যে ব্যক্তি মুহাম্মদের [সল্লা আল্লাহু আলায়হি ওয়া আলিহি ওয়া বারাকা ওয়া-সাল্লাম] ইবাদত করত সে যেন জেনে নেয় তিনি (সঃ) মরে গেছেন।
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ০৯ মে, ২০১৫, ০৪:৪৪:০৫ বিকাল
আমি একবার এক মসজিদে আলোচনা করছিলাম সীরাতুন্নবীর (সঃ) উপর। আলোচনা প্রসঙ্গে রসূলুল্লাহর (সঃ) ইন্তিকাল/মৃত্যুর কথাটাও বলেছিলাম। আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে আমার হাতে একটা চিরকুট আসল যাতে লিখা ছিল “আপনি কোন সাহসে রসূলুল্লাহকে (সঃ) মৃত বলেন?” আমি বেশ আশ্চর্য হলাম এ ধরণের প্রশ্নে। আমার জানা ছিল যে বাংলাদেশে এক গ্রুপের লোকেরা রসূলুল্লাহকে (সঃ) মৃত বলাকে জঘণ্য বেয়াদবী ও দীন থেকে খারিজ হয়ে যাওয়া মনে করে। কিন্তু আমার জানা ছিলনা যে যাদের সামনে আলোচনা করছিলাম তাদের মধ্যেও এমন মানুষ আছেন।
আমি বললাম, “যে ভাই এই প্রশ্নটা করেছেন আমি তাঁকে একটু দেখতে চাই। আপনি কি দয়া করে হাত উঁচু করবেন?” একজন ভাই হাত উঁচু করলেন। তাঁর সরলতা ও আন্তরিকতার ব্যাপারে আমার ভালই জানা ছিল। কিন্তু তাঁর আক্বীদাহর এই বিষয়টি আমার জানা ছিলনা।
আমি বললাম আপনাকে আমি কয়েকটা প্রশ্ন করব আপনার প্রশ্নের জবাব দেবার আগে। “আচ্ছা বলুনতো রসূলুল্লাহকে (সঃ) সবচেয়ে বেশী ভালবাসতেন কে?”
“সাহাবাগণ (রাদিয়াল্লহু আনহুম),” তিনি জবাবে বললেন।
“এঁদের মধ্যে রসূলুল্লাহর সবচেয়ে ঘনিষ্ট সাথী কে ছিলেন, যিনি রসূলুল্লাহকে (সঃ) সবচেয়ে বেশি জানতেন ও সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন?”
তিনি জবাব দিলেন, “আবূবকর (রাঃ)।”
“রসূলুল্লাহর (সঃ) প্রতি আমাদের ভালবাসা কি কখনো আবূবকরের ভালবাসার সমমানের হবে? আমাদের ঈমান কি আবূবকরের ঈমানের সমান হবে?”
তিনি বললেন, “না”।
“আচ্ছা আবূবকর যদি বলেন রসূলুল্লাহ মারা গেছেন, তাইলে ব্যাপারটা কেমন হবে?”
তিনি কোন জবাব দিলেন না। তাই আমিই বললাম, “হাদীসের ও সীরাতের কিতাবগুলো পড়ে আপনি কী দেখতে পান? আপনি কি পড়েন নি যে রসূলুল্লাহর ইন্তিকালের পরে জনতা বিহ্বল হয়ে পড়লে আবূ বকর জনগণের হুঁশ ফিরিয়ে এনেছিলেন?”
আবূ বকর (রাঃ) মদীনার উপকন্ঠের তাঁর বাড়ি থেকে মসজিদে নববীতে এসে উম্মুল মু’মিনীন আয়িশার (রাঃ) ঘরে রসূলুল্লাহকে (সঃ) দেখতে গেলেন। তিনি রসূলুল্লাহর কপালে চুমু খেয়ে বলেছিলেন, “আল্লাহর ক্বসম, আপনি দু’বার মৃত্যু বরণ করবেন না। আপনার জন্য আল্লাহ যে মৃত্যু নির্ধারিত করে রেখেছিলেন তার স্বাদ আপনি আস্বাদন করেছেন।” [১] এরপর তিনি বেরিয়ে এসে আল্লাহর হামদ ও সানা দিয়ে বক্তৃতা শুরু করলে জনতা তাঁর পাশে এসে জমায়েত হয়। তিনি বললেন, “যে মুহাম্মদের ইবাদত করত তার জানা উচিৎ তিনি মরে গেছেন; আর যে আল্লাহর ইবাদত করে তার জানা উচিৎ আল্লাহ চিরঞ্জীব, তিনি মারা যান না।” [২] এরপর তিনি পড়লেন, “মুহাম্মদ একজন রসূল ছাড়া আর কিছুই ছিলেন না। তাঁর আগেও অনেক রসূল গত হয়েছেন। এখন যদি তিনি মারা যান অথবা নিহত হন তাহলে কি তোমরা [তোমাদের দীন থেকে] পেছনে ফিরে যাবে? আর যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে সে আল্লাহর কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। আর আল্লাহ শোকরকারীদের পুরস্কৃত করবেন।” [৩]
লোকেরা নতুন করে তাঁদের উপলব্ধি ফিরে পেয়েছে। নিঃসন্দেহে এই উম্মতের জন্য সবচেয়ে কষ্টকর ও সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুহুর্ত হচ্ছে রসূলুল্লাহর (সঃ) ইন্তিকাল। আমাদের মধ্যে ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত যে বিপদ বা পারীক্ষাই আসুক না কেন তা মুহাম্মদ রসূলুল্লাহর (সঃ) মউতের চেয়ে বড় পরীক্ষা নয়। ইমাম ক্বুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর তাফসীরে একটা হাদীস উল্লেখ করেছেন যাতে রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন কোন মুসীবতে নিপতিত হয় তখন সে জন্য আমার মৃত্যুর সময়ে আপতিত মুসীবতের কথা স্মরণ করে; কারণ আমার মউতের চেয়ে বড় কোন মুসীবত [তোমাদের জন্য] নেই।” [৪]
রসূলুল্লাহ্ (সঃ) মারা গেছেন। তিনি মারা যেতে পারেন, যেমন তাঁর আগের রসূলরা মারা গেছেন। আল্লাহ তাঁর রসূলের মৃত্যুর নিশ্চয়তা দিয়ে আয়াত নাজ়িল করেছেন। “নিশ্চয় তোমারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে। তারপর কিয়ামতের দিনে নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভুর সামনে তোমরা একে-অন্যে বিতর্কে লিপ্ত হবে।” [৫]
বস্তুতঃ আল্লাহর সত্ত্বা ব্যতীত আর সব কিছুই ধ্বংসশীল। আল্লাহ বলেছেন, “আর আল্লাহ্র সঙ্গে অন্য কোনো উপাস্যকে ডেকো না। তিনি ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নেই। তাঁর অবয়ব ব্যতীত আর সব কিছু ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই, আর তাঁর কাছেই তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে।” [৬]
সেই ভাইটি তাঁর প্রশ্ন থেকে ফিরে এসেছিলেন সেদিন। তিনি এমন বিশ্বাস আর পোষণ করেন না বলেই আমার বিশ্বাস। কিন্তু আমাদের চারপাশে এ ধরণের বাতিল বিশ্বাসের লোকের অভাব নেই। এই ব্লগেই এক ব্লগার [মাধুকরী] লিঙ্কের পোস্টের ৫নং মন্তব্যে লিখলেন “আর যারা নবীজী (সাঃ) মারা গেছেন বলে বিশ্বাস করে তাদের মত বেক্কল এই পৃথিবীতে নেই।” প্রশ্ন দাঁড়ায়, “তাহলে এই ব্লগারের মত লোকদের কাছে আবূবকর (রাঃ) কি বেক্কল?” [নাউজ়ুবিল্লাহ]। তাদের মতে “আল্লাহও বেক্কল” [ওয়াল আইয়াজ়ুবিল্লাহ্], কারণ তিনি রসূল মুহাম্মদকে (সঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই তুমি মারা যাবে।” [৭] এরা কেন আল্লাহকে ভয় করেনা? আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করতে এদের হৃদয় একটু কাঁপেনা কেন?
আমাদের আক্বীদাহ্ বিশ্বাস ঠিক থাকতে হবে। ইবাদত শুধু আল্লাহরই করতে হবে। মুহাম্মদ রসূলুল্লাহকে (সলাওয়াতুল্লাহি ও সালামুহু আলায়হি) ভালবাসতে হবে এবং তাঁর আনুগত্য করতে হবে। কিন্তু তাঁকে কখনোই খোদায়ীর আসনে বসানো যাবে না। তিনি আল্লাহর সৃষ্টির সর্বোত্তম, কিন্তু তাই বলে তিনি চিরঞ্জীব নন। চিরিঞ্জীব শুধু মহান আল্লাহ – জাল্লা ওয়া ‘আলা।
সূত্রাবলীঃ
[১] সহীহ আল-বুখারী, কিতাবুল মাগাজী
[২] প্রাগুক্ত
[৩] আল-কুরআন, ৩:১৪৪।
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلاَّ رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَىَ عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ اللّهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِي اللّهُ الشَّاكِرِينَ
[৪] তাফসীর আল-ক্বুরতুবী [৪/২২২]। ড: আলী মুহাম্মদ আস-সাল্লাবী কর্তৃক উদ্ধৃত। “আসাহহ আল-কালাম ফী সীরাতি খায়রিল-আনাম” [ইংরেজী অনুবাদ] ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৮৬-১৯৮৬।
[৫] আল-কুরআন, ৩৯:৩০-৩২
إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِندَ رَبِّكُمْ تَخْتَصِمُونَ
[৬] আল-কুরআন, ২৮:৮৮
وَلَا تَدْعُ مَعَ اللَّـهِ إِلَـٰهًا آخَرَ ۘ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ۚ كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ ۚ لَهُ الْحُكْمُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
[৭] আল-কুরআন, ৩৯:৩০
ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড :
২২ এপ্রিল ২০১২ তারিখে অধুনা বিলুপ্ত সোনার বাংলা ব্লগে প্রকাশিত।
নতুন বিতর্ক দেখে আবার এখানে দিলাম।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৮ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভদ্রলোকটিকে বোঝানোর ভংগিটি খুব চমৎকার, আশাকরি উনি এই ভ্রান্ত আকিদা থেকে ফিরে এসেছিলেন!
আমাদের দেশে নবী কি মাটির তৈরি আর নবী কি ইন্তেকাল করেছেন কিনা এই দুই বিষয় নিয়ে যত তর্ক- ফাসাদে মানুষ লিপ্ত থাকে তার তুলনায় যদি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ গুলো অনুসরন করতো , সঠিক সীরাত, কোরান - হাদীস পড়তো পরিবেশটা অনেক সুন্দর হতো!
অধুনা বিলুপ্ত সোনার বাংলা ব্লগের একজন একনিষ্ঠ- জনপ্রিয়-দায়ী ইলাল্লাহ হিসেবে সদ্য ভূমিস্ঠ শিশু বিডি ব্লগ আপানাকে তাঁর জমিনে নিয়মিত দেখার আশায় আশাবাদী! মাহরুম করবেন না আমাদের।
জাযাকাল্লাহু খাইর!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ওয়া জাযাকিল্লাহু খায়র।
মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী (দা. বা.)-এর
সময়োপযোগী গবেষণামূলক প্রতিবেদন
**********************
==================================
হায়াতুন নবী (সা.) অকাট্যভাবে প্রমাণিত
--মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী
==================================
হায়াতুন নবী (সা.)-এর আলোচনার শুরুতে বিষয়টিকে ভালভাবে উপলব্ধি করার জন্য হায়াতুশ শুহাদা বা শহীদগণের কবরে জীবিত থাকার বিষয়ে আলোকপাত করছি। এরপর সকল নবী (আ.)-এর কবরে জীবিত থাকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। তারপর উল্লিখিত হায়াতুন নবী (সা.)-এর বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনার আশা করছি।
----------------------------
পবিত্র কুরআনে শহীদগণকে জীবিত ঘোষণা
----------------------------
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন--
وَلَا تَقُولُوا لِمَن يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَٰكِن لَّا تَشْعُرُونَ
“আল্লাহর পথে যারা নিহত (শহীদ) হয়, তোমরা তাদেরকে মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত। তবে তা তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না।”
(সূরাহ বাকারা, আয়াত নং ১৫৪)
আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন--
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ
“যারা আল্লাহর পথে নিহত (শহীদ) হয়েছে, তোমরা তাদেরকে মৃত জ্ঞান করো না। বরং তারা জীবিত; তাদের রব-প্রতিপালকের নিকট তারা রিযিকপ্রাপ্ত হয়।”
(সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত নং ১৬৯)
উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহর পথে শহীদগণের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তাদেরকে মৃত বলা যাবে না। বরং তারা জীবিত। আবার উক্ত আয়াতদ্বয়েই রয়েছে যে, যারা নিহত (শহীদ) হয়েছেন অর্থাৎ মারা গিয়েছেন। কিন্তু তবুও তাদেরকে জীবিত বিশ্বাস করতে হবে।
এর স্বরূপ বা ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তাফসীরের কিতাবে রয়েছে--দুনিয়াতে তাদেরকে সকলে নিহত বা শহীদ হিসেবেই জেনে কাফন-দাফন করেছেন। কিন্তু দুনিয়াবী মৃত্যুর পর আলমে বরযখে তারা জীবিতের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অনন্য জীবন লাভ করেছেন-যে জীবনে তারা মহান আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদায় জীবিত বলে ভূষিত হয়েছেন এবং তাদেরকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিক দেয়া হয়-যা তাদের বিশেষভাবে জীবিত থাকার প্রমাণ বহন করে। এক্ষেত্রে যদিও মুমিন বা কাফির নির্বিশেষে সকল মৃত ব্যক্তিরই আলমে বরযখে জীবিত হয়ে সুওয়াল-জাওয়াব ও আরাম বা আজাবের সম্মূখীন হওয়ার কথা হাদীস শরীফে রয়েছে, কিন্তু শহীদগণের এক্ষেত্রে বিশেষত্ব হলো, অন্যান্য মৃতের তুলনায় তাদের জীবন-অনুভূতি বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও অধিক তাৎপর্যমণ্ডিত-যদ্দরুণ তারা জীবিত হিসেবে জীবনোকরণ স্বরূপ রিযিক লাভ করেন। আর তাদের এ জীবন-অনুভূতির বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণেই তাদের বিশেষ ধরনের জীবনের কিছু লক্ষণ পৃথিবীতেই তাদের দেহে প্রকাশ পায় যে, তাদের দেহ মাটিতে খায় না; তাদের লাশ বরাবর অবিকৃত থাকে। এ ধরনের বহু ঘটনা পৃথিবীতে প্রত্যক্ষিত হয়েছে।
(দ্রষ্টব্য : তাফসীরে কুরতবী, ৩য় খণ্ড, ২১৩ পৃষ্ঠা/ তাফসীরে ইবনে কাসীর [ইফাবা], ৪র্থ খণ্ড, ২২০ পৃষ্ঠা/ তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন [ইফাবা], ২য় খণ্ড, ৩১৯ পৃষ্ঠা)
শহীদগণ আলমে বরযখে কিভাবে জীবিত অবস্হায় জীবন অতিবাহিত করেন এবং রিযিক লাভ করেন, সে সম্পর্কে হাদীস শরীফে রয়েছে--
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন--
أَرْوَاحهمْ فِي جَوْف طَيْر خُضْرٍ لَهَا قَنَادِيل مُعَلَّقَة بِالْعَرْشِ تَسْرَح مِنْ الْجَنَّة حَيْثُ شَاءَتْ
“শহীদগণের রূহ সবুজ রঙের পাখির পেটের ভিতরে বিশেষ সম্মানিত অবয়বে অনন্য জীবন লাভ করে। আর তাদের জন্য আরশে প্রদীপসমূহ লটকানো হয়। তারা জান্নাতে যেখানে খুশী বিচরণ করেন।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৮৭)
শহীদগণ আলমে বরযখে রিযিক কীভাবে লাভ করেন-এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
الشُّهَدَاءُ عَلَى بَارِقِ نَهْرٍ بِبَابِ الْجَنَّةِ ، وَيَظْهَرُ بِبَابِ الْجَنَّةِ فِي قُبَّةٍ خَضْرَاءَ يَخْرُجُ عَلَيْهِمْ رِزْقُهُمْ مِنَ الْجَنَّةِ بُكْرَةً وَعَشِيًّا
“শহীদগণ জান্নাতের দ্বারে নির্ঝরণীর ঝলকে সবুজ গম্বুজের মধ্যে অবস্হান করেন। তখন জান্নাত থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের নিকট রিযিক আগমন করে।”
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৩৮৬)
অপরদিকে সাধারণ মুমিনগণের রূহ সম্পর্কে হযরত কা‘ব ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
إِنَّمَا نَسَمَةُ الْمُؤْمِنِ طَائِرٌ يَعْلُقُ فِي شَجَرِ الْجَنَّةِ ، حَتَّى يُرْجِعَهُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِلَى جَسَدِهِ يَوْمَ يَبْعَثُهُ
“মুমিনের রূহ পাখিরূপে জান্নাতের গাছে বিচরণ করে--যে পর্যন্ত রোজ কিয়ামতে তার দেহে তাকে ফেরানো না হবে।”
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৫৩৫১)
সুতরাং এক্ষেত্রে শহীদগণের রূহ তারকার ন্যায়-যা সবুজ পাখির ভিতর প্রবেশ করে। পক্ষান্তরে সাধারণ মুমিনগণের রূহ স্বয়ং পাখির স্বরূপ হয়ে যায়।
(তাফসীরে ইবনে কাসীর, ২য় খণ্ড, ১৬৪ পৃষ্ঠা)
----------------------------------------
শহীদগণের চেয়ে উত্তম অবস্থায় নবীগণ কবরে সশরীরে জীবিত
----------------------------------------
আলমে বরযখে শহীদগণের উল্লিখিত বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জীবনের চেয়ে অধিক শক্তিমান ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন হচ্ছে নবী-রাসূলগণের বরযখী জীবন। কারণ, তাঁরা কবরে সশরীরে জীবিত আছেন--তাদের শরীরকে কখনো মাটি খেতে পারে না এবং তারা নামায পড়াসহ জীবিত মানুষের অনেক বৈশিষ্ট্য লাভ করেন।
নবীগণের কবরে জীবিত থাকা প্রসঙ্গে সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্হ ফাতহুল বারীতে আল্লামা ইবনে হাজর আসক্বালানী (রহ.) বলেন-
لأن الأنبياء أحياء عند الله وإن كانوا في صورة الأموات بالنسبة إلى أهل الدنيا ، وقد ثبت ذلك للشهداء . ولا شك أن الأنبياء أرفع رتبة من الشهداء
“কেননা, নবীগণ মহান আল্লাহর নিকট জীবিত যদিও তারা দুনিয়াবাসীদের দিক দিয়ে মৃতের রূপে আছেন কারণ, প্রমাণিত আছে যে, শহীদগণ আল্লাহর নিকট জীবিত; আর নবীগণ নিঃসন্দেহে শহীদগণের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান।”
(ফাতহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৪৪৪ পৃষ্ঠা)
আলমে বরযখে নবীগণের (আ.) জীবিত থাকার প্রমাণে বহু সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সেই হাদীসসমূহে তাঁদের কবরে জীবিত থাকা এবং শহীদগণের চেয়েও অধিক মর্যাদাপূর্ণ বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত অসাধারণ জীবন লাভের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
الأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ
“নিশ্চয়ই নবীগণ কবরে জীবিত; তারা নামায পড়েন।”
(বাইহাক্বী-হায়াতুল আম্বিয়া, ১৫ খণ্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা/ মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং ৬৩৯১/ মুসনাদে আবী ইয়া‘লা, হাদীস নং ৩৪২৫ প্রভৃতি)
উক্ত হাদীসে নবীগণের (আ.) মৃত্যুর পর কবরে সশরীরে জীবিত থাকা এবং সেখানে নামায পড়ার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। আবার কবরে নবীগণের নামায পড়ার ব্যাপারে প্রত্যক্ষ বর্ণনায় হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত অপর রিওয়ায়াতে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عِنْدَ الْكَثِيبِ الأَحْمِرِ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ
“আমি যে রাতে আমাকে মি’রাজে নেয়া হলো মূসা (আ.)-এর নিকট এলাম এমতাবস্হায় যে, তিনি লাল বালুকাস্তুপের নিকট স্বীয় কবরে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিলেন।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৮১/ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১২৫০৪/ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৬৩১)
এ হাদীস উল্লেখ করার পর আল্লামা কুরতবী (রহ.) বলেন--
وهذا الحديث يدل بظاهره على : أنه صلى الله عليه وسلم رأى موسى رؤية حقيقية في اليقظة ، وأن موسى كان في قبره حيا ، يصلي فيه الصلاة التي كان يصليها في الحياة ، وهذا كله ممكن لا إحالة في شيء منه ، وقد صح أن الشهداء أحياء يرزقون ، ووجد منهم من لم يتغير في قبره من السنين ، وإذا كان هذا في الشهداء كان في الأنبياء أحرى وأولى
“এ হাদীসের দ্বারা বাহ্যতভাবে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত মূসা (আ.)কে বাস্তবেই জাগ্রত অবস্হায়ই দেখেছেন এবং মূসা (আ.) কবরে জীবিত ছিলেন, তিনি সেখানে সেই নামাযই পড়ছিলেন-যা তিনি জীবদ্দশায় পড়তেন। এ সবই সম্ভব, এর কোন কিছুতে অবাস্তবতা নেই। আর বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, শহীদগণ জীবিত এবং তারা রিযিকপ্রাপ্ত হন আর তাদের অনেককে এমন অবস্হায় পাওয়া গিয়েছে যে, অনেক বছর অতিক্রান্ত হলেও স্বীয় কবরের মধ্যে তাঁরা কোনরূপ পরিবর্তন হননি। তারা সম্পূর্ণ অবিকৃতরূপে আছেন। সুতরাং যখন শহীদগণের অবস্হা এই, তখনতো নবীগণের অবস্হা আরো উন্নত ও উত্তম হবে!” (আল-মুফহিম, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৯২ পৃষ্ঠা)
তেমনি রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত ঈসা (আ.) ও হযরত ইবরাহীম (আ.)কে এ অবস্হায় দেখেছেন যে, তারা নামায পড়ছেন বলে অপর রিওয়ায়াতে রয়েছে। (দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, ২৬৮ পৃষ্ঠা)
উল্লিখিত হাদীসসমূহে নবীগণের ওফাতের পর কবরে যে নামায পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে, এটা দুনিয়াতে তাঁদের প্রতি আরোপিত তাকলীফী নামায নয়, বরং এটা কবরে তাঁদের বিশেষ মর্যাদার পরিচায়ক তাশরীফী নামায। তাঁরা কবরে সশরীরে জীবিত হওয়ার পর এ নামাযের মাধ্যমে মহান আল্লাহর গুণকীর্তন করেন-যেমন ফেরেশতাগণ মুকাল্লাফ না হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহর বিভিন্ন ইবাদত পালনের দ্বারা তাঁর গুণকীর্তন করেন। নবীগণ কবরে গমনের পর কখন এ তাশরীফী নামায আদায়ের সম্মান লাভ করেন, সে সম্পর্কে হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لا يُتْرَكُونَ فِي قُبُورِهِمْ بَعْدَ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً , وَلَكِنَّهُمْ يُصَلُّونَ بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ حَتَّى يُنْفَخَ فِي الصُّورِ
“নবীগণ তাঁদের কবরে চল্লিশদিন অতিবাহিত হওয়ার পর নিবৃত্ত থাকেন না এ ছাড়া যে, তারা মহান আল্লাহর সমীপে নামায পড়তে থাকেন। আর তা অব্যাহত থাকবে যাবত (কিয়ামতের জন্য) শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হয়।”
(মুসনাদে আবু ইয়া‘লা, হাদীস নং ৩৪২৮/ মুসনাদে বায্যার, হাদীস নং ৬৩৯৬/ মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৪র্থ খণ্ড, ২১১ পৃষ্ঠা)
অপরদিকে আলমে বরযখে শহীদগণকে রিযিক প্রদান করা হয় মর্মে যেমন পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি আলমে বরযখে নবীগণকে রিযিক প্রদান করা হয় মর্মে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। অধিকন্তু তাঁদের শরীর কবরে অক্ষত থাকে বলে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে এসবই কবরে তাঁদের সশরীরে জীবিত থাকার প্রমাণ বহন করে। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ فنبيُّ الله حيٌّ يُرْزَق
“আল্লাহ তা‘আলা যমিনের উপর হারাম করে দিয়েছেন যে, নবীগণের শরীর খাবে। তাই আল্লাহর নবী মাত্রই জীবিত এবং রিযিকপ্রাপ্ত হন।”
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৬৩৭)
এ সকল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো--নবী ও রাসূলগণ কবরে সশরীরে জীবিত আছেন; তারা রিযিকপ্রাপ্ত হন এবং নামায পড়েন।
এ ছাড়াও মি‘রাজের ঘটনার হাদীস শরীফে অনেক নবীর কথা এসেছে যে, তাঁদের সাথে আসমানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দেখা-সাক্ষাত ও সালাম-কালাম হয়েছে এবং মূসা (আ.) উম্মতে মুহাম্মদীর উপর আরোপিত ৫০ ওয়াক্ত নামায কমিয়ে আনতে রাসূলুল্লাহ (সা.)কে পর্যায়ক্রমে কয়েকবার পরামর্শ দেন। যার বদৌলতে পরিশেষে ৪৫ ওয়াক্ত কমিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামায ফরজরূপে বলবৎ করা হয়। আবার সকল নবী ও রাসূল (আ.) বাইতুল মুকাদ্দাসে তাশরীফ এনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইমামতীতে নামায আদায় করেন।
(দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৬১৪)
এসব ঘটনা নবীগণের (আ.) সশরীরে জীবিত থাকাকে অকাট্যভাবে প্রমাণ করে। সুতরাং সকল মুসলমানের এ আকীদা-বিশ্বাস রাখা কর্তব্য
তবে নবীগণ কবরে সশরীরে জীবিত-এটা যেমন অকাট্যভাবে প্রমাণিত, তেমনি দুনিয়া থেকে তাঁরা ওফাত পেয়েছেন-একথাও সত্য এবং এর ওপরও ঈমান রাখতে হবে। যেমন, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন--
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ
“মুহাম্মদ (সাা.)তো একজন রাসূলই, আর তার পূর্বে বহু রাসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন।”
(সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত নং ১৪৪)
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন--
إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ
“(হে নবী!) নিশ্চয়ই আপনারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে।”
(সূরাহ যুমার, আয়াত নং ৩০)
সুতরাং একদিকে যেমনিভাবে নবীগণের ইন্তিকাল বা ওফাতের ওপর ঈমান রাখা অপরিহার্য, তেমনি এর সাথে সাথে এ ঈমান পোষণ করাও কর্তব্য যে, নবীগণ বরযখী জগতে বা কবরে সশরীরে জীবিত আছেন এবং তাঁরা তাঁদের সেই বারযাখী জীবনে জীবিত মানুষের ন্যায় বিশেষ বৈশিষ্ট্য লাভ করেছেন-যা অপর সাধারণ মৃত ব্যক্তির নেই। যেমন, কবরে সশরীরে জীবিত থাকা, যমিন তাদের শরীর না খাওয়া, সেখানে রিযিক লাভ করা, নামায পড়া প্রভৃতি।
--------------------------------
রাসূলুল্লাহ (সা.) কবরে সশরীরে জীবিত আছেন
--------------------------------
উপরোল্লিখিত দলীল-প্রমাণ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে--নবী ও রাসূল হিসেবে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় কবর মুবারকে সশরীরে জীবিত আছেন। আর তিনি সেখানে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রিযিক প্রাপ্ত হন এবং তিনি সেখানে তাশরীফী নামায আদায়ের বিশেষ সম্মান লাভ করেন।
এ ছাড়াও বিশেষভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্বীয় কবর মুবারকে অনন্য বৈশিষ্ট্যে জীবিত থাকার প্রমাণে হাদীস শরীফে বহু বর্ণনা রয়েছে। তন্মধ্য হতে কিছু হাদীস নিম্নে পেশ করা হলো--
সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে--
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكْثِرُوا الصَّلَاةَ عَلَيَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَإِنَّهُ مَشْهُودٌ تَشْهَدُهُ الْمَلَائِكَةُ وَإِنَّ أَحَدًا لَنْ يُصَلِّيَ عَلَيَّ إِلَّا عُرِضَتْ عَلَيَّ صَلَاتُهُ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْهَا قَالَ قُلْتُ وَبَعْدَ الْمَوْتِ قَالَ وَبَعْدَ الْمَوْتِ إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ فَنَبِيُّ اللَّهِ حَيٌّ يُرْزَقُ
হযরত আবুদ দারদা’ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন--“তোমরা জুমু‘আর দিনে বেশী করে দরূদ পড়ো কেননা, এদিন উপস্থিতির দিন-ফেরেশতাগণ এদিনে উপস্থিত হন আর তোমাদের কেউ যখনই আমার প্রতি দরূদ পড়ে, তখনই সেই দরূদ আমার নিকট পেশ করা হয়-এ পর্যন্ত যে, সে দরূদ পড়া থেকে ফারেগ হয়।” হযরত আবুদ দারদা’ (রা.) বলেন, আমি বললাম--(আপনার) ওফাতের পরও তা হবে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন-“(আমার) ওফাতের পরও তা হবে কারণ, আল্লাহ তা‘আলা যমিনের ওপর হারাম করেছেন যে, নবীগণের শরীর ভক্ষণ করবে কাজেই নবীগণ জীবিত এবং রিযিকপ্রাপ্ত হন।”
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১০৮৫)
অনুরূপভাবে সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসায়ী প্রভৃতিতে অপর রিওয়ায়াতে বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়েছে--
ﻋَﻦْ ﺃَﻭْﺱِ ﺑْﻦِ ﺃَﻭْﺱٍ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﻥَّ ﻣِﻦْ ﺃَﻓْﻀَﻞِ ﺃَﻳَّﺎﻣِﻜُﻢْ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻓِﻴﻪِ ﺧُﻠِﻖَ ﺁﺩَﻡُ ﻭَﻓِﻴﻪِ ﺍﻟﻨَّﻔْﺨَﺔُ ﻭَﻓِﻴﻪِ ﺍﻟﺼَّﻌْﻘَﺔُ ﻓَﺄَﻛْﺜِﺮُﻭﺍ ﻋَﻠَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ ﻓِﻴﻪِ ﻓَﺈِﻥَّ ﺻَﻠَﺎﺗَﻜُﻢْ ﻣَﻌْﺮُﻭﺿَﺔٌ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻛَﻴْﻒَ ﺗُﻌْﺮَﺽُ ﺻَﻠَﺎﺗُﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻭَﻗَﺪْ ﺃَﺭَﻣْﺖَ ﻳَﻌْﻨِﻲ ﺑَﻠِﻴﺖَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺃَﻥْ ﺗَﺄْﻛُﻞَ ﺃَﺟْﺴَﺎﺩَ ﺍﻟْﺄَﻧْﺒِﻴَﺎﺀِ
হযরত আউস ইবনে আউস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন--“নিশ্চয়ই তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমু‘আর দিন এদিনে হযরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এদিনে সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে আর এদিনে সবাই সেই আওয়াজে বেহুঁশ হয়ে যাবে সুতরাং এদিনে তোমরা আমার প্রতি বেশী করে দরূদ শরীফ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছানো হবে। এ সময় জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন--ইয়া রাসূলুল্লাহ! (আপনার ওফাতের পর) যখন আপনি মাটিতে গলে যাবেন, সে অবস্থায় আপনার নিকট কিভাবে আমাদের দরূদ পৌঁছানো হবে? তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন--“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা যমিনের ওপর হারাম করেছেন যে, নবীগণের শরীর ভক্ষণ করবে।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১০৪৮/ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৩৭৩/ ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১০৮৫ প্রভৃতি)
অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতের সালামের জাওয়াবও সঙ্গে সঙ্গে প্রদান করেন বলে বর্ণনা করা হয়েছে এ সম্পর্কে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ إِلَّا رَدَّ اللهُ عَلَيَّ رُوحِي حتَّى أرُدَّ عَلَيْهِ السَّلامَ
“যে কেউ আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করবে, আল্লাহ তা‘আলা আমার রূহ ফিরিয়ে দিবেন, তখন আমি তার সালামের উত্তর প্রদান করবো।”
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৪১/ বাইহাকী-সুনানে কুবরা, হাদীস নং ১০২৭০)
এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট তাঁর রওজা মুবারকে দরূদ ও সালাম কী উপায়ে পৌঁছবে-এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
إِنَّ لِلَّهِ مَلائِكَةً سَيَّاحِينَ فِي الأَرْضِ يُبَلِّغُونِي عَنْ أُمَّتِيَ السَّلامَ
“নিশ্চয় আল্লাহর অনেক বিচরণকারী ফেরেশতা রয়েছেন-যারা আমার নিকট আমার উম্মতের সালাম পৌঁছে দেন।”
(সুনানে নাসায়ী, ২য় খণ্ড, ২৪১ পৃষ্ঠা/ সহীহ ইবনে হাব্বান, হাদীস নং ৯১৪/ মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ৪২১২)
তবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মুবারকের নিকটে এসে কেউ সালাম পেশ করলে, তা রাসূলুল্লাহ (সা.) সরাসরি শুনতে পান এবং তার উত্তর দেন আর দূর থেকে তার নিকট দরূদ ও সালাম পাঠ করা হলে, তা ফেরেশতাগণের মাধ্যমে তাঁর নিকট পৌঁছানো হবে এ মর্মে হাদীস শরীফে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
مَنْ صَلَّى عَلَيَّ عِنْدَ قَبْرِي سَمِعْتُهُ ، وَمَنْ صَلَّى عَلَيَّ بَعِيْدًا أُعْلِمْتُه
“যে কেউ আমার কবরের নিকটে এসে আমার প্রতি দরূদ পড়বে, আমি তা নিজেই শুনবো এবং যে দূর থেকে আমার প্রতি দরূদ পড়বে, তা আমাকে জানানো হবে।”
(আল-কাওলুল বাদী‘ লিল-সাখাবী, ৩য় খণ্ড, ৯২৯ পৃ্ষ্ঠা/ আল-লাআলী লিল-সুয়ূতী, ১ম খণ্ড, ২৮৩ পৃষ্ঠা/ ফাতহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৭৯ পৃষ্ঠা)
এ হাদীসসমূহ দ্বারা বুঝা গেলো--রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পরও তাঁর কবর মুবারকে তাঁর নিকট উম্মতের দরূদ পৌঁছানো হয় এবং সেই দরূদ স্বয়ং তিনি নিজে গ্রহণ করেন আর উম্মতের সালামের জাওয়াবও প্রদান করেন। সেই সাথে এটাও জানা গেলো যে, তিনি কবরে সশরীরে জীবিত। তেমনিভাবে সকল নবীই করবে জীবিত আছেন এবং রিযিকপ্রাপ্ত হন
এভাবে যে কেউ যেখান থেকেই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট দরূদ ও সালাম পাঠ করে, তা তাঁর নিকট পৌঁছে এবং তিনি তার উত্তর প্রদান করেন। এ সম্পর্কে হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
وَصَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّ صَلاتَكُمْ تَبْلُغُنِي حَيْثُ كُنْتُمْ
“আমার প্রতি দরূদ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে তোমরা যেখানেই থাকো।”
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, ২য় খণ্ড, ৩৭৫ পৃষ্ঠা/ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৮৫৮৬ / তাবরানী কাবীর, হাদীস নং ২৮২৯)
তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট উম্মতের আমলও পৌঁছানো হয়, যা দেখে ভালো আমল হলে, তিনি খুশী হয়ে মহান আল্লাহর তারীফ করেন এবং আমল খারাপ হলে, আল্লাহর নিকট উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এটাও তাঁর রওজা মুবারকে সশরীরে জীবিত থাকাকে প্রমাণ করে এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--
حَيَاتِي خَيْرٌ لَكُمْ تُحَدِّثُونَ وَيُحَدَّثُ لَكُمْ، فَإِذَا أَنَا مُتُّ كَانَتْ وَفَاتِي خَيْرًا لَكُمْ، تُعْرَضُ عَلَيَّ أَعْمَالُكُمْ فَإِنْ رَأَيْتُ خَيْرًا حَمِدْتُ اللَّهَ، وَإِنْ رَأَيْتُ غَيْرَ ذَلِكَ اسْتَغْفَرْتُ اللَّهَ لَكُمْ
“আমার জীবন তোমাদের জন্য মঙ্গলময়; তোমরা পরামর্শ করে কাজ করো আর তোমাদেরকে দিকনির্দেশনা দেয়া হয় এরপর যখন আমি ওফাতবরণ করবো, তখন আমার ওফাত তোমাদের জন্য মঙ্গলময় হবে তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হবে; তাতে আমি যা ভালো দেখবো, সে জন্য মহান আল্লাহর তারীফ করবো আর যা মন্দ দেখবো, আমি আল্লাহর নিকট তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো।”
(মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং ১৯২৫/ ইবনে সা‘দ, তবাকাতে কুবরা, ২য় খণ্ড, ১৯৪ পৃষ্ঠা/ দাইলামী, ১ম খণ্ড, ১৮৪ পৃষ্ঠা)
এ সকল হাদীস দ্বারা হায়াতুন নবী (সা.) তথা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্বীয় কবর মুবারকে সশরীরে জীবিত থাকা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়। সুতরাং এ হায়াতুন নবী (সা.)-এর আকীদায় বিশ্বাসী হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী কর্তব্য। এ জন্যই মুহাক্কিক ইমামুল হাদীস, ইমামুত তাফসীর ও ফক্বীহগণের বর্ণনায় নবীগণের (আ.) কবরে জীবিত থাকা ও হায়াতুন নবী (সা.)-এর আকীদার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ইমাম বাইহাক্বী (রহ.) হায়াতুন নবী প্রসঙ্গের বহু সহীহ হাদীস সংকলন করে একটি স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করেছেন--যার নাম حياة الأنبياء في قبورهم (হায়াতুল আম্বিয়া ফী কুবূরিহিম) অর্থ : নবীগণের স্বীয় কবরে জীবিত থাকা)। উক্ত কিতাবের প্রথমেই তিনি উল্লেখ করেছেন--
لحياة الأنبياء بعد موتهم صلوات الله عليهم شواهد من الأحاديث الصحيحة
“নবীগণের মৃত্যুর পর কবরে জীবিত থাকা প্রসঙ্গে বহু সহীহ হাদীসের দলীল বিদ্যমান রয়েছে।” এরপর তিনি সেই হাদীসগুলো উক্ত কিতাবে বর্ণনা করেন
(দ্রষ্টব্য : হায়াতুল আম্বিয়া ফী কুবূরিহিম লিল-বাইহাকী, ৭৭ পৃষ্ঠা)
তেমনি আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ.)انباء الاذكياء في حياه الانبياء (আমবাউল আযকিয়া বি-হায়াতিল আম্বিয়া) অর্থ : “নবীগণের জীবিত থাকার ব্যাপারে বিজ্ঞজনগণের সংবাদ” নামে একটি স্বতন্ত্র কিতাব সংকলন করেছেন। উক্ত কিতাবে তিনি বলেন--
حياة النبي صلى الله عليه وسلم في قبره هو وسائر الأنبياء معلومة عندنا علماً قطعياً لما قام عندنا من الأدلة في ذلك وتواترت به الأخبار الدالة على ذلك
“হায়াতুন নবী (সা.) তথা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্বীয় কবর মুবারকে জীবিত থাকা এবং সকল নবীগণের (আ.) তাদের কবরে জীবিত থাকার বিষয় আমাদের নিকট অকাট্য জ্ঞান দ্বারা পরিজ্ঞাত। কেননা, এ ব্যাপারে আমাদের নিকট দলীল-প্রমাণ স্হাপিত হয়েছে এবং এ প্রসঙ্গে বহু মুতাওয়াতির হাদীস বর্ণিত হয়েছে।”
(আবনাউল আযকিয়া : আল-হাবী লিল-ফাতাওয়া, ২য় খণ্ড, ১৪৯ পৃষ্ঠা)
সুতরাং শহীদগণের ন্যায় বরং তাদের চেয়েও উত্তমরূপে সকল নবীগণের (আ.) এবং হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কবরে সশরীরে জীবিত থাকা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো এবং এর বিস্তারিত অবস্থাপ্রকৃতি সম্পর্কেও জানা গেলো এখানে কোন জাল বা অগ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণনা করা হয়নি পবিত্র কুরআন ও সহীহ বা গ্রহণযোগ্য হাদীসের মাধ্যমেই বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের এ হায়াতুন নবী (সা.)-এর আকীদা পোষণ করা অপরিহার্য কর্তব্য অন্যথায় উল্লিখিত পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদীসসমূহকে ইনকার বা অগ্রাহ্য করার দ্বারা ঈমান নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে
*****************************************
দ্বীনী এ পোস্টকে শেয়ার করে ইসলামের আলো পৌঁছে দিন প্রিয়জনদের কাছে। দ্বীনের হিদায়াতের সমূজ্জ্বল আলোকরশ্নিতে আলোকিত হোক মুমিনদের হৃদয়।
আপনার পুরো কমেন্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লাম। মুফতি আবুল হাসান শামসাবাদীর জন্য প্রাণ ভরে দোয়া রইল।
"হায়াতুন্নবী" মানে কী? এর অর্থ হল "নবীর জীবন"। নবীর দুনিয়ার জীবন তো শেষ হয়েছে, নাকি? বরযখের জীবনে সবাই জীবিত। নবীরা (আলায়হিমুস-সালাম), শুহাদা, কাফির, মুমিন, সবাই জীবিত। সেটা আরেকটা জীবন - হায়াতুন বরযখিয়্যাহ; ওটা হায়াতুন দুনিয়াবিয়্যাহ না। বরযখের জীবন কেমন সেটা আল্লাহ তা'আলা জানেন। সেখানে শহীদ আল্লাহর কাছ থেকে রিযক পান। কিন্তু সে জীবনের সাথে দুনিয়ার জীবনের কোন সম্পর্ক নেই, শুধুমাত্র ততটুকু ছাড়া যতটুকু আল্লাহ চান।
দুনিয়ার জীবনে তাঁরা সবাই মৃত। নবীদের দেহ এবং শহীদদের ও অনেক সালিহ ব্যক্তির দেহ জমিন ভক্ষণ করে না। কিন্তু তাই বলে কবরের জীবন থেকে তাঁরা দুনিয়াবাসীকে নির্দেশনা দেন না। যদি তাঁদের দুনিয়ার জীবনে প্রভাব রাখার সামর্থ থাকত তবে ফিতনার সময়ে সাহাবাগণ রসূলুল্লাহর কবরের কাছে গিয়ে নিজেদের মধ্যকার সমস্যার কথা তাঁকে জানিয়ে সমাধান নিতে পারতেন। তাঁর (সঃ) উম্মতের এই দূর্দিনে তিনি কবর থেকে আমাদের দিশা দিতে পারতেন।
বনি ইসরাঈল মিসর থেকে হিজরত করার সময় ইঊসুফ (আঃ) এর দেহ সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল। তাঁর দেহ অক্ষত থাকলেও তা জীবিত ছিল না।
তাই হায়াতুন বরযখিয়্যাহ নিয়ে অহেতুক বাড়াবাড়ির পরিণতি সুখকর না। হায়াতুন বরযখিয়্যাহ সম্পর্কে আল্লাহই বেশি জানেন।
জাযাকাল্লাহ খায়রা।
জাযাকাল্লাহু খায়রা।
কোরআনের বাণী, 'কুল্লু নাফসিন জায়াকাতুল মাউত' অর্থাৎ প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে, এখানেইতো সমাধান হয়ে যায়, রাসূল (সঃ) মরেছেন কি জীবিত আছেন?
শহিদগণও ইন্তেককাল করেন। তবুও তারা জীবিত। সুতরাং মরলেই যে জীবিত বলা যাবে না তা সঠিক নয়। রাসুল সঃ ইন্তেকাল করেছেন। আরো পরিস্কার করে বললে তিনি মারা গেছেন। এটাই সত্য। তবে কবরের জীবনে তিনি জীবিত।
আসলে কবরে সবাইকে জীবন দান করা হয়। তবে কিছুটা ফারাক আছে। যেমন শহিদদের বেলায় বলা হয়েছে।
উপরের মন্তব্যে হাদিসের দলীল আছে।
আসল বিষয় হল, কিছু বিষয় আমরা সত্যিই জানিনা। আমার ক্ষুদ্র চিন্তায় এসব বোঝা অসম্ভব। কিভাবে অল্প সময়েই নবী(সাঃ)মিরাজে এতসব কাজ করেছিলেন তা বোঝাও সম্ভব নয়। আর তাই কিছু বিষয়ে চুপ থাকাই শ্রেয়। আলমে বারযাখ বিষয়টা কি সেটা সম্পর্কেও আমাদের ধারনা নেই।
আসল কথা আসি: রসূল(সাঃ) আলমে বারযাখে জিবীত আছেন অথবা ঘুমন্ত অবস্থায় আছেন ,এটা কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী বিশ্বাস করা যার যার ঈমানের বিষয়।কিন্তু তিনি(সাঃ) কাওকে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন,তার নাম শ্মরণ করলে হাজির নাজির হয়ে যান,কাওকে তিনি উদ্ধার করার ক্ষমতা রাখেন এটা বিশ্বাস করলে সে পুরো শিরকে লিপ্ত হল। এটাই হল মূল বিষয়। এটাই মূল উপলব্ধী।
জাযাকাল্লাহু খায়রা।
আসল বিষয় হল, কিছু বিষয় আমরা সত্যিই জানিনা। আমার ক্ষুদ্র চিন্তায় এসব বোঝা অসম্ভব। কিভাবে অল্প সময়েই নবী(সাঃ)মিরাজে এতসব কাজ করেছিলেন তা বোঝাও সম্ভব নয়। আর তাই কিছু বিষয়ে চুপ থাকাই শ্রেয়। আলমে বারযাখ বিষয়টা কি সেটা সম্পর্কেও আমাদের ধারনা নেই।
আসল কথা আসি: রসূল(সাঃ) আলমে বারযাখে জিবীত আছেন অথবা ঘুমন্ত অবস্থায় আছেন ,এটা কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী বিশ্বাস করা যার যার ঈমানের বিষয়।কিন্তু তিনি(সাঃ) কাওকে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন,তার নাম শ্মরণ করলে হাজির নাজির হয়ে যান,কাওকে তিনি উদ্ধার করার ক্ষমতা রাখেন এটা বিশ্বাস করলে সে পুরো শিরকে লিপ্ত হল। এটাই হল মূল বিষয়। এটাই মূল উপলব্ধী।
জাযাকাল্লাহু খায়রা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন