রাজনীতির সমীকরণ! বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামীলীগ

লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৩:২২:৫৯ দুপুর

জামায়াতের অবস্থা মূল্যায়ন:

জামায়াতের উপর বিপদ, মুসিবত আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে আছে। দলের উপরের সারির প্রায় সিংহ ভাগ নেতাই এখন জেলে বন্ধী। যারা বাহিরে আছে তারা প্রায় তিন বছর ধরে আত্মগোপনে আছে। পালিয়ে থাকা এসব নেতারা বিদেশে পালিয়ে যাননি আবার রাজনীতি থেকেও বিদায় নেয় নি। প্রতিকুল পরিবেশে বড় সাহসিকতার সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে। অনেক নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের মত শাস্তির চিন্তা নিয়ে প্রতিটি দিন পার করতে হয়। প্রচুর কর্মীরা জেলে। তাদের মামলা গুলোতে জামিনের ব্যবস্থা নাই। একবার জেলে গেলে অনিষ্ট কালের জন্য সেখানে থাকতে হবে এই কথাটি তাদের সবার মাথায় থাকে। দাগী আসামী মুক্ত করেই জেল খালি করা হচ্ছে শুধু তাদের জন্যই।

যে সব নেতা-কর্মীরা জেলের বাহিরে আছে তাদের সমস্যাও কম নয়। তারা নিজের বাড়িতে থাকতে পারেনা। চাকুরীতে যেতে পারেনা। অনেকের চাকুরী চলে গিয়েছে জামায়াত শিবির করার সন্দেহে, অফিসে গরহাজিরার অজুহাতে। অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিত্য নৈমিত্তিক হামলার মুখে থাকে। শিবিরের ছেলেদের চিকিৎসা সেবা দেবার অপরাধে কত ডাক্তারকে মার খেতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নাই। শিবিরের কোন ছেলে আহত হলে মৃত্যুই তার কেবলমাত্র ঠিকানা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

জামায়াতের বৃদ্ধ নেতারা জেলে, অনেক নেতার বিরুদ্ধে হুলিয়া, নবীন নেতাদের অনেকে হাজতে তারপরও তারা একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি। এটাই সরকারের বড় দুঃচিন্তার কারণ। নেতা-কর্মী যারা যে অবস্থায় আছেন তারা ঝিমিয়ে পড়েন নি! প্রত্যেকে নিজেদের ক্ষমতা অনুসারে দলকে সাহায্য করে যাচ্ছে। আর্থিক, দৈহিক, নৈতিক সহযোগিতার সাথে সাথে দলের বিপদের দিনে সাথে থাকছেন। এমনকি যারা প্রবাসে আছে, তারাও সাধ্যমত নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে, হাত খুলে ধরেছে! যে দেশে যিনি আছেন, তিনি সে দেশে বসেই পরিবার পরিজন নিয়ে আন্দোলনে কাঁধে কাঁধ লাগিয়েছে। শিবিরের পুরানা সকল নেতারা দলের দুর্দিনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে! তারা দেশে বিদেশে সর্বত্র সমান ভাবে সবর ও সোচ্চার। এতে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের হিম্মত বেড়েছে বহুগুণে। যার কারণে হাতে প্রাণ নিয়েও আহত বন্ধুকে উদ্ধার করে আনার জন্য নিজে গুলি খাবার জন্য বুক পেতে দিচ্ছে।

বিএনপির মূল্যায়ন:

বিএনপির অবস্থা জামায়াতের চেয়ে শোচনীয়। জামায়াত সে সমস্ত কর্মসূচীতে সরকারী দলনের মুখোমুখি হয়। বিএনপি ভীত হয়ে সে ধরনের কর্মসূচী নেওয়া থেকে বিরত থাকে। বিএনপি মূলত হুঙ্কারের মাধ্যমে নিজেদের কর্মসূচীকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। সরকার তাদের হুঙ্কারকে তর্জন-গর্জনের চেয়ে বেশী কিছু নয় বলে পাত্তা দিয়ে চায়না। গর্জনের মাত্রা বাড়ানোর কারণে সরকার তদের মহাসচিব কে দুইবার জেলের খাঁচায় রেখেছিল। জামায়াতের ক্ষমতা সরকার ইতিমধ্যে পরীক্ষা করেছে। বিএনপির ক্ষমতা সম্পর্কে সরকার সম্যক অবগত। তাই সরকার যথেষ্ট সাহস নিয়ে এবার দলীয় প্রধানকে জেলের প্রকোষ্ঠে ঢুকাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বর্তমান বিএনপির নেতৃত্বে একদল বুড়োর সমাবেশ ঘটেছে। যাদের প্রায় সকলের বাতব্যধী, গ্যাস্ট্রিক, ডায়াবেটিস আর কোলেষ্টেলোরেল সমস্যা আছে। বয়স বাড়লে মানুষের মনোবলের হ্রাস পায়, আকাঙ্ক্ষা ছোট হয়ে আসে, নিজেকে গুছিয়ে নিতে চায়, সন্তানেরা নিজেদের মত ব্যস্ত হয়ে পড়ে বলে দুনিয়ার জীবনের প্রতি আসক্তি হারায়। অধিকন্তু নিজের যৌবন কালের উত্তাল দিন গুলোর হিসেব কষে এবং ভাবতে থাকে পুরোটাই ভুল করেছি, তাই আগত যুবক দের জন্য তাদের ত্যাজ-উদ্দীপক কোন লক্ষ্য থাকেনা। তাছাড়া এটাতে জেল জুলুমের চরম ভয় ও জিল্লতি তো আছেই। তাই মুখে বজ্রের কথা থাকলেও হৃদয়ে থাকে হতাশা। ফলে পুরো দেহ মনে সেই ধারনা প্রতিষ্ঠিত হয়, লেগে থাকলে যদি ক্ষমতা এসেই যায় ক্ষতি কি? যদি নাই আসে তাহলে লোকসান কি? বর্তমান বিএনপিকে এই রোগে মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত করেছে। সরকারও বুঝে গিয়েছে রোগের খবর তাই ওঝা বৈদ্যের মত চিকিৎসা দিচ্ছে।

বিএনপি ভাবছে, যুদ্ধাপরাধের অজুহাত তুলে সরকার যদি জামায়াত কে মেরে-ধরে শক্তিতে আধা করে দেয়, তাহলে ক্ষতি কি? জামায়াত তখন গায়ে পড়েই বিএনপির সাথে থাকতে চাইবে! যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে বিএনপি এতদিন চটকদার ভঙ্গিতে কথা বলেছিল। ভাবখানা এমন জামায়াতকে তাদের জোট-চ্যুত না করে, নেতাদের বিরুদ্ধে এমন রায় দেওয়া হউক যাতে নেতারা দীর্ঘদিন জেলে থেকেই মরে যায়। মারা যাবার পরে জামায়াত নেতাদের জানাজা নামাজে শরীক হয়ে বলবেন আহা খুবই গুণী মানুষ ছিলেন, সরকারী অত্যাচারে জেলেই জীবনাবসান হল। বিএনপির দুই জন নেতাও একই কায়দায় জেলে আছেন, তারা সে কথাটিও ভুলে গেছেন। আদালত থেকে রায় বের হবার পরে তাদের হয়েছে বোবা দশা। বোবার যেহেতু শত্রু নাই, তাই এই ব্যাপারে বোবা থাকাই উত্তম! তারা শুকুনের মত দোয়া করে যাচ্ছে, যাতে জামায়াত শক্তিতে আধা হয়ে যাক, যাতে করে বিএনপি ছাড়া তাদের গত্যন্তর না থাকে। জাতির মুক্তি দুরে থাক, তারা নিজেরাও জানেনা তাদের মুক্তি কিভাবে হবে বরং সামনের দিনগুলোতে আগমনী বিপদ তারা কিভাবে সামাল দিবে, এই ব্যাপারেও তারা বে খেয়াল। দৈব-দুর্বিপাকে পড়ে জনগন যদি ভোট দেবার সুযোগ পায়! তাহলে ধানের শীষে ভোট দিবে। এই আস্তা বিশ্বাস ব্যতীত বিএনপির আর কোন ভরসা নাই।

জাতীয় পার্টি:

সরকারের মিত্রদের মাঝে জাতীয় পার্টির দশা খুবই করুন। সরকার দলটিকে হাসতেও দিচ্ছেনা, কাঁদতেও দেয়না। এরশাদ হাড়ে গোশতে টের পাচ্ছেন এমন এক কাঁকড়ার আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়েছে। যার আলিঙ্গনে বুক লাগালে জ্বলতে হয় পিট লাগালে কাঁটায় বিধতে হয়। দলের আদর্শ না থাকলে লক্ষ্য থাকেনা, লক্ষ্য না থাকলে উদ্দেশ্য সঠিক হয়না, উদ্দেশ্যহীন দল ব্যক্তিতন্ত্রে পরিণত হয়। এরশাদ মারা গেলে দলের জানাজা নামাজ ও সাথে সাথে হয়ে যাবে। রওশন এরশাদ আর জিএম কাদের চল্লিশা দেবার জন্য কিছুদিন সময় পাবেন।

বাম রাজনীতি:

কমিউনিস্টদের মুখগুলো কিভাবে বন্ধ রাখতে হয়, আওয়ামী সরকার ভালই রপ্ত করেছে। তাদের উদাহরণ সেই বাচ্চা-ওয়ালা মুরগীর মত। মুরগী বাচ্চাদের পেটের নীচে রেখে, আহত বিচ্ছুকে খেতে দেয়। বাচ্চারা মায়ের পেটের নীচে উষ্ণতার মাঝে থেকে আহত বিচ্ছুকে নরম চঞ্চু দ্বারা আঘাত করে। কমিউনিস্টদের কিছু আর্থিক খয়রাত প্রদান ও ধর্মীয় শক্তির বিরুদ্ধে কথা বলতে দিলে খুশীতে গদগদ হয়। শেখ হাসিনা তাদের লোভ ও লক্ষ্য কোথায় তা রগে রগে বুঝেন। তাই তিনি তাদের সুবিধা দিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছেন, জামায়াতের বিরুদ্ধে বলতে দিয়ে জিহ্বার অনুশীলন চালিয়ে নিচ্ছেন। মুরগীর বাচ্চা বড় হলে নিজেই একদিন বাচ্চাদের ঠুকর মেরে বিদায় করেন, হাসিনাও তাই করবেন। তখন তারা দুকুল হারা ইঁদুরের মত হবে, বন্যায় ভাসা ব্যতীত কোন গত্যন্তর থাকবে না।

মূলত বামপন্থিদের বুড়ো নেতারা গত হলে, দলের ইতিহাস ও গত হয়ে যাবে। বাজার অর্থনীতির গণচীন, রাশিয়া, পোল্যান্ড সহ ইউরোপের বহুদেশ নিজেরাই প্রমাণ করেছেন এই তন্ত্রকে জাদুঘরে রাখার সময় হয়েছে। বাংলাদেশের বাম পন্থি যারা শেষ পর্যন্ত জীবিত থাকবেন তারা আওয়ামীলীগের সানাই হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

আওয়ামীলীগের মূল্যায়ন:

সবাই দেখতে পাচ্ছে আওয়ামীলীগের অবস্থা। তারা বিএনপিকে নিয়ে এই মুহূর্তে বেশী ভাবা-ভাবিতে নাই। বিএনপিকে সংসদ এবং সড়ক দুই স্থান থেকে বিদায় করেছে। সরকার ভাল করে জানে বিএনপির নৈতিক বলের অভাব রয়েছে। সরকার নিজেরা দুর্নীতি করলেও বিএনপির দুর্নীতির কথা গুলো এমন ভাবে বলতে পারে, যেন বিএনপি এবং দুর্নীতি দুটো সমার্থক জিনিষ। দেখা গেছে বিএনপির নেতারা সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে যত জোড় গলায় কথা বলতে পারে, দুর্নীতির বেলায় সেটা পারেনা। রেখে ঢেকে কথা বলে। সরকার এই সুযোগ কড়ায় গণ্ডায় উশুল করে। সংসদের বাহিরে বিএনপির বিরুদ্ধে এই হাতিয়ার সমানভাবে সচল।

জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যেভাবে একটি শ্বাস নেবার জন্য রোগী বলহীন শরীরে যেভাবে প্রবল ঝাঁকুনি মারে, সেভাবে আওয়ামীলীগ সমুদয় শক্তিকে জোগাড় করেই প্রবল ঝাঁকুনি মারবে, আগামী বারে জিতার জন্য। দেশে গৃহযুদ্ধ লাগুক কিংবা পদ্মা, মেঘনা, যমুনার ব্রিজ ভেঙ্গে কর্ণফুলী নদীতে পড়ুক কিংবা দেশের অর্ধেক ভারতে দখল করুক। সব কিছুকে অবজ্ঞা করে যাবে, নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে যে কোন অবস্থাতেই সামনের নির্বাচনে তাদের জিততেই হবে।

যদি আওয়ামীলীগের আগামী নির্বাচনে পরাজয় হয়, তাহলে তা হবে কোমর ভেঙ্গে জড়সড় হয়ে মরার মত ঘটনা। মানবতা-বিরোধী যে ট্রাইব্যুনাল জামায়াতকে সাইজ করার জন্য বানানো হয়েছে, সেই একই ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিডিআরের মামলা দিয়ে পুরো দলটিকে আধা করে দেওয়া সম্ভব হবে। শেয়ার বাজার লুণ্ঠনের দেনা আদায়, ব্যাংকের তহবিলকে পুনরায় বমি করিয়ে বের করা, পদ্মা সেতুকে তলা থেকে তুলে আনা, দলের রত্ন সন্তানদের যথোপযুক্ত সম্মান করার দায়িত্ব কোনটাই সরকারকে নিতে হবেনা। জাতির হতাশাগ্রস্ত ক্রোধান্ধ উত্তেজিত জনতা নিজেরা নিজেদের মত করে উশুল করে নিবে।

এসব হিসেব নিকেশ খতিয়ান দাখিলার মর্ম আওয়ামীলীগের মত একটি পুরানা দল বুঝেনা ব্যাপারটি এমন নয়। তাই সবার আপত্তি সত্ত্বেও তারা নিজেদের ভোট নিজেরা তুলে নেবার ধান্ধায় আছে। বিএনপি ধান্ধায় আছে বিদেশীদের কাছে নালিশ জানালে ব্যাপারটি ফলপ্রসূ হবে। মূলত সবাই সবার স্বার্থ আগে বুঝে, কেউ বেকুব নয়।

আমেরিকা বাংলাদেশে গ্যাসের বাজার খুঁজে।

ইসরায়েল ১৬ কোটি মানুষকে পণ্যের খদ্দের বানাতে চায়।

ভারত রাস্তা, ঘাট, পুল, সাকো, নদী বন্দর ব্যবহার করতে চায়।

চীন নিজেদের নিরাপদ রাখতে বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা রক্ষা করতে চায়।

ইউরোপ কম সুদে অর্থ বিনিয়োগ করে মহাজনী দাদন ব্যবসা করতে চায়।

বামপন্থিরা ধর্মীয় দলকে নির্মূল করে, নিজেদের মতবাদ চাপিয়ে দিতে চায়।

আওয়ামীলীগ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে, সন্ত্রাসী দিয়ে জাতিকে শিক্ষা দিতে চায়।

জামায়াত জীবনের বিনিময়ে ও উপরের এদের আগ্রাসী চিন্তাকে প্রতিহত করতে চায়।

বিএনপি যে কোন প্রকারে হোক আগামী বার ক্ষমতায় আসতে চায়।

জনগণ চায় সন্ত্রাসী মুক্ত সমাজ, দুষন-মুক্ত বায়ু, বিষমুক্ত খাবার, চিন্তামুক্ত ঘুম, কম দামে পণ্য।

সুতরাং উপরের এই চাহিদা গুলোর নিরাপত্তার মধ্যেই রয়েছে কারো বন্ধুত্বের আনাগোনা। সুতরাং শর্ত কোরবানি ব্যতীত কোন বন্ধুত্ব আশা করা অনর্থক। জামায়াত, বিএনপি, জনগণের শর্ত ব্যতীত বাকী শর্ত শতভাগ পূরণে আওয়ামীলীগ শতভাগ সফল। সুতরাং তারা যেভাবেই ক্ষমতায় আসুক কেউ না চিল্লালেও অন্তত প্রতিবাদ করবেনা।

বিষয়: বিবিধ

১২৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File