৩৩ বছর পর তাঁর সাথে দেখা
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ১১ অক্টোবর, ২০১৫, ০৮:৪৪:০৫ সকাল
ব্রংক্সে বোনদের একটা শিক্ষা বৈঠকে আলোচনা করতে যেতে হবে। মসজিদে বাচ্চাদের ক্লাস শেষ করে তাড়াতাড়ি জুহর পড়ে বেরিয়ে গেলাম।
গাড়ির পেছনের দরজা খুলে ব্যাকপ্যাকটা রেখে ড্রাইভার সাইডের দরজার হাতলে হাত লাগিয়েছি; এমন সময় পেছনে পায়ের আওয়াজ পেয়ে তাকাতেই দেখি বাঙালী চেহারার একজন ব্যক্তি। এরকম চেহারার লোকগুলো সাধারণত সেক্যুলার টাইপ হয়। আমি সালামের সূচনা করবো কি করবো না, এমন দোটনায় থাকতে থাকতেই তিনি সালাম দিয়ে দিলেন। আমার সন্দেহ দূর হয়ে গেল, যে তিনি আসলে সেক্যুলার নন। আমি জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "কেমন আছেন?" তিনি একটু বিস্মিত হয়ে হাঁটা থামিয়ে দিয়ে "ভাল আছি" বলেই আবার জিজ্ঞেস করলেন, "আপনি বাঙালী?"
এই একটা মুশকিল! আমার লম্বা দাড়ি আর পোশাকের ঢং এর কারণে অপরিচিত অনেকে আমাকে বাঙালী মনে করে না। এক বাঙালী ছেলে এক সময় আমাকে ইয়াহুদী ঠাওরেছিল।
আমি হ্যাঁ বোধক জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "আপনি এই ব্লকেই থাকেন?" তিনি বললেন না বরং একটা ভাড়ার জন্য একটা কামরা খুঁজছেন যা ২১ নং বিল্ডিং এ। আমি ওটা দেখিয়ে দিলাম। তখন আমাকে তিনি দেশের বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম, "সন্দ্বীপ"।
"কোন গ্রাম"?
"সন্তোষপুর"।
বেশ আশ্চর্যান্বিত হয়ে তিনি বললেন, "আমার বাড়িও সন্তোষপুর; আপনাদের কোন বাড়ি?"
আমি বাড়ির নাম ও আব্বার নাম বললাম। তিনি চিনেন নাই। কারণ হাই স্কুল থেকেই তিনি বাইরে। শেষে আমি আমার জেঠাত ভাইয়ের নাম বলে জিজ্ঞেস করলাম তাঁকে চিনেন কি না। তিনি তাঁকে ভাল করে চেনেন। আমি বললাম, "আমি তাঁর চাচাত ভাই"।
তিনি তখন আবেগাপ্লুত হয়ে বলে উঠলেন, "আমার নাম মাহবুব, আমি তোমার শিক্ষক ছিলাম।"
এতক্ষণে তাঁর চেহারাও আমার কাছে পরিচিত মনে হল। তিনি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। গ্রামে আসলে স্কুলে ক্লাস নিতেন। ১৯৮২ সালে আমরা যখন এইটে পড়ি তখন তিনি ক্লাস নিয়েছিলেন।
তিনি বললেন, "তোমার চেহারা আসলে সেই আগের মতই আছে তবে লম্বা দাড়ি আর অনেক দিনের অদেখায় বুঝতে পারি নি।" স্বাভাবিক! কারণ সেটা ৩৩ বছর আগের কথা। কত ছোট্ট দুনিয়া এখন। আবেগে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম অনেক্ষণ।
তিনি বললেন, "তোমার কথার ধরণের কারণেও আমি বুঝতে পারি নি। আমি ভাবছিলাম তুমি বুঝি উত্তর বঙ্গের মানুষ।" এইটা আরেকটা সমস্যা। আমার কথা শুনলে কেউ আমাকে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের লোক মনে করে না।
তিনি এরপর আমাকে দুকানে নিয়ে যাবার জন্য জেদ ধরলেন কিছু খাওয়াবেন বলে। কিন্তু আমার তাড়া আছে বলে আমি অপারগতা প্রকাশ করলাম। আমাকে যেতে হবে ব্রংক্সের বাইতুল ইসলাম মসজিদে, আমার বাড়ি থেকে ২২ মাইল দূরে। নরমাল ট্রাফিকে ৪০ মিনিট লাগার কথা। কিন্তু নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যারাথন দৌড়ের কারণে অনেক রাস্তা বন্ধ এবং ডিট্যুর [detour] এর কারণে অনেক সময় লেগে যেতে পারে বলে আমি সময় নষ্ট করতে চাচ্ছিলাম না।
শেষ পর্যন্ত আগামীকাল ব্রুক্লিন ইসলামিক সেন্টারে মাগরিবের সময় দেখা করার ওয়াদা করে এবং মোবাইল নম্বর এক্সচেঞ্জ করে বিদায় নিলাম।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এতদ সত্ত্বেও সন্দ্বীপের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না।
যা পরিবর্তন হয় না তা হল সাগরের ভাঙ্গন; মানুষ কিছু করতে পারে না এখানে।
রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিরাট অভাবতো আছেই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন