ইতিহাস কথা কয়ঃ মহীশুরের বাঘ ও হায়দরাবাদের শিয়াল

লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ০৮ মে, ২০১৬, ১০:০৭:০৪ সকাল

হিন্দুস্তানে মুসলিম শক্তি তখন ক্ষয়িষ্ণু। মহামতি আওরঙ্গজেব আলমগীরের (রহিমাহুল্লাহু তা'আলা) অর্ধ শতাব্দীর শাসনামলে তিনি চাটিগাঁও থেকে কাবুল পর্যন্ত যে বিশাল সালতানাত গড়ে তুলে ন্যায় প্রতিষ্ঠার ধারা চালু করেছিলেন তাঁর ইন্তিকালের পর তা ধীরে ধীরে ব্যাহত হয়ে যায়। কেন্দ্রের অযোগ্য শাসকদের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রদেশগুলোকে সুযোগসন্ধানী ভাগ্যান্বেষীরা নিজেদের লীলাক্ষেত্র বানিয়ে নেয় এবং দিল্লীতে নামমাত্র খিলাত দিয়ে নিজেরা স্বাধীন শাসক বনে যায়। আর এই সময়ে দেশীয় কাফির শক্তি মারাঠা বর্গী ও শিখরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। স্থানীয় শাসকদের আভ্যন্তরীন দন্দ্ব ও মারাঠাদের আক্রমন মিলে যে গৃহযুদ্ধ ভারতে শুরু হয় তার সুযোগ নিয়ে এগিয়ে আসে বাণিজ্য করতে আসা গোরা ইংরেজ বণিকরা। জাহাঙ্গীরের দরবারে সিজদা দিয়ে যে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী হিন্দুস্তানে বাণিজ্য করার অনুমতি লাভ করেছিল তারা এখন সুযোগ খুঁজতে থাকে কীভাবে ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করা যায়। আর তাদের চক্রান্ত বাস্তবায়ন শুরু হয় বাঙলায়, ক্ষমতালোভী উমারা আর মুসলিম বিদ্বেষী ব্রাহ্মন্যবাদীদের সহায়তায়।

বাঙলা থেকে তাদের রাজত্বের যে বিস্তার ভারতে শুরু হয় তা রোধ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ান দাক্ষিণাত্যে হায়দার আলী ও তাঁর পরে তাঁর সুযোগ্য পুত্র ও মহীশূরের বাঘ খ্যাত ফতেহ আলী খান টিপু। টিপু ইংরেজদের যে বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ দূর্গ গড়ে তুলেছিলেন শ্রীরঙ্গপট্টমে তা সহ্য হয় নি মারাঠা ও হায়দ্রাবাদের নিজামের। টিপুর সাথে মিলে নিজাম হিন্দুস্তানে ইংরেজদের রাজ্য বিস্তারের আশাকে চিরতরে মিটিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু কুদরতের ইরাদা অন্যরকম ছিল বলেই হয়তো শ্রীরঙ্গপট্টমের যুদ্ধে শহীদ হয়ে যান সুলতান ফতেহ আলী আলী খান টিপু, তাঁর কিছু উমারার গাদ্দারী এবং ইংরেজদের সাথে নিজাম ও মারাঠার সহযোগিতার ফলে। সেই সাথে নিভে হয়ে যায় হিন্দুস্তানের স্বাধীনতার শেষ মুহাফিজের জীবন প্রদীপ, ভেঙ্গে যায় আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার শেষ তরবারিটি।

অন্যদিকে টিপুকে পরাজিত করার পর ইংরেজ আস্তে আস্তে নিজামের দিকে মনযোগ দেয় এবং তাকে অধীনতামূলক মৈত্রিচুক্তিতে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়; হায়দ্রাবাদ হয় ইংরেজের করদ রাজ্য। গোলামী করে নিজাম রাজ্য রক্ষা করেছে। কিন্তু এতে কি শেষ রক্ষা হয়েছে? হায়দ্রাবাদ এখন কোথায়? নিজামকে মানুষ গাদ্দার বুযদিল হিসেবেই জানে। কিন্তু টিপু আজো জোয়ার আনেন লক্ষ তাজা প্রাণে, যারা ইজ্জত ও আযাদী দিলে ধারণ করে চলে। মহীশুরের বাঘ তার সাহস ও সংগ্রামে স্বমহিমায় সমুন্নত থেকে গিয়েছেন; কিন্তু হায়দ্রাবাদের শিয়ালকে কে মনে রেখেছে?

সুলতান টিপু যথার্থই বলতেন, "বাঘের মত একদিন বেঁচে থাকা শিয়ালের মত করে শত বছর বাঁচার চাইতে উত্তম।"

বিষয়: বিবিধ

১৬৫৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

368373
০৮ মে ২০১৬ সকাল ১০:৩০
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান। টিপু সুলতানের আসলে মূল্যায়ন করা হয়নি। তিনি শুধু বীরযোদ্ধাই ছিলেন না,বরং এক বিশাল জ্ঞানী ও মুত্তাকী ছিলেন। তার বীরত্বটাই আলোচীত হয় যদিও তেমন জোরালোভাবে নয়। তিনি ভারতের ছোট্ট একটি রাজ্যের অধিপতি হয়েও যেভাবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন তা অবাক করার মত। তার বাঘ উপাধীও ইংরেজদের দেওয়া....অআমাদের চাড়ালদের মত পারিবারিক উপাধী নয় ওটা।

নসীম হিজাজীর ভেঙ্গে গেল তলোয়ার বার তিনেক পড়েও চমৎকার লেগেছিলো। আপনি দারুন টপিক এনেছেন। জাজাকাল্লাহ খায়রান
368445
০৮ মে ২০১৬ রাত ০৮:৫৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File