জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হবে! তবে....
লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৭:০৮:৪০ সন্ধ্যা
বর্তমান দেশের প্রধান এবং একমাত্র সমস্যা জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির! তাই তাদেরকে নিষিদ্ধ করতে হবে! আইন মন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, তাঁরা আইনের ছিদ্র-ফাঁক-ফোকর সন্ধানে ব্যস্ত, কিভাবে জামায়াত-শিবিরকে কে নিষিদ্ধ করে উৎখাত করা যায়! এই ইস্যুতে বামপন্থি দল গুলো এখন আওয়ামীলীগের মাথায় হনুমান নৃত্যে মশগুল। কেননা এই আইন পাশে যা কিছুই ঘটুক না কেন আওয়ামী লীগের 'বিছা টাই ফাটা বাঁশে আটকাবে, বামপন্থিদের নয়! তাই আওয়ামীলীগ শতবার ভাবছে! কেননা কিছু ঘটার পর আর পিছনে আসা যাবেনা।
জামায়াতের উপস্থিতিতে নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বিএনপি কিছুটা ভোটের সুবিধা নিলেও অন্যান্য সব সময় জামায়াতের উপস্থিতি আওয়ামীলীগ কে সুবিধা এনে দেয়। রাজাকারের উপর দোষ চাপিয়ে ৪০ বছর পার করতে পেরেছে। রাজাকার শেষ হলে, কাকে নিয়ে বাজার গরম করতে হবে সেই বিষয়টি আওয়ামী লীগকে ভাবতে হবে, শতবার ভাবতে হবে।
যাক, ধরে নিলাম জামায়াত নিষিদ্ধ হল, তখন জামায়াতের কি অবস্থা দাঁড়াবে একটু দৃষ্টি দেই।
জামায়াত করে এমন এক প্রবাসী বন্ধু কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলেন। তার নিজের মুখে শুনুন, তিনি কি বলেছেন:
‘আমি ১৯৮০ সাল থেকে ছাত্রশিবির করি। ছাত্রলীগের হামলায় ৯০ এর দশকে দেশ বাড়ি ছাড়া হয়েছি। আমাদের কাছাকাছি এলাকায় আমার মত তিনশত ছাত্র জীবন রক্ষার্থে ভাগ্যের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি দিয়েছি। এভাবে প্রতিবছর এই সংখ্যা বাড়তে থেকেছে। বিদেশে এসেও আমরা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছি। ছাত্রজীবনেই ছাত্রশিবির দান করার অভ্যাস শিখিয়েছিল। ছাত্রাবস্থায় যেভাবে দান করেছি, এখনও সেভাবে দান করি, প্রতিমাসে দান করি, প্রয়োজনে বছরান্তে মোটা পরিমানে দান করে থাকি। এটা জামায়াতে ইসলামীর একমাত্র আয়ের উৎস। আমার মত অনেক ভাই তাদের মাসিক আয়ের ৫-৭ শতাংশ দান করে থাকে। নির্বাচনে অর্থ দিয়ে থাকি, দলের সমস্যার সময় এই দানের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিয়ে থাকি। আমার মত প্রতিটি একনিষ্ঠ প্রতিটি কর্মী এভাবেই বছরের পর বছর ধরে, খোলা হাতে জামায়াতে ইসলামীর মাধ্যমে আল্লার রাস্তায় দান করে যাচ্ছে! সরকার ভাবছে তারা ব্যাংক বীমা বন্ধ করে জামায়াতের আয়ের রাস্তা বন্ধ করে দিবে। কিন্তু আমি কোনদিনই ব্যাংকের মাধ্যমে জামায়াত কে টাকা পাঠাই নাই। আগে দিতাম পিতার মাধ্যমে, পিতার মৃত্যুর পর চাচার মাধ্যমে, এখন স্ত্রীর মাধ্যমে। এভাবে আমি আজীবন অর্থ প্রেরণ করতে থাকব”।
আরেকজনের কথা শুনুন:
‘আমরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে মিটিং এ যাই। বিভিন্ন ভাইদের থেকে দেওয়া টাকায় মিছিল করি। নিজের গাড়ী ভাড়ার টাকাটা অন্য ভাইকে নাস্তার জন্য দিয়ে ৪ মাইল রাস্তা হেটে বাড়ীতে পৌছাই। নিজের প্রয়োজনে আন্দোলন করেছি, আল্লাহর দেওয়া হক আদায় করতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। আমি একবার জেলে গিয়েছি, অনেক কষ্টে সে জীবন পার করেছি, সরকারের অনেক জুলুম সহ্য করেছি। এসব জুলুমের মাধ্যমে বুঝতে পেরেছি কেয়ামত আর কবরের শাস্তি আরো কত মারাত্মক। আমি বিদেশে একটি ছোট্ট প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। যে সব বন্ধুদের দেশে রেখে এসেছিলাম তারা এখনও সরকারের জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আমি বিদেশে এসে প্রতিটি ভাই বন্ধুকে দেশের বাস্তব অবস্থা জানিয়ে সচেতন করেছি। তাদের অনেকেই জামায়াতে যোগ দিয়েছে। তারা স্ব-ইচ্ছায় জামায়াতের এই দুর্দিনে অর্থ সাহায্য দিচ্ছে। তাদের তিন জন জাকাতের সমুদয় টাকা গুলো আমাকে দিয়ে বলেছে দেশে পাঠিয়ে দিতে। যাতে আহত ভাইদের চিকিৎসা করা হয়। তাদের পরিবারের খবরা-খবর নেওয়া হয়। আমার ছেলের মাধ্যমে জামায়াতের প্রতিনিধির কাছে টাকা পৌছিয়ে দেই। আমার স্ত্রী ও সন্তানদের নিকট থেকে কথা নিয়েছি যেন সর্বাবস্থায় জামায়াত শিবিরের ছেলেদের সাহায্য করে। কোন অবস্থায় যাতে তাদের কেউ বিফল মনোরথে আমার বাড়ীর আঙ্গিনা থেকে ফিরে না যায়’।
বন্ধুগন! আমি শুধু দুইজন ব্যক্তির কথা গুলো তুলে ধরলাম। এই আন্দোলন সরকার কিভাবে ধ্বংস করতে অন্তত আমার মাথায় আসেনা! আসলে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীগণ একে অপরকে আপন ভাইয়ের চেয়ে বেশী ভালবাসে। নিজে আহত হয়েও অন্য আহত বন্ধুটিকে ঝুঁকির মুখে রেখে আসেনা। একজন কর্মীকে রক্ষা করতে তিন জন কর্মী নতুন ভাবে রিস্ক নেয়। তারা বিশ্বাস করে হায়াত এবং মৃত্যু সব আল্লাহর হাতে। যদি হায়াত থাকে তাহলে পুলিশের রাইফেলের তিন ফুট দুরে থেকেও বেঁচে আশা যাবে। যদি হায়াত না থাকে, তাহলে ঘরের দরজায় আক্রমণ কারীর আঘাতে মুখমণ্ডল ফালা ফালা গেলেও আম্মা বলার সুযোগ হবেনা।
এই ধরনের একটি ত্যাগী, সংযমী, দৃঢ়-প্রত্যয়ী, নির্লোভ, অসম্ভব সাহসী, বিপদে ধৈর্য না হারা একটি লড়াকু দলকে সরকার নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে! জানিনা সরকারী দলের নেতাদের বেশী দিন বাঁচার ইচ্ছা নাই! নাকি চরম শায়েস্তা করার জন্য একটি সমূহ বিপদের দিকে জাতিকে ঠেলে দিচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূত জামায়াতে ইসলামীকে শায়েস্তা করার খায়েশের কথা জানিয়েছেন। মন্ত্রীরা তার খায়েশ পুরণার্থে তিন পায়ে নাচুন শুরু করেছে! এরা কি বিপদের দিনে কারো বন্ধু হবে! আল্লাহ বলেছেন এরা শত্রুই হয় কখনও বন্ধু হয়না, তাছাড়া আমরা প্রমাণ পেয়েছি ১৯৭৫ সাথে বাংলাদেশ সরকারকে এরাই ফুসলিয়ে ঝুঁকির মুখে ফেলেছিল এবং সম্রাট নিরো'র মত শহরে আগুন লাগিয়ে মনের আনন্দে বাঁশি নিয়ে মৃত্যু-যজ্ঞ উপভোগ করেছিল।
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন