সর্বনাশ! আপনি কি মোটাদের দলে যোগ দিচ্ছেন?

লিখেছেন লিখেছেন রাজজাক ০৯ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৫:০১:৫৩ বিকাল





সারা বিশ্বময় মোটা মানুষদের মিছিল যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৫% ’ওবেজ’ (obese) এবং ১৪% ’ওভারওয়েট’ (overweight) এর বিপদসীমার মধ্যে অবস্থান করছেন। যা মোটেই কাম্য নয়।

দেহে অস্বাভাবিক ভাবে ফ্যটি বা চর্বি জমে গেলে তাকে ওবেসিটি বা স্থূলতা বলে এবং যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বটে। শুধু উন্নত বিশ্বেরই নয়, আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশসমূহের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ স্থূলতা জণিত নানা জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও কিডনীরোগীদের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। তাছাড়া স্বাভাবিক চলাফেরা, ওঠা-বসা, হাঁটুব্যথা ও পিত্তথলির সমস্যা মোটা মানুষদের জন্য কমন ব্যাপার। জেনেটিক ফ্যাক্টর একটা কারন হলেও অতিমাত্রায় ক্যালোরি গ্রহণ এবং সেই সাথে আয়েশী জীবনযাপনই ওবেসিটির প্রধান কারন। দেখা গেছে প্রতিদিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত ১০০ ক্যালোরি খাদ্য গ্রহণ করলে দেহের ওজন এক বছরে প্রায় ৫ কেজি বেড়ে যেতে পারে।

যেহেতু শর্করা ও চর্বির প্রক্রিয়াজাত কর্মটি দেহকোষের মাইটোকন্ড্রিয়ায় সাধিত হয়। তাই খাদ্যের সাথে অতিরিক্ত পরিমাণে শর্করা ও চর্বি গ্রহণ করলে দেহকোষের মাইটোকন্ড্রিয়ার উপরে বেশী চাপ পড়ে ও ফ্রি-রেডিকেলের পরিমাণ বেড়ে যায়। দেহকে এই অতিরিক্ত ফ্রি-রেডিকেল মুক্ত করতে গিয়ে এন্জাইম সিস্টেমকে অতিমাত্রায় ব্যস্ত থাকতে হয়। এর ফলে কঠিন চাপের সৃষ্টি হয়। এই অবস্থাকে অক্সিডেটিভ-স্ট্রেস বলে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত ফ্রি-রেডিকেল এর উপস্থিতির কারনে দেহকোষের ক্ষতি সাধিত হয় এবং মাইটোকন্ড্রিয়ার কর্মক্ষমতা লোপ পায়। ফলস্রুতিতে ইনসুলিন উৎপাদন কমে গিয়ে কিংবা ইনসুলিন রিসেপ্টরের সংবেদনশীলতা হ্রাস পাওয়ায় রক্তে শর্করা (গ্লুকোজ) ও চর্বির (লিপিড) পরিমাণ ত্রমশঃ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে একজন মোটা মানুষ খুব সহজেই উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে পড়েন এবং ধীরে ধীরে নানা জটিল রোগ তাকে পেয়ে বশে।

বাহ্যিকভাবে ভূঁড়ির গঠনের উপরে ভিত্তি করে ওবেসদের দুটি গ্র“পে ভাগ করা হয়ে থাকে- আপেল আকৃতির ও নাশপাতি আকৃতির। আপনি যে গ্র“পের মধ্যেই পড়েন না কেন- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমদিত (বিএমআই) ’বডি মাস ইন্ডেক্স’ নির্ণয়ের ফর্মুলা জানা থাকলে সহজেই ও সঠিকভাবে আপনার ওবেসিটির মাত্রা নিরূপণ করে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন।

’বডি মাস ইন্ডেক্স’ নির্ণয়ের ফর্মুলা-

BMI = Weight (kg) / Height (m) x Height (m)

বিএমআই নির্ণয়ের জন্য হালকা ওজনের জামা কাপড় পড়া অবস্থায় (ভারি কাপড় ও জুতা খুলে রাখতে হবে) কেজিতে শরীরের ওজন নিন। এবার খালি পায়ে সোজা অবস্থায় দাঁড়িয়ে মাথার (চুল নয়) খুলি বরাবর মিটারে আপনার উচ্চতা মাপুন। কেজিতে নির্ণয় করা শরীরের ওজনকে মিটারে নির্ণয় করা (উচ্চতা ী উচ্চতা) দিয়ে ভাগ করুন। যেমন আপনার ওজন ৬৫ কেজি এবং উচ্চতা ১.৫৭ মিটার হলে, বিএমআই হবে= (৬৫/ ১.৫৭ ী ১.৫৭)= ২৬.৩৭০২। এ পদ্ধতিতে প্রতি মাসে অন্তত দুবার বিএমআই নিরুপণ করে নিজের ওজন সম্পর্কে ধারনা নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের বিএমআই-

#১৮.৫ এর কম হলে ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম আছে বুঝতে হবে।

*১৮.৫ থেকে ২৪.৯ হলে ওজন স্বাভাবিক ধরা হয়।

#২৫ থেকে ২৯.৯ হলে ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আছে অর্থাৎ ’ওভারওয়েট’ বুঝতে হবে।

#৩০ বা এর চেয়ে বেশি হলে তাকে ওবেজ অর্থাৎ মোটা মানুষ বা মটুদের দলভুক্ত হিসেবে ধরে নেয়া হয়।

ওজন কম বা বেশি হওয়া কোনটাই কাম্য নয়। সুস্থ ও কর্মময় জীবনের জন্য বিএমআই ১৮.৫ থেকে ২৫ এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে হবে। আপনার পেটটা কমানোর প্রয়োজন আছে কিনা তা বোঝার জন্য একটি সহজ পরীক্ষা এখুনি করে ফেলুন। সাজা দাঁড়িয়ে ও কোমড় না বাঁকিয়ে, শুধুমাত্র ঘাড়টা সামনে ঝুকিয়ে আপনার পায়ের বৃদ্ধা অঙ্গুলীর নখ দেখার চেষ্টা করুন। সহজে দেখতে পেলে ভাল। কিন্তু ভুঁড়ির কারনে দেখতে সমস্যা হলে আর সময় নষ্ট না করে ব্যবস্থা নিন।

ওজন স্বাভাবিক রাখার জন্য যা করতে হবে-

* প্রথমত ওজন বাড়লো কিনা সে বিষয়ে সব সময় নিজেকেই বেশি সচেতন থাকতে হবে।

* সপ্তাহে ৫ থেকে ৬ দিন গড়ে প্রতিদিন ৪০ মিনিট করে হালকা ব্যয়াম করুন, হাটুন ও সাঁতার কাটুন।

* চর্বি ও মিষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিন।

* আইসক্রিম ও সফ্ট ড্রিংকস্ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।

* ফল, সবজি ও শস্য দানা বেশি খেতে চেষ্টা করুন।

* ভাত কম খেয়ে তার বদলে রুটি খান।

* পেট পুরে না খেয়ে কিছুটা খালি রেখেই বেশ খানিকটা পানি পান করে নিন।

* প্রতিদিন অন্তত একটি লেবুর রস পানিতে মিশিয়ে খাবার অভ্যাস করুন। লেবুর চোছা খুব ভাল এন্টি অক্সিডেন্টের কাজ করে। তাই লেবুর চোছা ফেলে না দিয়ে কুচি করে কেটে সালাদের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

ধন্যবাদ-

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File