নাম নিয়ে যন্ত্রণা!
লিখেছেন লিখেছেন শাহীন সিদ্দিকী ২৩ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:০৩:৪৫ রাত
আমার ভাল একজন কলিগ, নাম সামপাথ। তামিলনাডু থেকে সবক'টি মহাদেশ ঘুরে এখন কানাডায়। ওর সাথে নানান বিষয়ে কতই না কথা হয়! কিন্তু ভাবিইনি এমন একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় বাদ পড়ে যাবে!
নামকরণের অদ্ভূত নিয়মের প্রচলণ রয়েছে সাউথ ইন্ডিয়ায়। তাও যে একটা সিস্টেম সব জায়গায় সবাই মেনে চলবে তা কিন্তু নয়। একেকটা শহর বা জেলায় একেক রকমের নামের প্রচলণ।
ওদের ভাষাটা এমনিতেই জটিল, উচ্চারণে বেশ সমস্যা। যেন গাল ভর্তি করে বঙ্কিম আওড়ানো। আমার এক বন্ধু বলত, পাথরের অনেকগুলো টুকরা দিয়ে একটা বড় বালতি ভর্তি করো, তারপর মুখ বন্ধ করে জোরে জোরে ঝাঁকাও। এর মধ্য দিয়ে গড়্ গড়্ করে যে শব্দমালা বের হবে সেটাই তামিল!
যাইহোক, নামে ফিরে আসি। ওদের মূল নাম একটাই। আদতে প্রথম, মিডল, বা উপাধি (Sur) নাম বলে কিছু নাই।
অফিসিয়াল নামের শুরু হয় গ্রামের নাম দিয়ে, তারপর পিতার, তারপর নবজাতকের, তারপরে দাদা বা নানার নাম দিয়ে শেষ হয়।
যদি নবজাতক প্রথম ছেলে সন্তান হয়, তবে শেষ অংশ সে পাবে দাদার, প্রথম মেয়ে সন্তান হলে পাবে নানীর নাম। দ্বিতীয় ছেলে সন্তান পাবে নানার, মেয়ে পাবে দাদীর নাম। এভাবেই চলতে থাকবে।
সামপাথের পূরো নাম এরকম:
"Singanallur (গ্রাম) Venkataramanan (পিতা) Sampath Narayanan (নানার, তার মানে ও হল বাপ-মায়ের দ্বিতীয় ছেলে)"
চেস্টা করেন তো উচ্চারণ করতে পারেন কিনা? পারলে মিষ্টি খাওয়াবো।
তবে ওদের স্কুলগুলো কিন্তু আদ্যক্ষর দিয়েই প্রথম দুটার কাজ সারে। ওর বেলায়: S.V Sampath Narayanan।
কিন্তু ওর যন্ত্রণা শুরু হল দেশের বাইরে এসে।
সামপাথ প্রথম যায় নাইজেরিয়ায়। প্রথমদিনেই এয়ারপোর্ট থেকে পাসপোর্ট চুরি হয়। নতুন পাসপোর্টের জন্য গেল ওখানকার ইন্ডিয়ান দূতাবাসে। নাইজেরিয়ান কর্মকর্তা ওর শর্ট ভার্সনের নাম দেখে বলল, এখানে ইনিশিয়াল বা আদ্যক্ষর চলে না, পুরা নামই লিখতে হবে। ও লিখে দিয়ে চলে আসল। ফার্স্ট নেম লাস্ট নেমের অপশন ওই নাইজেরিয়ানের মর্জির উপর রেখে দিল।
পাসপোর্ট আসলও কিন্তু নামের অবস্থা দেখে ওর চক্ষু চড়ক গাছ।
সর্বমোট তিন লাইন, তারও যদি কোন ছিরি থাকে!
লাইন শেষ হওয়ায় মাঝখানে দুইটা হাইফেন!
এরকম:
Singanallur Venkatara-
manan Sampath Naraya-
nan
নাম পরিবর্তনের জন্য দূতাবাসে গেল কিন্তু পারল না।
তারপর অনেক ঘাট-মাঠ পাড়ি দিয়ে এল আমেরিকায়। আমেরিকা সরকারের মাথা-মোটারা মনে করল এটা দুইজনের নাম। ইস্যু করল দুইটা সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার!
সব আইডি মেলে ও আমার সামনে ধরল, একেকটাতে একেক রকম, কোনটার সাথেই কোনটার মিল নাই। নামের ভীড়ে ওর আসল নামটাই অনেক আইডিতে স্থান পায় নাই।
একমাত্র নামের কারণেই কানাডাতে ওর সিটিশেনশীপে সময় লাগল তিন বছরেরও বেশী।
পন্চাশ বছর বয়স, দেখতে অবশ্য বিশের একটু বেশী মনে হয় সামপাথকে। একবার হার্ট এটাক করায় ভয় পেয়েছে। বলছে নাম যদি এখন পরিবর্তন না করি বউ বাচ্চারা রেখে যাওয়া সম্পদ সরকারের কাছ থেকে পেতে মারাত্মক বেগ পাবে।
বল্লাম খাঁটি কথা বলেছো। রসিয়ে রসিয়ে ওর দু:খের কথা একাধারে বলে যাচ্ছিল আর আমি শুধুই হাসছিলাম।
বিষয়: বিবিধ
১৫৯৭ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সামপাথের ভাগ্য ভাল, ওর নামের সাথে মোহাম্মদ ছিল না। তাহলে হয়তো পুরো ইমিগ্রেশন কেসটি বাতিল হয়ে যেত।
আপনার লিংকটা দিবেন? আপনার অনেক লেখার ভীড়ে খুঁজে পাচ্ছিনা!
সংশোধন: আমি কিন্তু আমার নাম ঠিকই রেখেছি। বাপ-মায়ের দেয়াটাই আছে। সরকারী কাগজ পত্রে শুধুমাত্র লিগ্যাল নাম আর সব ক্ষেত্রেই আমাকে যে নামে সবাই চেনে-জানে সেটাই আছে। আমার লিগ্যাল নামের প্রথমটা তো হল মোহাম্মদের শর্ট ফর্ম "মোহা:"। এইটা ইউনিভার্সিটিতে দিয়েছিলাম। টিচার আমাকে 'মোহাম্মদ','মোহাম্মদ' বলে ডাকত আর আমি চুপচাপ বসে থাকতাম। টের পেতাম না যে ওটাও আমার নাম।
মিষ্টি খাওয়ান।
আমার একটি জিনিস অদ্বুদ লাগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলি তাদের নিয়মকেই সারা বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য মনে করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলিতেও বিকট নামের মানুষ আছে। কিন্তু ওরা বেশ শর্ট করে নেয় মানুষের উচ্চারণের সুবিধার্তে।
কোন কোন সময় নাম সংক্ষিপ্ত করা জায়েয (!) হয় না । যেমন, আরনল্ড সোয়ার্জেনেগার-কে হলিউডের অভিনেতা থাকা অবস্থায় সাংবাদিকরা সংক্ষেপে আর্নি বলতো অথচ ক্যালিফোর্নিয়ার গর্ভনর হওয়ার পর তাঁকে সম্বোধন করতো 'মিস্টার সোয়ার্জেনেগার' বলে যেটার সঠিক বানান লিখতে-ই যেমন সাংবাদিকরা হিমশিম খেতো তেমনি উচ্চারণটা-ও ছিলো অনেকের জন্য কষ্টকর -- tongue-twisting যাকে বলে ।
By any other name would smell as sweet.
(Shakespeare in Romeo and Juliet)
নাম-এ কিছু আসে যায় কিনা তা সঠিকভাবে জানলে সেক্সপিয়ার ঐ ধরণের কথা বলতে হয়তো দ্বিধান্বিত হোতেন !
নাম নিয়ে শুধু যন্ত্রণা নয় -- নানা ধরণের সরস অভিজ্ঞতা-ও জানা আছে । যেমনঃ
দক্ষিণ ভারতীয় এক সহপাঠীর এক শব্দবিশিষ্ট নাম ছিলো গুরুপ্রসাদ । যুক্তরাষ্ট্রীয় ফার্স্ট-লাস্ট নেম সিস্টেমের ষ্টীমরোলারে পিষ্ট হয়ে সেটা হয়ে গেলো গুরুপ্রসাদ গুরুপ্রসাদ ?!
ড্রাইভারস লাইসেন্স কার্ডে এক গ্রীক সহপাঠীর অস্বাভাবিক রকম লম্বাটে নাম দেখে সেটা নিয়ে একটা লম্বা সময়ব্যাপী কৌতুহুলোদ্দীপক কথা বলতে গিয়ে মার্কিন পুলিশ স্পিডিং ফাইনের টিকিট দিতে-ই ভুলে গিয়েছিলো !
অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন