আমরা কি একটা পারফেক্ট জামাআত আশা করি?

লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৭:০৬:১৫ সন্ধ্যা

কোন মুসলিম জামাআত পারফেক্ট [পূর্ণাঙ্গ ও সমস্যামুক্ত] না। অনেক ভাইয়েরা আন্দোলন-সংগঠনের কিছু স্ট্র্যাটেজিক ও প্রশিক্ষণগত দূর্বলতা অথবা সংগঠনে অন্তর্ভূক্ত কিছু ব্যক্তিদের দূর্বলতা [ক্ষেত্র বিশেষে ইসলাম অননুমোদিত আচরণ] দেখে হতাশ হয়ে যান এবং সমালোচনার বন্যা বয়ে দিতে থাকেন, একসময় পুরো আন্দোলনকে অপাঙতেয় মনে করে একধরণের ভাব ধরেন।

এরকম একজনের সাথে কথা হচ্ছিল কাল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, "মুসলমানদের সবচেয়ে উত্তম জামাআত কোনটা ছিল?" তিনি উত্তর দিতে ইতস্তত করায় আমি নিজেই বললাম, "ওটা রসূলুল্লাহর [সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া-সাল্লাম] নেতৃত্বে পরিচালিত সাহাবাদের জামাআত তো, তাই না?" তিনি হ্যাঁ বোধক জবাব দিলে আমি আবারো জিজ্ঞেস করলাম, "সে জামাআতে সমস্যা ছিল কিনা?" তিনি চুপ থাকলে আমিই বললাম, "জামাআত হিসেবে সেটা সর্বোত্তম হলেও সেখানেও ব্যক্তিদের সমস্যা ছিল। কারো কারো মধ্যে মনো-মালিন্য হত। কাউকে কাউকে রসূলুল্লাহ (সঃ) মদীনা থেকে বের করে দিয়েছেন। কেউ জিনা করেছিলেন, কেউ চুরি করেছিলেন, কাউকে জাকাত আদায় করতে পাঠালে তিনি সেখানকার লোকদের কাছ থেকে [ইসলামে অননুমোদিত] হাদিয়া গ্রহণ করেছিলেন, ইত্যাদি।

রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া-সাল্লাম) এবং আবূবকর ও উমর [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] এর সময়ে এই জামাআতে সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিরা থাকলেও জামাআত হিসেবে এটি ছিল কল্যাণকর এবং পারফেক্ট । কিন্তু যখন ফিতনার মুখে অলংঘনীয় দরজা হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা উমরকে [রাঃ] ভেঙ্গে ফেলা হয় তখন ফিতনা ধীরে ধীরে জামাআতকে ঘিরে ধরতে থাকে এবং উসমান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর শেষ দিকে এসে তা বন্যার পানির মত ডুবিয়ে দিতে থাকে এই জামাআতকে। শেষ পর্যন্ত এই জামাআতের মধ্যে উপদল হয়ে তরবারি নিয়েও পরস্পরের মুক্বাবিলা করতে হয়েছে এই জামাআতের সদস্যদেরকে।"

তাই আমাদের জামাআতগুলোতেও সমস্যা থাকবে। কারণ আমাদের অবস্থান প্রথম জামাআতের সদস্যদের চেয়ে হাজারো গুণ নিম্ন মানের। কিন্তু মনে রাখতে হবে এমন জামাআতের উত্থান হয়েছিল বলেই আমরা হিদায়াতের পথের কিছুটা হলেও দিশা পেয়েছিলাম। না হলে গোমরাহীর অন্ধকারে হাতরে মরতাম। এটা ছিল আল্লাহর অনুগ্রহ। তাই এই অনুগ্রহের শোকর আদায়কারীদের দলভূক্ত থাকাটা হচ্ছে কল্যাণকর। আপনি আপনার কাজ করে যান। দ্বীনকে নিজের জীবনে ও সমাজে প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় থেকে নড়ে যাবেন না। মনে রাখবেন একজন ব্যক্তিও একটা উম্মাহ হতে পারেন। যেমন ছিলেন ইব্রাহীম [আলায়হিস-সালাম]; যেমন মু'আজ ইবন জাবাল [রাদিয়াল্লাহু আনহু] সম্পর্কে বলেছেন আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু]। আপনি যখন আল্লাহর জন্য একান্ত বাধ্যগত ও একনিষ্ঠ অনুগত [قَانِتًا لِلّهِ حَنِيفً] হয়ে যাবেন তখন আপনি নিজেই একটা উম্মাহই পরিণত হবেন।

বিষয়: বিবিধ

১২৬০ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

303554
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০৮:৩৭
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:২৩
245537
আবূসামীহা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ!
303558
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:৪৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
সম্পুর্ন সমস্যা মুক্ত জামায়াত হযরত ঈসা(আঃ) এর আগমন এর পূর্বে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয়না। কিন্তু তাই বলে যারা ক্রটিহিন জামায়াত এর খোজে আছেন তারা বরং ইসলাম এর শত্রুদেরই সুযোগ দিচ্ছেন।
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:২৪
245538
আবূসামীহা লিখেছেন : সমস্যা সবসময়ই থাকবে। কিন্ত নিজের কাজ করে যেতে হবে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও।
303576
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:১৫
মনসুর লিখেছেন : মাশাআল্লাহ, সুন্দর লিখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, জাজাকাল্লাহু খাইরান। শুভেচ্ছান্তে ধন্যবাদ।
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:২৫
245539
আবূসামীহা লিখেছেন : মনসুর ভাই, অনেক দিন পর আপনার সেই সুন্দর কমেন্টটা দেখলাম। আসলে ব্লগে আসি না বলে আপনাদের মিস করি।
জাযাকাল্লাহু খায়রা।
303578
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:২৩
মায়াবন বিহারিণী হরিণী লিখেছেন : মুসলিম জামাআতের বিসমিল্লায় গলদ, পাফেক্ট হবে কি করে! এই জামাআতের সর্দার নবী মোহাম্মদ নিজেই পারফেক্ট ছিলেন্না। নবীর মৃত্যুর দুদিন না যেতেই তার পরিবারের সদস্য/সদস্যা এবং ঘনিষ্ট সাহাবিরা ব্যাপক খুনাখুনিতে জড়িয়ে পরে।

ইসলামের এই অপ্রিয় বিষয়টির অবতারনা করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
303609
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৬:৫৯
অনুরণন লিখেছেন : কোন মানুষই পারফেক্ট না। ইম্পার্ফেক্ট মানুষের সমন্বয়ে যে দল গড়ে উঠে সেটা পার্ফেক্ট হওয়ার আশা করাটা কি বাস্তব?

আপনার লেখাগুলো খুব মিস করি। আরেকটু রেগুলার লিখবেন সম্ভব হলে। Happy
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:০৯
245584
আবূসামীহা লিখেছেন : আহা, যদি রেগুলার হতে পারতাম!
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
303647
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:৩৩
সালাম আজাদী লিখেছেন : মুসলিম কম্যুনিটিতে যে জামাআত গড়ে উঠেছে তার একটা বিশ্লেষণ হওয়া দরকার। এগুলো তো জামাআত নেই, তাহাযযুব বা হিযবের কনসেপ্সানে চলে গেছে। মুসলিম দেশের ইসলামি জামাআত গুলো আবার স্টেট উইথিন স্টেটে রূপান্তরিত হয়েছে, যার ভয় করেছিলেন আবূ হানীফা ও ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ। আমাদের মুসলিম দেশ গুলোর দুর্বল হয়ে যাওয়ার এটাও একটা কারণ দেখছি। أريد أن أتحدث مع الإخوان منذ خمسين عاما বই এ আবুল হাসান নাদাওয়ী উল্লেখ করেছিলেন: আমাদের জিহাদ ও সংগ্রাম সাধনা শেষ হচ্ছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যাতে আমাদের দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আরো বেশ কিছু বিষয় তিনি সেখানে উল্লেখ করেন যা আজ আমাদের ভাবতে হবে। ইখওয়ান সেই সময় ঐ বই টা প্রতিটি উসরার জন্য বাধ্যতা মূলক করে দেয়।
যাহোক, ইসলামি জামাআতি চেতনার সাথে বর্তমানের দলীয়করণ পদ্ধতি অনেক দিক দিয়ে সাংঘর্ষিক মনে হয়। আল্লাহু আ'লাম
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:২৯
245689
অনুরণন লিখেছেন : বইটার কি ইংলিশ/বাংলা অনুবাদ পাওয়া যায়?
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৮:২৬
246336
আবূসামীহা লিখেছেন : ঠিক বলেছেন শায়খ। অধিকাংশ জামা'আত এখন হিজবে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছে। এটা বিরাট একটা সমস্যা।
303989
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩৭
আকবার১ লিখেছেন : প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সারা বিশ্ব যুদ্ধ করছে।
মুসলিম আজ হাজারো দলে বিভক্ত।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File