রাজধানীতে হালাকু খানের প্রেতাত্মা! তাসবিহ হাতে জিকির করুন

লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১২:৪১:৪৬ দুপুর

৯০% মুসলমানের দেশে রাজধানীর রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে হায়েনার চেয়ে উন্মত্ত, মাতালের চেয়ে উন্মাদ, কাপালিক তান্ত্রিকের চেয়েও বীভৎস! ছাত্র নামধারী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে একজন বৃদ্ধের দাড়ি ধরে যেভাবে অপমান করা হল! তা প্রতিটি ব্যক্তির ঈমানের সাথে তাচ্ছিল্য করার চেয়েও ভয়ঙ্কর। রাসুলের (সাঃ) প্রতি ন্যূনতম দানা পরিমাণ ভালবাসা যদি হৃদয়ে থাকে, তাহলে প্রতিটি মুসলমানকে এক প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া উচিত। নতুবা ভবিষ্যতে আমাকে আপনাকে এর জন্য কড়ায় গণ্ডায় চরম মূল্য দিতে হবে।

আল্লাহ কোন জাতির উপর গজব দেবার আগে, সে জাতির সে সকল মানুষের উপর আগেই গজব দেন; যাদের ক্ষমতা থাকা স্বত্বেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করেনি, মজলুম অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেনি এবং মানুষের পদদলিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে জালিমের হাত ভেঙ্গে দেয়নি। আগে তাদের ধ্বংস অনিবার্য হয় তারপর জালিমের শক্তি ধ্বংস হয়। ইতিহাসের একটি দৃষ্টান্ত দিলাম।

হালাকু খান যখন বাগদাদ আক্রমণ করেন, তখন খলিফা মুহতাসিম বিল্লাহর সেনাবাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ লক্ষ। তন্মধ্যে চার লক্ষই ছিল শহর নিরাপত্তায় নিয়োজিত আর এক লক্ষ ছিল আধা দুনিয়ার মত ব্যাপ্ত সীমান্ত পাহারায়। হালাকু খানের ৫০ হাজার সৈন্যের মোকাবেলা করেনি চার লক্ষাধিক সৈন্যের অধিকারী মুহতাসিম বিল্লাহ! বরং তিনি আলেমদের মাধ্যমে জনগণকে আল্লাহর কাছে দোয়া করার উপদেশ দিয়েছিল, ধৈর্য ধরার কথা বলেছিলেন, হাতে তসবিহ নিয়ে মসজিদে, খানকায় মানুষকে জিকির আজকারে ব্যস্ত থাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন।

হালাকু খান শঠতা পূর্ণ আচরণ দিয়ে ইরাক আক্রমণ করেছিল। প্রথমে খলিফা মুহতাসিম বিল্লাহকে দিয়ে হত্যার সূচনা হয়। অতপরঃ আলেম, পুরোহিত, ধার্মিক লোকদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। তারপর গর্ভবতী মহিলাদের উপর আক্রমণ চলে। এভাবে হত্যা করতে করতে হালাকু খানের বাহিনী দুর্বল হয়ে নেতিয়ে পড়ত। তারপর দিন মানুষদের প্রশ্ন করত, 'তোমরা কাকে ভয় কর?'

লোকেরা বলত 'আমরা আল্লাহর গজবকে ভয় করি'।

এই কথায় হালাকু খানের সেনাবাহিনীতে বল ফিরে আসত এবং চাঙ্গা হয়ে উঠত,

তারা বলত, 'আমরাই সেই আল্লাহর গজব, সুতরাং তোমরা তা মেনে নাও' বলেই পুনরায় হত্যা যজ্ঞে মেতে উঠত। এভাবে কয়েক মাসে প্রায় ষোল লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়। যারা দজলা ফোরাতের জঙ্গলে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিল, নদীর বাধ কেটে দেবার মাধ্যমে প্রায় চায় লাখ মানুষকে সলীল সমাধিতে প্রাণ হারাতে হয়েছিল। মহাকবি শেখ সাদি (রহঃ) কয়েক মাস পরে ইরাকের সিরাজ নগরী দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন, 'আমি সেখানে কাক, কুকুর ও শুকন ব্যতীত কোন প্রাণী দেখতে পাই নাই'।

আল্লাহ সেদিন গায়েবী মদদ দিয়ে সিরাজ নগরীর মানুষকে রক্ষা করে নাই বরং সকলকে নিশ্চিহ্ন করেছেন। কেননা তারা নিজেদের রক্ষায় সক্ষম ছিল এবং তারা জাতি রক্ষায় শত্রুকে প্রতিহত না করে নিজেদের হাত গুটিয়ে আল্লাহর সাহায্য প্রত্যাশা করেছিল। আল্লাহ সেদিন এই জাতীয় দুর্বল ঈমানদার ও মোনাফেক সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য সাহার্য্য পাঠায় নি। তবে আল্লাহ ভিন্ন ভাবে সে নগরীর উপর রহম করেছিলেন, হালাকু খানের রেখে যাওয়া বাহিনীর সবাইকে ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় দিয়েছিলেন। এই বাহিনী পরবর্তীতে মধ্য এশিয়া থেকে মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত ইসলামকে নিয়ে গেছেন। তাদের অধঃস্থন বংশধরেরা ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের ভিত্তি তৈরি করে।

আজকে ইসলামী তমদ্দুন, সাংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ঈমান রক্ষার্থে সবাইকে জেগে উঠতে হবে। এই প্রতিবাদ ন্যূনতম ঈমানের দাবী, নতুবা হালাকু খানের মত, এই সব আগ্রাসী শক্তির হাতে বাংলার মুসলমানদের পতাকা নিমজ্জিত হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধ ব্যতীত নিজেরা হাত গুটিয়ে বসে থাকলে আল্লাহ আসমান থেকে রহমত বর্ষণ করেন না। সময় চলে গেলে চার চিল্লা দূরে থাক চল্লিশ হাজার চিল্লাতেও কাজ হবেনা যেভাবে কাজ হয়নি সিরাজ নগরীতে......।

বিষয়: বিবিধ

২১০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File