সঊদী নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের ইয়েমেনে হামলা সমর্থন করা বা না করা যখন আপনার রাফিদী [রাফেযী], শিয়া, খারিজী বা সুন্নী হবার মানদণ্ড হয়ে দাঁড়ায়। :( :( :(
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:৫২:২৪ রাত
সঊদী নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের ইয়েমেনে হামলা সমর্থন করা বা না করা যখন আপনার রাফিদী [রাফেযী], শিয়া, খারিজী বা সুন্নী হবার মানদণ্ড হয়ে দাঁড়ায়। :( :( :(
একজন শায়খ হঠাৎ করে আমাকে একটা প্রশ্ন করে বসলেন সঊদী নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন কর্তৃক ইয়েমেনের হুতিদের উপরে হামলা নিয়ে। অথচ আমি এই হামলার সমর্থন বা বিরোধিতা কোনটা করেই কোন পোস্ট দেই নি কখনো। স্বাভাবিকভাবেই আমি খুব আশ্চর্য হয়েছি।
তাঁর মেসেজটা নিম্নরূপঃ
"সালাম। ইয়ামানের হাওতীদের উপর সৌদির নেতৃত্বাধীন হামলা সম্পর্কে মত কী? জানাবেন বলে আশা করি।"
আমি নিম্নোক্ত জবাব দিলামঃ
"ওয়া'আলায়কুম আস-সালাম,
এই ব্যাপারে আমার মতের কী গুরুত্ব? বর্তমান সময়ে আমাদের উম্মাহ একটা কমপ্লিট মেস! আমি হুসিদের কর্তৃক সানা'আ দখলকে যেমন মেনে নিতে পারি না, তেমনি সৌদি নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের বোমা বর্ষণকেও সমর্থন করি না। কোয়ালিশনের যদি কোন মহৎ উদ্দেশ্য থাকত তবে না হয় সমর্থন করা যেত। যেমন তারা যদি সেখানে এমন কোন জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইত যারা সেখানে দীন প্রতিষ্ঠা করবে তবে আমার সমর্থন করার কথা থাকত। আমার অনেক ইয়েমেনী ছাত্র-ছাত্রী আছে। তারা সবাই হুসিদের বিরোধি; কিন্তু একইভাবে তারা কোয়ালিশনের বোমাবর্ষণকে মেনে নেয়নি। তারা নিজেরা এইসব বোমাবর্ষণের ক্ষতিকর দিকের প্রত্যক্ষদর্শী।
এটা সেই কোয়ালিশন যারা মিশরে মুসলিমদের নির্বাচিত ইসলামপন্থী সরকারকে উৎখাত করতে জালিম সিসিকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। তাই এদের নিয়ে আমি ভাল কিছু প্রত্যাশা করি না। হ্যাঁ, এখান থেকে ভাল কিছু এসেছিল যখন ফয়সাল বিন আব্দুল আজীজ (রহিমাহুল্লাহ) ক্ষমতায় ছিলেন। মুসলিমদের তেমন কোন শুভাকাংখী যদি আবার আ-ল সঊদের মাঝে জন্ম নেয় তবে হয়তো আমি আবার তাদের সমর্থক হব, ইনশা-আল্লাহ!"
শায়খ জবাব দিলেনঃ
"আপনার কথায় ভালো মন্দের মিশ্রণ ঘটেছে। হাওতীরা যেহেতু আগে সানআ দখল করে নিয়েছে, ইয়ামানের শত শত নিরীহ সুন্নী মুসলিমদের হত্যা করেছে, তাই সৌদির হামলাকে সমর্থন না করার কোনো যুক্তি থাকতে পারেনা।"
আমি নিম্নোক্ত জবাব দিয়ে ইতি টেনে দিলামঃ
"ধন্যবাদ শায়খ।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমার কথায় ভাল-মন্দের মিশ্রণ আছে। কথা হল আপনার কোনটা ভাল লাগল আর কোনটা মন্দ লাগল সেখানে।
আমি যেহেতু নবী না এবং কোন বিশেষ মর্যাদা প্রাপ্ত ওয়ালীও না, তাই আমার কথার সবটুকু ভাল হবে এমন আশাও আমি করি না। আমি দু'আ করি এবং হৃদয় দিয়ে আকাঙ্খা করি আমার রব্ব যেন আমার মন্দগুলোকে মিটিয়ে দেন এবং সামান্য ভালগুলোকে ক্ববুল করেন। আমার যদি কিছু ভাল থাকে তবে তা হবে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূল এবং উম্মতে মুহাম্মদীকে ভালবাসি।"
=======
ইয়েমেনে একটা জনপ্রতিনিধিত্বশীল ইসলামী সরকার কায়েম হোক, এটা অনেক মু'মিনের ন্যায় আমারও আকাংখা। তাই আলী আব্দুল্লাহ সালেহ এর পতনকে আমি মোটামুটি ইতিবাচকভাবেই দেখেছি এবং একটা সুচারু রাজনৈতিক প্রক্রিয়া গড়ে উঠুক এই আশা করেছি। কিন্তু মাঝখান থেকে হুসিদের কর্তৃক রাজধানী দখল করে ফেলায় খুবই কষ্ট পেয়েছি এবং আকাংখা করেছি যে তাদেরকে শীঘ্রই রাজধানী থেকে বিতাড়িত করা হবে। আর এজন্য ইয়ামানের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের শক্তিশালী করা হবে। কিন্তু তারপর সঊদী কোয়ালিশন আসল। তারা কী করেছে? তারা কি হুতিদের বিতাড়িত করতে পেরেছে?
আমার অনেক ইয়ামানী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তারা এই সময়ে ইয়ামান থেকে ফিরে এসেছে। এরা সবাই সুন্নী এবং হুসি বিরোধী। কিন্তু তাদের কেউই সঊদী হামলাকে সমর্থন করে নি। তাদের কথা হচ্ছে হুসিদের প্রতিরোধ করছে বিভিন্ন শহরের অধিবাসীরা। আর সঊদী বোমা হামলা হুসিদের কোন কার্যকর ক্ষতি করতে পারে নি। বরং জনজীবনে কষ্ট বয়ে এনেছে।
তাই আমার এটাকে সমর্থন করার কিছু নেই। এটা সুন্নীদের রক্ষার জন্য সঊদীদের কোন অভিযান না। এটা হল তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের কৌশলগত অবস্থান। হুসিদের আগে আলী আব্দুল্লাহ সালেহ সিকি শতাব্দীর বেশি ইয়ামান শাসন করেছে। সে জায়দী শিয়া। সঊদীরা তার বিরুদ্ধে কোন একশন তো নেয় নাই। সালেহর আগে জায়দী ইমামগণ ইয়ামান শাসন করেছেন। তখনো তো কোন সমস্যা তাদের সাথে সঊদীদের দেখি না। এ জন্য আমাকে সঊদী কোয়ালিশনকে সমর্থন করতে হবে কেন?
আজকে আবার একটা স্ট্যাটাস দেখলামঃ
"যে লোক সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ইয়ামানের হাওতী সন্ত্রাসী গোষ্ঠির উপর চলমান হামলাকে সমর্থন করেনা, বরং উহার প্রতিবাদ করে সে হয় ইসলামের দুশমন আর না শিয়া রাফেযী আর না হয় বিদআতী আর না হয় সুন্নী মুসলিমদের বিরুদ্ধে শিয়া-রাফেযীদের যুলুম ও ষড়যন্ত্রগুলো এখনো তার কাছে সুস্পষ্ট হয়নি।"
সুন্নী মুসলমানরা বা সাধারণভাবে ইসলাম বিরাট ষড়যন্ত্রের শিকার। এ কথাতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু সেজন্য আমাকে চোখ বন্ধ করে আ-লে সঊদের সব কর্মকাণ্ডকে ইসলামের কল্যাণে করা হচ্ছে এমন ধরে নিতে হবে না। আর তাদের সমর্থন করা না করার উপর আমার ঈমানও নির্ভর করে না।
সমস্যা হল যাদের নুন খাই তাদের গুন না গেয়ে আমরা থাকতে পারি না। এটা একটা ভাল দিক, নেমক-হালালতো আমাদের হতে হবে। কিছু বাংলাদেশি লোকজন ইরান সরকারের চাকুরী করে তাদেরকে দেখবেন শিয়াদেরকে এবং সিরিয়ার নুসাইরী আসাদকে সবসময় ডিফেন্ড করতে।
আবার কিছু লোক সৌদী সরকারের মুবাল্লিগ; তাঁরাও সৌদীদের সব কিছুতে হাঁ। এতে অবশ্য কোন সমস্যা নেই। আপনি যাদের কাজ করেন তাদের গুনতো গাইতে হবে। কিন্তু সে জন্য অন্যের ঈমানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অধিকার আপনাকে কে দিল?
আমরা রাফিদী শিয়াদের আক্বীদা-বিশ্বাসের বিরোধিতা করব এবং সে ব্যাপারে সচেতনতাও সৃষ্টি করব। একইভাবে সঊদীদের ভাল কাজকে সমর্থন করব, কিন্তু তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে করা কাজের পেছনে নিজেদের সমর্থন ঢেলে দেব না। আর কখনো তাদের নিরংকুশ রাজতন্ত্রকে ইসলাম সমর্থিত মনে করবো না।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৭ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরা রাফিদী শিয়াদের আক্বীদা-বিশ্বাসের বিরোধিতা করব এবং সে ব্যাপারে সচেতনতাও সৃষ্টি করব। একইভাবে সঊদীদের ভাল কাজকে সমর্থন করব, কিন্তু তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে করা কাজের পেছনে নিজেদের সমর্থন ঢেলে দেব না। আর কখনো তাদের নিরংকুশ রাজতন্ত্রকে ইসলাম সমর্থিত মনে করবো না।
জাজাকাল্লাহ খায়রান
অনেক ধন্যবাদ।
জাযাকাল্লাহ খায়রা।
আপনার মতামত ভালো লেগেছে। জাযাকাল্লাহ খাইর
মন্তব্য করতে লগইন করুন