সাঈদী নিয়ে খেলাফত মজলিস নেতা আহমদ আব্দুল কাদেরের সাক্ষাতকারঃ অন্য আলোয় দেখা
লিখেছেন লিখেছেন মিডিয়া ওয়াচ ০৯ জুন, ২০১৩, ০৬:০৬:৩৯ সন্ধ্যা
খেলাফত মজলিস নেতা আহমদ আব্দুল কাদের (বাচ্চু) সাহেব একটা নাতি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেটা নিয়েই মুলত কিছু লিখা । তার সাক্ষাতকার এখানে,
Click this link
আল্লাহ তালা মানুষকে বেশ কিছু দোষ গুণ দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, তার মধ্যে মনে হয় সবচেয়ে বড় দোষ হচ্ছে নিজের ভুল রেখে ঠিক একই ভুল অন্যের মধ্যে খুজে বেড়ানো। বাচ্চু সাহেব একজন জ্ঞানী-গুনী মানুষ কিন্তু সাক্ষাতকারে তার এই মানবিক দোষটা প্রবল ভাবে ধরা পড়েছে।
কিভাবে?
ধরুন ১৯৮২ সালের শিবিরের ভাংগনের ঘটনা। তার ও তার সহযোগীদের এবং বিপরীত পক্ষের ভাষ্য যদি ধরেই নেই তাহলে তিনটি বিষয় পাওয়া যায়। ১। সেই সময়ে ঘটিত ইরানী বিপ্লব শিয়া বিপ্লব নাকি ইসলামী বিপ্লব তা নিয়ে ক্যাচাল। ২। জামাতের ১৯৭১ ইস্যু আর ৩। জামাত শিবিরকে কত টুকু নিয়ন্ত্রন করবে এটা।। এইতো?
ইরান ইস্যু ডেড। তিন নাম্বারটার পক্ষে বিপক্ষে মত আছে। সামনেও থাকবে। দুই নাম্বারটাতে উনি বেশ বিপ্লবী ভুমিকা নিয়েছিলেন, এটা বুঝাতে চেয়েছিলেন। মানে উনি ৭১ ইস্যুতে জামাতের ভুমিকার কট্ট্রর বিরোধী। আমি উনার সাথে একমত। আমিও বিরোধী। তার পরেও কথা থেকে যায়।
এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মত আছে। আসলে কি উনি ৭১ ইস্যুতে জামাত-শিবিরকে অপছন্দ করেন?
আসলে কি তাই?
কয়েক বছর আগে খেলাফত মজলিস ভেজ্ঞে তিন টুকরা হয়ে গেল। উনি একটি টুকরা নিয়ে গেলেন। সবাই জানে মজলিস মুলত বাচ্চু ভাইয়ের ব্রেইন চাইল্ড। সাক্ষাতকারেও সেটা পরিস্কার হয়। ভাজ্ঞনের ক্ষেত্রেও তিনিই মুল।
মজার ব্যাপার হচ্ছে উনি যে টুকরা নিয়ে গেলেন সেটার আমীর হচ্ছেন মাওলানা ইসহাক। মাওলানা ইসহাক কে? জানেন? মাওলানা ইসকাক হচ্ছে ৭১ পাকী বাহিনীর প্রত্যক্ষ শপদ নেয়া একজন ঘাতক। তিনি পাকিদের যুদ্ধকালীন মন্ত্রী সভার একজন সদস্য। শুধু তাই নয়, (যতটুকু মনে পড়ে) এই মাওলনা ইসহাক বেহায়া এরশাদ মন্ত্রী সভার একজন সদস্যও ছিলেন। কি আজিব! তার দলের সেক্রেটারী নিরপরাধ সাঈদীর জন্য উল্লাস প্রকাশ করছেন।
শিবিরের থাকার সময় বাচ্চু ভাই জামাতকে দিয়ে ৭১ এর ভুমিকা ক্লিয়ার করাতে পারেন নাই, কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনি একাত্তরের প্রত্যক্ষ ঘাতক একজনের আমীরত্ত্ব মেনে নিয়ে ইসলামী আন্দোলন করছেন। সেই সময়ে পাকি মন্ত্রীসভায় থাকা জামাত নেতা মাওলানা ইউসুফকে কয়েকদিন আগে গ্রেফতার করা হলো। এখন বলেন ঠিক একই অভিযোগে বাচ্চু ভাইয়ের আমীর মাওলানা ইসহাকও তো গ্রেফতার হওয়ার কথা। হলে তিনি কি করবেন? তার আমীর বা তার দল একজন প্রমানিত রাজাকারের নেত্রৃত্বে চালিত হচ্ছে কিভাবে? উনার টুকরা খেলাফত মজলিস নিজের আমীর কিভাবে রাখছেন? দলের বা আমীরের অবস্থান ক্লিয়ার করেছেন? করেননি। কেন? ৭১ প্রমানিত ঘাতকের আমীরত্ব মেনে যদি দল করা যায় তাহলে গোলাম আজম নিজামী শুধু অখন্ড পাকিস্থানের পক্ষেই নিলেন তার আমিরত্ব অস্বীকার করি কি করে?
আর এরজন্য বাচ্চু ভাইয়ের হেদায়াত/নসিয়াত/পরামর্শ আমি মানব কেন?
জোশ বনাম হুশ
উনি অযাযিত, কুরুচিপুর্ন ও মর্মান্তিকভাবে মাওলানা সাঈদির বিষয়টা এনেছেন। ১৯৮৭ সালের ঘটনা নিয়ে উনি যেটা বলেছেন সেটা উনার ভাষ্য। এর বাইরেও যে অনেক ভাষ্য আছে সেটার ধারের কাছেও উনি যাননি। ্কেন এড়িয়ে গেলেন? উনার মত জ্ঞানী ও “স্বচ্ছ” ব্যক্তির উচিত অন্য মতটাও প্রকাশ করে দেয়া। অন্য ভাষ্য হচ্ছে, উনারা সেই সময় জোশের বশে ইসলামী হুকমাত কায়েমের জন্য ঢাকা দখল করতে যাচ্ছিলেন। জামাত জেনে স্বাভাবিকভাবে বাধা দিয়েছেন। সাঈদী সেই সময় জামাতের রুকন। “একমত না হলে” একটি দল তার কর্মীকে সেই কাজ থেকে বিরত রাখবেন সেটাই স্বাভাবিক নয়কি? উনি হলে কি করতেন? দলের সিদ্ধান্তের বাইরের তার কর্মী গেলে, বাধা দিবেন না?
আজকে হেফাজতের “জোশ” উনার চোখে ধরা পড়ছে, কারন উনি দূর থেকে দেখেছেন, আর বুঝার মত তার যথেষ্ট বয়শও হয়েছে। তাহলে সেই সময় ঢাকা দখল করে ইসলামী হুকমাত কায়েমের খোয়াবকে যদি দূর থেকে বাবার বয়সি গোলাম আজম-নিজামী “জোশ” মনে করে তার কর্মীকে বাধা দেন, তাহলে ক্ষতি কি ছিল?
সাঈদী ইস্যু
তার সাক্ষাতকারে মাওলানা সাঈদী ইস্যুকে হাইলাইটস করাকে করুচিপুর্ন ও মর্মান্তিক বললাম নানা কারনে। উনি সেটাকে বেশ রশিয়ে রশিয়ে বলেছেন (ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বাড়ি করা ইত্যাদি। অন্যরা তো বলতে পারে, আরে ভাই ৮৫ সালে জন্ম নেয়া ইসলামী ব্যাংক কি ৮৭ সালে ব্যাপোক হারে বাড়ি করার টাকার দেয়ার ক্ষমতা ছিল!)।
১৯৮৭ সালে শাহারিয়ার কবীর লিখেছেন “একাত্তরের ঘাতকরা কে কোথায়”, সেটা ঐ পক্ষের কাছে রাজাকার বিষয়ক বাইবেল, এখানে সাঈদীর নাম নাই। সেই সময় কোন পত্রিকা , ডকুমেন্টসে তার নাম নাই। সাবেক (১৯৯২ গণআদালতের অন্যতম নেতা) ঘাদানিক আসিফ নজরুল মনে করেন সাঈদীর বিরুদ্ধে কোন উল্লেখযোগ্য প্রমান নাই, সাবসেক্টার কমান্ডার ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারি শাহজাহান ওমার, সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা সাদেক খোকা ও কাজী জাফর মনে করেন, এমনকি হাল আমলের সুশীল ব্যারি তুহিন মালিকসহ অসংখ্য মানুষ মনে করেন সাঈদী নিরপরাধ। এমন একজন নিরাপরাধ মানুষ ফাসির রায় বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষমান, তাকে নিয়ে সাক্ষাতকারে মুল উপজিব্য করা আর যাই হোক কোন ইসলামী দলের নেতার মুখে খুব একটা মানায় বলে আমি জানি না।
বিষয়: বিবিধ
৬০৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন