শাহবাগের উল্লাস! ফাটা বাঁশের চিপকানায় আটকে যাবে নাতো!

লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৪:৩৪:৪৬ বিকাল

১. লাকি নামে মেয়েটি আহত হয়েছে। সে আহত হয়ে পরিচিত আরো বেড়েছে। তবে আনলাকিরা মরেও পরিচিত হতে পারেনা এটা তাদের ব্যর্থতা। লাকি ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী, একজন নারী, গায়িকা, বক্তা ফলে মিডিয়ার নজর পেয়েছে। ছাত্রলীগ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছে, কেননা লাকি আওয়ামী নেতা তোফায়েল আহমদকে মঞ্চে উঠতে বাধা দিয়েছে।

২. মেয়েটি নিজে রাজনৈতিক দলের কর্মী হয়ে, সমাবেশে অরাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য আশা করেছিল! এই পর্যন্ত যারা সেখানে গিয়েছেন তারা সবাই রাজনীতির সাথে কোন না কোন ভাবে জড়িত এবং লেজুড় বৃত্তি করে।

২. মেয়েটি তোফায়েল আহমেদ কে রাজনৈতিক বক্তৃতা দিতে বাধা প্রদান করেছিল! এই মেয়েটি পূর্বেই কিভাবে জানত তোফায়েল আহমেদ রাজনৈতিক বক্তৃতা দিবে? যদি তাই হয়, তাহলে মেয়েটিও যে রাজনীতি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে সে কথাই প্রমাণিত হয়!

৩. আওয়ামীলীগের যেসব নেতা অতীতে বামপন্থি ছিলেন তারা সবাই শাহবাগে উপস্থিত হয়ে দারুণ বক্তৃতা দিতে পারল! আর যারা জাতে আওয়ামীলীগ তারাই বোতল বৃষ্টির মুখোমুখি হল!

৪. হাতে গোনা কিছু সংখ্যক দিয়ে ব্লগার কোনদিন সমাবেশ হয় না, তাই এটা কোন ব্লগারের সমাবেশ নয়। ব্লগারদের সমাবেশ বলে মানুষের দৃষ্টিকে ফিরিয়ে নেবার চেষ্টা মাত্র। ব্লগার শব্দটি এখনও দেশে ব্যাপকভাবে পরিচিত নয়। কমিউনিষ্টদের তেমন একটা জনমত নেই বলেই, শব্দগত কারসাজির আশ্রয় নিয়েছে। কেননা ব্লগ শব্দটি তিউনিশিয়া ও মিশরে ব্যাপক অবদান রেখেছিল কিন্তু বাংলাদেশের পটভূমি ভিন্ন।

৫. সেখানে যে সব ব্লগারকে দেখা যাচ্ছে, তারা সবাই অতীতে কমবেশি বাম ধারার রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল। বাকিরা আওয়ামীলীগের এবং সুবিধাভোগীদের অন্তর্ভুক্ত।

৬. ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাফল্যকে শেষ মুহূর্তে যেভাবে আওয়ামীলীগ খেয়ে ফেলেছিল, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বামপন্থিরা আওয়ামীলীগের প্রতিথযশা নেতাদের সমাবেশ থেকে দূরে রাখতে চাইছেন। কেননা আওয়ামীলীগ ইচ্ছা করলে শাহবাগের চেতনাও মুহূর্তে খেয়ে ফেলতে পারে। এই দক্ষতা তারা দারুন ভাবে রপ্ত করতে পেরেছে।

৭. বামপন্থিরা বাজিকরির মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করত চায়। সেজন্য দলটি নাটিয়ালী, নর্তকী, গাইয়েন ইত্যাদিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে। ফলে হরতালের সময় যেখানে দৌড়ে পালানোর পথ পাওয়া যায়না সেখানে তারা হরতাল সফল করতে ঢোল, তবলা, খঞ্জনা, হারমোনিয়াম, মৃদঙ্গ, বাঁশি, হুইসিল, রংবাজ, সঙ্গ-বাজ প্রভৃতি মন ভোলানে কাজ করে। উদ্দেশ্য রাস্তায় চলাচল রত মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ! শাহবাগেও এটাই হচ্ছে। ফলে চলাচল রত ছাত্র-ছাত্রী, কিশোর, যুবকের আনাগোনা বেড়েছে। কেউ সন্তান নিয়ে এসেছে, কেউ হাওয়া খাবার মতলবে এসেছে, কেউ চোখের ব্যায়াম করার মতলবে এসেছে। যার কারণে শাহবাগ এখন বিরাট মেলায় পরিণত হয়েছে।

৮. শাহবাগের এসব কোন সংগঠিত আচরণ নয়, কেউ যদি কু-মতলবে সেখানে একটি ফটকা ফুটিয়ে বসে, অগণিত মানুষ দিক-বিদিক জ্ঞান শূন্য পালাতে থাকবে। প্রচুর নারী-শিশু পদদলিত হয়ে বহু মানুষ মারা যাবার সমূহ সম্ভাবনা আছে। এই কু-মতলব জামায়াত শিবিরের চেয়েও সরকারী এজেন্ট সিদ্ধহস্তে করার ক্ষমতা রাখে। শাহবাগে উপস্থিত প্রতিটি ব্যক্তিকে নিজ উদ্দেগ্যে সজাগ থাকতে হবে। মতলব বাজের দেশে নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার কাহিনী প্রচুর আছে। সুতরাং সরকারকে এটা তুলে নেওয়া উচিত, যেখানে নিরাপত্তা শতভাগ সেখানে করাই উত্তম।

৯. শাহবাগ নিয়ে কেউ করছেন রাজনীতি, কেউ করছেন চন্ডালনীতি কেউ করছেন ফেরেব বাজি। আগে বিএনপি, জামায়াত, বামদল দাবী আদায়ের জন্য বিক্ষোভ তো দূরের কথা, রাস্তায় দাড়িয়ে জনগণকে ব্যানার প্রদর্শন করবে এই সুযোগ ও ছিলনা। শিক্ষকদের মরিচ মেরে, হুজুরদের গরম পানি মেরে, বামপন্থিদের বেত মেরে, বিএনপিকে লাটি মেরে, জামায়াতকে গুলি মেরে বিতাড়ণ করেছে। যে সরকার আচানক মানুষের অধিকারের প্রতি দুহাত মেলে শ্রদ্ধাঞ্জলি ছড়িয়ে দিচ্ছে। মতলব বাজির উদাহরণ মনে হয় এর চেয়ে বড় কিছু নাই।

১০. ইসলামী ব্যাংকের বুথে হামলা শুরু হয়েছে। এটা লক্ষণ ভাল নয়। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরে, ইসলামী ব্যাংক আক্রমণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। বহু-স্থানে সকাল থেকেই আওয়ামীলীগের নেতারা গিয়ে ব্যাংক পাহারা দিতে দেখা গেছে। কেননা তাদেরই প্রচুর ব্যবসা রয়েছে সেখানে। ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, আওয়ামী নেতার বহু কোটি টাকার শেয়ার ইসলামী ব্যাংকে আছে। এরা কি মুখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে চুষবেন আর দেখবেন নিজের অর্থ ধ্বংস হচ্ছে। স্বার্থের ক্ষেত্রে মা-বাপ নাই, ফলে মহল্লায় মহল্লায় মারা-মারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ছড়িয়ে পড়বে।

১১. একটা পর্যায়ে এই আন্দোলন আস্ফালনে পরিণত হবে, তখন সরকারের বিশেষ সংবেদনশীল স্থানগুলো ফাটা বাঁশের চিপকানায় আটকা পড়বে। সামনে-পিছনে, ডানে-বামে যাওয়া কঠিন হবে। তখন দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা অন্ধকারে গা ভাসিয়ে লুকিয়ে পড়তে পারলেও, শিকড় পর্যায়ের নেতাদের মরানাপন্ন দশা হবে।

১২. জামায়াত যদি সরকারকে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়, তাহলে হয়ত তাদের বুড়ো নেতাদের হারিয়ে ফেলবে। তবে এটি সেই দল যারা নেতার জন্য জীবন বাজি রাখে। তাদের জন্য আরেকটি নতুন দল করে সংগঠিত হওয়া খুবই মামুলী ব্যাপার। বিরোধীতা বিহীন নতুন দলে তারা আরো মজবুত ভাবে সংগঠিত হয়ে যাবে। তবে তারা যদি সরকারী দলের উপর আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে! তখন তাদের কর্মী-বাহিনী আওয়ামীলীগের ক্ষতি করতে সক্ষম হবে। ক্ষতির পরিমাণ হয়ত কম বা বেশী হবে, কেননা এসব প্রতিহত সরকারও হাতে অস্ত্র নেবে। ফলে দেশে চরম অরাজকতা ও নৈরাজ্য তৈরি হবে কোন সন্দেহ নাই।

উপসংহার বলা যায়, মারামারির উদ্দেশ্যে যারা ‘দুর্গন্ধযুক্ত মল’ নিয়ে একে অপরের উপর হামলে পড়ে। তারা নিশ্চয়ই উন্মাদ ব্যতীত বেশী কিছু নয়! কেননা এই মলে দু দলই কর্দমাক্ত হবে, দুদলের গায়েই গন্ধ থাকবে, দর্শক হাসি তামাসা করবে, উপকারী দর্শক কদাকার দুর্গন্ধের কারণে তাদের উপকার করতে পারবে না।

আমরা শান্তি চাই, শুধু চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী নয়! প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। কাদের মোল্লার একটি বিচারের রায় নিয়ে দেশের এই দশা, বাকী বিচারের রায় বের হলে আরো সমস্যা বাড়বে। দুই দলই প্রতিবাদ করতে থাকলে বিচার বিভাগের মান মুখ থুবড়ে পড়বে, তখন বিচারকদের মান হানি মামলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। তাই এই বিচার সঠিক ও সুস্থভাবে করতে, বিদেশী আইনজীবী ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সুরাহা করা হউক। তাহলে কোন পক্ষের উত্তেজিত হবার সুযোগ থাকবেনা। রাত-দিন নাওয়া খাওয়া ছেড়ে শাহবাগ আর মালিবাগে চিল্লাতে হবেনা। লাকিদের কেও জীবন হানি করে দেশাত্মবোধের পরিচয় দিতে হবেনা। জাতি হিসেবে আমরা একটি আসন্ন রক্তযজ্ঞ থেকে বেঁচে যেতে পারব।

বিষয়: বিবিধ

১২৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File