গাদ্দারীর পরিণতি কখনো ভাল হয় না।
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ১১ মার্চ, ২০১৬, ০৫:৫২:২০ বিকাল
একটা জাতি যদি সামগ্রিকভাবে গাদ্দারী করে অথবা গাদ্দারদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় অথবা গাদ্দারদেরকে নেতা হিসেবে পেয়ে খুশি হয়, তাহলে সেখানকার মুষ্টিমেয় ঈমানদাররা শত চেষ্টা করেও জাতীয় জীবনে জ়িল্লতি ও অপমানকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। ঈমানদাররা অনেক কুরবানী দিয়েও তখন পতন রুখতে পারে না। নিজেদের কলিজার খুন ঝরিয়ে আর লাখ কুরবানী দিয়ে ঈমানদাররা গড়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু গাদ্দাররা বারবার শুধু ভাঙ্গনের খেলায় ব্যস্ত থাকে। ত্যাগ ও কুরবানীর মঞ্জিলগুলো এক এক করে পাড়ি দিয়ে ঈমানদাররা শেষ পর্যন্ত তাদের রব্বের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয় তাঁর উপর সন্তুষ্ট অবস্থায়। কিন্তু বাক্বীরা গাদ্দারদের গাদ্দারীর ফল হিসেবে অপমান ও জ়িল্লতি নিয়ে জীবন-যাপন করে যেতে থাকে আর শেষ পর্যন্ত তাদের রব্বের কাছে উপনীত হয় মাথা হেঁট অবস্থায়।
গাদ্দারদের মুখরোচক স্লোগানের পরিবর্তে সত্য বুঝার যোগ্যতা জাতির ভেতর যতদিন থাকে ততদিন গাদ্দাররা কিছুই করতে পারে না। এজন্যই আমরা দেখি জাতীয়তাবাদী আহবান করেও আব্দুল্লাহ ইবন উবাই ও তার দলবল মদীনার আনসারদের বিভ্রান্ত করতে পারেনি। বনুল-মুস্তালিক অভিযান শেষে ফিরতি পথে মুহাজিরদের এক দাসের সাথে আনসারদের একজনের বাক বিতণ্ডার জের ধরে তারা জাতির নামে আহবান করে বসে দুই গ্রুপকে৷ ইবন উবাই বলেছিল মদীনায় ফিরে গেলে সেখানকার সম্মানিতরা অসম্মানিতদের বের করে দেবে। কিন্তু তাদের গাদ্দারী বুঝেই মুমিনরা তা প্রতিরোধ করেছিল। এমনকি ইবন উবাইয়ের নিজের ছেলেই তার পথ আগলে ধরে তার মদীনায় প্রবেশ বাধাগ্রস্ত করেছিল।
জাহিলী আসাবিয়্যার বিষবাস্প দূর করে মদীনার আউস আর খাজরায হয়ে গিয়েছিল আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর দীনের আনসার। জাতীয়তাবাদী অহংকার ধুলোয় লুটিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা আল্লাহর ওয়াস্তে। কিন্তু শত্রুরা তাদের মধ্যকার পুরাতন ক্ষতকে আবার জাগিয়ে দিচ্ছিল। ইয়াহুদীদের উস্কানিতে আউস ও খাজরায আবার জাহিলী গোত্রীয় আহবান দিয়ে একদল আরেকদলকে আহবান করল অস্ত্র নিয়ে বের হবার জন্য। ইয়াহুদীরা সবসময় চেষ্টা করেছে আউস ও খাজ়রাজের পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘাগুলোকে উন্মুক্ত করে দিতে। কিন্তু আল্লাহর জন্য নিবেদিত আনসারগণ তা প্রতিরোধ করেছেন। মুনাফিক্বরাও ইয়াহুদী ও মুশরিকদের সহায়তায় বাইরে থেকে আসা মুহাজিরদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাদেরকে দূর্বল করে দিতে চেয়েছে। কিন্তু আল্লাহর সাহায্য, রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দূরদর্শিতা, আনসারদের উদারতা ও ত্যাগ এবং মুহাজিরদের একনিষ্ঠতা তাদেরকে সফল হতে দেয়নি।
অন্যদিকে দুশো বছরের ইংরেজের গোলামী শেষে যখন ভারতীয় মুসলমান বুঝতে পারল তাদেরকে বর্ণহিন্দুর যাঁতাকলে পিষ্ট হতে পারে তখন তারা ভেদাভেদ ভুলে নিজেদের জন্য ভারতের দুইকোণায় একটা স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। এটা অপূর্ণাঙ্গ হলেও তাদের নিজেদের রাষ্ট্র ছিল। এখানে তারা নিজেদের মত স্বাধীন জীবনযাপন করছিল এবং নিজেদের ভাগ্য গড়তে ব্যস্ত ছিল। পূর্ব বাংলার চাষার ছেলেরা স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিল। তারা রাষ্ট্রের বড় বড় পদে বসে রাষ্ট্র প্রশাসন চালাচ্ছিল। অসামরিক জাত হবার পরেও তাদের ছেলেরা সামরিক বাহিনীতে বিরাট হারে কমিশন নিয়ে অফিসার হচ্ছিল এবং এই রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষায় অনন্য সাধারণ অবদান রেখে যাচ্ছিল। এসব করতে গিয়ে তাদেরকে বর্ণ হিন্দু আর জমিদারের চোখ-রাঙানী ও তাচ্ছিল্য সহ্য করতে হচ্ছিল না।
কিন্তু তাদের এ সৌভাগ্য তাদের শত্রুদের সহ্য হয়নি। তাদের চিরশত্রু মূশরিকদের সাথে আঁতাত ও ষড়যন্ত্র শুরু করে দেয় ক্ষমতালোভী গাদ্দাররা। আর অদূরদর্শি নেতৃত্ব এ ষড়যন্ত্রের মুক্বাবিলা করতে হয় সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলাফল হল সে আবাসভূমির ভাঙ্গন ও অসংখ্য ঈমানদারের খুন ঝরানো। শত্রু এখানে মিত্র সেজে সহায়তা করেছে, আর তারা এখনো মিত্র(!)ই আছে। আর এখন সেখানে ষড়যন্ত্রকারী গাদ্দারদের সহায়তায় শত্রুদেরকে খণ্ডিত রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ অংশের কর্তা বানিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সময়ে সময়ে মাল পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশের শিল্পোদ্দোক্তা ও সৎ রাজনীতিকদের বিচারিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে নির্মূল করে দেয়া হচ্ছে। সামনে নৈরাশ্যের অন্ধকার ছাড়া আর আছে কী?
দুনিয়ার বিভিন্ন অংশে মুসলমানরা অনেক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করেছিল। কিন্তু গাদ্দারদের গাদ্দারী সেগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। এগুলোর অধিকাংশের নামও জানে না মুসলমানের বাচ্চারা। তাদের কাছে আন্দালুস আছে উদাহরণ হয়ে। খোদ ভারত কি তাদের সামনে নেই? ৮০০ বছর পরে ভারতের দুই কোনায় দুইটা অংশ হাতে আছে। একটা অবশ্য এখন যায় যায় অবস্থায় আছে। কে জানে ক’দিন পরে এখানকার অবস্থাও আন্দালুসিয়ার অবস্থায় পর্যবসিত হবে। কিন্তু এরপরও এরা সেই গাদ্দারীর চুড়ান্ত পরাকাষ্ঠাকে মুক্তিযুদ্ধ মনে করতে থাকবে এবং তাজউদ্দীনদের মত ইজ্জত ও আযাদী বিকিয়ে দিয়ে আসা ব্যক্তিদেরকে তাদের স্বাধীনতার রূপকার মনে করে বগল বাজাতে থাকবে।
বিষয়: বিবিধ
১১৮২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন