আল্লাহর আইন পালনে ভক্তি ও যুক্তি, হিজাব পালন ও সতীত্ব রক্ষা এবং কিছু প্রসঙ্গ কথা
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ২৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:৫৫:০০ রাত
তনু ও হিজাব নিয়ে কথা উঠায় পুরোনো লিখাটা এখানে পোস্ট করছি।
==========
আল্লাহ তা’আলা যখন বান্দাদের জন্য কোন বিধান দান করেন তখন তার পেছনে থাকে মানুষের অন্তিম কল্যাণের [ultimate welfare/success] উদ্দেশ্য। অর্থাৎ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ঐ আইন অনুসরণ করার মাধ্যমে তাঁর আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাতে চান। আর এটাকেই তিনি সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন, فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ “যাকে আগুন থেকে বাঁচানো হয়েছে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে সেই সফলতা লাভ করেছে।” [৩:১৮৫] আর সফলতার জন্য দুনিয়ার জীবনে করতে হয় আল্লাহ [সুবহানাহু ওয়া-তা’আলা] ও তাঁর রসূলের [সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া-সাল্লাম] আনুগত্য। সেজন্যই আল্লাহ তা’আলা উল্লেখ করেছেন, وَمَن يُطِعْ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا "আর যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করেছে সেই বিরাট সফলতা লাভ করেছে।” [৩৩:৭১]
স্বাভাবিকভাবেই একজন বিশ্বাসী নারী বা পুরুষ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের (সঃ) আনুগত্য করে মূলত ভক্তি সহকারে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে। আল্লাহ বলেছেনঃ
إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَن يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
“[সত্যিকার] বিশ্বাসীদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে ডাকা হয় তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেয়ার জন্য তখন তারা এ ছাড়া আর কিছুই বলেনা যে ‘আমরা শুনলান ও মেনে নিলাম’। আর এরাই হচ্ছে কল্যাণ লাভকারী।” [২৪:৫১] আল্লাহ এবং রসূলের নির্দেশ পালন করার ক্ষেত্রে তারা কোন যুক্তি তালাশ করেনা। তারা নির্দ্বিধায় আল্লাহ ও রসূলের (সঃ) নির্দেশ মেনে নেন। এজন্যই আলী ইবন আবী-তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, “দীন মানা যদি হত যুক্তির ভিত্তিতে তবে আমরা মোজার তলদেশই মাসেহ করতাম; কিন্তু আমি আল্লাহর রসূলকে (সঃ) দেখেছি তিনি শুধু তাঁর মোজার উপরিভাগে মাসেহ করেছেন।” দীন আমরা নিজেরা তৈরী করতে পারিনা। দীন হচ্ছে তা যা আল্লাহ নাজ়িল করেছেন এবং তাঁর রসূলের (সঃ) মাধ্যমে মানুষকে শিখিয়েছেন। লোকদের ব্যক্তিগত ভাল লাগা না লাগার উপর ভিত্তি করে দীনের আইন-কানুন রচনা করা হয়নি। দীনের আইন-কানুন শুধুমাত্র আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন বলেই তা আইন।
একারণেই আমরা দেখতে পাই রসূলুল্লাহর (সঃ) স্ত্রীদেরকে পর্দা করার জন্য উমরের (রাঃ) চাপাচাপি করা সত্ত্বেও রসূলুল্লাহ (সঃ) তা করতে নির্দেশ দেননি যতক্ষণনা আল্লাহর পক্ষ থেকে ওয়াহী নাজ়িল করে সে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ যখন সূরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াত নাজ়িল করলেন তখন রসূলুল্লাহ্ (সঃ) তাঁর স্ত্রীগণসহ অন্য মুসলিম মহিলাদেরকে হিজাবের নির্দেশ দিলেন। শুধু তাই নয় আল্লাহ আইন করে দিলেন নবীর স্ত্রীদের কাছে মু’মিন পুরুষরা কিছু চাইলে বা নিলে তা যেন সরাসরি মুখোমুখি না নেয়া হয় বরং পর্দার আড়াল থেকে যেন তা করা হয়। وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاء حِجَابٍ “আর যখন তোমরা তাদের [নবীর স্ত্রীদের] কাছে কিছু চাও তখন তা পর্দার আড়াল থেকে চাও।” [৩৩:৫৩] এভাবে আরো অসংখ্য ঘটনার ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই লোকেরা রসূলুল্লাহ্কে (সঃ) বিভিন্ন বিষয়ে চাপাচাপি করলেও তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত ঐ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দেননি যতক্ষণ আল্লাহর পক্ষ থেকে ওয়াহী নাজ়িল হয়েছে।
আবার কখনো কখনো আল্লাহর অনুমতিক্রমে রসূলুল্লাহ্ (সঃ) এমন নির্দেশও দিয়েছেন যার আপাত কোন দুনিয়াবী কল্যাণ সুস্পষ্ট নয়| যেমন মুসলিম পুরুষদের সোনা ও রেশম পরিধান করা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা; অথবা সাধারনভাবে সোনা-রুপার তৈজসপত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি| এসমস্ত ক্ষেত্রে বিশ্বাসীরা এগুলো শুধু আল্লাহর আইন বলেই মানবে| এর পেছনের উদ্দেশ্য তালাশ করবেনা, যদি দুনিয়াবী কোন কল্যাণ বা উদ্দেশ্য থাকেও, কারণ আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সঃ) তা বলেননি| এ কাজ হবে হবে শুধু আখিরাতের কল্যাণের নিমিত্তে।
এ কথাগুলো বুঝার পর আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহ তা’আলা মানুষের সার্বিক জীবনের কল্যাণের নিমিত্তেই আইন তৈরী করেছেন। এজন্য একজন বিশ্বাসী যুক্তি ছাড়াই যেমন আল্লাহর আইন মেনে নেবে ঠিক তেমনি আল্লাহ যদি তাঁর প্রণীত আইনের কোন উদ্দেশ্য খোলাখুলি প্রকাশ করেন অথবা তার জন্য যুক্তি পেশ করেন তবে তাতেও অবিচল বিশ্বাস স্থাপন করবে। আল্লাহর নাজ়িল করা আইনগুলোর ক্ষেত্রে কোন কোনটার জন্য তিনি প্রচ্ছন্নভাবে এর পেছনের দুনিয়াবী কল্যাণের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছেন আবার কোন কোনটার জন্য খোলাখুলি এর পেছনের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছেন। নীচে কয়েকটা উদাহরণ দেয়া গেলঃ
আল্লাহ তা’আলা যখন ক্বিসাসের [হত্যার বদলা গ্রহণের] আইন নাজ়িল করলেন তখন তিনি পরিষ্কার বলে দিলেন এটাতেই মূলত জীবন নিহিত; অর্থাৎ এটাই মানুষের জীবন রক্ষার এতাই রক্ষাকবচ। “হে ঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে ক্বিসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। ............ ক্বিসাসের মধ্যেই তোমাদের জন্যে জীবন নিহিত রয়েছে, হে প্রজ্ঞার অধিকারীগণ। আশা করা যায় তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করতে পারবে।” [২:১৭৮-১৭৯]
নবীর স্ত্রীদের কাছ থেকে কোন কিছু চাওয়ার ক্ষেত্রে পর্দার আড়াল থেকে চাওয়ার যে আয়াত আগে উল্লেখ করা হয়েছে তাতেও আল্লাহ এই বিধানের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছেন এইভাবে যে এটা মুমিন পুরুষদের ও তাঁদের অন্তরের পবিত্রতা রক্ষার জন্য। তিনি বললেনঃ وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاء حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ “আর যখন তোমরা তাদের [নবীর স্ত্রীদের] কাছে কিছু চাও তখন তা পর্দার আড়াল থেকে চাও। এই ব্যবস্থা তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের পবিত্রতার জন্য।” [৩৩:৫৩]
আল্লাহ নারীদেরকে পুরুষদের সাথে কথা বলার সময় স্বাভাবিক দৃঢ় ভঙ্গিতে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে করে দূর্বলচিত্ত ব্যক্তিদের ব্যক্তিত্বচ্যুতি না ঘটে। إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا “যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর,তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে,যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। তোমরা [বরং] সঙ্গত কথাবার্তা বলবে।” [৩৩:৩২] এই আয়াতও মূলত নবীর স্ত্রীদের উদ্দেশ্যেই প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছে।
আল্লাহ দুনিয়ার প্রায় সব উপভোগের সামগ্রীকে [খাবার-দাবার, পোশাক-আসাক, ইত্যাদি] হালাল করেছেন এবং এগুলোকে পবিত্র বলে ঘোষণা করেছেন; আর কিছু বিষয়কে হারাম করেছেন ও এগুলোকে অপবিত্র বলে ঘোষণা করেছেন। يَسْأَلُونَكَ مَاذَا أُحِلَّ لَهُمْ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ “তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে তাদের জন্য কোন বিষয়গুলোকে হালাল করা হয়েছে। আপনি বলে দিন, ‘তোমাদের জন্য সব পবিত্র জিনিসকে হালাল করা হয়েছে’।” [৫:৪] قُل لاَّ أَجِدُ فِي مَا أُوْحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَى طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلاَّ أَن يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَّسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ أَوْ فِسْقًا “আপনি বলে দিনঃ যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে,তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে,যা সে ভক্ষণ করে;কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ।” [৬:১৪৫]। এখানে পবিত্রতা ও অপবিত্রতার ধারণার ভিত্তি করা হয়েছে হালাল এবং হারামের ক্ষেত্রে।
একইভাবে মদ্য পান করা ও জুয়া খেলা সম্পর্কে লোকেরা রসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞাসা করলে আল্লাহ বললেন, এতে রয়েছে বিরাট গোনাহ এবং কিছু কল্যাণ থাকলেও এর মধ্যে অকল্যাণের [গোনাহের] মাত্রা অনেক বেশি। [২:২১৯] এরপর যখন মদ্যপান ও জুয়াকে পুরোপুরি হারাম করা হয় তখন এর পেছনের দুনিয়াবী কল্যাণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেয়া হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ বলেছেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿٩٠﴾ إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّـهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ ۖ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ ﴿٩١﴾
"হে মুমিনগণ,এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন কি বিরত হবে?" [৫:৯০-৯১] আল্লাহ এখানে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন কেন মদ জুয়া নিষিদ্ধ। এগুলোতে সামান্য উপকার থাকলেও এগুলো মূলত শয়তানি আমল যার মাধ্যমে মানুষের মাঝে পারস্পরিক ঘৃণা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি হয়, এবং আল্লাহর স্মরণ থেকে মানুষকে গাফিল করে দেয়|
সরাসরি আল্লাহর দেয়া বা তাঁর রাসুলের মাধ্যমে দেয়া হুকুমগুলোর অনেকগুলোর মধ্যে এজন্যই আমরা দেখতে পাই দুনিয়াবী উদ্দেশ্যের কথা। এক্ষেত্রে বিশ্বাসীদের কাজ হবে নির্দ্বিধায় আল্লাহ ও তাঁর রসূলের (সঃ) হুকুমগুলো মানা এবং এর পেছনে ব্যক্ত করা দুনিয়াবী উদ্দেশ্যের উপরও ইয়াক্বীন পোষণ করা। এটাই কল্যাণ লাভের পন্থা।
আমরা যদি হিজাবের নির্দেশের দিকে দেখি তাহলে দেখব মুসলিম নারীদেরকে যখন আল্লাহ জিলবাব [বুরক্বা] পরার নির্দেশ দিলেন তখন তিনি তার পেছনের উদ্দেশ্যের কথাও ব্যক্ত করলেন। তিনি বললেনঃ يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا “হে নবী! আপনার স্ত্রীগণ ও কন্যাগণ এবং মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের নিজেদের উপরে তাদের চাদরের একটা অংশ টেনে দেয়। এটা একটা উত্তম ব্যবস্থা যাতে তাদেরকে চেনা যাবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” [৩৩:৫৯] আল্লাহ তা’আলা একটা হুকুম দিলেন এবং এর পেছনের হিকমত বর্ণনা করেও দিলেন। এ আয়াত নাজ়িল হওয়ার আগে থেকেই উমর ইবন আল-খাত্তাব (রাঃ) রসূলুল্লাহকে (সঃ) চাপাচাপি করছিলেন যেন তিনি তাঁর স্ত্রীদেরকে পর্দা করতে বলেন, কারণ বিভিন্ন চরিত্রের মানুষ সমাজে রয়েছে এবং তারা রসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে আসত। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ না আসা পর্যন্ত রসূলুল্লাহ্ (সঃ) উমরের (রাঃ) পরামর্শের ব্যাপারে কিছুই বলেননি। আর আল্লাহ উমরের (রাঃ) ধারণার পক্ষেই আয়াত নাজ়িল করেছেন। [দেখুন সহীহ আল-বুখারী, কিতাবুত-তাফসীর, বাবঃ লা তাদখুলু বুয়ুতান নাবী...]
আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করলেন যে এটা এমন এক উত্তম ব্যবস্থা যার মাধ্যমে তাদেরকে চেনা যাবে যে তারা স্বাধীনা, আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্না ও সম্ভ্রমশীলা নারী; তারা সস্তা ও আত্মস্মভ্রমবোধহীন নারী নয়। অর্থাৎ তারা মর্যাদার দাবীদার; তাদের সাথে যেনতেন প্রকারের সস্তা আচরণ শোভনীয় নয়। সাথে আল্লাহ তা’আলা আরো ঘোষণা করলেন যে এই ব্যবস্থা আরো এ জন্য যে মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়া হবেনা – কুর’আনের ভাষায় ফালা ইউ‘জ়ায়না। কষ্ট দেয়ার ব্যাপারটা হল একজন স্বাধীন সম্ভ্রমশীলা ও মর্যাদাবোধের অধিকারী নারীর কাছে এটা কষ্টকর যে তার দিকে অপরিচিত [বেগানা] পুরুষেরা লালসার দৃষ্টিতে তাকাবে, তাকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করবে বা তার শারিরীক সৌন্দর্যের বর্ণনা সম্বলিত বক্তব্য, কবিতা বা গান পরিবেশন করবে। এগুলো সবই মু’মিনা নারীর জন্য কষ্টকর। স্বাভাবিকভাবেই যে নারী জিলবাবের আবরণ দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখবেন তাঁকে এ ধরণের কষ্টকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবেনা, ইনশা’আল্লাহ্।
এজন্য একজন আত্মমর্যাদা ও শালীনতাবোধ সম্পন্ন এবং সম্ভ্রমশীলা মুসলিম নারী যখন হিজাব পরিধান করেন তখন তিনি জানেন এটা আল্লাহর হুকুম এবং এটা তাঁর আখিরাতের মুক্তির পাশাপাশি দুনিয়াবী মর্যাদা রক্ষার আল্লাহ প্রদত্ত উপায়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে তিনি কখনো কারো দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হবেননা। একটা সমাজের সামগ্রিক অবস্থা যখন নষ্টামিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় তখন নষ্টরা কোন কিছুর পরোয়া করেনা। তারা সব কিছু তাদের দখলে নিতে চায়। সেক্ষেত্রে একজন হিজাব পরিধানকারিণীও এ জাতীয় নির্যাতনের শিকার হতে পারেন। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় হিজাবের মাধ্যমে একজন মুসলিম নারী পরপুরূষের লোলুপ দৃষ্টি ও অযাচিত লালসার কামনা থেকে নিরাপদ থাকে। আর এটাই আল্লাহর হুকুমের উদ্দেশ্য।
তাই একজন মুসলিম নারী আল্লাহর ভালবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে হয়ে আল্লাহ প্রদত্ত এই কল্যাণকর ব্যবস্থা অবলম্বনের জন্য আন্তরিকতার সাথেই অগ্রসর হন। তাঁর হৃদয় থাকে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। অহঙ্কারের পরিবর্তে নম্রতায় ভরে উঠে তাঁর হৃদয়। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন আল্লাহর একেকটা হুকুম পালন করতে পারা আল্লাহর পক্ষ থেকে একেকটা অনুগ্রহ যা তাঁর জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের নিমিত্ত হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য বিশ্বাসী হৃদয় আল্লাহর হুকুম পালনের মাধম্যে আত্মম্ভরিতা পূর্ণ দাম্ভিকতায় ভরে উঠেনা; বরং সে আরো বেশী নমনীয় হয়। সে জানে সে কখনো আল্লাহর প্রতি পূর্ণ কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারবেনা। সে জন্যই দাঊদ (আঃ) সম্পর্কে আমাদের জানানো হয়েছে যে তিনি বলেছিলেন, “হে আল্লাহ আমরা কীভাবে তোমার নি’আমতের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারি, যখন কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারাটাও তোমার আরেকটা নি’আমত।”
মু’মিনদের দুনিয়ার জীবনটাই থাকে আল্লাহর ভীতিতে ভরপূর। ঔদ্ধত্যপূর্ণ জীবনযাপন তারা করেনা। এজন্য তাদেরকে যখন জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে তখন তারা পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে বসবে এবং তাদের দুনিয়ার জীবন পর্যালোচনা করবে। তারা সেখানে বলবেন, قَالُوا إِنَّا كُنَّا قَبْلُ فِي أَهْلِنَا مُشْفِقِينَ ﴿٢٦﴾ فَمَنَّ اللَّـهُ عَلَيْنَا وَوَقَانَا عَذَابَ السَّمُومِ ﴿٢٧﴾ إِنَّا كُنَّا مِن قَبْلُ نَدْعُوهُ ۖ إِنَّهُ هُوَ الْبَرُّ الرَّحِيمُ “আমরা ইতোপূর্বে আমাদের পরিবার-পরিজনের মধ্যে ভীতি সহকারে বসবাস করেছিলাম। অতএব আল্লাহ আমাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। আমরা পূর্বেও তাঁকে ডেকেছি; নিশ্চয়ই তিনি সৌজন্যশীল ও পরম দয়ালু।” [৫২:২৬-২৮]
তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে তারা হবে কৃতজ্ঞতায় ভরপূর আত্মার অধিকারী এবং তারা বলবেঃ
الْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِي هَدَانَا لِهَـذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلا أَنْ هَدَانَا اللّهُ لَقَدْ جَاءتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّ
“আল্লাহ শোকর, যিনি আমাদেরকে এ পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। আমরা কখনও পথ পেতাম না, যদি আল্লাহ আমাদেরকে পথ প্রদর্শন না করতেন। আমাদের প্রতিপালকের রসূল আমাদের কাছে সত্যকথা নিয়ে এসেছিলেন।”
وَنُودُواْ أَن تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
আর তাদেরকে ডেকে বলা হবেঃ এটি জান্নাত। তোমরা এর উত্তরাধিকারী হলে তোমাদের কর্মের প্রতিদান হিসেবে।
=====
১৭ নভেম্বর ২০১১ এস,বি, ব্লগে প্রথম প্রকাশিত।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন