আমার "আলিম" না হওয়া!!!!!!!!!
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ১১ নভেম্বর, ২০১৫, ১২:৩৩:৪৮ রাত
আজ বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল ব্রুকলিন ইসলামিক সেন্টারের মেইন ঈদের জামা’আতে আমি ইমামতি করি ও খুৎবাহ দেই। এদিকে দু’দিন আগে এক চাচা আমাকে জানালেন যে আমাদের দেশের ট্র্যাডিশনাল মাদ্রাসায় পড়ুয়া একজন হুজুর নাকি বলে বেড়াচ্ছে “উনি কীভাবে ইমামতি করে; উনি কি মাদ্রাসায় পড়ছে নাকি? উনি কি আলেম নাকি?” কথাটা চাচা আমাকে না বললেও পারতেন। তাহলে আমার মনটা পরিস্কার থাকত। যাই হোক, প্রথমে খারাপ লাগলেও মনটাকে হালকা করে নিলাম পরে। আমাদের এই ট্র্যাডিশনাল হুজুরদের নিয়ে মুশকিল হল, তাঁরা অনেকেই কুর’আন বুঝেন না, ভাল করে বাংলা বলতে পারেন না, ইংরেজীও না; এমন কি আরবীও না। ফলাফল হল তাদেরকে খুৎবাহ দিতে দেয়া যায় না। ট্র্যাডিশনাল বাঙালীদের সমাবেশে “বার চান্দের খুৎবাহ” জাতীয় বই থেকে দেখে দেখে কুরআন পড়ার মত সূর করে আরবী খুৎবাহ পড়ে দিতে পারেন তারা। এতে কোন সমস্যা হয় না। কারণ টিপিক্যাল বাঙালীরা ওরকম খুৎবাহ শুনে অভ্যস্ত। কিন্তু এখানে মানুষ চায় জীবন ঘনিষ্ট আলোচনা। তাই সবার বুঝার উপযোগী ভাষাতেই খুৎবাহ দেয়া লাগে।
এর পরের কথা হল, আমি কখনো নিজেকে আলিম মনে করি না। আমি নিজেকে একজন ভাল তালিবুল-ইলমও মনে করি না। মুশকিল হচ্ছে আমাদের দেশে মাদ্রাসায় পড়লেই সে নিজেকে আলিম মনে করা শুরু করে। অথচ আলিম মানে একটা বিরাট ব্যাপার। আলিম হচ্ছেন আবূ-হানীফাহ, মালিক, আশ-শাফি’ঈ, আহমদ, সুফিয়ান, লাইস, আবূ ইউসূফ, মুহাম্মাদ, হাম্মাদ, ওয়াকি’, ইবন তাইমিয়া, ইবনুল কায়্যিম, আজ-জাহাবী, আত-তাহাওয়ী, ইবন রজব, আল-ক্বারী, আশ-শওক্বানী, আদ-দেহলাওয়ী [রহিমাহুম আল্লাহু আজমা’ঈন] এর মত মানুষেরা। মধ্যম সারির একজন আলিমকে বলা হয় তালিবুল ইলম। কিন্তু এই হুজুরগণ শুধু ধর্মীয় মাদ্রাসায় পড়ার কারণেই নিজেদেরকে আলিম মনে করা শুরু করে দিয়েছেন। অথচ ইসলামের অনেক সাধারণ বিষয়ে তাদের জ্ঞান নাই। তাদেরকে যদি আপনি ১০ জন আনসার ও ১০ জন মুহাজির সাহাবীর নাম বলতে বলেন তা তারা পারবেন না; কুর’আনের যে অংশটা সালাতে তিলাওয়াত করেছেন তার মানে বলতে বললে তাও পারবে না, ইত্যাদি। তারা মাদ্রাসা থেকে পাস করার পরে ইলম অর্জনের ধারার সাথে আর কোন সম্পর্কও রাখেন নাই। তাদের ঘরে আপনি দীন চর্চার কোন কিতাব পাবেন না। কিন্তু আলিম হবার খুব অহংকার। তাদের বেশিরভাগকে তালিবুল ইলমও বলা যাবে না। তালিবুল ইলম হচ্ছে সেই মধ্যম সারির আলিম যিনি জ্ঞান শিক্ষা দেয়া ও নেয়ায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। এজন্যই আদ-দেহলাওয়ী [শাহ-ওয়ালী উল্লাহ] রহিমাহুল্লাহ এদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “নিজেদেরকে উলামা উপাধিদানকারী তালিবুল-ইলমদেরকে আমি বলি ……………।"
নিজের ব্যাপারে এই মূর্খ ধারণা কখনোই আমি পোষণ করি না যে আমি একজন আলিম। আমি সব সময় বলি “আমি তালিবুল ইলম হবার চেষ্টারত একজন সাধারণ মুসলিম।” আল-হামদুলিল্লাহ, ইসলামী জ্ঞান অর্জনের নিজস্ব প্রচেষ্টার সাথে সাথে আমি প্রাতিষ্ঠানিক ইসলামিক শিক্ষাও অর্জন করেছি। সেজন্য আল্লাহ তা’আলার প্রশংশা। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ায় পড়তে পারা আমার জীবনের একটা বড় অর্জন বলে আমি মনে করি। আমরা যারা “কুল্লিয়াহ অফ ইসলামিক রিভিল্ড নলেজ ও হিউম্যান সায়েন্সেস” [كلية علوم الوحي وعلوم الإنسانية] এর ছাত্র ছিলাম তারা এক্ষেত্রে একটু বেশি ভাগ্যবান বলতে পারি। আমি ৩৬ ক্রেডিট পড়েছি “ইসলামিক রিভিল্ড নলেজ ও হেরিট্যাজ থেকে” [علوم الوحي والتراث], আমার মূল অনার্স এর সাবজেক্ট কমিউনিকেশন ছাড়াও। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মটো ছিল ওয়াহীর জ্ঞান ও অর্জিত জ্ঞানের সমন্বয় সাধন। ফলে আমাদের ফ্যাকাল্টির প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য উলুম আল-ওয়াহী ওয়াত-তুরাস এ মাইনর করা ছিল বাধ্যতামূলক।
একাডেমিক ভাবে উলুম আল-ওয়াহীর [আল্লাহর নাজিল করা জ্ঞান] যে সাবজেক্ট গুলো আমি পড়েছি সেগুলো হচ্ছে “উলুমুল কুর’আন" [علوم القرآن], উলুমুল হাদীস [علوم الحديث], “সীরাতুন্নবী” [السيرة النبوية], মাদখাল ইলা ফিক্বহিল-ইসলামী [المدخل إلى فقه الإسلامي], মাদখাল ইলা আক্বিদাতিল ইসলামীয়াহ [المدخل إلى العقيدة الإسلامية], আদ-দাওয়াহ আল-ইসলামিয়াহ [الدعوة الإسلامية], খাসাইস আল-উম্মাহ আল-মুবাক্কিরাহ [خصائص الأمة في وقت المبكر], আত-তাওহীদ ওয়াল উসুল ফী উলুম আল-ইনসানিয়াহ [التوحيد والأصول في العلوم الإنسانية], আল-উসুস লিল-ইত্তিসাল ফী আল-কুর’আন ও আস-সুন্নাহ [أسس للإتصال في الفرآن والسنة ], আল-ইনসান ফী আল-কুর’আন ওয়া আস-সুন্নাহ [الإنسان في القرآن والسنة], আদ-দিরাসাতু ফী আত-তুরাস আল-ইসলামী [دراسة في التراث الإسلامي], আল-আক্বীদাহ আল-ইসলামিয়াহ ওয়া আসারুহা ফী আল-মুজতামা’[لعقيدة الإسلامية وآثرها في المجتمع]। এছাড়াও ৬ সেমিস্টার আরবী ভাষা [لغة القرآن] পড়েছি, যার কারণে কুর’আন পড়লে মোটামুটি বুঝতে পারি; যদিও ভাষাটায় দক্ষতা অর্জন করতে পারি নি। তাজওয়ীদের [تجويد] জন্য দুই সেমিস্টার তিলাওয়াতুল-কুর’আন ক্লাস করেছি।
এগুলোর কারণে ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য একটা ভিত্তি তৈরি হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ্| ইলম অর্জনের এই ভিত্তির উপর ভর করে চেষ্টা করে যাচ্ছি ইলম অর্জন করার। কিন্তু নিজেকে আলিম মনে করার মত দুঃসাহস আমার নেই। আমি আগেই বলেছি আমি তালিবুল ইলম হবার চেষ্টারত একজন মুসলিম মাত্র।
এর পরের কথা হলঃ ইমামতির জন্য আলিম হতে হয় না। ইমামতি করার কাজ হল শাসকদের ও কর্তৃত্বশীলদের। ইসলামে কাউকে কোন কর্তৃত্বে নিয়োগ করলে তিনি মুসলিমদের সালাতেও ইমামতি করবেন অথবা তাঁর নিযুক্ত প্রতিনিধি ইমামতি করবেন। তবে যিনি ইমামতি করবেন ও কোন কর্তৃত্বে নিয়োজিত হবেন তিনি অবশ্যই সালাতে ইমামতি করার জন্য নুন্যতম ফিক্বহি জ্ঞান ও কুর’আন জানবেন।
বিষয়: বিবিধ
১৯৩৮ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পাছে লোকে কিছু বলে - এরা সব সময় কিছু না কিছু বলবেই ,লক্ষ্য হচ্ছে হেয় প্রতিপন্ন করা বা নিজের মানসিক ব্যাধির অস্তিত্বের জানান দেয়ার জন্য!
“আমি তালিবুল ইলম হবার চেষ্টারত একজন সাধারণ মুসলিম।”- কথাটি খুব ভালো লাগলো!
এতো কিছু পড়ার পরেও আপনাকে আলিম মানতে সমস্যা কোথাও? সমস্যা হলো আপনি প্রচলিত কওমী মাদ্রাসা থেকে ফারিগ হন নি!
আল্লাহ আপনার চেষ্টা সাধনায় আরো বারাকাহ দান করুন।
জাযাকাল্লাহু খাইর!
আমাকে আলিম মানার কোন দরকার নেই। আর আমিতো আলিমও নই। কিন্তু ইমামতি করার জন্য ও খুৎবাহ দেয়ার জন্য বিশেষ তকমাধারী আলিম হতে হয় না; এই কথাটা এই হুজুররা বুঝেন না। মুশকিলটা হল ঐখানে।
আপনার দু'আয় আমীন। ওয়া জাজাকিল্লাহু খায়রা।
Hope you are fine. So many things to say here about traditional Arabic studies people. In our back home culture most of people get their best sleep during the JUMUWA prayer . The main reason people don't understand why they are here what are saying about. As you said they just read particular book pages which they carry themselves . In my back home mosque i never saw my Imam holding a Quran in his hands during Khutba for more than 10 years !
Those Imam and there 'musalli' even don't know what they know & what they need to know.
Usually in western countries our main social structure should have to be mosque based society . Unfortunately our elders still don't know how world has changing dramatically . People desperately need guidance from religious institutions like mosque. Audiences need to understand what's is being saying in sermon in common languages like English (UK/USA).
Hmm .... That's all today .
May Allah bless you and accept your deeds that you doing for Muslim ummah .
Allah hafez .
জাযাকাল্লাহু খায়রা।
ইসলাম সম্পর্কে ভাল জানেন এমন ব্যক্তিই 'আলেম' হিসেবে বা 'তালেবে ইলম' হিসেবে গণ্য হতে পারেন!
এর জন্যে প্রাতিষ্ঠানিক সনদের প্রয়োজন খুউব বেশী নয়!
বর্তমানে মাদ্রাসা পড়ুয়া অনেকেই কিছুই জানে না বলা যায়!
একটা দাওরা পাশের সনদই কী আলেম হওয়ার জন্যে যথেষ্ট??
কিন্তু কোন দাওরাহ সনদই এর জন্য যথেষ্ট না। জাযাকাল্লাহু খায়রা।
ব্যাক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে, মাদ্রাসা পড়ুয়া ভাইদের একাংশ সামহাউ ইনফেরিউরিটি কম্প্লেক্স ভোগেন এবং সেখান হতে এক ধরনের জেলাস বোধ তৈরী হয়।
অনুরূপ 'অভিজ্ঞতা'র অসংখ্য উদাহরন ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে।
আমি যে শহরে থাকি সে শহরের কম বয়সী এক বাংলাদেশী ইমাম - নন মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের ভাইদের ঠেস দিতে প্রায়ই মিম্বার হতে বলতেন গুগল মুফতি, শায়খ ইউটিউব। বুঝেন অবস্থা।
আপনি আপনার উদাহরন দিয়ে লিখলেও মোর অর লেস এটা মুসলিম জ্ঞান অন্বেষনকারীদের সামনে একটা সার্বজনীন চিত্র।
আল্লাহ আমাদের সবার মধ্যে আরো বেশী বেশী জানার, বুঝার, ব্যাক্ত করার এবং সর্বোপরী সহনশীলতা বাড়িয়ে দিন।
জাযাকাল্লাহু খায়রা।
সমস্যার কথা হল, এই সমস্যার মূল রয়েছে অনেক গভীরে । তবে আপনি যেভাবে ঢালাওভাবে মাদ্রাসায় পড়ুয়াদের ধুয়ে দিলেন তাতে দেখুন, আপনার এই লিখা দেখে আপনার পরিচিত আলেমরা চুপটি মেরে থাকার কথা ! মানে উনারাও কিছুটা মন খারাপ করতে পারেন !
এই টাইপ মলম হুজুর পার্টি সম্মন্ধ্যে কি কিছু বলা যায়?!
যদিও কিছু বিষয় আপনার ব্যক্তিগত, তারপরেও আমাদের সমাজের জন্য উপযোগী একটি আলোচনা করেছেন।
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
ওয়া জাযাকাল্লাহু খায়রা।
আপনার এই পোস্ট পরে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা মনে পড়লো।
শিক্ষার প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তর মাদ্রাসায় অতিবাহিত করলেও সাধারণ বেশ ভূষায় অপরিচিত কেউ আমাকে কেউ মৌলভী বলে মনে করবে না। যদিও বা আমার পোষাক আশাক এবং মুখায়ভবে সুন্নাতের গুরুতর বরখেলাফ নেই।
নতুন এক জায়গায় সফরে গিয়ে মাগরিবের নামাজের জন্য অজু করতেছিলাম পুকুরের ঘাটে। দেরীতে যাওয়াতে জামায়াতে শরীক হতে পারিনি। কিন্তু মসজিদে যিনি নামাজ পড়াচ্ছেন তার দরাজ কন্ঠে কুরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ কানে ভেসে আসছিল। আমি অনুভব করছিলাম তার তেলাওয়াতের মধ্যে লাহ নে খফী তো আছেই বরং কোন কোন ক্ষেত্রে লহ নে জলী পর্যন্ত রয়েছে। সা'নী জামায়াতে আমাকেই নামাজ পরিচালনা করার অনুরোধ করলেন আমার সফরসঙ্গীদের একজন। জামায়াত শেষে মসজিদের ইমাম সাহেব আমার পেছনে নামাজ আদায় করা মুসল্লিদের তাদের নামাজ হয়নি বলে আবারো নামাজ পড়ার ফতওয়া দিলেন। আমার অপরাধ ছিল পড়নে পেন্ট এবং গায়ে সার্ট!!! বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য আমি কিছু বললাম না। পরে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম লোকটি মাজারপুরাজী ধর্মের অনুসারীদের একজন বড় মাপের ধ্বজাধারী।
ফতোয়া যে দিয়ে দেয়নাই সেটাই আপনার ভাগ্য ভাল। এটাই আমাদের তথাকথিত আলেমদের মানসিকতা সেখানে আবার কওমি,নিযামি,আলিয়া নিয়েও সমস্যা আছে!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন