জামাআত-ই-ইসলামীর সংস্কারবাদী সমালোচকগণ ও তাদের অসহিষ্ণুতা এবং কিছু প্রসঙ্গ কথা।
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৯:৩২:৪৫ সকাল
[ডিসক্লেইমারঃ আমি কখনো জামাআত-ই-ইসলামীর কর্মী বা সদস্য ছিলাম না এবং এখনও নই। কিন্তু জামাআত-ই-ইসলামীর ইসলাম প্রতিষ্ঠার দা‘ওয়াতের [ইক্বামাতুদ্দীন আন্দোলন] একনিষ্ঠ সমর্থক; তবে জামাআতের সব কর্মকাণ্ডের সমর্থক নই।]
গত কয়েক বছর ধরে আমরা জামাআত-ই-ইসলামী [বা জামায়াতে ইসলামী] এর সংস্কারের জন্য একদল লোককে ভেতর ও বাহির থেকে প্রচণ্ড প্রচেষ্টা চালাতে দেখতে পেয়েছি – অন্তত তাদের অনলাইন এক্টিভিজম তাই বলে। বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীনদের চাপও এক্ষেত্রে বেশ কাজ করেছে। শেষ পর্যন্ত জামাআত-ই-ইসলামী তাদের গঠনতন্ত্রও সংশোধন করেছে। সংশোধিত গঠনতন্ত্র পড়লে অবশ্য জামাআত-কে আর ইসলামী আন্দোলন মনে হবার বাহ্যত কোন সুযোগ থাকে না। মনে পড়ে ২০০৪ সালে কানাডা থেকে ব্রুকলিন বেড়াতে আসা একজন ভাই আমাকে বললেন তাঁরা প্যালটকে “বাংলা ভাষায় ইসলাম” নামে একটা চ্যাট রূম চালু করেছেন এবং আমি যেন তাতে কিছু সময় ব্যয় করি। সেই রূমের এডমিন বাংলাদেশ থেকে একজন ভাই ছিলেন আবার হিজবুত-তাহরীরের। সেই প্রথম আমি জানলাম যে বাংলাদেশে হিজবুত-তাহরীরও আছে। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনারা আবার নতুন করে দল করলেন কেন? দেশে কী ইসলামী আন্দোলন নাই যা আপনারা যে লক্ষ্যে কাজ করেন সেই একই লক্ষ্যে কাজ করে? তিনি বললেন, “না, তারাতো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে।” আমি তখন জামাআতের ওয়েবসাইট থেকে তাঁকে এ সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সহ আরো অনেক মূলনীতি দেখিয়ে বললাম, আপনাদের এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? আমিতো কোন পার্থক্য দেখি না।” তিনি তখন বললেন, “না, কাগজে কলমে হয়তো নেই, কিন্তু বাস্তবে আছে।” প্রসঙ্গটা এজন্য আনলাম যে সংস্কারের ঠেলায় কাগজে-কলমের সেই লক্ষ্য-উদ্দেশ্যও পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে এবং ওয়েবসাইটেও সেই তথ্য আর নেই। এরপর ফখরু-মুইনুর উত্তরাধিকারী বাকশালী সরকার জামাআত নেতাদের গ্রেফতার করল এবং সেখানে সংস্কার নিয়ে বহুৎ খেল হল। আর অবশেষে দুজন নেতা ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুললেন [আল্লাহ তাঁদেরকে শহীদ হিসেবে ক্ববূল করুন!], এবং আরো কয়েকজন ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে হাজতবাস করছেন।
এদিকে সমালোচকরা থেমে নেই। সেই জামাআত প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সমালোচনা চলছে। কিন্তু নতুন মাত্রা যোগ করেছে ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারী জনাব ফরিদ এ, রেজার আত্মকথন অভিধার কয়েক পর্বের এক চমকপ্রদ লিখা। ইসলামী ছাত্র শিবিরের একজন সাবেক কর্মী হিসেবে লিখাটা আমিও পড়েছি। এটা তাঁর ব্যক্তিগত কথন হিসেবে গল্পের একটা দিক হিসেবে পড়েছি। এ থেকে কোন উপসংহারে পৌঁছার কোন ইচ্ছে আমার ছিল না। শিবির কর্মী হিসেবে জনাব রেজার কোন প্রভাব আমার জীবনে নেই। আমি তাঁর কোন বক্তৃতা শুনি নি বা লিখাও আগে পড়ি নি, তার সাথে আমার কখনো সাক্ষাৎও হয় নি। তাঁর প্রতি বিশেষ বিদ্বেষ বা ভাল লাগা কোনটাই আমার ছিল না এবং এখনও নেই। কিন্তু এ লিখা প্রকাশিত হবার পর আবেগের মারাত্মক বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে কিছু লোক। কেউ কেউ তো তাঁর চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করেছে যা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের চরিত্রের সাথে খাপ খায় না। অন্যদিকে আরেকদল একজন নায়কের বিপরীতে বেশ কিছু খলনায়ক [ভিলেন] আবিষ্কার করে নিজেদেরকে লক্ষ্যচ্যুতিতে নিয়োজিত করেছে। কিছু ব্যক্তি যাঁরা সংকট মুহুর্তে ইসলামী আন্দোলনকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছেন, যাঁরা ভোগের পরিবর্তে ত্যাগ ও কুরবানীর চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন, এবং নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলনকে এ পর্যায়ে এনেছেন তাঁরা হঠাৎ এ শ্রেণিটার কাছে ভিলেন হয়ে গেলেন। এখন গোলাম আজম, মুতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, মাওলানা আবূ তাহের, সাইফুল আলম খান মিলন প্রমূখ এক একজন খলনায়ক। দ্বিতীয় দলটা এখন রেজাদের মৃত্যুতে কাঁদে [যদিও রেজাদের আসলে কোন মৃত্যু ঘটে নি]। একটা আন্দোলনে নেতৃত্বের প্রতি যে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা থাকা দরকার তাকে এরা এখন বৃদ্ধাঙ্গুলি [আসলে মধ্যমাঙ্গুলি হবে, বাংলায় প্রচলন নাই বলে রক্ষা] প্রদর্শন করতে শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবে সংকটকালীন সময়ে আন্দোলন এর সংকট আরো গভীর হবে। খলনায়কদের যে আন্দোলন তা অবশ্যই কোন ইসলামী আন্দোলন না। পুরো ইসলামী আন্দোলনকে ডিসক্রেডিটেড করার [মানে পঁচিয়ে দেয়া] এর চেয়ে উত্তম(!) কোন পন্থা আন্দোলনের শত্রুরাও বের করতে পারে নি।
জামাআত-ই-ইসলামী কোন পারফেক্ট ইসলামী আন্দোলন না। এর নেতৃত্ব যাঁরা দিচ্ছিলেন তাঁরাও কেউ নিষ্পাপ বা নিষ্কলংক মানুষ নন। সমস্যা হচ্ছে সমালোচকদের। তাদের কাছে ভাবখানা এমন যে এঁরা সব পদস্খলিত ভিলেন আর তাদের মৃত হিরোরা [যদিও তাঁরা জীবিত] হচ্ছেন মা’সূম। এঁরা অন্যের সমালোচনা করবে, কিন্তু তাদেরটা করা যাবে না। যদি তাদের ভুলের দিকে কেউ ইশারা করে তবে তাকে তারা ডাহা মিথ্যাবাদী বলে উড়িয়ে দেবে। একজন টুডে ব্লগে করা “ফরিদ রেজাদের মৃত্যুর মিছিল” শীর্ষক একটা লিখার লিঙ্ক ফেসবুকে পোস্ট করলেন যাতে তিনি তাঁর নিম্নোক্ত মন্তব্যও লিখলেনঃ
“শিবির থেকে বের করে দেয়ার অপরাধ ছিলো তিনটে, ফরিদ রেজারা শিবির কে জামাতের লেজুড় সংগঠনে রাখতে চান নি; পাকিস্থান, মিশর, মালয়েশিয়া ও তুরকির মত ছাত্রদের একটা আলাদা প্লাট ফরম বানাতে চেয়েছিলেন; যেখানে জাতীয় রাজনীতির দূর্বলতা জেনে ভবিষ্যত চলার পথ আবিস্কারে ইসলাম পন্থী হবে এরা। এরা সেনা বাহিনিতে যাবে, সেক্রেটারিয়েটে যাবে, ব্যবসায় বানিজ্যে যাবে, এদের গ্রহন করতে দেশের জনগণ আনন্দ পাবেন।”খুবই ভাল কথা এবং ভাল আকাঙ্খা। ফরিদ রেজারা এটা চাইতেই পারেন। তাই আমি মন্তব্য করলামঃ
“এটা করতে তাদেরকে মানা করল কে? তারা করে না কেন? তারা জামাআত - শিবিরে থেকেই করতে চায় কেন? তাদেরকে কে ঠেকিয়ে রেখেছে? তারা যুবশিবির করলতো। কী হয়েছে যুব শিবিরের? শুধুশুধি জামাআতকে গুঁতিয়ে লাভ কী? জামাআত এটা করতে দিবে না তাদের ভেতর থেকে। এটা জামাআতের কাজ। যারা জামাআতকে পসন্দ করে না তারা নিজেরা আলাদা একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করুক।”আমি কি খারাপ কিছু বললাম? আপনি যদি আদর্শবাদী হন তাহলে শুধুশুধি মৃত্যুর মিছিলে শরিক হচ্ছেন কেন? আপনার কাজটা করেন। কিন্তু সে জন্য জামাআতকে টানতে হবে কেন? বাংলাদেশে অনেকেই অনেক আন্দোলন সংগঠন করছে, আপনিও করুন। আপনার লক্ষ্যে নিবেদিত থাকুন এবং লক্ষ্য হাসিল করার জন্য যা করার করুন। সেনাবাহিনী, সেক্রেটারিয়েট, ব্যবসা প্রশাসনের সব জায়গার জন্য লোক তৈরি করার কারখানা গড়ুন। কেউতো মানা করে নি। কিন্তু আপনি তা করেন না। আপনার অকাল মৃত্যু হয়ে যায়, স্বপ্নগুলোকে নিজের আগেই কবর দিয়ে দেন। এটা কি ঠিক? আপনি জামাআতের পেছনে লেগে থাকেন, অথচ আপনি জানেন জামাআত এটা করবে না। অহেতুক সময় অপচয় করার মানে কী?
এদিকে আমাদের সমালোচক ভাইয়ের এটা সহ্য হয় নি। তিনি আমার রেশনালিটি ও পেশা নিয়েই টান দিলেন। তিনি পাল্টা মন্তব্য করলেনঃ “I thought you are a rational person. I am sorry I was not fully aware of my judgement. I thought you as a teacher of "Social Studies" have different understanding than X Y Z reactionaries. Alas!”
একই ভাবে জনাব ফরিদ রেজার লিখার প্রেক্ষিতে সাকিব হেলাল একটা লিখা লিখলেন ছাত্র শিবিরের ৮২ সালের সংকট ও কিছু প্রাসঙ্গিক কথা শিরোনামে। সমালোচকরা এটাকে সরাসরি মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিলেন এবং আরো গোপন কথা বের করার হুমকি দিয়ে দিলেন। আজীব এদের মানসিকতা। এক পক্ষেরটা পুরো সত্য, অন্য পক্ষেরটা পুরো মিথ্যা!
এদের আরেকটা সমস্যা হল ৭১। কোন না কোনভাবে ওটা নিয়ে তাদের হীনমন্যতার শেষ নেই। তাই সমালোচক লিখেছেন, “ফরিদ আহমাদ রেজা সাহেবরা চেয়েছিলেন ১৯৭১ সালের জামায়াতের ভুল সিদ্ধান্তকে শিবির ভুল হিসেবেই জানুক, হাজার মিথ্যার মীথ পরিয়ে সেই ভুল কে সঠিক বলার হারামিতে এই কোমলমতি ছাত্ররা না জড়াক।”
আমি জানি না এরা ৭১ এর হীনমন্যতা নিয়ে জামাআত বা শিবিরে যোগ দেয় কেন? এদের ভাবখানা এমনঃ “মনে হয় ৭১ এ কোন বিদেশি শক্তি আমাদের দেশটা অবৈধভাবে দখল করে ফেলেছিল; এরপর এদেশের তরুণেরা সেই বিদেশি দখলদারদের হটানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল “আল্লাহর নাম নিয়ে”; কিন্তু গাদ্দার জামাআতে ইসলামীর অনুগত ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ সেই বিদেশি শক্তির সাথে আঁতাত করে এদেশের মুক্তিকামী জনতার কন্ঠরোধ করতে লেগেছিল।” প্রকৃত ব্যাপার হল তখন দেশ একটা - পাকিস্তান। ভারতীয় মুসলমানদের কনসেনসাসের ভিত্তিতে বৃটিশ পরবর্তী ভারতে এর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলো নিয়ে নতুন একটা রাষ্ট্র গড়া হয়েছে। এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বাধীন রাষ্ট্র। এখন সামরিক সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে গিয়ে বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করে কোন আইনগত ভিত্তি ছাড়াই স্বাধীনতা ঘোষণা করে দেয়া হয়েছে আর এ ক্ষেত্রে মুসলমানদের পরীক্ষিত শত্রু মুশরিকদের সাহায্য নিয়ে যুদ্ধ শুরু করে দেয়া হয়েছে। জামাআতে ইসলামী দেশের একটা দল/গোষ্ঠি হিসাবে এই বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরোধিতা করেছে, যা নিতান্তই স্বাভাবিক। কিন্তু এটাকে নিয়ে এই গোষ্ঠিটার এলার্জির শেষ নেই। মুসলিম হিসেবে আমি বরং জামাআতে ইসলামীর ৭১ এর ভূমিকা নিয়ে গৌরব করব। একটা জাতি যেখানে সামগ্রিকভাবে জাতীয়তাবাদী ও সামাজতন্ত্রী এবং ব্রাহ্মণ্যবাদীদের কুটচালে পড়ে নিজেদের অস্তিত্বের দূর্গ ভেঙ্গে ফেলতে উদ্যত তখন একদল মানুষ নিজেদের দূর্বলতা স্বত্ত্বেও সেই সয়লাবের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মত দুঃসাহস দেখিয়েছে, একটা মুসলিম রাষ্ট্রের ঐক্য টিকিয়ে রাখতে চেয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে উম্মতে মুসলিমার জন্য গৌরবের।
এই সমালোচকদের অবস্থান বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের থেকে মোটেও ভিন্ন নয়। তারা জাতীয়তাবাদী অন্তর নিয়ে ইসলামী আন্দোলনে না আসলেই ভাল করবে। তাদের ইতিহাস জ্ঞানও শাহবাগীদের ন্যায়। এরাও ইতিহাসের পাঠ শুরু করে ১৯৭১ সাল থেকে। অথচ ভারত বর্ষে আমাদের ইতিহাস সেই খৃষ্টিয় ৮ম শতক থেকে। অনেক ত্যাগ কুরবানী, গৌরব ও ইতিহাস সৃষ্টির পর নিজেদের মধ্যে কলহ ও ব্যক্তিগত আখের গোছানোর খেলায় লিপ্ত হয়ে পরাজয়ের। তারপর দু’শ বছরের ইংরেজের গোলামী শেষে বর্ণহিন্দুদের গোলামী থেকে বাঁচার চেষ্টার অংশ হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা। বিংশ শতাব্দীতে দুনিয়ার মুসলমানদের অন্যতম বড় অর্জন হল পাকিস্তান। তারা পাকিস্তানের ২৪ বছরের ইতিহাসও জানার চেষ্টা করে না। এরপর একটা প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের ঐক্যের পক্ষে থাকার জন্য ইসলামী আন্দোলনকে দোষারোপ করে। দোষারোপ কর ভাল কথা। নতুন নামে নতুন আন্দোলন তোমরা গড়ে তোল। তোমাদের কে মানা করেছে? সব ধরণের অপবাদ মুক্ত আন্দোলন গড়ে তোল। জামাআত নিয়ে টানাটানি কেন? তোমরা আরবাকানের আন্দোলন ও কর্মপন্থা পসন্দ না করলে আরদোয়ান ও গুলের নেতৃত্বে নতুন আন্দোলন গড় ও তোমাদের এজেণ্ডা বাস্তবায়ন শুরু কর। তোমরা ইতিবাচক কিছু করে দেখাও। বাংলাদেশে পরিবর্তন আনো। সে চেষ্টা বাদ দিয়ে জামাআত নিয়ে গুতাগুতি বাদ দাও।
জামাআতে ইসলামীর কী তাহলে সংস্কারের দরকার নেই? মানুষ কি তাহলে এ সম্পর্কে লিখবে না? অবশ্যই আছে এবং লোকেরা লিখবে। কিন্তু যারা নতুন কিছু করতে চায় তাদেরতো কাজ শুরু করা দরকার। জামাআতের পিছনে লেগে থাকার কোন মানে নেই। এ কথা মনে রাখা দরকার জামাআত-ই-ইসলামী একটা ইসলামী আন্দোলন মাত্র; ইসলাম নয়। জামাআতে ইসলামী এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ইসলামী আন্দোলন হিসেবে উপমহাদেশে জন্মলাভ করেছিল, দীনের তাজদীদের জন্য, একটা সালেহ জামাআতের জরুরত হিসাবে। এটা মুসলিম সমাজের অনেক সংস্কার ও সংশোধন করেছে। মুসলিমদেরকে জামাআতের আন্দোলন এটা বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে ইসলাম নিতান্তই একটা ধর্ম নয়, বরং একটা পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান। ইসলামী জীবন ব্যবস্থার কিছু ব্যবহারিক দিকের প্রাতিষ্ঠানিক বাস্তবায়নও করেছে জামাআতে ইসলামীর কর্মী ও সমর্থকরা। এগুলো জামাআতের সফলতা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ইসলামের যেমন তাজদীদের প্রয়োজন হয় তেমনি প্রয়োজন হয় ইসলামী আন্দোলনেরও তাজদীদের। সে তাজদীদের প্রয়োজন জামাআতেরও রয়েছে। কিন্তু সংস্কারবাদী সমালোচকদের সংস্কার তাজদীদের নয় বরং অন্য কিছুর। তাই ট্রাডিশনাল জামাআত নেতৃবৃন্দ এগুলোকে সন্দেহের দৃষ্টি থেকে দেখেন।
আপনি যদি ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হয়ে থাকেন তাহলে জামাআতে ইসলামীতে থাকা না থাকার উপর আপনার দীন নির্ভর করে না। আপনি যদি দীনকে জীবনোদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন তাহলে আপনি যেখানে যে সময়ে যে অবস্থাতেই থাকেন না কেন দীনের সর্বাঙ্গীন বাস্তবায়নের কাজেই আপনি লিপ্ত থাকবেন। আপনি আইভরি টাওয়ার স্কলার হয়ে সমালোচক থেকে যাবেন না, অথবা আপনি অকাল প্রয়ানে ইহধাম ত্যাগ করবেন না, বা আপনার আগেই আপনার স্বপ্নগুলোকে কবর দিয়ে দেবেন না। কাজ চায়, কে করল সেটা জরুরী নয়।
বিষয়: বিবিধ
১৭০৫ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আপনার লিখনি শক্তি আরো মজবুত করুন ।
৭১ নিয়ে আপনি যে ব্যাখ্যা দিলেন , তা কি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মানুষকে বুঝাতে পেরেছে ?
১৯৭১ সালে জামায়াত ও ছাত্র সংঘের অনেক কর্মী মারা যায়। জামায়াত তা স্বীকার করে না কেন ?
আমার তো মনে হয় জামায়াত ৭১ সাল নিয়ে স্পষ্ট কোনো অবস্থান দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারেনি। কি যেন একটু লুকাতে চায়। যদি ৭১ সালের অবস্থান সঠিক থাকে তাহলে লুকোচুরি কেন ?
আপনি ঠিক বলেছেন। আমি মূল পোস্টেই এতা উল্লেখ করতে চেয়েছিলাম যে জামায়াতে ইসলামী এই অবস্থানটা বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাকেও জামাআতের কোন নেতা এ কথা বলেন নি।
আমি আমার দীনী জ্ঞানের আলোকে এটা বুঝেছি। এবং আমার চারপাশের মানুষদেরকে জাতীয়তাবাদের কুফল বুঝিয়েছি। জামাআতের উচিৎ ছিল অন্তত তাদের জনশক্তির কাছে এই বিষয়টা ক্লিয়ার করা।
জাজাকাল্লাহ।
জাযাকুমুল্লাহ..
মুহতারাম আবূসামীহা : আপনিও উল্লেখ করেছেন যে
"জামাআতের উচিৎ ছিল অন্তত তাদের জনশক্তির কাছে এই বিষয়টা ক্লিয়ার করা।"
সকল বিতর্কের কেন্দ্র এখানেই!!
***
কিছু কথা বেশী কঠিন হয়ে গেছে- তেমনটা না হলেই ভালো হতো মনে করি!!
******
আমি আলোচনায় না জড়ানোর সিদ্ধান্তে আছি! কারণ বিষয়টি নিয়ে আমার নিজের কৌতূহল তো ছিলই, জামায়াতের দায়িত্বপালনকালেও ঐ বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে হতো! তাই আমি কিছুদিন ওটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছিলাম! কিছু ভয়(ধারণা), কিছু ভুল, কিছু ভুলবুঝাবুঝি আর মানবিক দুর্বলতা ঘটনাকে "পয়েন্ট অব নো রিটার্ণ" এ নিয়ে যায়!
*****
জাজাকাল্লাহু খায়র।
আবারো অনেক ধন্যবাদ।
সমস্যা হল আমাদের মনোজগতটা এমন হয়ে গেছে - সমালোচনা শুনলেই আমাদের আসল চেহারা বাহির হয়ে যায়।
হজম করার শক্তি আরো বাড়ানো উচিত।
জাযাকাল্লাহ..
******
বিষয়টি নিয়ে আমার নিজের কৌতূহল তো ছিলই, জামায়াতের দায়িত্বপালনকালেও ঐ বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে হতো! তাই আমি কিছুদিন ওটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছিলাম! কিছু ভয়(ধারণা), কিছু ভুল, কিছু ভুলবুঝাবুঝি আর মানবিক দুর্বলতা ঘটনাকে "পয়েন্ট অব নো রিটার্ণ" এ নিয়ে যায়!
*****
আর অনেক বিষয় নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝে চলেছি!
এটা কী বললেন???
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
যারা যেবার মুরুববিদের নেক নজরে ছিল
তারা সেবার টিকে গেছে....বিদরোহিরা-৮২, মেইনসটরিম-২০১০.....
আর সমস্যাটাই হল এখানে মুরুববিদের দ্বারা সেকরেটারি নিরবাচিত হচছে পরে সেই সভাপতি হচছে এভাবেই চলছে..
আমরা মফিজ সদস্যরা ভোট দেই আর ভাবি নেতরিত্ব উপর থেকে আসে.. ঠিকই উপর তবে বেশি উপর নয় মুরুববি পরযনত....
যে তিনজন বাগড়া দিয়েছে সভাপতি আর হতে পারেনি...
কিনতু বিধিবাম..
এই ছিলছিলার কি ব্যাখ্যা আছে যারা রেজা ভাইএর বিরোধিতা করছে????????????
সত্য সমাগত মিথ্যা.... আমরাই বিশ্বাস করিনা...
আর ক'দিন পরের হেডিং- একটি আনদোলনের মৃত্যু...
আবার একশ বছরের নতুন পরিকলপনা আবার ১ম থেকে শুরু..
আপসোস, পরকাল চাইনা নেতা হতে চাই....
কিন্তু কথা হচ্ছে যারা ভিন্ন চিন্তা করে তাদের উচিৎ যেখানে আছে সেখান থেকে ভদ্রভাবে বেরিয়ে গিয়ে নিজেরা নতুন আন্দোলন গড়া - সেটা জাতীয়তাবাদী হলেও তাদের নিজেদের মত করেইতো গড়া।
কেউ ভিন্ন দিক সম্পর্কে লিখলে তাও পড়ব এবং আসল সমস্যা খোজার চেষ্টা করব।
সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা ইসলামী আন্দলনের কর্মীদের থাকা উচিৎ।
ধন্যবাদ মুহতারাম
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহ!
মওদুদী সাহেব তো কাউকে তাঁর দিকে লম্ফ দিতে বলেননি এবং উৎসাহ ও দেননি।
মওলানা মওদুদী সবসময় চেষ্টা করেছেন রাসুলে করীম সা. ও কোরআনের দিকে মানুষকে ফিরিয়ে আনতে।
জাযাকাল্লাহ খায়ের
জাযাকাল্লাহু খায়রা।
সমালোচনা করবেন এবং ঠান্ডা মাথায় সমালোচনা গ্রহণের সুযোগ দিবে পাবলিক, কিন্তু সমালোচনাটা কি? ৭১ এর ত্যানা পেচানো? তাইলে ব্যাপারটা পুরাই বস্তাপচা আর ফাউল হল।
৭১ এ জামাতের অবস্থানের ব্যাখ্যা কালের পরীক্ষা, আর কমন সেন্সে উত্তীর্ণ। তার পরও কাসুন্দি ঘাটা হল দূর্বল চিত্তের আঁতেলি দায়মুক্তির ওবলিভিয়াস এফোর্ট।
ভারতের 'র' এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে যেখানে দেশে আক্ষরিক অর্থে রাম রাজত্ব চলছে সেখানে টীনেইজার মেয়েদের মত নানা মান অভিমানের ড্রামা প্রাপ্তবয়স্কদের মানায়না।
জামাতের নেতৃত্বে আস্থা নেই ভালো কথা, আপনারা আপনাদের দর্শণ নিয়ে এর চেয়ে ভাল কিছু চালিয়ে যান।
অযথা এসব বর্জ্য ছড়াছড়ি আর ছুড়াছুড়ি নিজের অক্ষমতার অসহায় আর স্যাড বহিঃপ্রকাশ। Move on with whatever you think is good. Stop nagging and whinning.
মন্তব্য করতে লগইন করুন