কেন আমি তুর্কিতে ক্যু-কারীদের বিরুদ্ধে আরদোয়ানের বিজয়ে খুশি?

লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ০৩ আগস্ট, ২০১৬, ০৭:৫১:২৬ সকাল

কারণ দীর্ঘ অনেক বছর পরে তাদেরকে আমি দুঃখ পেতে দেখেছি এবং আফসোস করতে দেখেছি এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হতে দেখেছি।

তারা অনেক খুশি হয়েছিল। তারা খুশি হয়েছিল তখন যখন ১৪৯২ তে গ্রানাডার দরজা তাদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছিল। তারা খুশি হয়েছিল তখনও যখন ১৬৮৩ সালে ভিয়েনার দরজা থেকে উসমানী মুজাহিদরা পশ্চাদপসরণ করেছিল। তারা উৎসব করেছিল তখনও যখন ১৮৫৭ সালে শেষ প্রতিরোধ ভেঙ্গে দিয়ে তারা দিল্লীর লাল-কেল্লার দখল নিয়েছিল। তারা খুশি হয়েছিল তখনো যখন প্রথম মহাযুদ্ধ শেষে তাদের বিজয়ী বাহিনী জেরুসালেম ও দামেস্কে প্রবেশ করে দম্ভ প্রকাশ করেছিল; তাদের একটা বিরাট আশা পূর্ণ হয়েছিল তখনও যখন ১৯২৪ সালে খিলাফতকে বিলুপ্ত করে আমাদের উম্মাহকে অভিভাবকহীন করে দেয়া হয়েছিল। তারা তখনো উল্লাস করেছিল যখন ১৯৪৯ সালে কায়রোর রাজপথে গুলি করে জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়া হয়েছিল হয়েছিল যুগের নক্বীব হাসান আল-বান্নার; তারা উল্লসিত হয়েছিল তখনও যখন ১৯৬৯ সালে সম্মিলিত আরব বাহিনীকে পরাজিত করে ফিলিস্তিন বিলুপ্ত করে দিয়েছিল ইসরাঈল; তারা উল্লসিত হয়েছিল তখনো যখন ক্বওমের কিছু গাদ্দার মুসলমানদের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রটিকে টুকরো করে একটাকে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের করদে পরিণত করেছিল ১৯৭১ সালে; তারা আনন্দে লাফাচ্ছিল তখন যখন আফগানিস্তানে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে বিজয়ী মুজাহিদীনদের একটা গ্রুপকে আরেকটার বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়ে সেখানে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পেরেছিল; তারা তখনো উল্লাস করেছিল যখন আলজেরিয়ায় সামরিক জান্তা FIS এর বিজয়ী হওয়া নির্বাচনকে বাতিল করে মুসলমানদের নেতা আব্বাসী মাদানী ও আলী বেলহাজ্জকে কারাগারে নিক্ষেপ করে দিয়েছিল ১৯৯২ সালে; তারা তখনো উল্লাস করেছে যখন হোজ্জা আরবাকানকে সরে যেতে বাধ্য করেছিল তুর্কি সেনাবাহিনী ১৯৯৭ সালে; তারা উল্লাস করেছিল তখনো যখন ফিলিস্তিনের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করা হামাসকে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠি দিয়ে বয়কট করাতে পেরেছিল; তারা তখনো খুশি হয়েছিল যখন গাদ্দার সিসি মিসরে মুরসীকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেছিল ২০১৩ সালে।

তারা খুশি আর খুশিতেই ডুবে ছিল। কিন্তু এক পরাজিত উম্মাহর সদস্য হিসেবে অন্তরে অন্তরে গুমরে মরছিলাম আমরা। আমাদের হৃদয়ের বোবা কান্নার প্রকাশ করার কোন ভাষা আমরা পাচ্ছিলাম না। এই সেদিন শুক্রবারে যখন তুরস্কে অভ্যুত্থানের কথা শুনলাম তখন মনে মনে দু’আ করছিলাম, “আমাদের রব্ব, তাদেরকে তুমি আর কত আমাদের উপর বিজয় দান করবে? এবার আমাদের একটু সাহায্য করো।”

তারপর রজব তায়্যিব আরদোয়ান ফিরে এলেন। সেজন্য আমরা শান্তি পেলাম। কিন্তু আমাদের খুশির কারণ হল দীর্ঘ অনেক শতাব্দী পরে আমরা ক্রুসেডারদের একটা পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে দেখলাম। আমরা দেখলাম তাদের আহাজারী ও হতাশা। এজন্যই আমি খুশি।

ওহ আল্লাহ! আমাদের এই খুশিকে স্থায়িত্ব দান করো; আর আমাদেরকে তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবার তৌফীক্ব দাও।

বিষয়: বিবিধ

১৫৮২ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

375798
০৩ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৮:১০
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : মানুষও পরিকল্পনা করে, আল্লাহও পরিকল্পনা করেন------!
ভাল লেগেছে- ! ধন্যবাদ।
375800
০৩ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:৫৯
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : আবেগ আর ইতিহাস এর অপূর্ব সমন্বয় লেখাটি। জাযাকাল্লাহ।
375804
০৩ আগস্ট ২০১৬ সকাল ১১:২৫
হতভাগা লিখেছেন : তুরষ্কে ক্যু ব্যর্থ হওয়াতে ইসরায়েলের উচ্ছিষ্ট খেয়ে ধন্য পশ্চিমারা ও তাদের এদেশীয় দালালদের হাহাকার , গনতন্ত্রের মোড়কে উপনিবেশিতাবাদকে সমর্থন জানানো পা চাটা গোলামদের এবং সর্বদা ইসলামের নিন্দা করা , ইসলামী শাসনের বিরোধীতা করা ছুপা হিন্দুদের বেশ ফাটন লক্ষ্য করা গেছে ।

সন্দেহ নেই যে শয়তানের কাজ অব্যহত থাকবে । তবে আল্লাহই শ্রেষ্ঠ কৌশলী ।


তারা উল্লসিত হয়েছিল তখনো যখন ক্বওমের কিছু গাদ্দার মুসলমানদের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রটিকে টুকরো করে একটাকে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের করদে পরিণত করেছিল ১৯৭১ সালে;


বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পেছনে কাজ করেছে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক শোষন করার মনোভাব ।

বৃটিশদের কাছ থেকে মুক্ত হয়েও বাংলাদেশীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় নি। মুসলমান হয়েও তারা আরেক মুসলমানদের ( পূর্ব পাকিস্তানীদের)অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্য করতো । সব ক্রিম তারা নিজেরা খেত , ছোলা ছ্যাবড়া যা থাকতো সেটা পেত পূর্ব পাকিস্তানের মানুষেরা ।

১৯৭০ এর নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ট দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে টাল বাহানা করছিল । আলাপ আলোচনার তলে তলে মরণাষ্ত্র এনে জড়ো করছিল মুসলমান ভাইদের হত্যা করার জন্য ।

এই হত্যাকে সে সময় তারা ধর্মীয় কালার দিয়েছে যেটা ছিল জঘন্য এক মিথ্যাচার ।

এই মিথ্যাচারের ফল পাকিস্তান তো ভোগ করছেই আর পাকিস্তানের এই মিথ্যাচারকে ভেরিফাই না করে অন্ধ সমর্থন করে যাওয়া আরব বিশ্বও নেই শান্ত্যিতে ।
০৩ আগস্ট ২০১৬ সকাল ১১:৫০
311576
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : পরিসংখ্যানের আলোকে হিসেব করলে বঞ্চনা, তাচ্ছিল্য এর অভিযোগ ধোপে টিকে না, মি. হতভাগা ভাই। পাকিস্তান আমলে যে কয়টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশ আমলে সেই মানের প্রতিষ্ঠান কয়টি গড়ে উঠেছে?
০৩ আগস্ট ২০১৬ বিকাল ০৪:০১
311582
হতভাগা লিখেছেন : আসল বিষয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা শিল্পান্চল প্রতিষ্ঠা নিয়ে না , এটা হচ্ছে ক্ষমতার কেণ্দ্র বিন্দুতে পূর্ব পাকিস্তানীদের অংশগ্রহন কতটুকু সমাদৃত ছিল শাসক সেজে জেঁকে বসা পশ্চিম পাকিস্তানীদের কাছে বা তাদেরকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে লব্ধ ক্ষমতা দেওয়ার ব্যাপারে টাল বাহানা করার রাইটই বা পশ্চিম পাকিস্তানীরা রাখে কি না ?

শিল্প প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে যে হারে গড়ে উঠেছে বিগত ২ যুগ ধরে সেক্ষেত্রে তো পাকিস্তান দেশটি এখন ধ্বংসের দারপ্রান্তে পৌছে যাচ্ছে !

এটা যে কোন পাকিস্তানপ্রেমীই অস্বীকার করতে পারবে না ।
375810
০৩ আগস্ট ২০১৬ সকাল ১১:৫০
কুয়েত থেকে লিখেছেন : সন্দেহ নেই যে শয়তানের কাজ অব্যহত থাকবে। তবে আল্লাহই শ্রেষ্ঠ কৌশলী দুঃখ পেতে দেখেছি এবং আফসোস করতে দেখেছি এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হতে দেখেছি। ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
375816
০৩ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ১২:৩১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : একমত। ধন্যবাদ।
375832
০৩ আগস্ট ২০১৬ রাত ০৯:২০
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

ওহ আল্লাহ! আমাদের এই খুশিকে স্থায়িত্ব দান করো; আর আমাদেরকে তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবার তৌফীক্ব দাও।

আমীন

375849
০৪ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৬:৩২
ব্লগার শঙ্খচিল লিখেছেন : এরদোগান পড়ে গেলে সব চেয়ে খুশি বাংলাদেশের বর্তমান সরকার
375897
০৫ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৫:৩৬
কাব্যগাথা লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো লেখাটা|আমরা সত্যিই খুশি তুরস্কের এই অভ্যুথান ব্যর্থ হওয়াতে|অনেক ধন্যবাদ|
375898
০৫ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৫:৪১
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : চমৎকার !টার্কির ক্যু ব্যর্থ হওয়া মুসলিম বিশ্বের জন্য সত্যিই আশীর্বাদের মতো | ধন্যবাদ নেবেন|

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File