জানেন কি? রোজার সময় রোজাদারের শরীর কোন কাজে ব্যস্থ থাকে?

লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ২৫ জুলাই, ২০১৩, ০১:৩৯:২৩ দুপুর



প্রশ্ন: আমারা যখন রোজা রাখি তখন আমাদের দেহাভ্যন্তরে কি অবস্থা তৈরি হয়? আমাদের শরীর ঘুমিয়ে থাকে, নাকি বিশ্রাম নেয়?

উত্তর: এই দুটি ধারনাই সত্য নয়, বস্তুত রোজাদারের শরীর তখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সহ অন্য একটি বিরাট কাজে ব্যস্ত হয়ে থাকে।


আসুন ধাপে ধাপে দেখতে থাকি, রোজার সময় রোজাদারের দেহাভ্যন্তরে শরীর কোন ধরনের প্রতিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে।

বিষমুক্ত করন:

যখন রোজাদার খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়। তখন তার শরীর স্বয়ংক্রিয় ভাবে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রথমেই সে শরীরের ভিতরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করে দেয়। প্রতিদিন শরীরের যে শক্তিটি খাদ্য হজমের কাজে ব্যস্ত থাকত, রোজার কারণে সে একই শক্তি খাদ্য হজমের পরিবর্তে, শরীরে উৎপন্ন বিভিন্ন বিষ নষ্ট করার কাজে নিয়োজিত হয়। দুর্বল কোষ গুলো ঘষে মেজে সতেজ করে এবং নতুন শক্তিশালী কোষের সৃষ্টি করে।

শরীর নিজ দেহে জমা কৃত গ্লাইকোজেন নামক খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে, সেটাকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণে বাধ্য করে। শরীরে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হবার কারণে চর্বিগুলো ভেঙ্গে যেতে থাকে। চর্বি যখন ভাঙ্গতে থাকে তখন শরীরের কোষে অবস্থিত রাসায়নিক উপাদান ও খাদ্য বিষগুলো ঝড়ে পড়তে থাকে। (এসব বিষ আমাদের খাদ্যগ্রহণের সময় শরীরে ঢুকে পড়েছিল)। চর্বি গলা ও বিষ মুক্ত হবার প্রক্রিয়াটি সাধারণত ক্ষুদ্র অন্ত্র, বৃহদান্ত্র, কলিজা, কিডনি, ফুসফুস, লসিকা গ্রন্থি, চামড়া উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এভাবে এসব নরম স্থান থেকে সহজে চর্বি মুক্ত হতে থাকে।

হজমে সহযোগিতা:

যখন রোজাদারের শরীর খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়, তখন কলিজায় অবস্থান করা আগে থেকেই মজুদ কৃত খাদ্য, তথা গ্লাইকোজেন খাদ্যে রূপান্তরিত হয় এবং শরীরের উপস্থিত চাহিদা মিটিয়ে দেয়। কলিজায় মূলত শর্করা জাতীয় খাবার জমা থাকে। ফলে কলিজায় গ্লাইকোজেন কমে যাবার কারণে রক্তে চিনির পরিমাণ কমে যায়। যার কারণে রোজাদার দুর্বলতা এবং কিছুটা অবসাদগ্রস্ত ভাব অনুভব করে।

তা স্বত্বেও রোজাদারের হতাশ হবার কিছু থাকেনা। কেননা তখন হজম শক্তি পুরো দমে শরীরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদার করে। চর্বি যত ভাঙ্গতে থাকে পরিষ্কারের কাজও তত বাড়তে থাকে। পাকস্থলী ও অন্ত্রের দেওয়ালে আটকে থাকা আবর্জনা খুলে আসে। লালাগ্রন্থি ও মাংসপেশি খুলে যাবার কারণে সেখান থেকে আবর্জনা গুলো অতি সহজে বেড়িয়ে আসে।

রোজা শুরুর প্রথম কয়দিন কিডনি নতুন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিডনি বুঝতে পারে এই কয়দিন শরীরে খাদ্য সরবরাহ কমে গিয়েছে, তাই সে শরীরের অতিরিক্ত লবণ ও পানি বের করে দেয়। যার কারণে রোজার প্রথম কয়দিন অধিক মূত্র ত্যাগের ভাব পরিলক্ষিত হয়। তবে এর ফলে শরীরে ব্লাড প্রেশার কমে যায়। এই ব্যতীত শরীরের পুরো অবকাঠামো পরিষ্কার ঝরঝরে হয়ে উঠে। প্রচুর পরিমাণ প্রয়োজনীয় হরমোন সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে এবং ঘাটতি হরমোনের অভাব মুছে ফেলে।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া:

রোজার সময় যেহেতু দেহাভ্যন্তরে পরিষ্কারের কাজ চলে, সেজন্য বাহিরে তার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যেমন, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, শরীরের গন্ধ, মাথা ব্যথা, শারীরিক আলস্য ও ঢিমেতালে ভাব দেখা দেয়। রমজানের প্রথম সপ্তাহে এই ভাব চালু থাকতে পারে। দুই অথবা তিন সপ্তাহ পরে শরীর থেকে সকল বর্জ্য চলে যাবার কারণে উপরের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া চলে যায়।

রমজানের এই খাদ্য তারতম্যের কারণে শরীরের তাপমাত্রা হেরফের হয়। তবে শরীরের বাৎসরিক ম্যানটেন্যান্স প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে এবং

বছরান্তে একটি তাজা ও ঝরঝরে শরীর পেতে, রোগমুক্ত ও বিষমুক্ত দেহ পেতে, অবসাদ মুক্ত ও উচ্ছল মন পেতে; এই সামান্য অসুবিধাটি হিসেবের খাতায় খুবই নগণ্য।

আসুন আমরা রমজানের রোজা ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে দুটি করে রোজা রাখার অভ্যাস করে তুলি। সেটাও যদি না পারি তাহলে প্রতি মাসের মাঝামাঝি অন্তত তিনটি রোজা রাখার অনুশীলন করি। সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন নির্মাণ করতে এই পরামর্শ গুলো দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর রাসুল মোহাম্মাদ (সাঃ) এর মাধ্যমে।

বিষয়: বিবিধ

৩৩৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File