তিন খানা বিয়ের গল্প এবং আমাদের পরিবারগুলো...
লিখেছেন লিখেছেন মু নূরনবী ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৪:১৫:০০ বিকাল
ডিসেম্বর মাস বিয়ের মাস!
অলরেডি তিনটে বিয়ের দাওয়াত পেলাম।
পাত্র পক্ষের তিন জনই খুব কাছের হওয়ায় ঘটন-অঘটন সবই মোটামুটি জানি। তিনটাতেই এক জায়গায় অদ্ভুত মিল খুঁজে পেলাম!
আমাদের পরিবারগুলো বিয়ের ক্ষেত্রে যতটা কড়াকড়ি আরোপ করে, অন্য কোন ক্ষেত্রে করে কিনা সন্দেহ আছে বৈকি!
প্রথমেই বন্ধু মহিনের কথা না বললেই নয়। বয়সে আমাদের ৩/৪ বছরের সিনিয়র। মেট্রিক পরীক্ষার পর পরই বড় ছেলে হওয়ায় এবং পিতার শারিরীক অক্ষমতার কারণে সংসারের হাল ধরে। লোন করে ছোট দুই ভাইকে বিদেশ পাঠায়, নিজে দেশে থেকে যায় সংসারটাকে গোছানোর জন্য।
দুই ভাইয়ের একজন কষ্টের কথা বলে যাওয়ার ছয় মাস পর দুবাই থেকে বাড়ী চলে আসে ( সে সম্ভবত বিদেশটাকে শশুরবাড়ী মনে করেছিল কিনা! )। অন্যজন ওমান গিয়ে লাপাত্তা। ফোনও করে না! এদিকে জায়গা জমিন বিক্রি করে ভাইদেরকে পাঠানোর ফলে মহিনের সুযোগ থাকার পরও কোন ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেনি। তাই তাকে আমরা দুষ্টুমি করে বলি "সিজনাল ব্যবসায়ী"। এই করতে করতেই ৩২/৩৩ শেষ! পারিবারিক অস্বচ্ছলতার দরুণ মহিনের বিয়ে নিয়ে কেউ খুব বেশী চিন্তা করে না! মনতো আর বসে থাকে না। কোন এক অনুষ্ঠানে এক মেয়ের সাথে পরিচয়, ভাললাগা। পারিবারিকভাবে প্রস্তাব পাঠালে মেয়ের বাবার অসম্মতি। ছেলে বেকার, পারিবারিক স্ট্যাটাস নাই। ব্যস, বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু মেয়ে অনঢ়! এই নিয়ে এক বছর টানা হেঁচড়া! তার যুক্তি হচ্ছে আমার কপালে যদি সুখ থাকে তাহলে আমি সুখী হবো। ছেলের পারিবারিক স্ট্যাটাস নাই। কিন্তু ছেলে ভদ্র, সত। এটাই আসল। আগামী কাল তাদের আকদ অনুষ্ঠান।
দ্বিতীয়ত, আমার আরেক বন্ধু ওমর ফারুক। আমার ইউনি থেকে পাস করে বের হওয়ার পর ব্রাক ব্যাংকে কন্ট্রাকচুয়াল একটা জব করেছে কিছুদিন। এক সময় কন্ট্রাক শেষ। বেকার! অন্যদিকে বিয়ের জন্য ব্যাকুল। কিন্তু বড় ভাই বিয়ে করে নাই। অন্যদিকে বেকার। কিভাবে সম্ভব?! পরিবারে তোলাই তো কঠিন! মেয়ে চট্রগ্রাম কলেজে ইংলিশে সেকেন্ড ইয়ারে পড়তো তখন, মেয়ের বাবা ডাক্তার। সমাজে প্রতিষ্ঠিত। মেয়ের বিয়ের জন্য অনবরত চাপ আসতে থাকে পরিবার থেকে। সে দিনগুলো তাঁর কতটা হতাশায় কেটেছে আমি চাক্ষুস দেখেছি। একটি চাকরির জন্য কত জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়েছে, কত গাইড পড়েছে...বোঝানো যাবে না! লুকিয়ে প্রেম করার চাইতে হালাল প্রেমের নিমিত্তে চ্রম সিদ্ধান্ত নেয় দু জনেই। এর কয়েক মাস পরেই ফারুক কাতারে একাউন্টস অফিসার হিসেবে চাকরি পেয়ে যায়। তখন দুষ্টুমি করে তাকে বলতাম, চরিত্র রক্ষার্থে কেউ বিয়ে করলে আল্লাহ যে তার রিজিক বৃদ্ধি করেন, তা তোকে দেখে চাক্ষুস প্রমাণ পেলাম! দেড় বছর পর আজকে তার দেশে আসার কথা রয়েছে। আগামী ১২ ই ডিসেম্বর উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিয়ের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
তৃতীয় টা আমার সিনিয়র অফিস কলিগ আজিজ ভাইয়ের। নভেম্বরের ১২ তারিখে সব কিছু ঠিক ঠাক আকদ হবে। আকদ অনুষ্ঠানে মেয়ের মায়ের কিছু মামুলি বিষয় নিয়ে আপত্তি। ফলে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম। ঐ দিন আর আকদ হয় নাই। পরবর্তীতে মেয়ের সিদ্ধান্ত ছেলে ভদ্র, প্রতিষ্ঠিত এর চাইতে কি চাও তোমরা? মেয়ের কথা হচ্ছে এতদূর গড়ানোর পর ছোটখাট বিষয় নিয়ে ওজর তুলে বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার কোন মানে হয় না। তোমরা তাহলে আকদ অনুষ্ঠানের আয়োজন কেন করেছিলে? পরবর্তীতে অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে ঘরোভাবেই আকদ হয় এবং ১২ ই ডিসেম্বর বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান।
বিষয়: বিবিধ
৩০৫৭ বার পঠিত, ৭৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি জানি...প্রথমেই এ রকম কথা আসবে!
কপালের লিখন যায় না খন্ডন...
আমি চেষ্টা করলে তো হবে না...উপর থেকে সিদ্ধান্ত আসতে হবে যে মিয়া ভাই!
জাত-পাত আর টাকার কাছে যে সবই নস্যি!!!
ধৈর্য্য ধরার বিকল্প নাই। সবরে মেওয়া ফলে...
বিশ্বাসী মন বলছে, বিজয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে মনে হয়েছে এর চাইতে বেটার জয় হয়তো আল্লাহ রেখেছে।
কারণ, নিজেকে সব সময় কোন একজনের জন্য রেখেছি।
সি উড বি হাফ অব মাইন, হাফ অব দ্বীন।
সত্যি ব্লগের সোনালী অতীত মনে পড়লে নস্টালজিক হয়ে যাই।
ইদানিং কম আসা হয়...কত ঝড় যে মানুষের উপর দিয়ে বয়ে যায়!
কয়টার খবরই বা মানুষ রাখে..আর কয়টাই বা প্রকাশ করা যাইতে পারে???
ব্যস্ততার মাঝেই অনেক কিছু ভুলে থাকা যায়। তাই ব্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করছি!
দিনশেষে, ছেলে হলে টাকা থাকতে হবে, আর মেয়ে হলে সুন্দরী হতে হবে..এটাই চ্রম সত্য।
জামাল মিয়া রে হাডাইলামু..
জেনে শুনে কোন কাজ করলে আফসোস থাকার কথা নয়।
ওরা সুখী হোক..দোয়া করবেন।
খাওয়ার লাইগ্যা???
ওরে ভাইরে এই খাওয়ার মাঝে যে পকেটের স্বাস্থ্যহানী হবে..তাই চিন্তা করলে কান্দনতো আমার ও আসে!
কিন্তু যেতে হবে যে!
দুষ্টু বালক এভাবে তাকাতে নাই!
নজর লাগপো..
আমাদের কবে
সুখটা কপালের লিখন...
নিশ্চয়ই বাবা-মায়ের অসম্মতিতে বিয়ের বিধান নাই। তবে, ছেলে-মেয়ের সম্মতিকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে।
ডেডিকেশন থাকতে হয়...
ডেডিকেশনই তরী তীরে ভিড়ানোর পূর্ব শর্ত...
আমাদের নয়...আপনার কবে?
আমার দুঃখের কথা আর কি বোলবো
কোড কথা পাব্লিক প্লেসে বলেন ক্যারে..চিয়ার্মান সাব
আল্লাহ যাতে কবুল করেন...
তয়, তুমি কি রেল মন্ত্রীর চির কুমার আসন গ্রহণ করিয়াছ নাকি?
আরেকটু লম্বা মন্তব্য আশা করেছিলাম..গুরুর কাছ থিকা..
তবুও শুকরিয়া...ট্রাই করি...বাট হয়ে উঠে না।
দোয়া
ঘটনা কিতা???
যাই হোক...জানাব নিশ্চয়ই!
তয় আম্নে কি কর্তাছেন?;
এই বলগের নাম টুডে বলগ না অই বিয়ার বলগ অন উচিত ননি???? আন্নেরা ব্যাকে কি কন?
মডুকে আরেকখান বিয়ে দেই
আন্নে তো সারাইলাইছেন..আরেকখান কইরেন নি?
@..চেয়াম্যান...মডু মামা বিয়া কইচ্ছে?
অনেক সময় এ সব দাওয়াতে অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে হয়...
তবুও মজা আছে
'বিয়া হইল দিল্লি কা লাড্ডু, বিয়া কইরাও পস্তাইতে হয় আবার না কইরাও পস্তায়!'
'বিয়ের ফুল অতিদ্রুত প্রস্ফুটিত হোক' আপনার-লোকমান ভাই সহ অবিবাহিতদের জন্যে এই শুভ কামনা আমার!!
দিল্লিকা লাড্ডু খেলেও যেহেতু পস্তাতে হয়, না খেলেও পস্তাতে হয়..সো...বো হলেও এতটা বোকা হই নাই যে, খেয়ে পস্তবো
লুকমানের বিবাহ হপে না...
আপনার কবে ফুটিবে ফুল ?
কবে বলিবেন কবুল ??
ইহা হচ্ছে সম্পূর্ণ উপরওয়ালার খোঁচা মারার বিষয়..
উপর ওয়ালা যখন কলম মারবেন তখনই সেই মহেন্দ্রক্ষণ আসিবে... <:-P
আপনারা তো কামেল হৈয়া গেছেন..এট্রু দোয়া করেন না...এক্কেরে নাম ধইরা
ধন্যবাদ।
টার্গেট সেটাই।
সেই রাসূল থেকে শুরু করে যদি সেক্যুলারদের আজকের হুমায়ুন আহমেদের কথাও ধরেন..দেখবেন অগ্রগতি আর দু:সময়ে সবার জীবনেই স্ত্রীর অবদান কোন ক্ষেত্রেই কম নয়।
রাসূল এর উপর ওহী নাজিল হওয়ার পর প্রথম এসে তিনি স্ত্রীকেই বলেছেন...
বিশেষ করে মাওলানা আব্দুর রহীমরে "ইসলাম ও পারিবারিক জীবন" বইটার তুলনা হয়...অসাধারণ।
দোয়া করবেন...আমাদের সমাজে মেয়েদের খোঁজ খবর নেওয়া অনেকটাই টাফ, সেক্ষেত্রে ছেলেদের খবরাখবর নেওয়া তুলনামূলক সহজ।
ভাগ্যে যা থাকে...যেন গড়ে নিতে পারি..একেবারে আমার মত করে
নাকি তিন নম্বরজন ও একই পথের পথিক??
দেশটা গোল্লায় গেলো...
কারণ, সবারই উপযুক্ত বয়স...আর পারিবারিকভাবেই বিয়ে হচ্ছে...
সমস্যা হচ্ছে, সবাই স্ট্যাটাস আর অর্থকড়ি..তথাকথিত ফিনানসিয়্যাল নির্ভরতা খুঁজতে গিয়ে মেয়েদের মাতমতের প্রাধান্য দেয় না।
ওই তিনজন সেটাকে চ্যালেঞ্জ করতে পেরেছে...
টাকার ভেতর কি খুব সুখ?...
আমার অন্তত সেটা কখনোই মনে হয় নি। কখনই নয়।
যেতে হবে যে!
আমিও কিন্তু পাত্র হিসেবে ভদ্র শান্ত শিষ্ট, মেয়ের পছন্দ হওয়ার মতই কিন্তু মেয়ের বাবা অথাবা মা পছন্দ করবেতো? সে চিন্তায় দিন যায় রাত ফুরায়। ভাইরে একটা কিছু কর নয়ত মাইরা ফালা।
তিন দম্পতির জন্য শুভকামনা।
চেয়ারম্যান সাব কি কৈছে (উপ্রে) একটু কানে নিন।
আমনেরা হিডান না ক্যারে
মারো জোরে হাতে তালি
বিয়া যে কতুা পর্যন্ত হিট করতে পারে বুঝেছ? >-
আর আমাদের বোনরা বা তাদের অভিভাবকরা এই হাদিস ভুলে যায় যে, আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,রাসুল (সাঃ) বলেছেন, "যদি এমন কেউ (ছেলে) তোমাদের বিয়ের প্রস্তাব দেয় যে যার ধার্মিকতা ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট তবে তোমরা তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। যদি তা না করো তবে পৃথিবীতে ব্যাপক অরাজকতা সৃষ্টি হবে।" [তিরমিজী ১০৮৪]
মনে আছে...
নোয়াখালী অরিজিন..মনে থাকে যেন!
যাতে কার্যকর হয়।
ফতুর হৈয়া যাইতাছিরে বইন
তবুও মজা আছে<:-P
মন্তব্য করতে লগইন করুন