'বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে আমরা তখন বসে / বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি কুরান-হাদিস চষে'

লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ২৪ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৯:৫৭:০২ রাত

উপরের কথাগুলো হয়তো আপনি অনেকবার দেখে থাকবেন। কেউ হয়ত আপনার মুখের উপর এমন বলে দিয়েও থাকবে। তাদের অবস্থা হল এমন, যেন এই কুর'আন-হাদীস চষে বিবি তালাক্বের ফতোয়া খোঁজার কারণে আমরা পিছিয়ে আছি। আর ভাবখানা এমন যেন নজরুল ইসলাম এখানে বিরাট ইসলামী পণ্ডিত। তারা কিন্তু নিজেরা ইসলাম পালন করে না। যদি করেও নিজেদের খেয়াল-খুশি মত। নিজেদের যা ভাল লাগে তা পালন করে; আর যা ভাল লাগে না তা ছেড়ে দেয়। নিজেদের হাওয়ার [কামনা-বাসনা] অনুসরণ করে চলেন এসমস্ত ব্যক্তি। তাদেরকে যদি যথাযথ সুন্নাহ পালন করার কথা বলেন তখন আপনার মুখের উপর উপরোক্ত নজরুলীয় শ্লোকটা শুনিয়ে দিবে; অন্ততঃ আমার মুখের উপরে আমি একজনকে বলতে শুনেছি।

আমাদের দীনের অবস্থা হচ্ছে এমন যে আল্লাহ তা'আলা আমাদের জন্য কিছু বিধান নাজিল করেছেন। সেখানে পুরো জীবন-যাপনের জন্য একটা মূলনীতি দিয়ে দিয়েছেন। তিনি তাঁর রসূলকে [সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া-সাল্লাম] পাঠিয়েছেন এই মূলনীতিগুলোর ব্যাখ্যা করা ও প্রায়োগিক রূপগুলোর বাস্তবায়ন করানোর জন্য। তাই আমাদের কাছে কুরআনিক মূলনীতি ও রসূলুল্লাহর (সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া-সাল্লাম) কর্মনীতি বর্তমান রয়েছে। এই দু'য়ের আলোকে আমরা জীবন যাপন করি এবং আমাদের বিশেষজ্ঞ আলিমগণ [expert scholars] আমাদের নির্দেশনা দান করেন।

রসূলুল্লাহ (সঃ) জীবনের প্রায়োগিক দিকগুলোর নির্দেশনা আমাদের দিয়ে গিয়েছেন। অমুসলিমরা আশ্চর্য হত এসব বিষয়ে। এক মুশরিক একবার সালমান আল-ফারিসীকে (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, "তোমাদের নবী তোমাদেরকে সব শিখিয়ে গিয়েছেন, এমনকি পায়খানা কিভাবে করতে হবে তাও!” সালমান জবাবে বললেন, "হ্যাঁ, তিনি আমাদেরকে ক্বিবলার দিকে মুখ করে বা পেছন ফিরে পেশাব-পায়খানা করতে নিষেধ করেছেন।" [তিরমিজী সংকলন করেছেন এবং বলেছেন হাসান-সহীহ]।

দুনিয়াবী যেসব বিষয়ে আমাদের জ্ঞান নেই, তা যাদের আছে তাদের কাছ থেকে নিতে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তা'আলা। ইমাম ইবন তাইমিয়া [রহিমাহুল্লাহ] এর কাছে একবার এক ইয়াহুদী এসে বলল, তোমরা দাবী কর তোমাদের কুর'আনে সব বিষয়ে নির্দেশনা আছে। এটা কী ঠিক? তিনি বললেন, অবশ্যই আছে। ইয়াহুদী বলল, "কুর'আনে রুটি কিভাবে বানাতে হবে তাও কি বলা আছে?” ইবন তাইমিয়া বললেন, হ্যাঁ তাও আছে। ইয়াহুদী দেখতে চাইলে তিনি তাঁর এক ছাত্রকে শহরের বেকারী থেকে রুটি বানানোর কারিগরকে ডেকে আনিয়ে রুটি কিভাবে বানাতে হয় তা তাকে জিজ্ঞেস করার জন্য ইয়াহুদীকে নির্দেশ দিলেন। ইয়াহুদী বলল, "আমিতো এটা জিজ্ঞেস করিনি। আমি কুর'আনে আছে কিনা জিজ্ঞেস করেছি।" ইবন তাইমিয়া বললেন, “কুর'আনে আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, "যারা জানে তাদের জিজ্ঞেস কর, যদি তোমরা না জানো।" [কুর'আন, ১৬: ৪৩]

তাই আমাদের দীন পালন আমাদের দুনিয়াবী অগ্রগতিকে থামিয়ে দেবার জন্য নয়। দুনিয়াবী বিষয়ে উন্নতি ইসলাম আমাদের থেকে কামনা করে। আমাদের দুনিয়াতে পিছিয়ে পড়ার কারণ হচ্ছে আমাদের দীনকে যথাযথভাবে আঁকড়ে না ধরা। ফলে আমরা যাপন করি একটা মুনাফিক্বী যিন্দেগী - যাতে আমাদের আখিরাতের উন্নতি যেমন হচ্ছে না, তেমনি আমাদের দুনিয়াটাও পড়ছে পিছিয়ে। দুনিয়াতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদেরকে আগে আমাদের কিতাব ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরতে হবে। কিতাব ও সুন্নতের শিক্ষা ছাড়া কিসের আদল ও ইনসাফ আমরা প্রতিষ্ঠা করব? যে ব্যক্তি আল্লাহর ছোট্ট একটা নির্দেশ হিজাব পালনের মাধ্যমে নিজের সত্ত্বার সাথে ইনসাফ করতে পারে না, সে কিভাবে সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবে?

দুনিয়ার উন্নতির জন্য আমরা আমাদের দীনদারীকে ছেড়ে দিতে পারি না। বৈষয়িক উন্নতির জন্য আমরা ঝাঁকে ঝাঁকে জারজ পয়দা করে যেতে পারি না। আমাদের বিয়ে-শাদী ও তালাক্ব-ইদ্দত আবশ্যই কুর'আন-হাদীস মুতাবিক্ব হতে হবে। আল্লাহ কুর'আনে যে মূলনীতি দিয়েছেন ও রসূলুল্লাহ (সঃ) যেভাবে এর ব্যাখ্যা করেছেন সেভাবেই এগুলো হতে হবে। না হলে বিয়ে যেমন শুদ্ধ হবে না, তালাক্বও তেমনি শুদ্ধ হবে না। ফল হবে অসংখ্য জারজ সন্তানের ভারে আক্রান্ত সমাজ। আর ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিরাট একটা অংশ সম্ভবত জারজই, কারন বিয়ে-তালাক্বের ক্ষেত্রে তারা ইসলামের শিক্ষা মানেই না। দুনিয়ার বৈষয়িক উন্নতিতে সমৃদ্ধি লাভকারী জাতি সমূহের ন্যায় আমরাও পারিবারিক ও যৌন জীবনে শৃংখলার পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারি না। ইসলামের বিয়ে-তালাক্বের নিয়ম নীতিগুলো যথাযথ মেনে চললে বরং পারিবারিক ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা অনেক সহজ হত।

আমার উদ্দেশ্য এখানে অবশ্যই এসব বিষয়ে একদল আধা-শিক্ষিত ব্যক্তি যেসব গোঁড়ামীর আশ্রয় গ্রহণ করেন তার পক্ষাবলম্বন করা নয়। সোজা কথা হচ্ছে আমরা জীবনের একটা দিকের জন্য অন্য আরেকটা দিককে অবহেলা করতে পারি না। আমাদের দীন আমাদেরকে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন-যাপনের নির্দেশনা দেয়। আমাদের প্রচেষ্টা হওয়া উচিৎ আমাদের জীবনের সব দিকে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার। আর এটা হচ্ছে ন্যায়-প্রতিষ্ঠার ভিত্তি।

বিষয়: বিবিধ

২১৫৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

357615
২৪ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১০:৪৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : নজরুল বাক্যটি লিখেছিলেন "থালেদ" কবিতায়। যেখানে মুসলিম বিশ্বের বিরত্বহিনতা বুঝাতে এই উপমা দিয়েছেন। আমরা কিন্তু এখনও তেমনই আছি। নামাজের ওয়াক্ত আর রাকাত নিয়া তর্ক বেশি করি নামাজ পড়িনা।
এই প্রসঙ্গে মাহাথির মুহাম্মদ এক ভাষনে বলেছিলেন সৈনিকরা প্যান্ট পড়বে কিনা এই ফতোয়া নিয়ে উসমানি খিলাফত তার সমারিক শক্তি অনেক নষ্ট করেছিল। আর এমন একটা কথাও শুনেছি হালাকু খান এর বাহিনি যখন বাগদাদের উপকন্ঠে তখন বায়তুল হিকমাতে বিতর্ক চলছিল পায়জামার দৈর্ঘ কতটুক হওয়া সুন্নত বিষয়ে!!!
357622
২৫ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০২:৩৯
অপি বাইদান লিখেছেন : সত্যি! তাই। ইসলাম শুধু নিরেট ধর্ম না,পরিপূর্ণ! জীবন বিধানও। কি ভাবে হাগু মুতু করতে হবে, ঢিলা কংকর ঘ্ষাঘষি, রাত জেগে একে/একে তিন হালি বিবি সহবতের ফর্মুলা ...... খুটি/নাটি সব কিছুর বিধান রেখে গেছেন আল্লা নবী মোহাম্মদ।

"বৈষয়িক উন্নতির জন্য আমরা ঝাঁকে ঝাঁকে জারজ পয়দা করে যেতে পারি না। আমাদের বিয়ে-শাদী ও তালাক্ব-ইদ্দত আবশ্যই কুর'আন-হাদীস মুতাবিক্ব হতে হবে।"

হুমম! পশ্চিম ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, রাশিয়া..... ধ্বংস হয়ে গেল। জারজ সন্তানের উৎপাতে আল্লার মুমিনরা এখন মসজিদে শান্তিমত নামাজও পড়তে পারন্না। বোমার আওয়াজে মসজিদ কেঁপে উঠে।

অথচ "কুর'আন-হাদীস মুতাবিক্ব" আল্লার মোহাম্মদ রেখে গেছেন এক সরস জীবন বিধান! ঘরে তিন হালি বিবি। দাসী, বান্দি, মুতা, হিল্লা, যুদ্ধবন্ধি মাইয়্যা গনিমত। বিদেশ থেকে আমদানি করা Sweet sixteen মারিয়া-শিরিন। সেই ঘরে চুপিচুপি পুত্র সন্তান ইব্রাহিম। আক্ষেপ!! পশ্চিমারা ভেসে গেল জারজ সন্তানের স্রোতে।
357627
২৫ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৫:১১
অপি বাইদান লিখেছেন : আপনাকে প্রথমেই মুহাম্মদের জীবনী শতভাগ পালন করতে হবে। যেমন-
১। ৬ বছরের শিশু বিয়ে করা-
২। ৯ বছরের শিশুর সাথে বিয়ের নামে যৌন সঙ্গম করতে হবে।
৩।পালিত পুত্রের সুন্দরী বধুকে আল্লার দোহাই দিয়ে ফুসলিয়ে কব্জা করতে হবে।
৪। ৩ হালি বিয়ে করতে হবে।
৫। দসীা, বাদী, চাকরাণীদের সাথে মৌজ করতে হবে।
৬। মক্ষিরাণী যৌনদাসী মারিয়ার সাথে গোপনে পিটিস পিটিস করতে হবে।
৭। নিরীহ মানুষের বানিজ্য কাফেলায় ডাকাতি করতে হবে- মুহাম্মদ মদিনায় হিজরত করার পর তিনি নিজে এবং তার সাঙ্গপাঙ্গ'রা মদিনার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া বানিজ্য কাফেলায় আক্রমন করে ডাকাতি করতেন।

তবেই না "কুর'আন-হাদীস মুতাবিক্ব" মুমিনী জীবন।
357634
২৫ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০১:০৮
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
সোজা কথা হচ্ছে আমরা জীবনের একটা দিকের জন্য অন্য আরেকটা দিককে অবহেলা করতে পারি না। আমাদের দীন আমাদেরকে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন-যাপনের নির্দেশনা দেয়। আমাদের প্রচেষ্টা হওয়া উচিৎ আমাদের জীবনের সব দিকে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার। আর এটা হচ্ছে ন্যায়-প্রতিষ্ঠার ভিত্তি।
চমৎকার বলেছেন। জাযাকাল্লাহ খাইর

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File