মহামতি সম্রাট অ্যালেক্সান্ডারের মৃত্যুকালে শিক্ষণীয় অসিয়ত!
লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ২৬ জুন, ২০১৩, ০৫:৩৭:৪৯ বিকাল
মহামতি সম্রাট অ্যালেক্সান্ডার মৃত্যুশয্যায় সামরিক বাহীনির সকল জেনারেলদের কে তলব করে বললেন, আমি তিনটি অসিয়ত তথা শেষ ইচ্ছা ব্যক্ত করে যাচ্ছি, যা তোমরা লিখে রাখবে এবং আমার মৃত্যু পরবর্তী সময়ে এই তিনটি অসিয়ত যথাযথ হুবহু বাস্তবায়ন করবে।
অসিয়তগুলো নিম্নরূপ:
১. সেরা চিকিৎসকেরা আমার লাশের কফিন বহন করবে।
২. আমার সঞ্চিত ধন-সম্পদ (নগদ অর্থ, সোনা-রূপা, রত্নালঙ্কার) আমার লাশের সাথে গোরস্থানে নিয়ে যাবে। আমাকে কবরস্ত করার উদ্দেশ্যে মৃত্যু শোভাযাত্রায় অংশ-কারীদেরকে খোলা ময়দানে এসব সম্পদরাজি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, খুলে-মেলে দেখাবে!
৩. আমার হাত দুটি উন্মুক্ত অবস্থায় কফিনের বাহিরে বের করে রাখবে, যাতে সকলেই আমার দুটি শূন্য হাত দেখতে পায়!
অ্যালেক্সান্ডারের অতীত চিন্তা, কর্ম, লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে বিপরীত ধরণের অসিয়ত শুনে একজন জেনারেল অতি কৌতূহলে প্রশ্ন করলেন, এই আশ্চর্যজনক সিদ্ধান্তের ব্যাপারটি কি আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করবেন?
মহামতি অ্যালেক্সান্ডার বলা শুরু করলেন,
১. সেরা চিকিৎসকেরা লাশের কফিন বহন করার অর্থ হল, “মানুষ জানতে শিখুক, যে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়, তার বেঁচে যাবার কোন সম্ভাবনা থাকে না। দেশের সেরা চিকিৎসকেরা তাকে চিকিৎসা সেবা দিলেও, তাদের এমন কোন শক্তি থাকেনা যে, নিজেদের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টায় তাকে বাঁচিয়ে রাখবে”।
২. অর্জিত সম্পদ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, খুলে-মেলে দেখানোর অর্থ হল, “সবাই দেখুক, যে সব সম্পদ অর্জন করার জন্য আমি পুরো দুনিয়া জুড়ে অভিযান চালিয়েছি, তা দুনিয়া থেকেই আহরিত হয়েছিল। আমার মৃত্যুকালে বিপুল সম্পদের কিছুই আমার সাথে যায়নি, অধিকন্তু সমুদয় সম্পদরাজি অন্যদের উদ্দেশ্যে পৃথিবীতেই রেখে যাচ্ছি”!
৩. কফিনের বাহিরে দুটি শূন্য হাত প্রদর্শনের উদ্দেশ্য হল এই কথা বুঝানো যে, “দুনিয়াতে শূন্য হাতে আমার আগমন হয়েছিল এবং শূন্য হাতেই বিদায় নিচ্ছি, যদিও দুনিয়ার সমুদয় সম্পদরাজি আমার করতলগত ছিল! আসলে চমৎকারিত্ব উপকরণের এসবের কোনটাই সম্পদ ছিলনা। মূলত দুনিয়ার প্রকৃত সম্পদ হল ‘সময়’! কেননা সময়ের মাত্রা সীমিত! আমরা প্রচেষ্টার মাধ্যমে বহু সম্পদ বাড়াতে পারি কিন্তু প্রাণপণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সময় বাড়াতে পারিনা!
কারো জন্য যদি কিছুটা সময় ব্যয় করা হয়, তাহলে আমাদের জীবনের একটি অংশকে তার জন্য, ছেড়ে দিয়েছি, যেটা আর কোনদিন ফিরে পাওয়া যাবেনা! মানুষকে জানাতে চাই, বস্তুত সময় হল সবচেয়ে বড় সম্পদ এবং এটাই আমাদের জীবন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআন মজিদে বলেছেন, “সময়ের কসম! সকল মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। তবে তারা ব্যতীত, যারা দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করেছে আল্লাহর উপর, সৎকাজ করতে থেকেছে, একজন অন্যজনকে সত্য-ন্যায় কথার ও ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিতে থেকেছে”। সূরা আসর – আল কোরআন।
অ্যালেক্সান্ডারের সংক্ষিপ্ত জীবনী। (উইকিপিডিয়া থেকে)
মহামতি অ্যালেক্সান্ডারের (Alexander the great) (জন্ম - জুলাই খ্রিস্টপূর্ব ৩৫৬, মৃত্যু জুন ১১, খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩)পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সফল সামরিক প্রধান। তিনি তৃতীয় অ্যালেক্সান্ডার বা মেসিডনের রাজা হিসেবেও পরিচিত। তিনি ছিলেন মেসিডোনিয়ার শাসনকর্তা। মেসিডোনিয়া বর্তমান গ্রীসের অন্তর্গত একটি অঞ্চল। তার পিতা ফিলিপ ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা। তার মৃত্যুর পূর্বে তিনি পরিচিত পৃথিবীর বেশির ভাগ অঞ্চল (টলেমির মানচিত্র অনুযায়ী) জয় করেছিলেন। অ্যালেক্সান্ডার তার সামরিক কৌশল ও পদ্ধতির জন্য বিশ্ব বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি পারস্যে অভিশপ্ত অ্যালেক্সান্ডার নামেও পরিচিত, কারণ তিনি পারস্য সাম্রাজ্য জয় করেন এবং এর রাজধানী পারসেপলিস ধ্বংস করেন। তিনি ফারসি ভাষায় "ইস্কান্দর, মধ্য পশ্চিমা স্থানে যুল-কারনাইন, আরবে আল-ইস্কান্দার আল কাবের", উর্দুতে সিকান্দার-এ-আজম, পস্তুতে স্কান্দর, হিব্রুতে "আলেকজান্ডার মোকদন, আরমেনিয়ান'য়ে ট্রে-কারনাইয়া" হিসেবে পরিচিত। তার এজাতীয় কিছু নামের অর্থ "দুই শিং বিশিষ্ট" (যুল-কারনাইন, ট্রে-কারনাইয়া), আবার উর্দু ও হিন্দিতে সিকান্দার যার অর্থ পারদর্শী" বা অত্যন্ত পারদর্শী।
অ্যালেক্সান্ডারের পিতা দ্বিতীয় ফিলিপ তার শাসনামলে গ্রিসের নগর রাষ্ট্রগুলোকে নিজের শাসনাধীনে আনেন। অ্যালেক্সান্ডার নিজেও এই নগররাষ্ট্রগুলিকে একত্রিত করতে অভিযান চালান। কারণ ফিলিপের মৃত্যুর পর এগুলো বিদ্রোহ করেছিল। এরপর অ্যালেক্সান্ডার একে একে পারস্য, আনাতোলিয়া, সিরিয়া, ফোনিসিয়া, জুডিয়া, গাজা, মিশর, ব্যাক্ট্রিয়া এবং মেসোপটেমিয়া জয় করেন। তার সাম্রাজ্য মেসিডোনিয়া থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পিতার মৃত্যুর পর অ্যালেক্সান্ডার পশ্চিমে অভিযান চালান ইউরোপ জয় করার জন্য। এরপর তিনি পূর্বে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেন, কারণ শৈশবে তার শিক্ষক বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক, বিজ্ঞানী এরিস্টটল তাকে বলেছিলেন কোথায় ভূমি শেষ হয় এবং মহাসাগর শুরু হয়। আলেকজান্ডার তার সেনাবাহিনী ও প্রশাসনে বিদেশী (বিশেষ করে যারা গ্রিক বা মেসিডোনিয়ান নয়) ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করেন। এর মধ্যে কিছু জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে "একত্রীকরণ" -এর ব্যাপারে ধারণা দেয়। তিনি তার সেনাবাহিনীতে বিদেশীদের সাথে বিবাহ উৎসাহিত করেন এবং নিজেও বিদেশী মেয়েদের বিয়ে করেন। প্রায় ১২ বছরের সামরিক অভিযানের পর অ্যালেক্সান্ডার মৃত্যুবরণ করেন। ধারণা করা হয় হয়ত তিনি ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড অথবা ভাইরাল এনকেফালাইটিস্ এর আক্রান্ত হয়ে মারা যান। হেলেনেস্টিক যুগে তার অভিযানের কাহিনী লোকের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। অ্যালেক্সান্ডারের অভিযানের ফলে বিভিন্ন সভ্যতার মিলন ঘটে (মিশর, গ্রিক, পারস্য, ভারতীয়) এক নতুন সভ্যতার শুরু হয়। এই সভ্যতাকেই হেলেনেস্টিক সভ্যতা বলা হয়। গ্রিক ও গ্রিসের বাইরের বিভিন্ন সভ্যতায় অ্যালেক্সান্ডার ইতিহাসে, সাহিত্যে, পুরাণে জীবিত হয়ে আছেন।
[আমার মন্তব্য - পবিত্র কুরআনে বর্ণিত জুলকারনাইন তথা দুই শিংওয়ালা ব্যক্তি এই আলেক্সান্ডার কিনা সেটা নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। তবে কুরআনের দাবী ও ইতিহাসে বর্ণনায় মহামতি আলেক্সান্ডারের কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। তিনি ঈসা (আঃ) জন্মের ৩৫৬ বছর আগে জন্মেছিলেন, ইতিহাস যথাযথ সংরক্ষিত হয়নি, সে কারণে ইতিহাসে হয়ত অনেক কিছু যোগ হয়েছে কিংবা বাদ পড়েছে।]
বিষয়: বিবিধ
৪৯১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন