এমপি একজনকে উদ্ধার করে, তাকে বাঁচাতেই ঘটনা থেকে হাওয়া। এই লাথি ১৬ কোটি জনতার কপালে

লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ২৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:৩১:৫৭ দুপুর



মড়মড়, কড়কড় করে চোখের সামনে মাথার উপরে, পায়ের নিচের বিশাল দালানের প্রতিটি ফ্লোর যখন কাছাকাছি এসে যাচ্ছিল, তখন তার মাঝে অবস্থিত অসহায় সচেতন মানুষের কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা একটু কল্পনা শক্তি দিয়ে ভাবলেই বুঝতে পারা যায়! বলহীন, পুষ্টি-হীন শরীর গুলো যখন ফ্লোর আর পাটাতনের চাপে আস্তে আস্তে চিড়ার মত চেষ্টা হতে থাকে, তখন তার কি মর্মান্তিক দশা হতে পারে চিন্তাশীল মানুষ চিন্তা করতে গেলেই আতঙ্কে লাফিয়ে উঠবে! যারা এ দৃশ্য দেখবে, যারা উপলব্ধি করবে, যারা কল্পনা করবে, ন্যূনতম বোধশক্তি থাকলে সে নিজেকে স্থির রাখতে পারবে না!

এই ধরনের পরিস্থিতিকে তখনও কয়েক জন মানুষ তাদের ঠিকই স্থির রাখতে পেরেছিলেন। তাঁদের একজন হল, স্থানীয় ‘এমপি তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ’। আগামী নির্বাচনে তাঁর ভোট লাগবে, কর্মী বাহিনী লাগবে, তাঁকে এমপি হতে হবে। হাজার মানুষের কান্না পাথর আর লোহার খিলানে চাপা পড়ুক, এসবের চাইতে তার প্রথম প্রয়োজন তার বিশ্বস্ত কর্মী সোহেল রানাকে উদ্ধার করা! তিনি প্রথম সুযোগেই ঘটনাস্থলে গিয়ে, মাটি ফেঁড়ে বহুতল ভবনের মাটির নিচের বেজমেন্ট থেকে জনাব সোহেল রানার নাদুস নুদুস শরীর খানা উদ্ধার করতে সক্ষম হন। এমপি মুরাদের তখন হাজার মানুষের কান্নার প্রতি নজর দেবার সুযোগ কোথায়? তার আগে তাঁর পরীক্ষিত কর্মী সোহেল রানার জীবন বাঁচানোটা ফরজ হয়ে উঠেছিল।

ঘটনার পরে যখন উদ্ধারকারী সংস্থা গুলো ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে চিন্তা করছিল, নড়বড়ে স্থাপনার ভাঙ্গা ফাঁক ফোঁকর দিয়ে ভিতরে ঢুকে উদ্ধার অভিযান চালানো কতটা নিরাপদ। ঠিক তখনই একজন ভাঙ্গা ফোকর দিয়ে কচ্ছপের মত মাথা বের করে ঘোষণা করছিলেন ‘আমি একাই ত্রিশটি আহত দেহ উদ্ধার করেছি’। উদ্ধার কারীরা হাতে মাস্তুল আর পেরেক কাটার করাত নিয়ে যখন চিন্তা করছিলেন উদ্ধারকাজ কিভাবে কোত্থেকে শুরু করলে নিরাপদ হবে! ঠিক তখনই দুমড়ে মুছড়ে পড়া ভবনের যত সম্ভব ভিতরে পর্যন্ত সাধারণ মানুষ উদ্ধার কল্পে গিজ গিজ করছিল! তাঁরা তাদের সম্ভাব্য মৃত্যুর কথা না ভেবে, উই পোকার মত বিপদজনক খাঁড়ার ভিতরে নিজেদের সঁপে দিয়েছেনে! সাধারণ মানুষরে আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে বেশী সংখ্যক আহত ও নিহত মানুষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের এমপি মহোদয় একজন কে উদ্ধার করে, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘটনাস্থল থেকে উদাও হয়ে যান!

আমাদের নবনির্বাচিত মহামান্য প্রেসিডেন্ট, জীবনের শেষ সময়ে, সম্মানজনক ভাবে বিদায় নেবার জন্য নতুন করে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শফত নিচ্ছিলেন, তখন আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় এই ঘটনা নিয়েও রাজনীতি করতে চেয়েছেন। বিরোধীদলের কর্মীরা ভাঙ্গা ফাটল ধরে হ্যাঁচকা টানে ভবনটিকে কাত করিয়ে ফেলে দেন! তিনি বুঝিয়ে বলেন নি, বিরোধীদলের কর্মীরা ভেঙ্গে পড়া ভবনের ভিতরে আহত কিংবা নিহত অবস্থায় আছে কিনা? যারা এখনও ভিতরে আছে তারা সবাই বিরোধীদলের মানুষ বলে উদ্ধার কাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করবেন কিনা?

এই সরকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ঠেঙ্গিয়ে কঠোরতা প্রকাশ করতে চায় কিন্তু নিজ দলের দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায়না। বিরোধীদলের কেউ জোড়ে কথা বললেও আইন ভঙ্গ হয়, নিজ দলের মানুষেরা জনজীবন ধ্বংস করলেও কোলে তুলে আদর আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। কানা বিচার করতে করতে দেশটাকে আজ এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন যে, এই দেশে কোন কালে সুবিচার হত কিনা সেটা নিয়েই জগতবাসী সন্দেহ করে। এই ঘটনা পুরো দুনিয়া জোড়া ফলাও হয়েছে, দেশের ভাবমূর্তি একেবারেই শেষ হয়ে গিয়েছে! কোন পাগলই আর বাংলাদেশে ব্যবসা বাণিজ্য করতে যাবেনা। এমনিতেই কিছু দিন ধরেই বাংলাদেশ পৃথিবীর বিভিন্ন গন মাধ্যমের প্রধান বিষয় বস্তু হয়ে আছে।

- পুলিশের গুলিতে প্রায় ২০০ মানুষের গণহত্যা ঘটানো।

- ছাত্রলীগ পুলিশের সহযোগী বাহিনীতে পরিণত হওয়া।

- বিরোধীদলের প্রায় সকল নেতাকে জেলে পুরে মন্ত্রীদের স্বস্থি ও সন্তোষ প্রকাশ করা।

- নিজেদের অখ্যাত-বিতর্কিত মানুষ দিয়ে আন্তর্জাতিক বিচারকে হেয়-তামাসা-মস্করা করা।

- বিতর্কিত ব্যক্তিদের বিচারক নিয়োগ দেওয়া।

- পদ্মা সেতুর ঘুষ দুর্নীতি প্রকাশ, একজনের নাম প্রকাশ না করতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা।

- তাজরীনে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, দলীয় বিচারে অপরাধীদের আইনের মুখোমুখি না করা।

ফিরিস্তি লিখে শেষ করা যাবেনা। আজ প্রবাসে বাংলাদেশীরা সর্বদা নিন্দা, সমালোচনার মুখোমুখি। তাদের কে ইজ্জত করতে চায়না, মর্যাদা দিতে চায়না। দেশের মন্ত্রীরা ভিজিট ভিসায়, ট্রানজিট ভিসায় সাধারণ নাগরিক হিসেবে ভিন্ন দেশে সফরে যায়। সরকার শুধু ঢাকা শহরকে শান্ত দেখিয়ে পুরো দেশটাই শান্ত বুঝাতে চায়। পুরো দেশ ও জাতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, এটি তারা মানতে চায়না। তাদের দলীয় মাস্তানেরা হাতে পিস্তল, রিভলভার, একে-৪৭, এম-১৬ রাইফেল হাতে নেবার পরেও অসহায় ভাবে খেজুর গাছের ডগার আঘাতে গণপিটুনির মোকাবেলা করছে। পুরো দেশটাকেই একটা জ্বলন্ত দোযখ বানিয়ে ছেড়েছে। ভদ্র লোকের দেশের সরকার হলে, এই ঘটনায় এতক্ষণে পুরো সরকার পদত্যাগ করত। কিন্তু বাংলাদেশীদের পোড়া কপাল, তারা জীবনে কোনদিন ভদ্রলোক কেমন প্রাণী, তা কোন দিন দেখেনি! পায়ে কঙ্কণ পরা এই বোনটির নিস্তেজ পা পুরো জাতিকে জানিয়ে দিল, এটাই তোমাদের কপাল, তার লাশ উদ্ধারে হয়ত সাধারণ জনগণ হাত বাড়িয়েছে। তবে সে দিন বেশী দূরে নয়, আমদের সবার পা এই ফাঁদে আটকা পড়বে তখন চিল্লানোর জন্য কোন ভদ্র বনী আদম অবশিষ্ট থাকবে না।

বিষয়: বিবিধ

২১৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File