ওযুতে পা ধুবেন না মসেহ করবেনঃ রাশাদ খলীফাহর উম্মতদের ছড়ানো বিভ্রান্তি সংক্রান্ত সতর্কতা

লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ২১ মে, ২০১৬, ০৫:৫৯:২৯ সকাল

হঠাৎ একটা পোস্টে আমার চোখ পড়ল। দেখলাম তাতে লিখা হয়েছে অযুতে পা ধোয়ার কথা না কি কুরআনে বলা হয় নি। তাই মুসলিমরা পা ধুয়ে শুধুশুধি পানির অপচয় করছে এবং আল্লাহর কথা অমান্য করে নিজেদের তৈরি করা আইন মেনে চলছে। আরেকজন সেটাকে কপি করে পা মসেহ করার সায়েন্টিফিক যুক্তি তুলে ধরেছেন। বড়ই আজীব। এই কথাটা এখন থেকে ১৭ বছর আগেও মালয়েশিয়ায় আমি এক নওমুসলিমের কাছে শুনেছিলাম। পেতালিং জয়াতে মোটর বিহিকল অফিসে ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এক তামিল ছেলে মুসলিম হয়েছে এবং এক মালয়ী মেয়েকে বিয়ে করেছে। সেই প্রশ্ন উঠিয়েছিল যে আল্লাহ নকি কুরআনে বলেছেন পা মসেহ করার কথা, ধৌত করার কথা নাই। তাকে আমি বুঝানোর চেষ্টা করলাম ধোয়ার বিষয়টা। কিন্তু সে বুঝতে চাইল না। পরে বুঝলাম সে রাশাদ খলীফার উম্মতের দিকে ঝুঁকে পড়া পাবলিক।

আমাদের আলোচ্য পোস্ট যিনি শেয়ার করেছেন তিনিও অবশ্য রাশাদ খলীফার দীনকে পসন্দ করেন, কারণ উনার লিখালিখিতে তার প্রভাব থাকে এবং উনার বন্ধু তালিকায় সুপরিচিত রাশাদী -উম্মতরা আছেন।

যাই হোক আসুন আমরা অযুর ব্যাপারে কুর’আনের আয়াতটা দেখি। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فاغْسِلُواْ وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُواْ بِرُؤُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَينِ

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন সলাতের জন্য দাঁড়াও [তার আগে] ধৌত কর তোমাদের মুখমণ্ডল এবং হাত কনুই পর্যন্ত, আর মাথা মসেহ করো এবং পা [ধৌত কর] টাখনু পর্যন্ত।”

যারা আরবী জানেন ও এর ব্যাকরণ বুঝেন তারা জানেন আল্লাহ তা‘আলা এখানে পা ধোয়ার কথা বলেছেন। পা ধোয়ার কথা মাথা মসেহ করার কথার পরে আসলেও এর বৈয়াকরণিক রূপটা একে মুখমণ্ডল ও হাতের সাথে সংযুক্ত করেছে। আল্লাহ তা‘আলা প্রথমে বলেছেন ফাগসিলু [ধৌত কর] উজুহা-কুম [তোমাদের মুখমণ্ডলগুলো] ওয়া [এবং] আইদিয়া-কুম [তোমাদের হাতগুলো]। এরপর তিনি মসেহ করার কথা বলেছেন – ওয়ামসাহু [এবং মসেহ কর] বি-রুউসি-কুম [তোমাদের মাথাগুলো]। এরপর তিনি বলেছেন ওয়া-আরজুলা-কুম [এবং তোমাদের পাগুলো]। যাদের আরবী ব্যাকরণের ধারণা নাই তারা মনে করেছে আল্লাহ যেহেতু পায়ের কথা মাথার পরে উল্লেখ করেছেন তাই মাথার মত পাও মসেহ করতে হবে। ব্যাপারটা হচ্ছে যখন তিনি ধোয়ার কথা [ফাগসিলু] বলেছেন তখন বলেছেন উজুহা - লক্ষ্য করুন এখানে জবর বা ফাতহা ব্যবহার করা হয়েছে, একই ভাবে হাতের জন্য আইদিয়া [জবর বা ফাতহা] ব্যবহার করেছেন। আর যখন মাথার [রুউস] কথা বলেছেন তার আগে ব্যবহার করেছেন বি [بِ] যা একটা হারফুজ-জার। তাই শব্দটা হল বি-রুউসি [রুউস, অর্থাৎ মাথাগুলো শেষ হয়েছে কাসরা বা জের দিয়ে]। কিন্তু এরপর যখন পায়ের কথা বলেছেন তখন আর বলেন নাই ওয়া-আরজুলি-কুম। অর্থাৎ এটা যদি ওয়ামসাহুর নির্দেশের সাথে আসত তাহলে এটা হারফুজ-জার বি এর অনুসরণ করে হত ওয়া আরজুলি-কুম। কিন্তু এটা হল আরজুলা-কুম; অর্থাৎ মুখ এবং হাতের মত এটাও শেষ হয়েছে ফাতহা বা জবর দিয়ে। মানে পায়ের বিষয়টা আগে বলা মুখ ও হাতের সাথে জড়িত।

এজন্য যুগ যুগ ধরে যাঁরা মানুষদেরকে কুর’আন শিখিয়েছেন তারা পা ধোয়ার হুকুম এই আয়াত থেকেই নিয়েছেন। নিজেরা বানিয়ে নেন নি। আর তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রসূলকে (ﷺ) কুর’আনের শিক্ষক করে পাঠিয়েছেন। তিনি (ﷺ) তাঁর উম্মতকে শিখিয়ে গিয়েছেন পা ধৌত করত হবে নাকি মসেহ করতে হবে।

বিঃদ্রঃ এই লিখা পায়ের মোজা বা জুতার উপর মসেহ করার বিষয়ে নয়, বরং খালি পায়ের উপর মসেহ করা সংক্রান্ত।

রাশাদ খলীফার উম্মতদের ব্যাপারে সাবধান।

বিষয়: বিবিধ

১১৯৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

369694
২১ মে ২০১৬ সকাল ০৬:১৩
awlad লিখেছেন : ধন্যবাদ
369695
২১ মে ২০১৬ সকাল ০৭:৫৬
শেখের পোলা লিখেছেন : সহমত। সতর্ক করার জন্য শুকরিয়া।৷
369767
২২ মে ২০১৬ রাত ১২:২৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এরা কি তথাকথিত কুরানিস্ট গ্রুপ। তবে আমি যেযটা শুনেছি যে পা মাসেহ শিয়া রা ও করে এবং পায়ে মোজা থাকলে বা কোন সমস্যা থাকলে জায়েজ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File