সামান্য মূল্যে আখিরাত বিক্রির জন্য দুনিয়ার তদ্বির।
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৮:৫২:১০ সকাল
দুনিয়া নানারূপে দরজায় এসে দাঁড়াবে আপনার আখিরাতকে বরবাদ করার জন্য। সে সামান্য সওদার বদলায় কিনে নিতে চাইবে আপনার আখিরাত। অনেক সময় নিতান্ত ছোটখাট সুবিধাকে আপনার সামনে পেশ করবে, যাকে আপনি নিতান্তই নগণ্য মনে করে গ্রহণ করে নেবেন, অথচ তা আপনার জন্য বৈধ ছিল না। আর এভাবে সে সামান্য সওদা উপহার দিয়ে আপনার আখিরাতকে ছিনিয়ে নিবে; অথচ আপনি থাকবেন বেখেয়াল।
ক'দিন আগে কস্টকো থেকে সওদা কিনতে গেলাম। কেনাকাটা শেষে বেরিয়ে এসে মালগুলো গাড়িতে উঠানোর সময় রশিদের সাথে মিলিয়ে দেখতে গিয়ে দেখলাম ক্যাশিয়ার ১টা ছোট্ট জিনিষ স্ক্যান করে নাই। অর্থাৎ দাম না নিয়েই আমাকে ওটা দিয়ে দিয়েছে। কস্টকো থেকে বেরোনোর পথে রশিদের তালিকার সাথে শপিং কার্টের মালের সংখ্যা মিলিয়া দেখেন একজন কর্মচারী। কার্ট ভর্তি থাকলে তারা মোটামুটি ভাল করে একটু নজর বুলিয়ে রশিদের উপর টিক দিয়ে ছেড়ে দেয়। আমাকেও এরা তাই করেছিল। কিন্তু গাড়িতে মাল উঠানোর সময় দেখলাম সমস্যাটা। ছোট্ট একটা জিনিষ। ভেতরে গিয়ে এটার দাম দিতে গেলে আবার লাইনে দাঁড়াতে হবে; কিভাবে আমার হাতে বাইরে আসল তা ব্যাখ্যা করতে হবে; আর এভাবে অনেক সময় নষ্ট হবে। তার চেয়ে এটাকে উপেক্ষা করে বাড়ি চলে আসা শ্রেয় - এমন ওয়াসওয়াসা তখন অনুভব করতে শুরু করে দিলাম। শেষ পর্যন্ত সময়ের কুর'বানী দিয়ে আবার ভেতরে গিয়ে দাম পরিশোধ করে আসলাম।
গতকাল বাড়ি ভাড়ার নতুন বিল পাঠিয়েছে, অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। আমার কবুতরের খোপের মাসিক ভাড়া ১৪২১ ডলার। বিল পড়তে গিয়ে দেখি আমাকে এ মাসে শূন্য (০) ডলার ভাড়া দিতে হবে, কারণ হিসেবে দেখাচ্ছে আমি ইতোমধ্যে ফেব্রুয়ারীর ভাড়া পরিশোধ করে ফেলেছি। আমারতো আসমানে উড়ার কথা। এ মাসে ১৪২১ ডলার সঞ্চয় করা যাবে, যা দিয়ে অনেক জরুরী কিছু করে ফেলা সম্ভব হবে। আমার মত যারা এক পে-চেক থেকে আরেক পে-চেক পর্যন্ত জীবন ধারণ করে তাদের জন্য এটা একটা বিরাট সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু আমি তো জানি মাস মাত্র শুরু হওয়াতে আমার এখনো ভাড়া দেওয়া হয় নি। জানুয়ারীর ভাড়ার চেক ছেড়ে ছিলাম আমি সে মাসের ৫ তারিখে। মুশকিল হল তারা আমার চেকটা ক্যাশ করেনি অনেক দিন। আমি অনলাইন ব্যাঙ্কিং এ চেক করে দেখলাম অ্যাপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষ আমার চেকটা তাদের একাউন্টে জমা দিয়েছে জানুয়ারীর ২৮ তারিখে। সম্ভবত সে কারণে তারা ধরে নিয়েছে ওটা ফেব্রুয়ারীর ভাড়া। আর হয়তো অ্যাকাউন্টেন্ট ভুল করে ধরে নিয়েছে জানুয়ারীর ভাড়া আগেই শোধ হয়ে গিয়েছে। ইয়াহুদী মালিকরা টাকা-পয়সার হিসেবে এরকম ঝামেলা করবে সে চিন্তা করেও আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম।
এখানেও দুনিয়া আমার দরজায় হাজির হয়ে গিয়েছে সামান্য ১৪২১ ডলার নিয়ে, যাতে আমার কাছ থেকে আমার আখিরাতটা হাতিয়ে নিতে পারে। সে বার বার ওয়াসওয়াসা দিতে লাগল, "এটাতো তোমার সমস্যা না, তাদের সমস্যা। তুমিতো ভাড়া না দিতে চাওনি। কিন্তু এখন সহজে রেয়াত পেয়ে যাচ্ছো; আর তারাই বলেছে তুমি ইতোমধ্যে ভাড়া পরিশোধ করে ফেলেছো। তাই এত চিন্তা করে কী লাভ? টাকাটা তোমার কোন প্রয়োজনে লাগাও।" একটূ বেখেয়াল হলে আখিরাতটা আমার হাতছাড়া হয়েই যেতো। আমাকে এখন একদিন কাজ থেকে আগে ভাগে ছুটি নিয়ে এসে ম্যানেজমেন্ট অফিসে যেতে হবে এবং এই ব্যাপারটা সুরাহা করতে হবে। আগে কাজ থেকে ছুটি নেয়ায় নিজের বেতন থেকে কিছু গচ্ছা যাবে ঠিকই; কিন্তু দুনিয়াকে ঠেকিয়ে আমি আমার আখিরাতটাকে ধরে রাখতে পারব; এটিই স্বস্তি।
কতদিন কেনাকাটা করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে ক্যাশিয়ার ভুল করে আমাদের হাতে প্রাপ্যের চেয়ে বেশি ভাংতি ফেরত দিয়েছে। গুণে নিয়ে অতিরিক্তটা যখন ফেরত দেয়ার জন্য বাড়িয়ে ধরি তখন ক্যাশিয়াররা হা হয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এভাবে ছোট ছোট ও নগণ্য মূল্য নিয়ে দুনিয়া বার বার আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। তাকে ফিরিয়েই দিতে হয় আখিরাতকে আগলে রাখার জন্য; কারণ তা বিক্রির জন্য নয়।
একদল মানুষ এই দেশে এসে প্রতিনিয়ত আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার সওদা কিনছে। এরা হেন কোন হারাম পন্থা নেই যা অবলম্বন করছে না শুধু দুনিয়া থেকে সামান্য লাভের জন্য। একজন ভাই কন্সট্রাকশনের মিস্ত্রি। তিনি সাধারণ ব্রাউন-স্টোনের কাজ করেন। তাঁর কাজ বাইরের; সেজন্য শীত কালে কাজ থাকে না। এই শীতের শুরুতে তিনি বাঙালী এক নির্মান-ঠিকাদারের ড্রাইভারের কাজ নিয়েছেন। তাঁর কাজ হল নির্মান-শ্রমিকদেরকে কর্মস্থলে নামিয়ে দেয়া ও কাজ শেষে উঠিয়ে আনা। আর কোথাও এটা ওটা আনা নেওয়া করা। তাঁর বস আবার সাবেক ছাত্র-লীগ ক্যাডার। তিনি দেশে করা দুই-নম্বরী কাজ এখানে চালু করে দিয়েছেন এবং দেদারসে দুনিয়া কামাই করে চলেছেন। এই ভায়ের কাছ থেকে শুনলাম যে এই লোক হোমডিপোতে গিয়ে তার নির্মানকাজের জন্য অনেক জিনিষপত্র কেনার জন্য ক্যাশে আনেন। তারপর ক্যাশিয়ার মেয়েটাকে দূর্নীতিতে জড়িয়ে বিনে পয়সায় অনেকগুলো মাল নিয়ে নেন। মেয়েটাকে বলেন মাল-পত্রগুলো তাকে দিয়ে দেয়ার জন্য আর তিনি মেয়েটাকে মালগুলোর যা দাম তার হয়তো ৫ ভাগের এক ভাগ ধরিয়ে দিচ্ছেন। এভাবে সে নিজে অন্যায়ভাবে কিছু মাল নিয়ে যাচ্ছে আর সাথে দোকানের ক্যাশিয়ারদেরকে দুর্নীতি শিখিয়ে যাচ্ছে। এই ভদ্রলোকের মত বাঙালির অভাব নেই এখানে। এখানে হেন কোন অপকর্ম নেই যা তারা করে না, শুধু দুনিয়া লাভের জন্য।
দুনিয়ার লোভকে ঠেকাতে না পারলে আখিরাত কবে বিকিয়ে যাবে তার হিসেব কোনদিন মিলবে না। আল্লাহুল মুস্তা'আন।
বিষয়: বিবিধ
১০৯৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহ খায়ের
ওয়া-জাযাকা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন