তারাবীহ নিয়ে আমার উপসংহার
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ১৫ জুন, ২০১৫, ১০:৩৬:১১ রাত
রমজান মাস আসছে। তারবীহ/ তারাওয়ীহ নিয়ে বিতর্ক জমবে, আসলে ইতোমধ্যে জমেই গেছে। একদল নব্য হাদীসপন্থী ২০+৩ এর রাতের সালাতকে বিদআত ঘোষণা করে দিয়েছেন। তাদের বিরোধী পক্ষরাও মারমুখো হয়ে তাদের প্রতি গালাগালির বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। এরা কোন পক্ষই ছাড় দিতে রাজী নয়।
তারাবীহ [تراويح] সম্পর্কে আমার যা জানা হয়েছে এ পর্যন্ত তার সারাংশ নীচে পেশ করছিঃ
১. তারাবীহ নামে কোন সালাত এর কথা রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) বলেন নাই। হাদীসে এসেছে দিনের সিয়াম ও রাতের ক্বিয়ামের কথা। যেমন তিনি (সঃ) বলেছেন, (من قام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه) "যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ক্বিয়াম করছে ঈমান ও ইহ্তিসাব সহকারে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে।" রাতের ক্বিয়াম মানে রাতের সালাত।
২. রসূলুল্লাহ (সঃ) ও সাহাবাগণ (রাঃ) রাতের এই ক্বিয়াম একাকী আদায় করেছেন। তবে রসূলুল্লাহ (সঃ) এক রাতে মসজিদে বেরিয়ে এসে ক্বিয়ামুল-লাইল শুরূ করলে সাহাবীরাও (রাঃ) তাঁর সাথে যোগ দেন। রসূলুল্লাহর সালাতের কথা ছড়িয়ে পড়লে পরের রাতে আরো অনেকে এসে তাঁর সাথে যোগ দেয়। তৃতীয় রাতে মসজিদ প্রায় পূর্ণ হয়ে যায়। ৪র্থ রাত থেকে তিনি (সঃ) আর বেরিয়ে আসেন নি।
৩. রসূলুল্লাহর (সঃ) এই তিন দিনের সালাত কত রাকাত ছিল সে ব্যাপারে কোন সহীহ বর্ণনা নেই। কিন্তু এই সালাতের দীর্ঘ হবার বর্ণনা আছে। এটা এত দীর্ঘ ছিল যে সাহাবাগণ সেহরী মিস করার ভয় করেছেন।
৪. রসূলুল্লাহর (সঃ) বাক্বী সময়ে এবং আবূবকরের (রাঃ) সময়ে লোকেরা হয় একাকী ঘরে পড়েছে অথবা মসজিদে বিভিন্ন ক্বারীর পেছনে ছোট ছোট জামা'আতে এই সালাত আদায় করেছে। তারা কত রাকাআত পড়তেন সে ব্যাপারে কোন বর্ণনা নেই।
৫. উমরের (রাঃ) সময়ে সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। এরপর একদিন তিনি মসজিদে এসে বিভিন্ন ছোট ছোট জামাআতে লোকদের সালাত আদায় করতে দেখেন এবং এটাকে অপসন্দ করেন। তিনি উবায় ইবন কা'বের (রাঃ) নেতৃত্বে তাদেরকে এক জামাআতে শরীক করে দেন। তিনি বলেন, "নি'মাল বিদআতু হাজা; তারা যদি শেষ রাতে একাকী এই সালাত আদায় করত তবে উত্তম হত।"
৫. উবায় (রাঃ) লোকদের নিয়ে ২৩ রাকাআত আদায় করা শুরূ করেন। প্রতি ৪ রাকাআত অন্তর তারা বিশ্রাম [راحة] গ্রহণ করতেন। ফলে রমজানের রাতের এই জামাআতবদ্ধ ক্বিয়াম তারাবীহ [تراويح] বা বিশ্রামের সালাত হিসাবে অভিহিত হয়ে উঠে।
৬. তারপর থেকে মসজিদ আন-নববীতে এভাবেই ২৩ রাআত পড়া হতে থাকে উমর ইবন আব্দুল আযীয (রহিমাহুল্লাহ) এর সময় পর্যন্ত। আর এটাই হল আবূ হানীফা, মালিক, আশ-শাফিঈ, আহমদ, আওযায়ী,সাওরী, ইবন উয়াইনা, লাইস ইবন সা'দ (রহিমাহুমুল্লাহ) এর মাজহাব। উমর ইবন আব্দুল আযীয (রহিমাহুল্লাহ) যখন মদীনার গভর্ণর তখন তিনি ৩৯ রাকাআত আদায় করেন। অনেক সাহাবা তাঁর সাথে সালাত করেন এবং কেউ এটাকে বিদ'আত বলেন নাই। আর এটা মালিকের (রঃ) দ্বিতীয় মাজহাব।
শেষ কথা:
রাতের ক্বিয়ামের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট রাকাআত সংখ্যা নাই। রসূলুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল রাতের সালাত সম্পর্কে। তিনি (সঃ) বলেছেন, দু'রাকাআত দু'রাকাত করে পড়, এরপর ফজরের আশংকা করলে এক রাকাআত দিয়ে বিতর কর।" তাঁর নিজের রাতের সালাত সম্পর্কে আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, "তিনি রাতে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না - রমজানে বা রমজানের বাইরে।" কিন্তু এ দিয়ে এটা বুঝায় না যে তার উম্মতের লোকেরা ১১ রাকাতের বেশি পড়তে পারবে না। তাছাড়া রসূলুল্লাহ (সঃ) যে ১১ এর বেশি পড়েছেন সে বর্ণনাও সহীহ সূত্রে এসেছে।
এখন রাকাআত সংখ্যা নিয়ে ফালতু গ্যাঞ্জাম বাদ দিয়ে মানুষকে বলা উচিৎ ধীর স্থির ভাবে তারতীলের সাথে তিলাওয়াত করে রাতের ক্বিয়াম সম্পন্ন করার জন্য, আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশায় দাঁড়ানোর জন্য, কুরআন থেকে উপকৃত হবার নিয়ত করার জন্য।
নীচের ফতোয়াটা দেখতে পারেন:
http://islamqa.info/en/9036
বিষয়: বিবিধ
১৫৫১ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখন রাকাআত সংখ্যা নিয়ে ফালতু গ্যাঞ্জাম বাদ দিয়ে মানুষকে বলা উচিৎ ধীর স্থির ভাবে তারতীলের সাথে তিলাওয়াত করে রাতের ক্বিয়াম সম্পন্ন করার জন্য, আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশায় দাঁড়ানোর জন্য, কুরআন থেকে উপকৃত হবার নিয়ত করার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ বদ্দা।
নবী মোহাম্মদের মতই দাঙ্গা, ফ্যাসাদ, কলহ, কতল ছাড়া মুমিনের ঈমানী জোশ ১৬ কলায় পুরণ হয় না। এই সামান্য জিনসটি বুঝেন্না ক্যান??
ঈদের দাওয়াত
দাওয়াত কবুল! জাযাকাল্লাহু খায়রা।
সম্ভবত এই হাদীসের উপর ভিত্তি করেই ৮ রাকাআত তারাবীহ পড়া হচ্ছে। হয়তবা আরো হাদীস থাকতে পারে। তবে যেসব ভায়েরা ২০ রাকাআত পড়ে তাদের বেশিরভাগই তোতাপাখি স্টাইলে কোরআন তেলাওয়াত করে।
তবে কথা হচ্ছে এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে যে যেটাই পড়ুক তোতা পাখির মত না হয়ে যায়।
এখানে কুর'আন তিলাওয়াত ও তাদাব্বুর মূখ্য।
অনেক ধন্যবাদ।
শক্তিশালী, পরিষ্কার মতামত।
ধন্যবাদ
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন