃত্বে একটি কমিটি হয়েছিল একই উদ্যেশ্যে। তারা কিন্তু বাংলা ভাষা থেকে বিদেশি শব্দ বাদ দেওয়ার নামে সংস্কৃতবহুল একটি বাংলা চালু করেছিলেন। দুঃখের বিষয় এখন আমরা সেটাই অনুসরন করছি। একদিকে তথাকথিত পরিভাষার নামে বাংলাভাষাকে করা হচ্ছে দুর্বোধ্য। অন্য দিকে আন্তর্জাতিক মান এর নামে ইংরেজি মাধ্যমকে দেয়া হচ্ছে প্রাধান্য। এই উভয় মানসিকতার অবসান জরুরি।
ভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ইউ এ এমবেসী রচনা প্রতিযোগীতার আয়োজন করেছিল, আমার ছেলে বিজয়ী হয়েছে, সে উপলক্ষ্যে আমাকে দাওয়াত করা হয়েছিল। বাংলা না জানার কারণে প্রচুর অভিবাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে সমস্যার কথা বলছিল, সন্তানদের দুই কুল হারাবার মত দশা। এসব অভিবাবকেরা ছেলেদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াতে গিয়ে বাংলাকে গেঁয়ো মানুষের ভাষা বানিয়ে ফেলেছিল। এমব্যাসেডর নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন, মাতৃভাষাকে অবমূল্যায়ন করলে কত বিপদ হতে পারে তিনি তার একটা সুন্দর বিশ্লেষন দিয়েছেন। অনেক ধন্যবাদ।
কোন বিদেশীকে যদি পাই ভারত/পাকিস্তান/বৃটিশ তাহলে আমাদের মধ্যে তাদের ভাষাতে কথা বলে তাদের ইম্প্রেসড করার প্রবনতা লক্ষ্য করা যায় ।
এতে যে নিজের ভাষাকেই ছোট করা হয় সেটা কি আমাদের মাথায় আসে কখনও ?
আমাদের দেশে পীরের দরগাহে যে ওরশ হয় তাও আরবী মাসের হিসেবে না হয়ে বাংলা মাসের হিসেবে হয়। সর্বত্রই বেতাল........অনেক ধন্যবাদ।
"২১শে’র বেদীতে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়, সেখানেও ভুল বানান লিখা হয়। জীবিতদের সম্মান নাইবা দিতে পারলাম, শুদ্ধ শব্দ লিখে যদি মৃতদের প্রতিও সম্মান দেখাতে না পারি; তাহলে বড় অন্যায় করা হবে তাদের ত্যাগের প্রতি।"
এভাবে মৃতদের সম্মান দেখানো কি জায়েজ?
আমনের উপরের পড়া হড়ি তো আঁই বে-আক্কেল হই গেলাম। পরে তালাশ করি দেহি, কথাতো বেবাক হাঁছা। বইয়ে ভুল, লেখায় ভুল, খাতায় ভুল, মাথায় ভুল। বাউরে কোনাই যাই কুল কইরতে পারছিনা, বিশ্বাস না হইলে আমনেরা দেখেন আমার কাছে আরো কালেকশন আছে
বাংলা ভাষা খুবই সমৃদ্ধ ভাষা, আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এটাকে ধরে রাখা আর নিভুল ব্যাবহার, দায়িত্বটা নিতে হবে প্রথমত সরকারকে, প্রাইমারী লেভেল থেকেই শুরু করতে হবে, শিশুরা যখন অ আ ক খ শিখবে তার পরে বিশুদ্ধ বানান যাতে শিকে সেটাকে নজর দিতে হবে স্কুলে, তার পরের স্টেজে সেটাকে আরো ঝালাই করে দিলে সে আর কখনো ভুলবেনা বানান এভাবেই শুরুটা করতে হবে,
ভাষার একটা গতি প্রকৃতি আছে অন্যান্য সব কিছুর মতো, আমার পোষাক আষাক খাদ্যাভ্যাস যেমন পরিবর্তন হবে তেমনি বাংলা ভাষারও হবে সেটাকে সাভাবিক ভাবেই নিতে হবে, আমরা যখন ব্যাকরণ পড়ি সেখানে তৎসম অর্ধ্বতৎসম এমন প্রকৃয়ায় অন্য ভাষা থেকে বাংলায় শব্দ প্রবেশ দেখতে পায় এবং সেটা একসময় স্বাভাবিক হয়ে বাংলা হয়ে যায়
ইংরেজীর একটা প্রভাব থাকবেই, কারন আমরা বর্তমান যে প্রযুক্তি ব্যাবহার করছি সব ইংরেজীতে, গবেষণা হতে শুরু করে সবই হচ্ছে এই মাধ্যমে তাই ভাষায় ইংরেজীর প্রভাব এড়ানো যাবেনা, বলতে চলতে ইংরেজী আসবেই, হয়তো সেটা বাংলিশ হেয় একটু ঝামেলা করতে পারে সেটা একটু খেয়াল করতে হবে
ভাষা, ভাষা দিবস এগুলো শুধু আক্ষরিক অর্থে ব্যাবহার না করে আরো ব্যাপকভাবে চিন্তা করতে হবে, অনুবাদটা আমার কাছে সবসময় প্রাধন্য পায়, অংক বিজ্ঞান এসবের গভীরে যেতে হবে বাংলা ভাষার মাধ্যমেই তবেই আমরা প্রযুক্তিকে ধরতে পারবো, তার জন্য অনুবাদটা খুব প্রয়োজন, এসব বিষয়গুলো অন্য ভাষায় চর্চা করতে গিয়ে কঠিন ঠেকে সবার কাছে তাই অনুবাদটা স্বাভাবিক হলেই সবার কাছে বুঝতে শিখতে স্বাভাবিক হবে
কথাগুলো উত্তর বা প্রতি উত্তর নয় আপনার লিখার সূত্র ধরে আমিও কিছু অভিব্যাক্তি প্রকাশ করলাম
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/6229/Zurich/38042
হয়তো কোন অস্বাভাবিক ব্যস্ততায় এতো সুন্দর পোস্টে আমার নজর পড়েনি!!
যাক, 'কাযা' আদায় করে নিলাম, আলহামদুলিল্লাহ
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন