মা-কে মা বলো, বাবা-কে বাবা বলো / আম্মা বলো না, আব্বা বলো না।
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৮:০০:৪৪ সকাল
"মাকে মা বলো, বাবাকে বাবা বলো,
আম্মা বলো না, আব্বা বলো না।"
ভাষার মাস(?)। আমাকে আপনাকে বাঙালী হইতে হইবে। অতএব বাঙালা ভাষা চর্চা করিতে হইবে। প্রশ্ন হইলঃ বাঙালা কোনটা? উচ্চ-বিদ্যালয়ের ব্যাকরণ শাস্ত্রে পড়িয়াছিলাম বাঙালা ভাষায় দেশীয় শব্দ অল্প কয়েকখানা মাত্র - কুলা, ঢালা, লাঙ্গল, জোঁয়াল, ইত্যাদি। তাহা হইলে সবইতো অ-বাঙালা শব্দ।
প্রথমে উপরে উল্লিখিত বয়াতখানা [সংকৃততে শ্লোক] বহুত বৎসর পূর্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন সময়ে বঙ্গদেশের প্রগতিশীলদের একখানা মাসিক প্রকাশনায় দেখিতে পাইয়াছিলাম। উহারা ধারনা করিয়াছে "মা" এবং "বাবা" বাঙালা শব্দ, কিন্তু আব্বা এবং আম্মা ম্লেচ্ছ শব্দ। অতএব উহারা বাঙালা ভাষার শব্দ নহে।
সমস্যা হইয়াছে এই প্রগতিশীল লইয়া। ইহারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িতে পারিয়া হঠাৎ করিয়া জাতে উঠিয়া গিয়াছে। তাই উহারা উহাদের ম্লেচ্ছ পূর্বপুরুষদিগের ভাষাকে ঘৃণা করিতে শিখিয়াছে। উহাদিগের কাছে বঙ্কিম, শরৎ, রবীন্দ্রদিগের ভাষাকে জাতে উঠা ভদ্দরলোকের ভাষা বলিয়া সাব্যস্ত হইয়াছে।
এখন পূনরায় প্রথমে উল্লেখ করা শ্লোকখানার কথায় আসি। কথা হইল "মা" এবং "বাবা" উহাদের নিকট কী করিয়া বাঙালীর ভাষা মনে হইল? কোন কারণ নাই। একমাত্র কারণ হইল পূর্বে উল্লিখিত ভদ্দরলোকদের গোত্রের লোকগণ এই শব্দ-দ্বয় ব্যবহার করিয়া থাকেন। অতএব উহারা প্রগতিশীলতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ। অন্যদিকে "আব্বা" ও "আম্মা" ম্লেচ্ছগণ ব্যবহার করিয়া থাকে; অতএব উহারা অবশ্যই ভদ্দরলোকদের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নয়, যেহেতু বঙ্গদেশীয় ম্লেচ্ছগণ বেশিরভাগই চাষা-ভূষা ছিলেন। ইহা ছাড়াই ম্লেচ্ছগণ দেশি শব্দ বাদ দিয়া প্রায়শই আরবী-ফারসী-তুর্কী শব্দ দিয়া কথা বলিয়া থাকে। তাই বাঙালার ভদ্দরলোকদের শব্দ "মা" ও "বাবা" ব্যবহার করিতে হইবে, ম্লেচ্ছদিগের "আব্বা" ও "আম্মা"র পরিবর্তে।
সমস্যা হইল হঠাৎ প্রগতিশীল হইয়া উঠা দূর্গতিশীল মূর্খরা ভুলিয়া গিয়াছে যে "মা" এবং "বাবা"ও ম্লেচ্ছদের আমদানীকৃত শব্দ। উহারা জানে না যে "মা" সমস্ত বিশ্বে ব্যবহৃত একটা সাধারণ শব্দ। আর "বাবা" শব্দটা ফারসী-তুর্কি থেকে এই মহাভারতে আসিয়াছে। উহাদিগের জানা উচিৎ ছিল যে এই শব্দদ্বয়ের তৎসম প্রতিশব্দ হইতেছে যথাক্রমে "মাতা" ও "পিতা"। ইহারা শুধুমাত্র ম্লেচ্ছদিগের প্রতি হিংসা বশত "আব্বা" ও "আম্মা"র পরিবর্তে "মা" ও "বাবা" বলিবার জন্য বাঙালদিগকে উদ্বুদ্ধ করিতেছিল। ইহারা প্রকৃতই বাঙালা ভাষা প্রেমিক নহে। ইহারা হইল ম্লেচ্ছ [মুসলমান] বিদ্বেষী।
বিষয়: বিবিধ
২৬১৩ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সে যাহাই হঊক। মা-মা এবং বাবা কোথায় হইতে আসিয়াছে তাহা এই লিখাখানার অভ্যন্তরেই রহিয়াছে। কষ্ট করিয়া পূনর্বার পাঠ করিয়া লইবেন। ধন্যবাদ।
আমি যাহা বলিতে চাহিয়াছিলাম তাহা হইলঃ এই যে মহাভারতে মা ও বাবা ফারসীভাষী ম্লেচ্ছ তুর্কি শাশকগণ আমদানী করিয়াছিলেন। তাই মা এবং বাবাও ম্লেচ্ছদের শব্দ।
বাবা আরবী মূল [আব] থেকে তুর্কি-ফারসীতে আসিয়াছে। সেই ফারসী থেকেই এই ভারতে প্রবেশ করিয়াছে। তা এইখানকার দূর্গতিশীলগণ মনে করিয়াছেন ইহারা ম্লেচ্ছে শব্দ নহে। তাই তাহারা ম্লেচ্ছগণ কর্তৃক ব্যবহৃত আব্বা-আম্মার পরিবর্তে বাবা-মা ব্যবহার করিতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করিতেছিল। ইহারা জানিত না যে জিন্নাহ সাহেবকে পশ্চিমের ম্লেচ্ছগণ বাবা-ই-ক্বওম বলিয়া থাকে, আব্বা-ই-ক্বওম বলে না। ইহারা সেই কথা জানিলে কদাপি বাবা ব্যবহার করিবার পরামর্শ দিত না। তাহারা তখন পিতা ও মাতা বলিবার পরামর্শ দিত।
পানি খাঁটি সংস্কৃত তৎসম শব্দ!
অনেক ধন্যবাদ।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
অতএব পাপাপূন্য তালাশ না করিয়া দূর্গতিশীলতা হইতে উত্তরণের চেষ্টা করাই শ্রেয়।
মা বাবা প্রসংগ তো বুঝলাম কিন্ত এই ভাষা দিবসে আমরা কি আওয়ামী(উর্দূ) লীগ(ইংরেজী) ব্হাল রেখে বাংলা ভাষার পিন্ডি উদ্ধার করব? শেখ মুজিব উর্দূ প্রেমিক ছিলেন। তাই তিনি গভীর ভালবাসায় এর কোন পরি্বর্তন করেন নাই। তার কন্যাওকি তাই?
মন্তব্য করতে লগইন করুন