বন্ধু গোলাম আযম, সাথী-ও গোলাম আযম, আমরা তোমায় ভুলে যাবো না।
লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ২৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:০২:১৬ সকাল
১৯৭৮ থেকে ১৯৮১ এর মধ্যে কোন সাল হবে হয়তো। আমাদের স্কুলের দেয়ালে দেখলাম একটা পোস্টার, যার মধ্যে অনেকগুলো মুষ্টিবদ্ধ হাত এর ছবির সাথে লিখা ছিলঃ “গোলাম আযমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দাও।” সেই প্রথম এই নামের সাথে পরিচয়। কিন্তু বয়সের স্বল্পতার জন্য এসব বিষয়ে আগ্রহ না থাকায় ঐ নাম ও নাগরিকত্ব নিয়ে কোন মাথা ঘামানোর প্রয়োজন আমাদের হয় নি। তবে বুদ্ধির পরিপক্কতা বাড়ার সাথে সাথে ও স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ধারবাহিকতায় এ নামের সাথে মোটামুটি পরিচয় ঘটতে থাকে।
এরপর ১৯৮৭ সালে এইচএস সি পরীক্ষার শেষে ঢাকায় এক শিক্ষা-শিবিরে যোগ দিতে গেলাম। শিক্ষা শিবিরের একটা আলোচনার বিষয় ছিল “ক্যারীয়ার নির্বাচন ও ক্যারীয়ার সৃষ্টি।” আলোচক অধ্যাপক গোলাম আ’যম। সেই প্রথম সরাসরি খুব কাছে থেকে তাঁর মুখ থেকে আলোচনা শুনেছিলাম। তিনি যা বলেছিলেন তা মোটামুটি এরকমঃ “ক্যারীয়ার একটা বিষয় যার জন্য মানুষ আজীবন চেষ্টা সাধনা করে চলে। একজন মু’মিনের ক্যারীয়ার সেই অর্থে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম সাধনায় নিয়োজিত থেকে তাঁর রেযামন্দি হাসিল করা। তাই আজকের আলোচনাকে আমরা বরং বলবো ‘পেশা নির্বাচন ও পেশা সৃষ্টি।’পেশা হচ্ছে দুনিয়ায় যিন্দেগী যাপনের জন্য একটা কাজ। সেটা যে কোন কাজ হতে পারে, যা একজন মু’মিনকে তাঁর দুনিয়ার জীবন এর প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করবে এবং মানুষের দুনিয়ার জীবন পরিচালনার নিয়ামক হতে পারে। এ জন্য মু’মিন নিজের ক্যারীয়ার [অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় চলতে থেকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের সাধনা] এর জন্য উপযোগী যে কোন পেশাই গ্রহণ করতে পারে।”
তাঁর এ কথাগুলো আমার হৃদয়ে ভালভাবে বদ্ধমূল হয়ে যায় এবং সময়ের পরিক্রমায় বাস্তবে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। যে দিন থেকে আল্লাহর আযাব থেকে বেঁচে থেকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে দীন প্রতিষ্ঠার কাজের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে শিখেছি সেদিন থেকে সেটাই হয়ে গেছে ক্যারীয়ার এর লক্ষ্য [career goal]। এরপর কোন বিষয়ে পড়ব আর কী পেশা অবলম্বন করব তা নিয়ে কোন দুঃশ্চিন্তা ও আফসোস মনে ভর করে নি। স্কুলে ভাল ছাত্র ছিলাম বলে আমার আত্মীয়-স্বজনরা চাইতেন ডাক্তার হই। কিন্তু মুখস্ত করাকে ভয় পেতাম বলে আমি কখনো ডাক্তারী পড়ার চিন্তা করতাম না। আমি চাইতাম সৈনিক হতে। কিন্তু ৮৮ এর বন্যায় আমার সৈনিক হবার আকাংখার বাস্তবায়নে গিট্টু লেগে যায়। সৈনিক এর পরে যে বিষয়ে আমার আগ্রহ ছিল তা হল সাংবাদিকতা। বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে ঐ বিষয়ে পড়তে হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে “ঘ” ইউনিটে পরীক্ষা দিতে হত। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রথম দিকে থাকার পরও আমার ঢা,বি, তে ভর্তি হওয়া হয় নি। কারণ ঢাকার যে আত্মীয় চট্টগ্রামে অবস্থান করা আমাকে ভাইভার তারিখ জানানোর কথা ছিল তা নির্দিষ্ট সময়ে তিনি করতে পারেন নি। ব্যস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হয়ে গেলাম। ভাবলাম ফার্মাসিস্ট/টিস্ট হয়ে যাবো একদিন। না, আত্মীয়-স্বজনদের কথা “ঢাকায় আসো; ওখানে শিবির বেশি - তুমি পড়াশোনা খুব করবে না।” তথাস্তু বলে জাহাঙ্গীরনগরে নতুন চালু হওয়া বিষয় “ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান” বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। প্রথম স্থান অধিকার করে ভর্তি হয়ে গেলাম। পদার্থ বিদ্যা আর গণিত সাবসিডিয়ারী। ভাবলাম ডিপার্টমেন্টের প্রথম হিসেবে পাশ-টাশ করে মাস্টারী শুরু করবো। হ্যাঁ, এবার থিতু হলাম। জিও-ফিজিক্স এ উচ্চতর গবেষণা করে অধ্যাপনা হবে আমার পেশা।
এক বছর যেতে না যেতে সে আশা প্রায় ভঙ্গ হতে হতে শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গেই গেল। ১৯৮৯ এ ছাত্র সংঘর্ষ ও অতঃপর ক্যাম্পাস থেকে বিদায়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে বি,এ, পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বিভাগে প্রথম কয়েকজন এর মধ্যে উত্তীর্ণ হলে আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাংখীরা বিসিএস দিতে বললেন। কিন্তু সরকারের আমলা হবার ইচ্ছে না থাকায় তা হয়ে উঠে নি। এরপর মালয়েশিয়ায় পড়লাম কমিউনিকেশন ও ইসলামিক রিভিল্ড নলেজ। নতুন করে আবার সাংবাদিকতা অবলম্বনের সুযোগ। মাস্টার্স শেষে পি,এইচ,ডিও শুরু করেছিলাম “মিডিয়া & এণ্ড ইনফো টেক” বিষয়ে; সাথে সাথে এক কলেজে অধ্যাপনা। শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়া ছেড়ে দিয়ে আমেরিকায়। ১৭ বছর পরে আমার এখনো পি-এইচ,ডি, করা হয় নি এবং আমি এখন সমাজ বিজ্ঞান পড়াই।
কিন্তু কোন আফসোস নেই। ক্যারীয়ার লক্ষ্য এখনো ঠিক আছে, বিচ্যুত হয় নি। হয়তো কদিন পরে আবার অন্য পেশাও গ্রহণ করবো; কিন্তু আসল ক্যারীয়ার লক্ষ্য ঠিক থাকবে বলেই আল্লাহর কাছে তৌফিক্ব কামনা করি। আর এখানে গোলাম আযম সাহেবের সেই আলোচনা সব সময়ই প্রেরণা হিসেবে থাকবে। তাই তাঁর ইন্তিকালের পর থেকেই গণসঙ্গীত শিল্পী আবুল কাসেমের মত করেই বলে যাচ্ছি “বন্ধু গোলাম আযম, সাথীও গোলাম আযম, আমরা তোমায় ভুলে যাবো না।”
"ওহ আল্লাহ! তুমি তাঁকে ক্ষমা কর, তাঁকে মাফ করো, রক্ষা করো। তাঁর অভ্যর্থনাকে সম্মানিত করো, তাঁর প্রবেশকে প্রসারিত করো। তাঁকে ভুল-ত্রুটি থেকে সেভাবে পবিত্র করো যেভাবে সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পবিত্র করো। তাঁকে ধুয়ে দাও ঠাণ্ডা পানি, বরফ ও তুষার দিয়ে। তাঁকে দান করো তাঁর দুনিয়ার ঘরের পরিবর্তে উত্তম এক ঘর, দুনিয়ার সঙ্গীনির চেয়ে উত্তম সঙ্গীনি, দুনিয়ার পরিবারের চেয়ে উত্তম পরিবার। তাঁকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর এবং জান্নাতে প্রবেশ করাও।"
বিষয়: বিবিধ
১৫৬১ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাঁকে দান করো তাঁর দুনিয়ার ঘরের পরিবর্তে উত্তম এক ঘর, দুনিয়ার সঙ্গীনির চেয়ে উত্তম সঙ্গীনি, দুনিয়ার পরিবারের চেয়ে উত্তম পরিবার। তাঁকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর এবং জান্নাতে প্রবেশ করাও।"আমীন
তবে "ওয়া ইয়্যাক! " এর অর্থ বুঝলাম না???
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম) বলেন, যখন কোন ব্যক্তির উপকার বা কিছু ভালো করা হয় এবং এর জবাবে সে যদি বলে “জাযাকাল্লাহ খাইরান”(অর্থাৎ আল্লাহ্ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিন), তবে সে যথার্থভাবে সেই ব্যক্তির প্রশংসা ও প্রতিবদল দান করল ।
[তিরমিযী, রিয়াযুস স্বালেহীন, ১৪৯৬]
এর উত্তর দিতে পারেনঃ
ওয়া ইইয়াকুম (অর্থাৎ আপনাদেরকেও) বা
ওয়াই ইয়্যাক (আপনাকেও) বা
ওয়া বারাকাল্লাহু ফী (আল্লাহ্ আপনাকে এর মধ্যে বারাকাহ দান করুন
আমার ৪৩ বছরের জীবনে এই শব্দটি আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। তবে সবাই যে সব কিছু জানবে এমনও তো নয়। আপনার শব্দটি আমার প্রথপম শোনা বিধায় আপনাকে জিজ্ঞেস করা। কিন্তু এর জন্য "ভাই মামুন আমরা মুসলমান দাবী করি বটে কিন্তু মুসলমানের চালচলন রীতিনীতি সম্পর্কে জানার চেষ্ট করিনা। " এটা সম্পুর্ণ অতিরিক্ত বললেন। এনিওয়ে ধন্যবাদ আপনাকে।
এটা সঠিক মূল্যায়ন। আপনার মত এরকম হাজার হাজার মানুষ প্রফেসারের তৈরী। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন