বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণ, নাকি বোমাটি কে বা কারা ছুড়েছে? - ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ০৬ মার্চ, ২০১৩, ০৮:৫৯:১২ সকাল

আজকে ব্লগে এসে এই পোস্টটা দেখে অনেক দিন আগের একটা কথা মনে পড়ে গেল। ১৯৮৭ সাল; আমরা এইচ,এস,সি, পরীক্ষার্থী। আমি থাকি চট্টগ্রাম কলেজের শেরে বাংলা ছাত্রাবাসের ২৬ নং কক্ষে। আমাদের চট্টগ্রাম কলেজ ও পাশের হাজী মুহাম্মদ মুহসিন কলেজ শহরের দুটো সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইসলামী ছাত্র শিবিরের অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ কলেজ দু'টোতে। ফলে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ। আশ পাশের রাস্তায় মানুষদেরকে হেনস্তা হতে হয় না। কলেজের বিল্ডিংগুলোর দেয়ালগুলো সুন্দর রঙ করা; দলীয় স্লোগানের চিকা মেরে ওগুলোকে নোংরা করে ফেলা হয় নি। শিবির নিয়ন্ত্রিত হলেও ছাত্র লীগ নবীন বরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান করে বিনে বাধায়। কলেজে কোন মারামারি নেই। সুন্দরভাবে সবাই পড়াশোনা করে যাচ্ছে। তাই তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগে পর পর সেরা কলেজের পুরস্কার পাচ্ছিল আমাদের কলেজ। অন্যদিকে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত সিটি কলেজে অন্য কারো কোন মিটিং করার কোন ধরণের অধিকার ছিল না।

সেদিন মুহসিন কলেজে ছাত্র লীগের নবীন বরণ। আমি নিজের কামরায় শুয়ে শুয়ে আয়াতুল কুরসী পড়ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণের শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে দেখি সন্দ্বীপের ছেলে নাজিমকে তার দুই সিলেটি ও এ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রুমমেট এর কাঁধে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেটে যেতে। তার পরনে জাঙিয়া ছাড়া আর কিছু নেই এবং তার পা থেকে রক্ত ঝরছিল। ওর রুমমেটরা বলছিল, "বাইরে থেকে মেরেছে, বাইরে থেকে মেরেছে"; আর তাড়াতাড়ি নাজিমকে নিয়ে ছাত্রাবাস ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল।

এ দিকে বিস্ফোরণের শব্দ শুনে ক্যাম্পাস থেকে অন্যান্য ছাত্র ও শিক্ষকরা আমাদের ছাত্রাবাসে এসে ভীড় জমালেন ও কী হয়েছে সে ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছিলেন। ওরা যে রুমে ছিল সে রুমটার জানালা ছিল হোস্টেল সুপারের বাসার দিকে। এছাড়াও প্রত্যেক জানালায় ছিল লোহার রডের গ্রিল দেয়া। বাইরে থেকে বোমা ছুঁড়ে দিয়ে সহজে ওদের রুমে ঢোকানো সম্ভব ছিল না। অন্যদিকে বিস্ফোরণের সময় আমাদের হোস্টেল সুপার অধ্যাপক আব্দুল আউয়াল সাহেবের স্ত্রী দাঁড়ানো ছিলেন তাঁদের বাসার সামনে। কেউ বাইরে থেকে বোমা ছুঁড়ে মারলে তিনি অবশ্যই দেখতে পেতেন। তিনি বরং দেখেছেন বিস্ফোরণের পর ঐ রুম থেকে ধোঁয়া বেরুতে।

শেষ পর্যন্ত আহত নাজিমের খোঁজ করা শুরু হল। কলেজ কর্তৃপক্ষ তার খোঁজ করতে গিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে লোক পাঠালেন। খবর নিয়ে জানা গেল ওরা জরুরী বিভাগে প্রথম এলেও পরে ওখান থেকে কেটে পড়েছে। শেষ পর্যন্ত তদন্ত করে ছাত্রাবাসে বোমা নিয়ে এসে তার বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য ওদের চার রুমমেটকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। নিজেদের অবিমৃষ্যকারী আচরণ দিয়ে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশের জন্য নামকরা একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে গেল এই সম্ভাবনাময় তরুণগুলো।

ছাত্রলীগ কোথাও শান্তি চায় না। ফিতনা এবং বিপর্যয় ছড়িয়ে দেয়াই হচ্ছে তাদের কর্ম। চিন্তা করা যায় - যে কলেজে শিবির শিক্ষার পরিবেশ ধরে রেখেছিল এবং তাদেরকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাতে কোন বাধাই দিচ্ছিল না সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে ষড়যন্ত্র করছিল তারা। চারিত্রিকভাবেও এরা এত অধপতিত ছিল যে নিজের বন্ধুদের সামনে শুধু জাঙিয়া পড়ে দাড়িয়ে থাকতে তাদের বাধে নি; আর সে অবস্থাতেই নিজেদের আনা বোমার আঘাতে হয়েছে আহত। তাই ছাত্র লীগ ও তাদের মত ধর্মনিরপেক্ষ-জাতীয়তাবাদের ধারক অন্যরা নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে ঘৃণ্য মিথ্যার বেসাতির আশ্রয় যে নেবে সব সময় তা আমাদের সকলের জানা।

বিষয়: রাজনীতি

১৩২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File