দীন শিক্ষার বিকল্প নেই.........
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ১০ আগস্ট, ২০১৬, ০৯:৫৪:২৮ সকাল
সেদিন একজন ভদ্রলোক আমার সাথে হ্যাণ্ডশেক করে আর ছাড়তেই চাচ্ছিলেন না। তিনি এক নাগারে তাঁর ছেলের কথা বলে যাচ্ছিলেন এবং জানালেন যে আমি ছেলেটাকে পড়িয়েছিলাম। তাঁর ছেলে দাড়ি রেখেছে, রীতিমত নামাজ আদায় করে, ভাল চাকরী করে, তাঁদের সাথে সদ্ব্যবহার করে, ইত্যাদি। তিনি বেশ খুশী।
আমাদের কাছে বাসা আরেক ভাই, উনি আবার দেশেও আমাদের প্রতিবেশি উপজেলার [সীতাকুণ্ড] লোক। মসজিদে দেখা হলে তাঁর ছেলেদের কথা উঠে। মেঝ ছেলেটা আমার ছাত্র ছিল, মদীনাহ স্কুলে পড়েছে। বড় ছেলে ব্রুকলিন টেকের মত নামকরা স্কুলের ছাত্র ছিল। তিনি মেঝ ছেলেটার ব্যাপারে মোটামুটি খুশি। বড়টার প্রসঙ্গ আসলে মেজাজ খারাপ করে ফেললেন। মেঝটা মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করে মোটামুটি সবার সাথে সম্মান রক্ষা করে চলে এবং মোটামুটিভাবে সালাতও আদায় করে। বড়টা নামাজ আদায় করা ছেড়ে দিয়েছে কলেজে [আমেরিকাতে কলেজ মানে বিশ্ববিদ্যালয়] যাবার পর। এখন ঠিক মত ইসলামে বিশ্বাস করে কিনা সে বিষয়েও তিনি সন্দিহান।
প্রথমোক্ত ক্ষেত্রে বায়তুল মা'মূর মসজিদ এণ্ড কমিউনিটি সেন্টার সামারের দুইমাস ব্যাপী একটা ইসলাম শিক্ষা কোর্স চালু করেছিল প্রায় ৭ বছর আগে। । আমি তাতে বিরাট একটা গ্রুপের মিডল স্কুল [৬-৮ শ্রেণি] ও হাইস্কুল [৯-১২ শ্রেণি] ছাত্র-ছাত্রীদের ইসলাম শিক্ষার ক্লাসগুলো নিয়েছিলাম। সেখান থেকে তাদের দীন শিখা। প্রথম বাচ্চাটা সেই ক্লাসের। পরে এই বছর বায়তুল মা'মূরের পরিচালনা পরিষদের একজন ভাই জানালেন আগের সেই বাচ্চাগুলোর প্রায় সবাই ভাল চাকরী করে, ইসলাম মেনে চলে এবং অনেকেই দাড়িও রেখে দিয়েছে, মেয়েরা হিজাব মেনে চলে। তাই তাঁরা চাচ্ছেন আমি আরেকটা ইসলাম শিক্ষার ক্লাস নিই। আল-হামদুলিল্লাহ। গত মাসের মাঝামাঝি থেকে বায়তুল-মা'মূরে আবারো ইসলাম শিক্ষার ক্লাস চালু হয়েছে। এই পর্যন্ত আমার ক্লাসে আমি প্রায় ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী পেয়েছি। এটা একবছর ব্যাপী চালু থাকবে ইনশা'আল্লাহ।
আমাদের ট্র্যাডিশনাল মক্তব বা মসজিদ স্কুলগুলোর সমস্যা হল বাংলাদেশি বাপ-মায়েরা শুধু কুর'আন খতম করানো এবং ওযু-নামাজ শিখানোর জন্য বাচ্চাদের পাঠায়। এদেরকে বুঝানো যায় না যে কুর'আন খতম করা ও নামাজ শিক্ষাটাই ইসলাম শিক্ষা না। যে সমস্ত বাচ্চারা শুধু কুর'আন পড়া ও নামাজ আদায় করা শিখার মাধ্যমে তাদের ইসলামী শিক্ষা শেষ করেছে তাদের বেশিরভাগই শেষ পর্যন্ত ইসলামের উপর থাকে না। কারণ তারা ইসলামী আক্বীদাহ ও জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে কোন সঠিক ধারণা লাভ করেনি। ব্রুক্লিন ইসলামিক সেন্টার [BIC] এ আমরা এই ধারণার বাইরে এসে বাচ্চাদের মৌলিক ইসলামী জ্ঞান প্রদানের চেষ্টাও করছি। তাই কিছু অভিভাবকদের অভিযোগ যে তাদের ছেলেমেয়েরা খুব আগাচ্ছে না; অর্থাৎ তাঁরা বুঝাতে চাচ্ছেন যে ছেলেমেয়েগুলা তাড়াতাড়ি কুর'আন খতম দিতে পারছে না।
রোজার শুরুতে একজন ভাই ফোন করে জানালেন উনি চান উনার ছেলেটার সাথে আমি যেন একটু কথা বলি। ব্যস উনি নিয়ে আসলেন। সমস্যা হল ছেলে নামাজ আদায় করা ছেড়ে দিয়েছে এবং ইসলামের প্রতি অনীহা দেখাচ্ছে। এর জন্য তার মায়ের সাথে প্রতিনিয়ত ঝগড়াঝাটি হচ্ছে। ছেলের সাথে কথা বলে আমি যা জানলাম তা হলঃ সে তার নানীর কাছে কুর'আন পড়া ও নামাজ পড়া শিখেছে ছোট বেলায়। এবং এগুলো তার কাছে খেলা মনে হয়েছে; তাই সে এগুলো করত। কিন্তু এখন যখন সে বড় হয়ে গিয়েছে তখন সেগুলো তার কাছে আর খেলা মনে হচ্ছে না এবং সে এতে মজাও পায় না। তাই ছেড়ে দিয়েছে। এখানেও সেই একই অবস্থা - ইসলামকে দীন হিসেবে শেখানো হয়নি।
কারো এমন ভাবার সুযোগ নেই যে এটা শুধু আমেরিকা বলেই হচ্ছে; না বরং বাংলাদেশেও একই অবস্থা, এবং হতে পারে এর চেয়েও খারাপ। আমাদের দেশের বড় বড় নাস্তিকরা কিন্তু সেই পাকিস্তান আন্দোলনের নেতাদের সন্তান বা দৌহিত্র। আর এখনতো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের বিরাট একটা অংশই ইসলাম অবহেলাকারী। একটা সময় ছিল তারাও কুর'আন পড়তে শিখেছিল ও নামাজ আদায় করতে শিখেছিল। এখন অবশ্য বেশিরভাগই আরবীতে কুর'আন পড়তে জানে না। আমার সাথে এখানে বেশ কিছু মুরুব্বীর পরিচয় হয়েছে যাঁরা স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মসজিদে আসেন নামাজ আদায় করতে, কিন্তু আরবীতে কুর'আন পড়তে জানেন না। একজন ভাই একটা সমীক্ষার কথা জানিয়েছিলেন ৩ বছর আগে। তিনি জানিয়েছিলেন ৪৭ এ যখন দেশ স্বাধীন হয় তখন পূর্ব বাংলায় মুসলমানদের ৫০% ভাগেরও বেশি মানুষ আরবীতে কুর'আন পড়তে পারতেন; কিন্তু ২০১০ সালে সেটা ১১% এ নেমে এসেছে।
যারা ইসলাম ও এর জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে মোটামুটি শিখেছে তাদের খুব কমই হারিয়ে যাবে। কিন্তু অন্যরা যতই কুর'আন পড়তে আর নামাজ পড়তে শিখুক না কেন, একটা সময় ইসলাম থেকে হারিয়ে যাবে, যদি না ইসলামের মৌলিক জ্ঞান তাদের দেয়া হয়। অন্ততঃ মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আমার এখানকার অভিজ্ঞতা তাই বলে।
বিষয়: বিবিধ
১৭৫৩ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রাতঃকালীন কেজি স্কুলের প্রভাবে ট্র্যাডিশনাল মক্তব ও এখন বন্ধ হওয়ার পথে বাংলাদেশে।
জাযাকাল্লাহু
দেশে মাস্টার্স পাশ যেসব পোলাপান বাসায় থাকলে এক গ্লাস পানিও ঢেলে খেত না আমেরিকায় গিয়ে ওসি ডিসির পদ পেয়ে খুব বর্তে যায় ।
তেমনি কিছু আমেরিকান প্রবাসীদের কথা শুনলে মনে হয় যে প্রকৃত ইসলাম শিক্ষায় মানুষ দীক্ষিত হয় এই আমেরিকাতে আসলেই । অথচ সারা বিশ্বে মুসলমানদের সাফারিংসের পেছনে আমেরিকানরাই কলকাঠি নাড়ে ।
পোস্টের বক্তব্যের সাথে সম্পর্কিত মন্তব্য করলে ভাল হয়। ধন্যবাদ।
যথার্থ বলেছেন, সহমত
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য
জাযাকুমুল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন