ইসলামে ব্যক্তির নিরাপত্তা, ওয়াজে আবেগ ও স্বর্ণালংকারমণ্ডিত ষোড়শী তরুণী।
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ২৬ মার্চ, ২০১৬, ০৮:১৮:৪৭ রাত
আমাদের দেশে হুজুররা যখন ওয়াজ করেন তখন আবেগের খুব উচ্চমার্গে অবস্থান করেন। উনারা আবেগের ঠেলায় ওয়াজে প্রচূর রঙ মিশান। এমন কি রসূলুল্লাহর (ﷺ) হাদীস বর্ণনা করার ক্ষেত্রেও রঙ লাগান, সরাসরি হাদীসের তর্জমা করেন না। অথচ রসূলুল্লাহর (ﷺ) নামে বানিয়ে কথা বলার ব্যাপারে তিনি খুব সতর্ক করেছেন।
সালামা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ "যে কেউ আমার প্রতি এমন কথা আরোপ করল যা আমি বলিনি সে যেন জাহান্নামে নিজের আসন বানিয়ে নিল।"
Reference : Sahih al-Bukhari 109
In-book reference : Book 3, Hadith 51
USC-MSA web (English) reference : Vol. 1, Book 3, Hadith 109
ইসলামের বিস্তৃতি ও মানুষের সামাজিক জীবনে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাদীস রয়েছে। একটা হাদীস তিনি বলেছেন খাব্বাব ইবনুল আরাত্ত (রাঃ) কে। খাব্বাব (রাঃ) নির্যাতনের চরম পরাকাষ্ঠা সহ্য করে রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে গিয়ে অভিযোগ করলে রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন যে এই দীন পরিপূর্ণতা লাভ করবে এবং একজন সওয়ার সান’আ থেকে হাদরামওত পর্যন্ত নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারবে। অন্যদিকে তিনি (ﷺ) আদী ইবন হাতিমকে (রাঃ) বলেছেন যে আল-হীরা [ইরাকের একটা শহর ও বনু লখমের রাজধানী] থেকে একজন নারী একাকী হাওদায় চড়ে মক্কা পর্যন্ত ভ্রমণ করে কা'বার তাওয়াফ করবে এবং তাকে আল্লাহ ছাড়া আর কারো ভয় করতে হবে না। আমাদের হুজুররা দুইটা হাদীসের মাঝে জট পাকিয়েছেন এবং ভ্রমণকারী এবং ভ্রমনকারীনী দুইজনকেই স্বর্নালংকার মণ্ডিত ষোড়শী তরুণী বানিয়ে দিয়েছেন। রঙ দিতে গিয়ে এই অবস্থা হয়েছে। কেউ হয়তো সরাসরি হাদীসটা না বলে এইভাবে রঙিন ব্যাখ্যা করেছেন। ফলে ইনফরমেশনটা বিকৃত হল। কেউ মনে করল রসূল্লুল্লাহ (ﷺ) এই শব্দেই হাদীস বলেছেন। এটা বিরাট একটা সমস্যা সৃষ্টি করে। রসূলুল্লাহ (ﷺ) যা বলেননি তাই তখন তাঁর কথা হিসেবে প্রচলিত হয়ে যায়। যাই হোক হাদীস দুটো নিচে উল্লেখ করছি।
বুখারীর কিতাবুল মানাক্বিবে খাব্বাব ইবনুল আরাত্ত (রাঃ) থেকে যে হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে তা নিম্নরূপঃ
আমরা রসূলুল্লাহর (ﷺ) কাছে অভিযোগ করলাম [কাফিরদের অত্যাচারের ব্যাপারে] এমন সময়ে যখন তিনি তাঁর বুরদার উপর হেলান দিয়ে কা'বার ছায়ায় বিশ্রাম করছিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, "আপনি আমাদের জন্য সাহায্য চাইবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য দু'আ করবেন না?" তিনি (ﷺ) বললেন, "তোমাদের আগে কোন ঈমানদার ব্যক্তির জন্য গর্ত খোঁড়া হত এবং তাকে সেখানে ঢুকিয়া তার মাথায় করাত চালিয়ে দ্বিখণ্ডিত করা হত; কিন্তু এটা তাকে তার দীন থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারত না। কারো শরীরএর উপর লোহার চিরুনী চালিয়ে তার হাড্ডি ও মজ্জা থেকে গোশ্ত আলাদা করা হত; কিন্তু এটাও তাকে তার দীন থেকে ফিরাতে পারত না। আল্লাহর ক্বসম! এই দীন বিজয় লাভ করবে এবং অবস্থা এমন হবে যে একজন সওয়ার সান'আ থেকে হাদরামওত পর্যন্ত সফর করবে অথচ তাকে আল্লাহ ছাড়া কাউওকে ভয় করতে হবে না; তবে তার মেষপালের জন্য নেকড়ের ভয় ছাড়া; কিন্তু তোমরা খুব তাড়াহুড়া করছো।" [সহীহ আল-বুখারী, কিতাবুল মানাক্বিব]। খাব্বার রাদিয়াল্লাহু আনহুর এই হাদীসে মহিলার কথা বলা হয় নি; বরং একজন রাকিব [সওয়ার] এর কথা বলা হয়েছে।
একইভাবে বুখারীর কিতাবুল মানাক্বিবে মহিলার কথা বলা হয়েছে আদী ইবন হাতিম [রাঃ] এর হাদীসে। আদী [রাঃ] বর্ণনা করেনঃ আমি যখন মদীনাতে ছিলাম তখন এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এসে তার দূরাবস্থা ও দারিদ্রের ব্যাপারে অনুযোগ করল। তারপর আরেক ব্যক্তি আসল এবং রাস্তা-ঘাটে ডাকাতি জনিত নিরাপত্তার অভাবের ব্যাপারে অভিযোগ করল। রসূলুল্লাহ (ﷺ)বললেন, "আদী! তুমি কি কখনো আল-হীরাতে গিয়েছিলে?" আমি বললাম, "আমি সেখানে যাইনি, তবে আমি এর ব্যাপারে জানি।" তিনি (ﷺ) বললেন, "তুমি যদি একটা দীর্ঘ সময় বেঁচে থাক তাহলে দেখবে হীরা থেকে একাকী একজন মহিলা হাওদায় চড়ে [মক্কা পর্যন্ত] সফর করবে ও কা'বার তাওয়াফ করবে; আর তাকে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করতে হবে না।" আমি মনে মনে বললাম, "তা'ঈ গোত্রের সেই সমস্ত দস্যুদের কী হবে যারা গোটা দেশে অনিষ্ট ছড়িয়ে রেখেছে?" রসূলুল্লাহ (ﷺ) আবার বললেন, "তুমি যদি দীর্ঘ সময় বেঁচে থাক তাহলে দেখতে পাবে খসরুর [ইরান সম্রাট] সম্পদ গনীমত হিসেবে নিয়ে নেয়া হবে।" আমি বললাম, "আপনি কি বলতে চাচ্ছেন হরমুজের পূত্র খসরুর কথা?" তিনি বললেন, "হ্যাঁ, হরমুজের পূত্র খসরু; আর যদি তুমি দীর্ঘ সময় জীবিত থাক তবে দেখতে পাবে লোকেরা তাদের হাতে করে করে স্বর্ণ ও রৌপ্য নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে দান করার জন্য; কিন্তু কেউ তাদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করবে না। তিনি আরো বললেন, তোমাদের কেউ যখন আল্লাহর সাথে মিলিত হবে তখন তার আর তোমাদের মাঝে কোন দোভাষীর প্রয়োজন থাকবে না এবং আর আল্লাহ বলবেন, "আমি কি তোমাদের শিক্ষার জন্য একজন রসূল প্রেরণ করিনি?" সে বলবে, "হ্যাঁ"। আল্লাহ বলবেন, "আমি কি তোমাকে সম্পদ দেই নি ও অনুগ্রহ করিনি?" সে বলবে, "হ্যাঁ"। তারপর সে তারা ডান দিকে তাকাবে এবং দোযখ ছাড়া আর কিছুই দেখবে না, এবং তার বাম দিকে তাকিয়েও দোযখ ছাড়া আর কিছুই দেখবে না।" আদী (রাঃ) আরো বলেনঃ রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, "তোমাদের নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও এমনকি অর্ধেক খেজুর দিয়ে হলে; আর অর্ধেক খেজুর না পেলে একটা ভাল কথা বলে হলেও।" আদী যোগ করেছেনঃ "[পরবর্তীতে] আমি দেখেছি উটের হাওদায় চড়ে আল্লাহ ছাড়া আর আর কাউকে ভয় না করে একাকী একজন নারীকে আল-হীরা থেকে মক্কা এসে কা'বার তাওয়াফ করতে। আর খসরু বিন হরমুজের সম্পদ গণিমত হিসেবে নিয়েছে যে সেনাবাহিনী আমিতো নিজেই তার অংশ ছিলাম। যদি তোমরা জীবিত থাক তবে রসূলুল্লাহ -আবুল কাসেম (ﷺ) এর সেই কথাও সত্য হিসেবে দেখবে যে একব্যক্তি মুষ্ঠি ভরে স্বর্ণ ......... ইত্যাদি।"
বুখারী কিতাবুল মানাক্বিব। হাদীস নং ৩৫৯৫।
হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সাবধান।
আল্লাহুল-মুস্তা'আন!
বিষয়: বিবিধ
১২২০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সকলের সাবধানতা প্রয়োজন। অনেকে অজ্ঞতা থেকেও বলে থাকেন। আল্লাহ হেফাজত করুক।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন