নারীদের উপর জুমু'আহর [জুমা] সালাত ফরজ[!!!!??????]
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ২১ আগস্ট, ২০১৬, ০৪:২৮:০৮ বিকাল
আমরা ইসলামের বিগত ১৪০০ বছরের ইতিহাসে যা দেখতে পাই তা হলঃ জুমু'আহর সালাত/নামাজ শুধু স্বাধীন পুরুষদের উপর ফরজ। এ ব্যাপারে এতদিন পর্যন্ত উম্মতের ইজমা' [ঐক্যমত] ছিল। কিন্তু কাল ফেইসবুকে একটা পোস্ট দেখলাম যেখানে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
"নারী -পুরুষ সবার উপর জুমা ফরজ। সবার জুমার ছালাতে গমন নিশ্চিত করুন। মহান আল্লাহ বলেন: "ইয়া আইয়্যুহাল লাযীনা আমানু ইযা নূদিয়া লিছ ছালাতি মিন ইয়াওমিল জুমুআতি ফাসআও ইলা যিকরিল্লাহ....। " হে ঈমানদারগণ, জুমার দিনে ছালাতের দিকে যখন আহ্বান করা হবে, তখন জলদি জলদি আল্লাহর যিকিরের দিকে গমন কর। " সূরা আল জুমুআ-৯। সুতরাং জুমার ছালাত নারী-পুরুষ সবার জন্য ফরজে আইন।"
আমি মনে করলাম হয়তো তিনি আবেগের বশে এমন করেছেন। তাই মন্তব্য করলামঃ
"আল্লাহ আপনাকে মাফ করুন। জুমু'আর সালাত নারী, শিশু, ক্রীতদাস, মুসাফির ও রোগীর উপর ফরজ নয়। তবে এই সমস্ত ব্যক্তিরা চাইলে জুমু'আয় শরীক হতে পারেন।
যা ফরজ নয় তাকে ফরজ করার দায়িত্ব আল্লাহ আপনাকে দেন নাই।"
কিন্তু তিনি পাল্টা মন্তব্য করলেনঃ
"আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করুন। জুমু"আর ছালাত নারী ... .. দের উপর ফরজ নয় বলে আপনি কিভাবে জানলেন? দলীল ভিত্তিক বক্তব্যের বিপরীতে বিনা দলীলে কথা বলছেন? ইয়া আব্দাল্লাহ, ইত্তাকিল্লাহ।"
আমি ভাবলাম তিনি বোধ হয় আলিম। তাই নিচের কথাগুলো বললামঃ
"ভাই, কুর'আন নাজিল হয়েছিল মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর। তা আমার বা আপনার বা অন্য কোন ব্যক্তির উপর নাজিল হয় নি। কিন্তু আমাদের জন্য নাজিল হয়েছে। কুর'আন যাঁর উপর নাজিল হয়েছে তিনি এর অফিসিয়াল শিক্ষক ও ব্যাখ্যাতা। তিনি এটা তাঁর অনুসারীদের শিখিয়েছেন। কুর'আনে আল্লাহ বলেছেন জুমু'আর দিন সালাতের আহবান শুনলে ঈমানদাররা যেন আল্লাহর জিকরের দিকে ছুটে আসে এবং কেনা বেচা ত্যাগ করে। [জুমু'আহ, আয়াত নম্বর ৯] সেই আহবান কে করবে এবং কীভাবে করবে তা কুর'আনে বলা নেই। সেই সালাত কোন সালাত এবং কখন ও কয় রাকাত পড়া হবে তাও কুর'আনে বলা নেই। এই সব শিক্ষা দিয়েছেন মুহাম্মদ (সঃ)। তিনিই এই সালাত থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন নারী, শিশু, রোগী, মুসাফির, ও ক্রীতদাসকে। তবে তাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়েছে যদি তাদের সুযোগ থাকে তাহলে আদায় করার।
জাবের (রা.) ইবনে আবদুল্লাহ ও আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেনঃ “জেনে রেখো, আল্লাহ তোমাদের উপর জুম’আর নামায ফরয করেছেন” (বায়হাকী)। তবে তিনি নারী, শিশু, ক্রীতদাস, অসুস্থ ব্যক্তি এবং মুসাফিরকে এ ফরয পালনের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়েছেন। হযরত হাফসা বর্ণনা করেন যে, নবী (সা.) বলেছেনঃ “জুম’আর নামাযের জন্য বের হওয়া প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব। “(নাসায়ী)। হযরত তারেক ইবনে শিহাব বর্ণিত হাদীসে নবী (সা.) বলেছেনঃ ক্রীতদাস, নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া জামায়াতের সাথে জুম’আ পড়া প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব, (আবু দাউদ ও হাকেম।)। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ বর্ণিত হাদীসে নবীর ﷺ ভাষ্য হলোঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান পোষণ করে তার ওপরে জুম’আ ফরয। তবে নারী, মুসাফির, ক্রীতদাস, বা অসুস্থ ব্যক্তির ওপরে জুম’আ ফরয নয়। (দারু কুতনী, বায়হাকী)।"
তিনি তখন ঘোষণা করলেন এইগুলা জাল-ভেজালঃ
"জাল ভেজাল হাদীছ দিয়ে দলীল দিলে তো হবে না। ছহীহ হাদীছ হতে হবে। আর শুধু কিতাবের নাম বললে হবে না। দয়া করে পরিপূর্ণ রেফারেন্স দিন।"
আচ্ছা এইগুলা সহীহ না ভেজাল তা আপনি কীভাবে বুঝবেন? আপনি কী মুহাদ্দিস? আমি ভাবলাম আর কথা বাড়িয়ে লাভ নাই।
যাই হোক, যাঁরা জানতে চান তাদের জন্য কথা হল তারিক ইবন শিহাবের (রাঃ) হাদীস এই বিষয়ে খুবই সহীহ। হাদীসটা আবূ দাঊদের ৯১০৬৭ নং হাদীস। ইমাম আন-নববী (রহঃ) তাঁর আল-মাজমু'তে (৪/৪৮২) বলেছেন এই হাদীস বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ; ইবন কাসীর তাঁর ইরশাদ আল-ফাক্বীহতে (১/১৯০) বলেছেন এর সনদ ভাল; আর আল-আলবানী তাঁর সহীহ লা-জামি'তে (৩১১১) এটাকে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন।
আমাদের দেশের একদল লোক মহিলাদের মসজিদে আসাকে হারাম করে দিয়েছে; অন্যদিকে আমাদের আলোচিত পোস্টদাতা মহিলাদের জন্য মসজিদে আসাকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন - অন্তত জুমু'আহর দিন। প্রকৃত ব্যাপার হল এর মাঝখানে। মহিলাদের জন্য মসজিদে আসা - জুমু'আর সালাতসহ - বাধ্যতামূলক নয়; অন্যদিকে তারা শর'ঈ রীতি মেনে মসজিদে আসতে চাইলে তাদের বাধা দেবার অধিকারও কারো নেই।
জুমু'আহর সালাত ও এর আহবানের সাথে সম্পর্কিত বিষয় বিস্তারিত জানতে দেখুন সূরা জুমু'আহর ৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা - টীকা নং ১৪ ও ১৫, তাফহীমুল কুরআন।
বিষয়: বিবিধ
১৯১৫ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি যতটুকু যানি মহিলাদের জুমআ পড়তে বাধা দেওয়া যাবে না।
অনেক ধন্যবাদ।
বিশেষ নামে পরিচিত ফিরকার কিছু মানুষের "সহীহ-হাদীস" ও "সরাসরি-আলকুরআন" রোগ এতটাই প্রবল হয়েছে যে, তাঁদের সাথে কোন মাসআলা নিয়ে আলোচনাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে!
সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো অস্বাভাবিক রকমের হিংস্র ও ঘৃণ্য আচরণের কিছু তোতাপাখী সমাজে বিদ্বেষ ছড়ানোটাকেই জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহন করেছে- এরাও এক ধরণের জঙ্গী!
আল্লাহতায়ালা রক্ষা করুন, ক্ষমা করুন, আমীন!
সাইফের বাপ।
আপনাকে ধন্যবাদ।
তবে একেবারেই যে মাসজিদে নামাজ পড়তে পারবে না তা কি ঠিক যদি তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করে রাখা হয় ?
মক্কা ও মদীনায় এরকম ব্যবস্থা দেখেছি
"আমাদের দেশের একদল লোক মহিলাদের মসজিদে আসাকে হারাম করে দিয়েছে; অন্যদিকে আমাদের আলোচিত পোস্টদাতা মহিলাদের জন্য মসজিদে আসাকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন - অন্তত জুমু'আহর দিন। প্রকৃত ব্যাপার হল এর মাঝখানে। মহিলাদের জন্য মসজিদে আসা - জুমু'আর সালাতসহ - বাধ্যতামূলক নয়; অন্যদিকে তারা শর'ঈ রীতি মেনে মসজিদে আসতে চাইলে তাদের বাধা দেবার অধিকারও কারো নেই।"
অন্যদিকে আমাদের মসজিদের দুইটা ফ্লোর বোনদের জন্য। জুমু'আহর দিন সেগুলো ভরে যায়। অন্য সময়েও তাঁরা আসেন। তাঁরা দীন শিখতে আসবেন, সেটা কাম্য। কিন্তু তাদের উপর আমরা কোন কিছুকে ফরজ করে দিতে পারি না, যা রসূলুল্লাহ (সঃ) করেন নাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন