"আমি আপনাকে ভালবাসি"
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ১১ মে, ২০১৫, ০৯:১৭:১৩ সকাল
"আমি আপনাকে ভালবাসি" এ কথা আমরা এখন প্রতি নিয়ত শুনি। এই "আমি আপনাকে ভালবাসি"'র যে ওজন আগে ছিল এখন তা আর নেই। তবে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসার ওজন অনেক বেশি।
অবশ্য চাইলেই কাউকে বলে দেয়া যায় না যে "আমি আপনাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি।" এটা খুব কঠিন কাজ। আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসা পাবার মত মানুষেরইতো অভাব আমাদের চারপাশে। অন্যরকম মুহসিন মানুষগুলোকে খুঁজে পেয়ে তাদেরকে "আমি আপনাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি" বলার কতই না আকাঙ্খা আমার। আমার শুধু মনে পড়ে আবূ ইদ্রীস আল-খাওলানীর (রহিমাহুল্লাহ) সেই হাদীস যাতে তিনি আল্লাহর এক অতি প্রিয় বান্দাকে নিজের ভালবাসার কথা জানিয়েছেন।
আবূ ইদ্রীস আল-খাওলানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “আমি দামেস্কের মসজিদে ঢুকে দেখি এক চকচকে দাঁতের অধিকারী (মানে তিনি প্রায়ই মুচকি হাসছিলেন) তরুণ যুবককে ঘিরে লোকেরা বসে আছে। তারা কোন বিষয়ে মতভেদ করলে তাঁর কাছে সিদ্ধান্ত চাইছে; আর তিনি যে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন তাই তারা মেনে নিচ্ছে। আমি তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলা হল তিনি রসূলুল্লাহর (সঃ) সাথী মু‘আজ় ইবন জাবাল। পরদিন ফজরের সময় মসজিদে এসে দেখি তিনি আমার আগেই মসজিদে এসেছেন এবং নামাজ় পড়ছিলেন। আমি তাঁর নামাজ় শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। এরপর তাঁর মুখোমুখি হয়ে তাঁকে সালাম করলাম। তারপর তাঁকে বললাম, “আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি।” তিনি বললেন, “শুধুই কি আল্লাহর ওয়াস্তে?” আমি বললাম, “শুধুই আল্লাহর ওয়াস্তে।” তিনি আবার বললেন, “শুধুই কি আল্লাহর ওয়াস্তে?” আমি বললাম, “শুধুই আল্লাহর ওয়াস্তে।” তিনি আবার বললেন, “শুধুই কি আল্লাহর ওয়াস্তে?” আমি বললাম, “শুধুই আল্লাহর ওয়াস্তে।” তিনি তখন আমার জামার বুকের দিকের অংশটা ধরে আমাকে তাঁর নিজের দিকে টেনে নিলেন এবং বললেন, “সুসংবাদ গ্রহণ করুন! আমি রসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যারা আমার জন্য পরস্পরকে ভালবাসে, আমার জন্যই একত্রে কোথাও উপবেশন করে, আমার জন্যই পরস্পরের সাথে দেখা সাক্ষাত করে এবং আমার জন্য অর্থ ব্যয় করে তাদেরকে ভালবাসা আমার কর্তব্য হয়ে যায়’।” [মুয়াত্তা, মালিক]
মু'আজ (রাঃ) একজন ইর্ষণীয় মানুষ। মু‘আজ় (রাঃ) তাঁর প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা, ও চরিত্রমাধুর্যের জন্যই রসূলুল্লাহর (সঃ) প্রিয়পাত্রদের অন্যতম ছিলেন। রসুলুল্লাহর (সলাওয়াতুল্লাহি ওয়া সালামুহু আলায়হি) মত মানুষও তাঁকে বলেছেন "আমি তোমাকে ভালবাসি।" মু’আজ় বর্ণনা করেছেন, “রসূলুল্লাহ (সঃ) আমার হাত ধরলেন এবং বললেনঃ হে মু‘আজ় আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে অবশ্যই ভালবাসি। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি তুমি প্রত্যেক ফরজ় নামাজ় শেষে এ দু’আ করা যেন কখনো ছেড়ে না দাও –“আল্লাহুম্মা আ‘ইন্নী আলা জ়িকরিকা, ওয়া শুকরিকা, ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিক” [হে আল্লাহ তুমি আমাকে তোমার স্মরণ করতে, কৃতজ্ঞতা আদায় করতে এবং উত্তমভাবে তোমার ইবাদত করতে সাহায্য কর।]। [আবূদাঊদ ও নাসাঈ]
হে আল্লাহর প্রিয় মুহসিনরা! তোমরা যেখানেই থাকো আমি তোমাদেরকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি।
হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার প্রিয় বান্দাদেরকে ভালবাসার তৌফিক্ব দাও।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يُحِبُّكَ وَالْعَمَلَ الَّذِي يُبَلِّغُنِي حُبَّكَ ، اللَّهُمَّ اجْعَلْ حُبَّكَ أَحَبَّ إِلَيَّ مِنْ نَفْسِي وَأَهْلِي وَمِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ " الترمذي
"হে আল্লাহ আমি তোমার ভালবাসা চাই, তোমাকে যারা ভালবাসে তাদের ভালবাসাও চাই, সেই আমলের প্রতি ভালবাসা চাই যা আমাকে তোমার ভালবাসা পর্যন্ত পৌঁছাবে। আমার রব্ব! তোয়ার ভালবাসাকে আমার কাছে আমার পরিবার, সম্পদ ও ঠাণ্ডা পানির চেয়েও প্রিয় করে দাও।"
বিষয়: বিবিধ
১৭৬৫ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কেননা, আল্লা কোরাণের কোথাও বলেন্নি 'আমি মানুষ কে ভালবাসি'। তিনি বারবার বলেছেন 'আমি মুসলিমকে ভালবাসি'।
যে কাউকে এটা বলাও যায় না। এটা শুধু তাদেরকে বলা যায় যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন।
আর আল্লাহ যাদেরকে ভালবসেন তারা হচ্ছেন ঐ সমস্ত ব্যক্তি যারা দুনিয়া এবং দুনিয়াবাসীর জন্য কল্যাণকর।
আল্লাহ কুরআনের কোথাও বলেন নাই তিনি মুসলিমদের ভালবাসেন। কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় তিনি বলেছেন যে তিনি ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের ভালবাসেন যারা মুত্তাক্বী, সৎকর্মশীল, সুবিচারক, সবরকারী, তাঁর রাস্তায় সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় কাতারবন্দী হয়ে লড়াইকারী, পবিত্রতা অবলম্বনকারী, ইত্যাদি। আমরা যখন কাউকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি বলার চিন্তা করি তখন দেখি তার মধ্যে এই গুনগুলো আছে কিনা।
ভালবাসা এবং ঘৃণা উভয়টাই যদি প্রকৃতই আল্লাহর জন্যে হয়,তাহলে এই ধরাতেই বেহেশ্তী আবহ সৃষ্টি হবে ইনশা আল্লাহ!
আপনার সুন্দর দোয়ায় আমিন!!
তো ভাইজান, নিচের আয়াতগুলো পড়ুন-
আর যে কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য জীবন জীবন ব্যাবস্তাহ অন্বেষণ করে তা কখনোই তার নিকট পরিগৃহীত হবে না। অতএব পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। (আল ইমরান, ৮৫)
নিশ্চয়ই যারা অবিশ্বাস করেছে, তাদের ধন সম্পদ ও তাদের সন্তান সন্ততি আল্লাহর নিকট কোন বিষয়েই ফলপ্রদ হবে না এবং তারাই হবে জাহান্নামের ইন্ধন। (সূরা আল ইমরান, ১০)
যারা অবিশ্বাস করেছে তুমি তাদের বল,অচীরেই তোমরা পরাভূত হবে এবং জাহান্নামের দিকে একত্রিত করা হবে এবং ওটা নিকৃষ্টতম স্থান। (আল ইমরান, ১২)
আর তোমরা সে জাহান্নামের ভয় কর, যা অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। (আল ইমরান, ১৩১)
নিশ্চই যারা বিশ্বাসের পরিবর্তে অবিশ্বাস ক্রয় করেছে, তারা আল্লাহর কোনই অনিষ্ঠ করতে পারে না। এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। (আল ইমরান, ১৭৭)
যারা অবিশ্বাস করেছে তারা যেন এটা ধারনা না করে যে, আমি তাদেরকে যে সুযোগ দিয়েছি তা তাদের জীবনের জন্য কল্যাণকর; তারা স্বীয় পাপ বর্ধিত করবে, তদ্ব্যতীত আমি তাদেরকে অবসর প্রদান করি নি এবং তাদের জন্য রয়েছে অপমানকর শাস্তি। (আল ইমরান, ১৭৮)
অনন্তর যারা অবিশ্বাসী হয়েছে, বস্তুতঃ তাদেরকে ইহকাল ও পরকালে কঠোর শাস্তি প্রদান করবো এবং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। (আল ইমরান, ৫৬)
নিশ্চই যারা অবিশ্বাস করেছে এবং অবিশ্বাসী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, ফলতঃ তাদের কারো নিকট হতে পৃথিবী পরিমান স্বর্ণও নেওয়া হবে না- যদিও সে স্বীয় মুক্তির বিনিময়ে তা প্রদান করে; ওদেরই জন্য যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে এবং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। (আল ইমরান, ৯১)
তাই বলি- ইনিয়ে, বিনিয়ে, বানিয়ে এ মুক্ত তথ্যপ্রবাহের যুগে আপনার সংকৃণমনা, হিংসূটে, একচোখা আল্লার চরিত্র গোপন করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই @ জনাব আবূসামীহা।
ধন্যবাদ।
যে আয়াতগুলা উল্লেখ করলেন তার কোনটায় বলা হয়েছে আল্লাহ মুসলমানদেরকে ভালবাসেন? এইগুলাতেতো শুধু উল্লেখ করা হয়েছে কারা তার শাস্তির মুখোমুখি হবে তাদের কথা। আর আমরা বলিওনা যে এই জাতীয় লোকদেরকে আমাদের ভালবাসতে হবে।
আল্লাহ কাদের ভালবাসেন তা তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন:
"নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।" (৩:১৩৯)
"আর আল্লাহ সবরকারীদের ভালবাসেন।" (৩:১৪৬)
"আর আল্লাহ পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালবাসেন।" (৯: ১০৮)
"নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালবাসেন।" (২:২২২)
"নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাক্বীদের ভালবাসেন।" (৩:৭৬)
"নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালবাসেন।" (৫:৪২)
"নিশ্চয়ই আল্লাহতো তাদেরকে ভালবাসেন যারা তার রাস্তায় লড়াই করে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় কাতারবন্দী হয়ে।" (৬১:৪)
আল্লাহ ভালবাসেন না নীচের লোকদের:
সীমালংঘনকারীদের (২:১৯০), বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের (২৮:৭৭), দুষ্ট অকৃতজ্ঞদের (২:২৭৬), কাফিরদের (৩:৩২), জালিমদের (৩:৫৭), দুষ্ট খিয়ানতকারীদেরকে (৪:১০৭), অপচয়কারীদেরকে (৭:৩১), অহংকারীদেরকে (১৬:২৩, ২৮:৭৭)।
এখন আপনার সমস্যা থাকলে দূরে গিয়ে পড়েন।
বেয়াদপ আল্লার পক্ষে চুরি চামারি করতে যেয়ে কেটে/ছেটে/বাদ/বাছাই করে কোরাণের অবশিষ্ট যেসব আয়াতের ভগ্নাংশ তুলে ধরলেন প্রকৃত পক্ষে তার একটিও অমুসলিম অবিশ্বাসী সাধারন মানুষের পক্ষে যায় না। ঘুড়েফিড়ে সেই গোলটুপি ওয়ালা গন্ডমুমিনের পক্ষেই তেলমালিশ, তোষামদ।
তাই বলি- আল্লার মুমিনরা কি এমনি এমনি দিক বিদিক সাধারণ মানুষের পায়ে লুটুপুটু খায় @ আবূসামীহা????????
দয়া করে আপনি সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে পুরো লিখা, আপনার কমেন্ট এবং তার প্রতিউত্তরগুলো আবার পড়ুন। আমরা আপনার মত মানুষের কাছ হতে চৌকস প্রতিউত্তর প্রত্যাশা করি।
ধন্যবাদ।
মাশাআল্লাহ্ অসম্ভব শক্তিশালী নার্ভ নড়িয়ে দেবার মত লিখা হয়েছে।
"হে আল্লাহ আমি তোমার ভালবাসা চাই, তোমাকে যারা ভালবাসে তাদের ভালবাসাও চাই, সেই আমলের প্রতি ভালবাসা চাই যা আমাকে তোমার ভালবাসা পর্যন্ত পৌঁছাবে। আমার রব্ব! তোয়ার ভালবাসাকে আমার কাছে আমার পরিবার, সম্পদ ও ঠাণ্ডা পানির চেয়েও প্রিয় করে দাও।"
আমিন।
অনেক ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খায়রা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন