প্রথম সিনেমা দেখা: সেই দূরন্ত সময়গুলো.....
লিখেছেন লিখেছেন মু নূরনবী ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৬:৫৬:১০ সন্ধ্যা
ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। শুধু সরকারী বৃত্তি পরীক্ষাটাই যত ঝামেলা পাকিয়ে রেখেছে। সামনে কুরবানীর ঈদ। ঈদের বন্ধেই সুযোগ নিতে হবে। এইবার আর মিস দেওয়া যাবে না। গতবার বড়মামার কারণে সব ঠিকঠাক থাকার পরও বাড়ীর দরজার সামনে ধরা খাওয়ায় আর যাওয়া হয় নাই। মামা-ভাগিনার প্ল্যান পাকা।
ইয়া বড় বড় পোস্টার দেখি, টেলিভিশনে শুক্রবারে সিনেমা দেখে ভাবতাম ১৪ ইঞ্চি টিভিতে এমন দেখায় সিনেমা হলের বিশাল পর্দায় না জানি কত বড় দেখায়। ওইদিকে মামা অলরেডি হাফ ডজন দেখে ফেলেছে। সে ইনিয়ে বিনিয়ে ভাগ্নেকে বোঝানোর চেষ্টা করে। ভাগ্নের কাছে ইহা এক আরাধ্য বিষয় হইয়া দাঁড়াইল! সে ভাবে আচ্ছা সিনেমা হলে রঙ্গিন পর্দায় এত লম্বা নায়কের জায়গা হয় কি! সবাই কি বসে দেখে। আবার শুনেছে সিনেমা চলাকালীন লাইট অফ করে দেওয়া হয়। ছেলেধরা এই সুযোগে নিয়ে যাবে নাতো!!
কিউরিসিটির শীর্ষে ভাগিনা।
অবশেষে কুরবানীর ঈদের পরদিন খালাম্মার বাড়ীর কথা বলে মামা ভাগ্নে মিশনে বের হলাম। একমাত্র ভাগ্নে ছিলাম বলে পাঁচ মামার সবাই বেশ আদর করতো। সেই সুযোগে টু পাইস পকেটে আসতো। ঈদের সেলামী মিলিয়ে যা হলো তাতে মামা ভাগ্নের সকালের টিপ দেখতে খুব বেশী অসুবিধে হবে না। কিন্তু মামার কাছেও কিছু টাকা ছিল। মামা চালাকী করলো। সে টাকা খরচ করবে না। আমাকে প্রথম সিনেমা হলে নিয়ে যাচ্ছে, তাই সকল খরচ আমার! কি আর করা! রাজী হয়ে গেলাম।
সকালে নাস্তা সেরে তাড়াতাড়ি করে চল গেলাম বাস স্টেশন। সোনাইমুড়ী রৌশনবানী সিনেমা হলের সামনে যেতেই দেখি জসীম মামার (সেজ মামা) ফ্রেন্ড রুহুল মামা। মামা-ভাগ্নে দিলাম দৌড় । এক দোকানের পেছনে পালিয়ে ছিলাম দশ পনের মিনিট। ইতোমধ্যে সিনেমার সময় হয়ে গেছে। দেরীতে যাওয়াতে গিয়ে দেখি অন্তত দুই তিনশ লোকের লাইন!!! পরে মামা বললো চিন্তা করিস না! ব্ল্যাকারের মাধ্যমে টিকেট পাওয়া যায়। সেই ব্ল্যাকার কিতা সে দিন বুঝলাম । দশ টাকার টিকেট পনের টাকা দিয়ে কেটে ঢুকে পড়লাম নির্ধারিত গেট দিয়ে। গিয়ে দেখি আমাদের সিট একেবারে পর্দার সামনে! গিজ গিজ অবস্থা!
মামারে জিগাইলাম মামা তুমি না কইলা ফোমের সিটে বসাইবা! সাদা এইটা কিতা? কখন শুরু হবে! মামা প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে হালকা ধমক দিয়ে বললো, ব্যাটা বগর বগর করিস ক্যান। একটু ধৈর্য্য ধর!
হালকা ঝাড়ি খেয়ে চুপচাপ বসে থাকলেও ভেতরে উত্তেজনা একটু কমেনি। নির্ধারিত সময়ের আধা ঘন্টা পর সিনেমা শুরু হলো। পর্দার সামনে বসার দরুন অনেকটা আসমানের চাঁদ দেখার মত করে সিনেমা দেখে তো বিরক্ত। ও্ই দিকে গাদাগাদি অবস্থার ফলে ঘেমে একাকার।
সিনেমা শেষে বের হয়ে খালাম্মাদের বাড়ী না গিয়ে সোজা নানা বাড়ী চলে আসলাম। সারাদিন খাইনাই এমনিতে মুখ শুকনা, তার উপর ঘেমে জামাকাপড় ঝবু থবু। তবুও নানাদের বাড়ীর আগের বাড়ীর পুকুরে এসে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হওয়ার কসরত করলাম!! রিলাক্স মুডে ঘরে ঢুকতেই দেখি বড় মামা পেছন দিক থেকে বেত নিয়ে এসে ছোট মামাকে দিছে মাইর । আমি তো রুদ্ধশ্বাসে দিলাম ভৌ দৌড়!
ঝন্টা খানেক পরে নানু অভয় দিয়ে নিয়ে এসে খাইয়ে দিল।
ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে জানতে পারলাম বড় মামাও খালাম্মাদের বাড়ীতে গিয়েছে এবং দুপুরের খাবার শেষ করে আমাদের আসার পূর্বে তিনি খালাম্মাদের বাড়ী থেকে এসেছেন। সেই সাথে জসীম মামার সেই ফ্রেন্ড মামামকে জানিয়েছে আমাকে আর ছোট্র মামাকে সিনেমা হলের দিকে যেতে দেখেছে। তাতেই সবাই শিওর হয়ে গেছে মামা-ভাগ্নে মিশন কোথায় ছিল!!!
এখন সেই মামা কুয়েত প্রবাসী সরকারী চাকুরে এবং ব্যবসায়ী। এখনো সেই চমতকার সম্পর্ক বিদ্যমান। এখনো সুখে-দু:খের সাথী।
মাঝে মাঝে আনমনা হয়ে যাই, সেই সুখ স্মৃতিগুলোকে মনে করে। কত রঙ্গিন ছিলো সে সময়গুলো! দুরন্ত সে সময় এখনো হাতড়িয়ে বেড়াই।
বিষয়: সাহিত্য
২৭০০ বার পঠিত, ৭০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাবী অক্কনো আহে নাই!
হেই কালে তো...
কতই না দুর্ভাগ্য!!
ভাল লাগল আপনার অভিজ্ঞতা।
ছোটদের করে যাওয়া ভুল গুলো সংশোধনের স্বার্থে প্রমান করার জন্য কেউ না কেউ থাকেই! চুরি ধরা পড়েই
শেয়ার করার জন্য শুকরিয়া
আপনাকেও অভিনন্দন...কষ্ট করে পড়ার জন্য।
গাছে উঠা! আমার ভয় লাগতো...
সেই মামা আমার থেকে তিন চার বছরের বড়...
গ্রামের পরিবেশ...ধুলোমাখা মেঠো পথ...হৈ হুল্লোড়...
লুকমান মিয়া...রেলমন্ত্রী নাকি বগি লাগাইতাছে..তুমি লাগাইবা কবে?
উপরে পড়ার দৃশ্যটা আমার না হলেও এমন কান্ড জীবনে বহুবার ঘটাইয়াছি...ভ্রাতা
ভাল লাগা থাকে যেন...
নিউজ টিউজ দেন না ক্যান?
আন্নে আছিলেন বদের হাড্ডি
সেই দিনগুলো কি আর ফিরে আসবে!
ছুডু মামুরে এমন মাইর দিছে...আমি তো দিলাম দৌড়...
আহা সেই দিনগুলো
বাহিরে আইস্যা খাইতে পারি নাই..টেহা ছিল না!
মামুতো টেহা খরচের পক্ষে ছিল না...
হেতে...ফ্রি মারছে
লায়ক লায়ক ভাব..তো হালকা একটু ছিলই
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন... শৈশব-কৈশোরের বলুন্না আরো কিছু, শুনি...
আমার ও বিশ্বাস হচ্ছিল না...
স্টিকি করার মত অনেক পোস্ট ছিল...
মামুর জন্য মাইনাস!-----
শৈশব পোস্টে প্লাস++++++++
অনেক দিন পর আপনার লেখা পেলাম
অনেক ধন্যবাদ
আমার সুখে-দুখের সঙ্গী।
গুরু দায়িত্ব বর্তেছে তার উপর
চমত্কার। লিখছেন ঈদ সেলামি নিয়ে সিনেমা দেখতে গেছেন। কিন্তু আমার কাছে তো বললেন মুরগির ডিম চুরি করে দেখতে গেছেন। ডিম বিক্রি করার সময় দেখলেন একটা ডিমের ভিতর বাচ্চা
পরে অন্য ডিম গুলো বিক্রি করে সিনেমার টিকেট কিনেছিলেন
কুন সময় কইছি?
চোরে মনে চুরি, বিলাইর মনে হুরি!
আমেন আন্ডা চুরি করতেন সেই কথা মনে পড়ছে....তাই না?
দুরন্ত সেই সময় গুলো ছিল...ভাবনাহীন।
কাজিনদের সাথে দুষ্টমি আর নিত্য এডভেঞ্জারে ভরা।
আপনার জন্য শুভ কামনা।
যাহ্...এভাবে কেউ মেয়েদের দিকে তাকায় নাকি
আমার লজ্জা লাগে
ধন্যবাদ।
কার বাচ্চা? মুখে তুলা দিয়া দিতেন...ম্যাও ম্যাও বন্ধ
আমার দেখা প্রথম সিনেমার নাম -রাম রহিম জন।
অবশ্য এডভেঞ্জার হয় নি। বড়চাচার সাথে ডিসিতে বসে দেখেছি-চট্টগ্রামে। সিনেমা এখন আর দেখি না।
বাসায় গেলেও সিনেমা দেখি না...যা ডায়লগ আর কাপড়-চোপড়ের অবস্থা!!!
এমন ডিজিটাল সমাজ আমরা নির্মাণ করছি যেখানে মা-বাবা-ছেলে-মেয়ে একসাথে সমাজে চলাটাই স্বাভাবিক।
হতাশ হলে চলবে না!
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন!
সুন্দর গিফটের জন্য দাওয়াত রইলো....(~~)
ভয় লাগছিল ক্যারে?
ে
্িিআমিও শৈশবে মামার সাথে একবার সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। আর অপরিচিত বিয়ে বাড়ীতে বরযাত্রী সেজে মামা ভাগিনা বেশ মজা করে খেতাম। আমাদের পোষাক আশাক ভালো থাকাতে তেমন সমস্যা হতো না। ওনারা বেশ সমাদর করেই খাওয়াতেন, যদিও ভিতরে ভিতরে আমাদের গলা শুকিয়ে যেতো।
ফ্রি খাইতেন
কষ্ট করে পড়ার জন্য।
আমি মনে করলাম আমি যেহেতু নাতি আমাকে কিছু করবেনা। ওমা হেতে দেহি আমার দিকে আসছে! আমি দৌড়ে সোজা বাড়ীতে।
আর সবাই বলে,মামা ভাগ্নে যেখানে আপদ নেই সেখানে।
মামা...ভাগ্নে বলে কথা!
বিয়ের মাধ্যমে সবাই নাকি সাহসী হৈয়া ওঠে! <:-P
আপনার দিন কাল কেমন যাচ্ছে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন