"খুন কা রিশ্তা" [সিলাতুর রেহম]

লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ১৮ অক্টোবর, ২০১৬, ০৯:৫৮:২৮ সকাল

"খুন কা রিশ্তা" [সিলাতুর রেহম] বড় কঠিন চিজ। এটা ভেঙ্গে দিলে আর-রাহমানুর রহীমের বিরাগ ভাজন হয়ে যেতে হবে। আর তাঁর বিরাগভাজন হলে জান্নাত হারাম।

আমার জন্ম আমার আম্মার গ্রামে। আমার আব্বা আমার দাদার ইন্তিক্বালের পরে আমাদের এই গ্রামে বসত করতে আসেন তাঁর ফুফাতো ভাইয়ের সাথে। এখানেই তিনি বিয়ে করেন। আমার নানাদের বিরাট গোষ্ঠি। আমি বুঝ হবার পর থেকে যেদিকে ঘুরতে যাই সেদিকেই শুধু মামা আর খালাদের ভীড়। আমার আপন খালা একটা মাত্র। তাঁকে বিয়ে দেয়া হয়েছে দূরের গাঁয়ে। সেখানে মাঝে মাঝে বেড়াতে যেতাম। আমার আপন মামুরা ১৯৬০ এর দশক থেকেই ঢাকায় থাকেন। তাই মাঝে মাঝেই আমরা ঢাকায় বেড়াতে যেতাম। কিন্তু নিজ গ্রামের আশে পাশে সব বাড়িতেই আমার খালা আর মামুদের ভীড়। রাস্তায় বেরুলেই কারো ডাক শুনলে যা শুনতাম তা শুরু হত "বাইংনা" [ভাগিনা] দিয়ে। কোন একটা বাড়িতে ঢুকলে "ও বইনফুত" খালাদের ডাক শুনতাম। এই খালাদের অনেকে আবার একই সময়ে মামীও হতেন। কিন্তু কাউকে মামী ডাকা হত না। খালাম্মা বা খালাজী ডাকতাম। এঁদের স্বামীদের ডাকতাম মামা আর তাঁদেরকে খালা। এই অবস্থা এজন্য হত যে এদের অনেকেই নিজেদের গোষ্ঠির ভেতরের চাচাতো ভাই-বোন - একদম আপন না। তাই এদের স্বামীরা হতেন আমার মায়ের ভাইসাব [ভাই] আর তাঁরা হতেন আমার মায়ের বু [বুবু], আমার মাও আবার অনেকের বু।

গোষ্ঠির ভেতরের কেউ কেউ আবার আমার নানাদের অত্যন্ত কাছের। এদের কাছে আমি তাদের আপন ভাগিনার মতন। এমন মামাদের ছেলেমেয়েদের কাছে আমার মা আপন ফুপুর মত আর আমরা তাদের আপন ফুপাতো ভাইয়ের মত। নিউ ইয়র্কে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে এরকম এক আপার সাথে দেখা। উনার আব্বা আর আমার বড় মামা দেখতে অনেকটা একই রকমের চেহারার। একই গোষ্ঠির লোকদের অনেকের চেহারার এ রকম মিল থাকেই। আপা আমাকে দেখে খুব আবেগী হয়ে পড়লেন। তিনি তাঁর স্বামীকে ডেকে খুব আবেগের সাথে বলছেন, "এই দেখ, এই যে সিরাজ।" দুলাভাই কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না? তাঁর ভাবে মনে হল "কোন সিরাজ আবার?" কিন্তু আপার কাছে আমি তাঁর অনেক দিনের না দেখা ফুপাতো ভাই সিরাজ।

কিন্তু সেই ছেলে বেলাকার এই মামু ও খালাদের আমার অনেক দিন দেখা হয় নাই। ১৫ বছর বয়সে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হতে আসার পর আর কখনো এক নাগারে অনেক দিন আমার গাঁয়ে থাকা হয় নি। তারপর একসময় তো বিদেশেই চলে এসেছি। এর মাঝে আম্মার সাথে কথা হলে শুনি অমুক মামা বা খালাজী মারা গেছেন। জিন্দেগীর দরিয়া অনেক দূর গুজরে গেছে। তাঁরা যে সব বয়স্ক হয়ে গেছেন, আমার চোখে তা ভাসে না। আমি তাদেরকে এখনও আমার কল্পনায় সেই আমার ফেলে আসা সময়ের মত দেখতে পাই। আল্লাহ তাঁদের সবার উপর রহম করুন!

রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ

مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ، وَيُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ، فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ

যে চায় যে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেয়া হোক ও হায়াত দারাজ করে দেয়া হোক, সে যেন অবশ্যই আত্মীয়তার সম্পর্ক [খুন কা রিশ্তা] বজায় রেখে চলে।" [আল-বুখারী, হাদীস নং ৫৯৮৬]

ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ

"তোমাদের বংশ লতিকা সংরক্ষণ করো, যাতে তোমরা আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে পারো। নিজের নিকটাত্মীয়দেরকে দূরে রাখবেনা যদিও তারা দূরে বসবাস করে। একইভাবে দূরসম্পর্কের আত্মীয়দেরকে কাছের আত্মীয় বানাবেনা যদিও তারা নিকটে বসবাস করে। ক্বিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তির সামনে তার রেহমের সম্পর্ক এসে দাঁড়াবে এবং হয় সাক্ষ্য দেবে যে সে রেহমের সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যদি সে তা সত্যি বজায় রাখে; অথবা সাক্ষ্য দেবে যে সে তা ভেঙ্গে ফেলেছে, যদি সে আসলেই তা ভেঙ্গে ফেলে।" [আল-আদাবুল মুফরাদ; হাদীস নং ৭৩]

রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ

إِنَّ الرَّحِمَ سُجْنَةٌ مِنَ الرَّحْمَنِ، فَقَالَ اللَّهُ مَنْ وَصَلَكِ وَصَلْتُهُ، وَمَنْ قَطَعَكِ قَطَعْتُهُ

"রেহম একটা শব্দ যা আর-রহমান থেকে উদ্ভূত; আর আল্লাহ বলেছেন, 'আমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবো যে তোমার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে এবং আমি তার থেকে বিচ্ছিন্ন হবো যে তোমা হতে বিচ্ছিন্ন হয়।'" [আল-বুখারী, হাদীস নং 5988]

বিষয়: বিবিধ

১৪২৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378802
১৮ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ১২:৪৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান শাইখ । কুব ভালো লাগল। আল্লাহ যেন ক্ষমা করেন এবং তার অনুগত বান্দা হিসেবে কবুল করেন।
378812
১৮ অক্টোবর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩৯
ইয়াফি লিখেছেন : কিছু রক্তের সম্পর্কীয় আত্বীয় সুযোগ পেলে গীবত করে আর ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাদের সাথে কিভাবে সম্পর্ক রাখা যায়? ধন্যবাদ
378835
১৯ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ০২:৩৭
নেহায়েৎ লিখেছেন : আমার নানার বংশ বিশাল! তারা অনেক দূরে দূরে থাকে। অনেকেই ঢাকায় থাকে কিন্তু জানি না কোথায় থাকে! দেখা সাক্ষাৎ হয় না। তবে মনে পড়ে তাদের কথা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File