দোলনায় কথা বলা শিশু, ফাসিকদের অপবাদ ও অত্যাচার; আর জুলুমের শিকার আল্লাহর বান্দাহরা [উৎসর্গঃ সাঈদী,আযাদ ও অন্যান্য মজলুমগণ] - রিপোস্ট

লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ০১ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৪৬:০৪ সকাল

সহীহ্‌ মুসলিমের কিতাবুল বির্র ওয়াস-সিলাত ওয়াল-আদাব এ আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত এক হাদীসে রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) দোলনায় থাকা অবস্থায় কথা বলা তিন ব্যক্তির কথা আমাদের জানিয়েছেন, এদের একজন সম্পর্কে বলা হয়েছে, “.........অতঃপর ছিল এক শিশু যে তার মায়ের বুকের দুধ পান করছিল, যখন দামী জাঁকজমক পূর্ণ পোশাক পরিহিত সুদর্শন এক ব্যক্তি একটি সওয়ারী জন্তুতে চড়ে সেখানে আসল। তার মা তখন বললঃ ‘হে আল্লাহ, আমার বাচ্চাকে এই লোকটার মত বানাও’। বাচ্চা তখন দুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়ে লোকটার দিকে দেখতে লাগল এবং বলে উঠলঃ ‘হে আল্লাহ তুমি আমাকে তার মত বানিও না’। এরপর সে আবার তার মায়ের বুকের দুধ খাওয়ায় মননিবেশ করল। ............ঠিক তখন সেখান দিয়ে একটা মেয়ে যাচ্ছিল যাকে লোকেরা পেটাচ্ছিল এবং বলছিল, ‘তুই ব্যভিচার করেছিস; তুই চুরি করেছিস।’ আর সে বলছিলঃ ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; তিনিই আমার উত্তম অভিভাবক’। বাচ্চার মা তখন বললেনঃ ‘হে আল্লাহ, আমার বাচ্চাকে তুমি তার মত বানিও না’। এতে বাচ্চা দুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়ে মেয়েটার দিকে তাকাল এবং বলে উঠলঃ ‘হে আল্লাহ, আমাকে তুমি তার মত বানাও’। তখন তাদের মধ্যে কথা হল। মা বললেনঃ ‘হে ন্যাড়া মাথা, একজন সুদর্শন লোক এখান দিয়ে গেল আর আমি দু’আ করলাম, ‘হে আল্লাহ, আমার বাচ্চাকে তার মত বানাও’; অথচ তুমি বললে, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে তার মত বানিও না।’ এরপর একটা দাসী গেল যাকে লোকেরা পেটাচ্ছিল এবং বলছিল, ‘তুই জ়িনা করেছিস; তুই চুরি করেছিস।’ তখন আমি দু’আ করলামঃ ‘হে আল্লাহ, আমার বাচ্চাকে এর মত বানিও না’; কিন্তু তুমি বললে, ‘হে আল্লাহ, আমাকে তার মত বানাও।’ তখন বাচ্চাটা বলে উঠলঃ ঐ [সুদর্শন] লোকটা ছিল এক জালিম-স্বৈরাচারী; তাই আমি বলেছি, ‘হে আল্লাহ আমাকে তার মত বানিও না।’ আর ঐ দাসীটা সম্পর্কে লোকেরা বলছিল, ‘তুই জ়িনা করেছিস; অথচ সে তা করে নি। তারা বলছিল, ‘তুই চুরি করেছিস’; অথচ সে তা করে নি’। তাই আমি দু‘আ করেছি এই বলে, ‘হে আল্লাহ, আমাকে তার মত বানাও।’ [১]

আমাদের সমাজের অবস্থাও আজ তাই। আমাদের জাতিসত্ত্বার [মুসলিম জাতিসত্ত্বা] সাথে যারা গাদ্দারী করেছে তারা আমাদের সমাজের কাছে হিরো। কিন্তু আপন অস্তিত্বের সাথে গাদ্দারী করতে না পেরে যারা রাজনৈতিক একটা অবস্থান নিয়েছিলেন প্রায় আধা-শতাব্দী আগে তারা এখন আমাদের সমাজে অপবাদের শিকার। আমাদের তৌহিদবাদী মুসলিম অস্তিত্বের আত্মনির্ভশীল সত্ত্বাকে অবদমিত করে রাখার জন্য পৌত্তলিক, ধর্মনিরপেক্ষ-জাতীয়তাবাদী ও নাস্তিক ষড়যন্ত্রকারীরা তাই আমাদের উলামাদেরকে বেছে নিয়েছে চরিত্র হননের জন্য ও ধ্বংস করার জন্য। আমাদের স্বকীয় সত্ত্বা - যা আমাদের উম্মাহর বিশ্ব-ভ্রাতৃত্বের ধারণার সাথে আবদ্ধ, তাকে ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগে আছে এই ষড়যন্ত্রকারীরা। মুসলিমদের মধ্যে ঘৃণার বীজ বপন করে তাকে মহীরূহে রূপান্তরের চেষ্টার তাদের কোন কমতি নেই। আমাদের এই প্রকাশ্য শত্রুদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে একদল নাইভ মুসলিমও তাদের সূরে কথা বলতে শুরু করেছে। আমরা এদেরকেও দেখি ঘৃণার বীজকে লালন করতে। অথচ আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন নিজেদের সম্পর্কের ফাটলকে সারিয়ে নিয়ে সন্ধি করে নিতে।“যদি মু’মিনদের দুটি দল যুদ্ধে লিপ্ত হয় তবে তাদের মধ্যে সন্ধি করে দাও। যদি একদল সীমালংঘন করে তবে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে তবে তাদের মধ্যে সুবিচারের মাধ্যমে সন্ধি করে দাও এবং সমতার নীতি অবলম্বন কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমতার নীতি অবলম্বনকারীদের ভালবাসেন। অবশ্যই ঈমানদাররা পরস্পরের ভাই। সুতরাং তোমাদের ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ককে সুচারু করে নাও। আর আল্লাহর ব্যাপারে পরহেজগারী অবলম্বন কর; আশা করা যায় যে তোমাদের উপর রহম করা হবে।” [২]

ঘৃণার বীজকে চিরকাল লালন করে আমাদের মধ্যে যেন কখনো সমঝোতা সৃষ্টি না হতে পারে তা চায় আমাদের অস্তিত্বের শত্রুরা; কিন্তু আল্লাহ চান আমরা যেন তাড়াতাড়ি আমাদের ঘৃণার ও বিভেদের দেয়াল সরিয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে মজবুত করে নেই।

আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন ফাসিক্বদের কথা বিশ্বাস না করতে। “হে ঈমানদারগণ তোমাদের কাছে কোন ফাসিক্ব [পাপাচারী] যদি কোন খবর নিয়ে আসে তবে তার [সত্যতা] যাচাই কর, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন কওমের ক্ষতি করতে উদ্যত না হও, যার জন্য তোমাদের পরে আফসোস করতে হতে পারে।” [৩]

আমাদের উলামা ও ইসলামপন্থী ভাই-বোনদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও অপবাদ দানকারীরা যে ফাসিক্ব পাপাচারী সে ব্যাপারে কি কারো কোন সন্দেহ আছে? ঈমানদারদের বিরুদ্ধে এ জাতীয় জঘন্য অভিযোগ আনা হলে আমাদের কী প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিৎ তাও আমাদের রব্ব আমাদের বলে দিয়েছেনঃ “তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা কর নি এবং বল নি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ?” [৪]

ঈমানদাররা চিরকালই গড়েছেন, ভাঙার কাজে তারা সচরাচর লিপ্ত হন না। তারা একাত্তরের আগেও লিপ্ত ছিলেন গড়ার কাজে। ৭১ পরবর্তী ৪ দশকও আমরা তাদেরকে গড়ার কাজে লিপ্ত দেখেছি। আর তাদের বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপকারীরা ৭১ এর আগেও ছিল ভাঙার কাজে লিপ্ত। একাত্তর পরবর্তী সময়টাতেও তারা ভাঙার কাজেই লিপ্ত থেকেছে। তাদের ভাঙনের কাজ আমরা প্রতিদিন অবলোকন করছি। তাদের চরিত্র এই সময়ের মাঝে এতটুকুও বদলায় নি। তাহলে এটা কী করে সম্ভব যে একদল লোক চিরকাল গড়ার কাজে লিপ্ত থাকল শুধু ৯ মাস তারা মারাত্মক ভাঙনের কাজে লিপ্ত ছিল? অন্যদিকে আরেকদল লোককে দেখা প্রতিনিয়ত ভাঙনের খেলায় লিপ্ত; কিন্তু তারা নাকি গড়ার কাজ করেছে ৯ মাস! কেন তাদেরকে কল্যাণকর কোন কাজে দেখা যায় না? প্রকৃত সত্য হচ্ছে তাদের পৌত্তলিক সহযোগীদের সহায়তায় সেই নয় মাসেও হেন কোন অপকর্ম নেই যা তারা করে নি।

দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী ও আবুল কালাম আযাদরা গড়ার কারিগর। তাঁরা কল্যাণকর কিছুই ভাঙেন না। আমাদের বুদ্ধি হওয়া অবধি যে জীবন তা তাঁর গড়ার কাজের সাক্ষী। তাই আমরা রসূল মুহাম্মদ [সলাওয়াতুল্লাহি ও সালামুহু আলায়হি] এর হাদীসের সেই শিশুর মতই আল্লাহর কাছে দু’আ করব আমাদেরকে এঁদের পথেই ক্ববূল করতে; আর তাদের ভুল-ত্রুটিগুলো মাফ করে দিয়ে তাদের কল্যাণকর সব কাজগুলো ক্ববূল করে নিতে।

আমরা জানি আমাদের সাথে মুসলিম হবার পরেও জাতীয়তাবাদী জাহিলিয়্যাতে বিশ্বাসীরা একমত হবে না। অবশ্য তাদের একমত না হওয়ায় আমাদের কিছুই এসে যায় না। কারণ তারা জাহান্নামের পথে চলতে চাইলেও আমরা তা অস্বীকার করি। রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে মানুষকে জাহিলিয়্যাতের মাধ্যমে আহবান করবে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” বলা হলঃ “হে আল্লাহর রসূল, সে যদি সালাত [নামায] আদায় করে ও সাওম [রোজা] পালন করে?” তিনি (সঃ) বললেনঃ “সে যদি সালাত আদায় করে, সাওম পালন করে এবং নিজেকে মুসলিম মনে করে তারপরও।” [৫]

তথ্যসূত্রঃ

[১] সহীহ মুসলিম, কিতাবুল বির্র ওয়াস-সিলাত ওয়াল-আদাব। হাদীস নং ৬১৮৮

[২] আল-কুর’আন, ৪৯: ৯-১০।

[৩] আল-কুর’আন, ৪৯: ৬।

[৪] আল-কুর’আন, ২৪: ১২।

[৫] নাসা’ঈ, তিরমিজী ও অন্যান্যরা [হারিস আল-আশ’আরী (রাঃ) থেকে]

বিষয়: বিবিধ

১৩২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File