উস্তায আবূল আ'লা আল-মওদূদী (রহঃ)ঃ তিনি কি আলিম ছিলেন?

লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৮:২৩:২৬ সকাল

তাঁকে যাঁরা চিনতেন এবং তাঁর সাথে কাজ করতেন তাঁরা জানতেন তিনি একজন 'আলিম; এমনকি যাঁরা পরে তাঁর সংশ্রব থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন তাঁরাও তাঁর আলিম হওয়াকে অস্বীকার করতেন না। তাঁরা তাঁর সাথে অন্য বিষয়ে মতভেদ করতেন সেজন্য দূরে সরে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু লোক যারা নিজেরা মূলত আলিম নয়, তারাই তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটায় এবং বলে যে তিনি আলিম ছিলেন না।

ইসলামে আলিম হবার নিয়ম কী? আলিম হবার নিয়ম হচ্ছে আপনি একজন আলিমের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট বিষয় অধ্যয়ন করবেন। এরপর আপনার উস্তায যখন নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনি পারঙ্গম হয়েছেন বলে নিশ্চিত হবেন তখন তিনি আপনাকে ইজাযাহ [সনদ] দান করবেন। এভাবে আপনি ঐ বিষয়ে আলিম হবেন। ইসলামে আলিম হবার এটাই হচ্ছে ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতেই আলিম হয়েছেন আমাদের আগের দিনের উলামারা - আয়িম্মা আল-মুজতাহিদীন, মুহাদ্দিসীনগণ সবাই। এখনকার মাদ্রাসা বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি,এইচ-ডি নেয়াটা মূলত ঐ ইজাযাহ সিস্টেম থেকে আসা পথ।

উস্তায সায়্যিদ আবুল আলা ‪মওদূদী‬ [রহিমাহুল্লাহ] মূলত সেই ট্র্যাডিশনাল ইসলামিক ইজাযাহ পদ্ধতিতে গড়ে উঠা আলিম। তিনি ইসলামের মৌলিক সবগুলো বিষয়ে তৎকালীন ভারতের প্রসিদ্ধ আলিমদের থেকে ইজাযাহ প্রাপ্ত। তাই তাঁকে যাঁরা চিনতেন তেমন বিরোধীরাও তাঁর আলিম হওয়া নিয়ে কথা বলত না। তাঁর পরিবারের কাছে তাঁর ইজাযাহগুলো এখনও সংরক্ষিত। মুশকিল হচ্ছে তাঁর জীবনীকাররা তাঁর ইজাযাহগুলো সম্পর্কে লিখেন নাই। এমনকি জামায়াতে ইসলামী থেকেও তাঁর যে সমস্ত জীবনী বের করা হয়েছে - যেমন আব্বাস আলী খানের লিখা মাস্টারপিস "মাওলানা মওদূদীঃ একটী জীবন, একটি আন্দোলন, একটি ইতিহাস" - সেগুলোতেও এগুলোর উল্লেখ নাই। এর কারণ সম্ভবত উস্তায মওদূদীর (রহিমাহুল্লাহ) প্রচারবিমুখতা।

যাই হোক আমি নিজে তাঁর সম্পর্কে পড়তে গিয়ে অল্প কয়েকটা বিষয়ে জানতে পারলাম। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ফকীহ এবং সালাফী আলিম ডঃ সায়্যিদ আব্দুল হালিম মুহাম্মদ হুসাইন [হাফিজাহুল্লাহ] এর লিখা "নাযারাত ফী ফিকরি আবীল-আলা আল-মওদূদী - نظارات في فكر أبي الأعلى المودودي" কিতাবে মাওলানা মওদূদীর শিক্ষাগত যোগ্যতার যে বিবরণ তিনি দিয়েছেন তা থেকে আমি পাঠকদের জন্য উল্লেখ করছি।

১। আরবী ভাষা, নাহু, সরফ, আল-মা'ক্বুলাত ওয়াল-বালাগাহ ওয়াল মা'আনীঃ এগুলোতে তিনি ইজাজাহ লাভ করেছেন দিল্লীর দারুল উলুমে ভারতের প্রখ্যাত আলিম মাওলানা শায়খ আব্দুস-সালাম নিয়াজীর [রহিমাহুল্লাহ] কাছ থেকে।

২। হাদীস ও উলুম আল-হাদীসঃ শায়খ ইশফাক্বুদ্দীন কান্দাহলাবীর [রহিমাহুল্লাহ] কাছ থেকে এ বিষয়ে ইজাযাহ লাভ করেন তিনি।

৩। ফিক্বহ, তাফসীর বায়দাওয়ী এবং আল-মাতূল ফী 'ইলম আল-মা'আনী ওয়াল-বালাগাহঃ এ বিষয়গুলোতে তিনি ইজাযাহ লাভ করেন শায়খ শরীফুল্লাহর [রহিমাহুল্লাহ] কাছ থেকে।

৪। ইংরেজী ভাষাঃ মৌলভী মুহাম্মদ ফাদিল এর হাতে মাত্র চার মাসে তিনি ইংরেজী ভাষা শিক্ষায় বুৎপত্তি লাভ করেন।

=====

ডঃ শায়খ আব্দুস-সালাম আযাদী এক মন্তব্যে উস্তায মওদূদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আরো লিখেছেনঃ

উস্তায নাদীমুল্লাহ হাসনাইন ও শায়খ নিয়ায ফাতেহ পুরির কাছ থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। মুহাম্মাদ ফাদিল এর কাছে শুধু ইংরেজি ভাষা না, ইতিহাস, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান ও বিভিন্ন ধর্মের তুলনা মূলক আলোচনা পড়েছেন। তিনি মাওলানা ইশফাকুর রহমান কান্ধেল্ভীর কাছ থেকে হাদীস ফিকহ ও আরবী সাহিত্য পাঠদানের ইজাযাহ নেন ১৯২৭ সালে এবং তিরমিযি ও মুওয়াত্তা ইমাম মালিক শিক্ষা দানের ইজাযাত গ্রহন করেন ১৯২৮ সনে। এই দু বছর তিনি সম্পূর্ণ সময় ব্যয় করেছেন লেখা পড়ার পেছনে। দেওবন্দে তিনি তাদের পত্রিকা আলজামইয়্যাতের সমপাদক তখনই হতে পেরেছেন যখন সেখানকার আলিমরা তাঁকে সার্টিফাই করেছেন। কিছু মুর্খ লোক বলে 'তিনি আলিম ছিলেন না'। তারা জানেন না মাওলানার অনেক বই বুঝতে হলে ছোট খাট আলেম দের পক্ষে সম্ভব হবে না।

======

ইসলামে যখন কাউকে আলিম বলা হয় তখন মাদ্রাসা পাশ কাউকে বুঝায় না। আলিম একটা বিরাট ব্যাপার। সায়্যিদ মওদূদী মূলত আলিম শব্দটার যথার্থ অর্থেই আলিম।

এটা কারো ভুল ভাঙ্গানোর জন্য না, বরং যারা অন্যায় অভিযোগের কোন সন্তোষজনক জবাব জানতেন না তাদের জন্য লিখা।

বিষয়: বিবিধ

১৮২২ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

304569
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:২০
কাহাফ লিখেছেন :
মতবিরোধ-মতপার্থক্য থেকেই মুলতঃ মাওলানা মওদূদী রহঃ সম্পর্কে এমন অপপ্রচার! দ্বীনের প্রসারে তাঁর ভূমিকা অস্বীকার করা জাহেলিতের নামান্তর!
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০২
246693
আবূসামীহা লিখেছেন : ঠিক। জাযাকাল্লাহ।
304577
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ১১:১৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মরহুম আব্বাস আলি খান এর একটি লিখায় পড়ে ছিলাম যে মাওলানা মওদুদি সাহেব এই সনদগুলি কাউকে প্রদর্শন করতেন না। তার প্রয়োজন ও তখন ছিলনা কারন তার জ্ঞান সম্পর্কে সমসাময়িকরা জানতেন।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৪
246694
আবূসামীহা লিখেছেন : আব্বাস আলী খান [রহিমাহুল্লাহ] সহ অন্যান্য জীবনীকারদের উচিৎ ছিল তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে আলোকপাত করা। কিন্তু তাঁরা তা করেন নি।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
304594
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ১২:৪৪
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

ইলমের স্তর নিয়ে বলা হয়-
প্রাথমিক স্তরে হয় অহংকারী
দ্বিতীয় স্তরে তর্কলিপ্সু,
আর উচ্চস্তরে হয় বিনয়ী

মওদুদী (রাহ)এর বিরোধিতাকারীদের দুনিয়াবী পরিচিতি যেমনই হোক- তাঁদের জ্ঞানের মাত্রাটা হয়তো উচ্চস্তরে পৌঁছতে পারেনি!
আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন!

কিন্তু অধিকাংশক্ষেত্রেই দেখা যায়- বিরোধিতাকারীদের কথা ও কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হওয়ার উপাদানগুলো অত্যন্ত প্রকট!

আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করুন!


খুবই উপকারী এ পোস্টের জন্য আল্লাহতায়ালা আপনাকে উত্তম জাযআ দিন!
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৬
246695
আবূসামীহা লিখেছেন : ওয়া আলায়কুম আস-সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
মাওলানার জীবনীকাররা যদি তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতাগুলোতে আলোকপাত করতেন তাহলে নিন্দুকরা অন্তত এ বিষয়ে কিছু বলার পেত না।
জাযাকাল্লাহু খায়রা।
304600
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০১:০০
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : না বলা একটি বিষয় আপনি সামনে এনেছেন। আপনাকে মোবারকবাদ।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৬
246696
আবূসামীহা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
304601
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০১:০৫
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : ছিদ্রাণ্বেষণ করাই মূর্খদের কাজ। এরা আলেম বলতে শুধু মাদ্রাসা শিক্ষিতদেরই বুঝে। সাহাবী, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈদের যুগে যখন মাদ্রাসা ছিল না তখনও যে বর্তমানের চেয়েও অনেক জ্ঞানী যুগশ্রেষ্ঠ আলেম, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, রাবী ছিলেন সে বিষয়টি তারা বুঝেও বুঝতে চান না।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৭
246697
আবূসামীহা লিখেছেন : ইলম অর্জনের ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতিতেই আগের উলামাগণ ইলম হাসিল করেছেন। একই পন্থায় ইলম হাসিল করেছেন উস্তায মওদূদী [রহিমাহুল্লাহ]।
304633
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৪:০১
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৮
246698
আবূসামীহা লিখেছেন : তাঁকে এবং আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
304772
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৪:০৭
ইয়াফি লিখেছেন : মওলানা সাইয়েদ মওদুদী (রহঃ) এর অন্যতম সহচর, জামায়াতে ইসলামীর অন্যমত প্রতিষ্টাতা সদস্য মওলানা মোহাম্মদ মনজুর নোমানী (রহঃ) যিনি পরবর্তীতে মওলানার বিরুদ্ধে কিছু ভুল ব্যাখ্যার অভিযোগ তুলে জামায়াতে ইসলামী পরিত্যাগ করেন বলে এসংক্রান্ত উঁনার উর্দু বইয়ের বাংলা অনুবাদকারী দেশের অন্যতম বৃহত্তম কওমী মাদ্রাসা পটিয়ার আল-জামেয়া আল-ইসলামিয়ার এক মওলানা তাঁর অনুবাদ বইয়ের ভূমিকায় লিখেন। ঐ অনুবাদ বইটিতে দেখা যায় মওলানা মনজুর নোমানী প্রতিবারই সাইয়েদ মওদুদীকে মওলানা বলে সম্বোধন করেছেন এবং তিনি মওলানা সাইয়েদ মওদুদীর দ্বীনি-জ্ঞান চর্চা ও গভীরতায় অত্যন্ত মুগ্ধ ছিলেন। একবার মওলানা মনজুর নোমানী তাঁর মাদ্রাসা পড়ুয়া পুত্রের জন্য মাদ্রাসা-পাঠ্যসূচীর মান্তেকের প্রসিদ্ধ কিতাব ‘শরহে তাহজীবুল মান্তেক’ কোথাও থেকে সংগ্রহ করে আনা যাবে কিনা মওলানা সাইয়েদ মওদুদীকে জিজ্ঞেস করলে মওলানা সাইয়েদ মওদুদী বললেন এটা উঁনার সংগ্রহে থাকতে পারে বলে তার ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা থেকে এনে দিলেন। এতে মওলানা মনজুর নোমানী অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে যান। কারণ তিনি মনে করতেন মওলানা সাইয়েদ মওদুদী মাদ্রাসার সচরাচর নিয়ম-পদ্ধতিতে দরসে নেজামীর মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করেননি। যেখানে মান্তেকের কিতাবসমূহ পড়ানো হয়। কৌতুহল উদ্দীপ্ত মওলানা মনজুর নোমানী মওলানা সাইয়েদ মওদুদীকে জিজ্ঞেস করলেন আপনি কি শরহে তাহজীবও পড়েছিলেন? তখন মওলানা সাইয়েদ মওদুদী বললেন দ্বীনি-শিক্ষা লাভের ব্যাপারে তাঁর বাবার একান্ত আগ্রহে তিনি ঘরেই জনৈক মৌলভীর মাধ্যমে শরহে তাহজীবসহ নাহু-সরফ ও মান্তেকের প্রাথমিক কিতাবগুলো পড়ে নিয়েছিলেন।পরবর্তীতে তিনি দিল্লী অবস্হানকালে ফতহপুরী মাদ্রাসায় মওলানা এশফাকুর রহমান সাহেব কান্ধলভীর তিরমিজী শরীফের সবকে অংশগ্রহণ করেন। মওলানা মনজুর নোমানী তাঁর বইয়ের পাদটীকায় আরো বলেছেন মওলানা সাইয়েদ মওদুদীর কোন কোন জীবনীকারের মতে তিনি দিল্লীর আরো আলমগণের নিকট শিক্ষালাভ করেন। সেটা তাঁর কাছে বিশ্বাসযোগ্য।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১০
246699
আবূসামীহা লিখেছেন : সে কথাই আমি বলছিলাম। তাঁর বিরোধিতাকারী আলিমরা তাঁর আলিম হওয়াকে অস্বীকার করতেন না। কিছু মূর্খ নিজেরা মাদ্রাসায় কয়েক জামাত পড়েই নিজেকে আলিম মনে করে আর একজন সত্যিকার আলিমের ব্যাপারে বিদ্বেষ ছড়ায়।
304853
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০২:৫৬
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : মাসআল্লাহ, মরহুম অস্তাদ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলাম। ভাল লাগলো।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১১
246700
আবূসামীহা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
319494
১২ মে ২০১৫ রাত ০১:৫৮
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ভালো লাগল। ধন্যবাদ
১৩ মে ২০১৫ সকাল ০৮:৫০
260814
আবূসামীহা লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File