মৃত্যুদণ্ড বিতর্ক
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ২৫ জুলাই, ২০১৬, ০৩:২২:১৭ রাত
মৃত্যদণ্ড নিয়ে কোন মু’মিনের কাছে কোন বিতর্ক থাকতে পারে না। কারণ মু’মিনদের রব্ব মৃত্যুদণ্ডকে নিজে প্রেসক্রিপশন হিসেবে লিখে দিয়েছেন খুনের বদলা হিসাবে। তিনি বলেন (তর্জমা), “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে ক্বিসাস [হত্যার বদলায় মৃত্যুদণ্ড] গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের রব্বের তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। হে সুক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারীগণ, তোমাদের জন্য ক্বিসাসেই নিহিত রয়েছে জীবন। আশা করা যায় তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করবে।” [২:১৭৮-১৭৯]
একইভাবে সুন্নতে-রসূল (ﷺ) থেকেই আমরা মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে প্রমাণ পাই। বুখারী ও মুসলিমে ইবনু মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আরদাহ) বর্ণনা করেন, “একজন মুসলিমের রক্তপাত তিনটার কোণ একটা কারণ ছাড়া বৈধ নয়ঃ বিবাহিত জ়িনাকারী, হত্যার বদলায় হত্যা এবং মুসলমানদের জামা’আত ত্যাগ করে মুরতাদ্দ হয়ে যাওয়া ব্যক্তি।” [আন-নববী, ৪০ হাদীস; হাদীস নং ১৪] এছাড়াও আরো কিছু ক্ষেত্রে ইসলাম মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা রেখেছেঃ
১. পুরুষ সমকামীঃ ইবন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “তোমরা যদি লূতের কওমের আচরণকারী কাউকে পাও তবে যে করে এবং যার সাথে করা হয় তাদের দুজনকেই হত্যা কর।” [আবূ দাঊদ ও তিরমিজ়ী]
২. নিষিদ্ধ আত্মীয়াকে বিয়েকারীঃ আবূ দাঊদ, তিরমিজী ও অন্যান্যরা রসূলুল্লাহ থেক বর্ণনা করেছেন যে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন সেই ব্যক্তিকে হত্যা করতে যে তার পিতার স্ত্রীকে বিয়ে করে।
৩. কালা যাদু বা ডাইনীবিদ্যা চর্চাকারীঃ তিরমিজ়ির এক হাদীসে রসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “সাহির [যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে তারবারির আঘাত।”
৪. ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগকারী।
৫. মদপানকারী যাকে ইতোমধ্যে তিনবার মদপানের হদ্দ দেয়া হয়েছে। [এ ব্যাপারে অবশ্য মতভেদ আছে]
৬. আরো কিছু বিষয়ে যাতে কিছুটা মতভেদ আছে।
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসগুলো থেকে আমরা প্রমান পাই যে মৃত্যুদণ্ড আল্লাহ তাঁর শরীয়তে ফরজ করেছেন কিছু অপরাধের জন্য; আর তাঁর রসূল মুহাম্মদ () এগুলোর বাস্তবায়ন করেছেন। তাই কোন মু’মিন একথা বলতে পারে না যে, “নীতিগতভাবে” সে মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে। নীতিগতভাবে কথাটা খুবই কঠিন। এরপর যদি বলা হয়, “তা কোন দেশে এবং কেন, সেটা কোন ব্যাপার নয়।” তখন তা অত্যন্ত জঘন্য রকমের আল্লাহদ্রোহিতার পর্যায়ে চলে যায়। কারণ এক্ষেত্রে আল্লাহ একটা নীতি নির্ধারণ করে সেটাকে তাঁর কিতাবে অবতীর্ন করে বলে দিলেন যে “তোমাদের জন্য এটাকে ফরজ করে দেয়া হয়েছে।” তিনি রোজার ব্যাপারে বলেছেন, “তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করে দেয়া হয়েছে।” এখন কোন মুসলিম যদি বলে তিনি “নীতিগতভাবে রোজা থাকার বিপক্ষে এবং তা কোন দেশে এবং কেন, সেটা কোন ব্যাপার নয়” তাহলে তার ব্যাপারে আমরা কী বলব?
প্রিয় মুসলিম, নিজের ঈমানকে নিয়ে খেলা করবেন না। দুনিয়ার লিবারেল মানসিকতাকে নিজের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবেন না। আপনার জন্য আপনার রব্ব একটা বিধান নাজ়িল করেছেন এবং একজন রসূল পাঠিয়ে সে বিধান প্রয়োগের ব্যবহারিক রূপও দেখিয়ে দিয়েছেন। তাই আপনি কী চিন্তা করেন এবং সে চিন্তার প্রকাশ কীভাবে করেন সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন। আল্লাহ সবার সহায় হউন।
মৃত্যুদণ্ডের নীতিগত বৈধতার ও জরুরতের পরে যে কথা থাকে তা হল, মৃত্যুদণ্ডটা যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় আওতায় প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা। এজন্য মৃত্যদণ্ডের প্রয়োগের ব্যাপারে আমাদের কথা ও উদ্বেগ থাকতে পারে। দুনিয়ার অনেক দেশেই অনেক স্বৈরাচারী কর্তৃপক্ষ যথযথ আইনী প্রক্রিয়ার তোয়াক্কা ছাড়াই অনেক মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে দিচ্ছে। অনেক সময় আইনের অপপ্রয়োগ করেও তারা এধরণের কাজ করছে। আমাদের সোচ্চার হতে হবে মানুষের জীবন রক্ষায়। আর সত্যিকার আইনী প্রক্রিয়ায় প্রমাণিত অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান মূলত মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিমিত্তেই জরুরী।
বিষয়: বিবিধ
১১৫৩ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
''ইসলামী আন্দোলন''?! এর এক প্রয়াত কর্মীর এই লিখাটি পড়ে।
মুসলমানরা কি পরিমান প্রতারিত হয়েছে, কি পরিমান ধর্মীয় বেইজ হতে সরে গিয়েছে - ৫০ উর্দ্ধ এই ভাইয়ের লিখা ও ওনার বিশ্বাসের ফোর্স দেখে - যেন পরিষ্কার একটা চিত্র পাওয়া যায়।
বর্তমান পৃথিবীর সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে (তথা যা ফেতনা ও ফ্যাসাদ এর প্রেক্ষাপট) নীতিগতভাবে উনি মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী। যেখানে ওনার রাসুল সঃ ওনাকে নির্দেশ দিয়েছে অমন সময়ে কোরান ও সুন্নাহকে আকঁড়ে ধরতে - সেখানে তিনি যারপরনাই আকড়ে ধরলেন তথাকথিত ক্যামব্রিজ অক্সফোর্ডীয় সুন্নাহকে।
উম্মাহর এই নাস্তিকিয় ও আস্তিকিয় ট্রেন্ড দেখে আমি অন্য কোন স্ট্রং লজিক খুজে পাই না - এই ছাড়া যে উম্মাহ আজ চুড়ান্ত রকমের প্রতারনার শিকার এবং তাদের আনুগত্য যতটা না আল্লাহর উপর - তার চেয়ে অনেক বেশী আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কারো উপর।
আল্লাহ ভাল জানেন।
আপনি যেভাবে বুঝেছেন, তাঁর লেখাটা পড়ে আমার কাছে তেমন মনে হয়নি!
তাঁর অভিমতটি অস্বীকৃতি নয়, বরং শর্তসাপেক্ষ- আমার কাছে তেমনটাই মনে হয়েছে! কিছু উদ্ধৃতি দিলাম-
==================
===========
তাঁর অন্তরের খবর জানিনা!
আমার বুঝটা সঠিক না-ও হতে পারে!!
আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন!!
আর পরের কথা হল উনি এই পোস্ট দিয়েছেন পরে যখন সবাই উনার আগের কথাকে কন্ডেম করেছে। সবাই যখন কুর'আনের উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন তখন তিনি তাঁর মূল কথা থেকে সরে এসেছেন। তার মূল পোস্টের কথাগুলো বাংলা এবং ইংরেজীতে তিনি পোস্ট করেছিলেন নিচের মতঃ
=======
In principle I am against death penalty, no matter where and why.
নীতিগত ভাবে আমি মৃত্যুদন্ডের বিপক্ষে। তা কোন দেশে এবং কেন, সেটা কোন ব্যাপার নয়।
======
এখানের বক্তব্যটাকে আমি কীভাবে বুঝব বলেন?
আবারো, আমি তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে যায় নি, বরং মৃত্যুদণ্ডের মূলনীতি সংক্রান্ত ইসলামের অবস্থান পরিষ্কার করতে চেয়েছি। মনে রাখতে হবে, আপনার "নীতিগত" অবস্থান আর "প্রেক্ষিতগত" [circumstantial] অবস্থানের মধ্যে কিন্তু পার্থক্য আছে।
একমত!!
তাঁর মূল পোস্ট(ইংরেজি)টা দেখবো ইনশাআল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন