দাসরা জ্ঞানের জগতের নেতা৷

লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৯:৩৩:৩৯ রাত

ইসলাম দাসদেরকে নেতা বানিয়েছে তাদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মহত্বের কারণে। সাহাবাদের পরের প্রজন্মের (তাবি'ঈন) স্কলার ও ফুক্বাহাদের অধিকাংশই হয় সাবেক দাস অথবা দাসের সন্তান। এটা এজন্য সম্ভব হয়েছিল যে প্রাথমিক প্রজন্মের মুসলিমরা গোষ্ঠিগত জাতীয়তাবাদের উর্ধ্বে উঠে ইসলামের ভ্রাতৃত্ববোধকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।

আব্দুর রহমান ইবন আবী লায়লা (রহিমাহুল্লাহ) ছিলেন তাবি'ঈদের মধ্যে নামকরা একজন। তিনি বর্ণনা করেছেন নিন্মোক্ত ঘটনাঃ

'ঈসা ইবন মূসা ছিলেন একজন গোঁড়া স্বৈরাচারী। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, "বসরার ফক্বীহ কে?" আমি বললাম, "আল-হাসান ইবন আবিল হাসান [হাসান আল-বসরী]"। তিনি বললেন,"এরপর কে?" আমি জবাব দিলাম, "মহাম্মদ ইবন সীরীন"। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "এরা কারা?" আমি বললাম, "দুজন অনারব মাওয়ালী।" তিনি তখন বললেন, "মক্কার ফক্বীহ কে?" আমি বললাম, "আতা ইবন আবী রবাহ, মুজাহিদ ইবন জাবর, সা'ঈদ ইবন জুবায়র এবং সুলায়মান ইবন ইয়সার।" তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "এরা কারা?" আমি বললাম, "অনারব মাওয়ালী।" এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "মদীনার ফক্বীহ কে?" আমি বললাম, "জায়দ ইবন আসলাম, মুহাম্মদ ইবন আল-মুনকাদির এবং নাফি' ইবন আবী নাজীহ।" তিনি জিজ্ঞেস করলেন,"এরা কারা?" আমি জবাবে বললাম, "অনারব মাওয়ালী।" এতে তার চেহারার রঙ বদলে গেলো, এবং আবার জিজ্ঞেস করলেন, "আর ক্বুবার লোকদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী ফক্বীহ কে?" আমি বললাম, "রবী'আতুর-রায় এবং ইবন আবীজ-জিনাদ?" তিনি জিজ্ঞেস করলেন,"এরা কারা?" আমি জবাবে বললাম, "অনারব মাওয়ালী।" এতে তাঁর চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেল এবং তিনি বললেন, "ইয়ামনের ফক্বীহ কে?" আমি বললাম, " তাঊস, তাঁর পূত্র এবং হাম্মাম ইবন মুনাব্বিহ।" তিনি জিজ্ঞেস করলেন,"এরা কারা?" আমি জবাবে বললাম, "অনারব মাওয়ালী।" এতে তার গলার শাহরগ ফুলে উঠল এবং উঠে বসলেন ও তারপর জিজ্ঞেস করলেন, "আর খুরাসানের ফক্বীহ কে?" আমি জবাব দিলাম, "আতা ইবন আব্দুল্লাহ আল-খুরাসানী।" তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "এই আতাটা কে?" আমি জবাবে বললাম, "একজন অনারব মাওয়ালী।" তার চেহারা ফ্যাকাসে হতে হতে এমন কাল হয়ে গেল যে আমি তার ব্যাপারে ভয় পেলাম। তিনি এরপর জিজ্ঞেস করলেন, "শামের ফক্বীহ কে?" জবাবে আমি বললাম, "মাকহুল।" "আর এই মাকহুলটা কে?", তিনি জজ্ঞেস করলেন। আমি জবাবে বললাম, "একজন অনারব মাওয়ালী।" তাঁর গোস্বা বৃদ্ধি পেল এবং জিজ্ঞেস করলেন, "আরব উপদ্বীপের ফক্বীহ কে?" আমি বললাম, "মায়মূন ইবন মিহরান?" তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "সে আবার কে?" আমি জবাবে বললাম, "একজন অনারব মাওয়ালী।"

তিনি তখন খুব গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, "কুফার ফক্বীহ কে?" [ইবন আবী লায়লা বলেন], "আল্লাহর কসম, আমি যদি তার ব্যাপারে ভয় না করতাম তবে আমি অবশ্যই বলতাম, আল-হাকাম ইবন 'উয়ায়না এবং আম্মার ইবন আবী সুলায়মান। কিন্তু আমি দেখলাম তার দৃষ্টি থেকে শয়তানী ঠিকরে পড়ছে। তাই আমি বললাম, "ইবরাহীম এবং আল-শা'বী।" তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "এরা কারা?" আমি বললাম, "দুজন আরব।" তিনি তখন বলে উঠলেন, "আল্লাহু আকবর", এবং তার উত্তেজনা অবদমিত হল।

টীকা: মাওয়ালী, মাওলা শব্দের বহুবচন। এটা বিজিত অনারব মুসলমানদের জন্য ব্যবহৃত হত। তারা যুদ্ধের নিয়মানুযায়ী মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়ে দাস হয়ে গিয়েছিল। পরে মুক্তিপ্রাপ্ত হয়ে মুসলিম সমাজে উন্নতির শিখরে আরোহণ করেছেন অনেকেই।

সূত্রঃ

Ibn 'Abd Rabbih, Ahmad ibn Muhammad (2011). "The Unique Necklace (العقد الفريد)," Vol III, Garnet Publishing, U.K. Pp 308-309

বিষয়: বিবিধ

২৮৪৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

357911
২৮ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১০:০১
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

আল্লাহর জন্যই আমরা তাঁদের ভালবাসি!!!

জাযাকাল্লাহ....
০৫ মার্চ ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
299587
আবূসামীহা লিখেছেন : হ্যাঁ, আমরা তাদের আল্লাহর জন্যই ভালবাসি।
ওয়া জাজাকাল্লাহু খায়রা।
357994
২৯ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১০:৪৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কারন তারা দাস নয় বরং মানুষ হিসেবেই ছিল। যেটা তথাকথিত সভ্য ইউরোপে গত শতাব্দিতেও অসম্ভব ছিল।
০৫ মার্চ ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪৬
299588
আবূসামীহা লিখেছেন : তারা দাস ছিলেন। কিন্তু ইসলাম দাস [عبد] শব্দ ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করে তাদের জন্য মাওলা শব্দ ব্যবহার নির্দিষ্ট করেছে। এবং তাদের জন্য জীবনের অগ্রগতির পথকে উন্মুক্ত রেখেছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File