ডাক্তারী শিক্ষা ও ডাক্তারী করাঃ বাংলাদেশ ও আমেরিকার সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষিত
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:২৮:৩২ সকাল
সম্প্রতি বাংলাদেশে মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ডাক্তারদের আচরণ নিয়ে নেতিবাচক লিখা গণমাধ্যমে আসে, যার কিছু কিছু বাস্তব এবং কিছু কিছু সংবাদকর্মীদের বিখ্যাত হবার বাসনা থেকে নির্গত হওয়া হলুদ কালির রেখা। প্রতিটি পেশা শিক্ষার সাথে নৈতিকতার বিরাট সম্পর্ক থাকলেও ডাক্তারীর মত পেশায় পেশাদারিত্ব ও নৈতিকতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু নৈতিকতার দিক থেকে পুরোপুরি হীনমানের ও দলবাজি করা ছেলেরা যখন ডাক্তারী পড়ে তখন সমস্যা হয়ই।
বাংলাদেশে ডাক্তারী পড়তে হাইস্কুলের [উচ্চ মাধ্যমিক] পরে ৬ বছর লাগে ইন্টার্নশীপ করা পর্যন্ত। তাই মেডিক্যালে পড়া বাংলাদেশে মোটামুটি সহজ। আমেরিকায় মেডিক্যালে পড়া ও পাশ করার পরেও ডাক্তারী করতে পারা অনেক কঠিন। মেডিক্যাল স্কুলে ভর্তির আগে হাইস্কুল [উচ্চ মাধ্যমিক] পাশ করে এখানে একজন শিক্ষার্থীকে কোন কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে - যেমন জীব বিজ্ঞান, রসায়ন, প্রাণ রসায়ন, ইত্যাদি - ৪ বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি [আমাদের দেশের ভাষায় অনার্স] শেষ করতে হয়। বিজ্ঞান ছাড়াও অন্য বিষয় থেকেও কেউ ব্যাচেলর করে আসতে পারে। এরপর তাকে দিতে হয় MCAT নামক মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা। এতে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ নম্বর পেলে তাকে কোন মেডিক্যাল স্কুল ভর্তি করায়। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল স্কুলে প্রথম ৪ বছরের ব্যাচেলর আলাদাভাবে না করেও ভর্তি হওয়া যায় যদি কোন ছাত্রের এক্সেপশনাল যোগ্যতা থাকে। এরপর মেডিক্যাল স্কুলে চার বছর শেষ করলে একজন একটা এম,ডি, [ডক্টর অফ মেডিসিন] ডিগ্রি পায়। কিন্তু এ দিয়েই সে ডাক্তার হিসেবে কাজ করতে পারে না। এরপর তাকে করতে হয় কমপক্ষে ৩ বছরের রেসিডেন্সী। যারা বিশেষজ্ঞ হতে চায় তাদেরকে আরো দীর্ঘমেয়াদী রেসিডেন্সী করা লাগে। সফলতার সাথে রেসিডেন্সী শেষ করার পরেই কেবল একজন ডাক্তারী করতে পারে, তাও আবার প্রফেশনাল বোর্ড কর্তৃক সনদ প্রাপ্ত হবার পর। তার মানে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পরে একজন ছাত্রকে কমপক্ষে আরো ১১ বছর নিরবচ্ছিন্ন পড়াশোনা ও ট্রেনিং করতে হবে ডাক্তার হিসেবে কাজ শুরু করার জন্য। এতে পেশাদারিত্ব ও মেডিকেল নৈতিকতার দীর্ঘ সবকও নিতে হয় তাদের। এ জন্য ডাক্তারী করতে শুরু করতে এখানে একজন সাধারণত ৩০ বছর বয়সে পৌঁছে যান।
অনেকে তাদের ৪ বছরের ব্যাচেলর ও ৪ বছরের মেডিকেল স্কুল শেষ করেই সাথে সাথে রেসিডেন্সী পায় না। অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয় সেজন্য। কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত ডাক্তারী করতেই পারেন না। এ ছাড়াও ডাক্তারী পড়া খুবই ব্যয়বহুল এখানে।
ডাক্তারী করা মানেও বাবুগিরি করা না এখানে। আপনি কোন হাসপাতালে বা ক্লিনিকে চাকরী করতে পারেন বা নিজেও কোন ক্লিনিক খুলতে পারেন। সেখানে আপনি বসগিরি ফলাতে পারবেন না যার তার উপর। ডাক্তারের অফিসের যার যা কাজ সে তা করে। আপনি কোন ডাক্তারের অফিসে বা হাসপাতালে গেলে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন ডেস্কে নাম লিখিয়ে আসবেন। রেজিস্ট্রেশনে যিনি কাজ করেন তিনি আপনার মেডিকাল বীমা ও বিলিং সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখে নিয়ে আপনার চার্টটা তাঁর টেবিলের পাশে বা অন্য স্থানে নির্দিষ্ট করা জায়গায় রেখে দেবেন। সেখান থেকে একজন নার্স আপনার চার্ট নিয়ে এসে আপনাকে প্রাথমিক পরীক্ষা - তাপমাত্রা, রক্তচাপ, কী কী ওষুধ সেবন করছেন, ব্যথা আছে কিনা, ইত্যাদি - করবেন। এরপর তিনি আপনার চার্ট ডাক্তারের চেম্বারের বাইরে রক্ষিত নির্দিষ্ট কোন পাত্রে রেখে দেবেন। আর আপনাকে কোন রুমে বসাবেন বা ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে বলবেন। ডাক্তার তখন নিজে আপনার চার্ট হাতে ওয়েটিং রুমে এসে আপনাকে নিয়ে যাবেন নিজের চেম্বারে এবং আপনার বিভিন্ন বিষয়ে দেখবেন। ডাক্তারকে তাঁর অফিসের রেজিস্ট্রেশন ডেস্কের কর্মচারী বা নার্স কেউই “স্যার” সম্বোধন করে না; বরং তারা তাঁকে “ডক্টর” সম্বোধন করেন। রোগীরাও ডাক্তারকে “ডক্টর” বলেই সম্বোধন করেন। যাঁদের সাথে ডাক্তারের একান্তই ভাল সম্পর্ক আছে তাঁরা তাঁকে অন্তরঙ্গতা বুঝাতে ডক্টরের পরিবর্তে শুধু “ডক” বলেই ডাকেন।
অন্যদিকে আমাদের দেশে ডাক্তারের কম্পাউণ্ডার আপনার নাম ধরে ডেকে নিয়ে গিয়ে উনার চেম্বারে দিয়ে আসবে। উনি একটু মুড নিয়ে থাকবেন। আপনি এবং তাঁর কর্মচারীরা তাঁকে “স্যার স্যার” বলে ডাকবেন, অথচ তাঁর পদবী হচ্ছে ডাক্তার। সেজন্য তাঁকে “ডাক্তার সাহেব” বলে সম্বোধন করাই ছিল অধিক মর্যাদার। কিন্তু এটা তাঁরা বুঝবেন না।
বিঃদ্রঃ আমাদের দেশের সব ডাক্তার এমন না। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে এবং তাঁরা উত্তম মানুষ।
বিষয়: বিবিধ
২২১১ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জন্মের বহু আগেই আল্লা বান্দার হায়াত/মৌত এর দিন তারিখ বেঁধে দেন। একচুল ব্যত্যয় ঘটবে না। ডাক্তার বেটে খাওয়ালেও কাজ হবে না। আমরা শয়তানের ধোকায় পরে কুফুরি ডাক্তারের কাছে যাই।
অবিলম্বে হারাম ডাকতারি প্রথা বিলোপ করে আল কোরাণের সেফা কবিরাজী চালু করাঃোক।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
এর পরীক্ষাও খুব কঠিন।
http://www.usmle.org
অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও।
মন্তব্য করতে লগইন করুন