শিক্ষিত মেয়েদের জব বিতর্ক : হয় আমরা বুঝাতে ব্যর্থ অথবা আপনারা বুঝতে ব্যর্থ

লিখেছেন লিখেছেন মু নূরনবী ০৩ জুলাই, ২০১৩, ০৫:৫৩:১০ বিকাল



উপরে যে ছবিটা দেখছেন, এটা হচ্ছে শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতে ইসলামের "ঢাকা চলো" কর্মসূচীর দিনের ছবি। কোন এক অপরিচিতা বোন নিজ উদ্যোগে নবী প্রেমিকদের জন্য নিজের সাধ্যানুযায়ী সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

তর্ক বিতর্ক থাকতেই পারে। অবাক হচ্ছি অনেকের কমেন্টস্ দেখে। এখন মনে হচ্ছে, হয় আমাদের ব্যর্থতা আমরা কি বলতে চেয়েছি তা তারা বোঝেনি। অথবা তথাকথিত প্রগতিশীলতার জোয়ারে গা ভাসিয়েছেন কিংবা নারী অধিকারের "মোয়া" আমাদের ব্লগার আপুরা গিলেছেন বৈকি!

আরে ভাই এটা লাইফ ফ্যাক্টর। থিওরি না। বি রিয়েলিস্টিক!

অনেকে আবেগী লেখা দিয়ে; অনেক সহ ব্লগারদের কমেন্টের মাধ্যমে এমন কিছু শব্দ বের হয়েছে যা দেখে ভিমরি খাওয়ার দশা হয়েছে!!!

'শুকনো পাতা' তার ব্লগে <''শিক্ষিত মেয়েরা এখন আর শখের বশে চাকরী করে না''-এটাই সত্য।>অনেক উদাহরণ টেনেছেন। কেস স্টাডি টেনেছেন । এ রকম অনেক কেস স্টাডি শত শত টানা যাবে।

আসুন>>>

কেস স্টাডি-১: রুমানা-সাঈদের গল্প! কে না জানে? আট বছরের রিলেশনশীপের সফল সমাপ্তি বিয়ের মাধ্যমে। নিজের শেষ সম্ভল গাড়ীটুকু বিক্রি করে পাঠিয়েছে স্ত্রীকে উচ্চ শিক্ষার্থে কানাডা। প্রত্যেকটি প্রহর গুনেছে ছোট্র মেয়েকে নিয়ে। অন্যদিকে রোমানা-ইরানী যুবকের পরকীয়া! সেই সাঈদ যখন স্ত্রীকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে প্রহার করলো, তখন খবরের হেড লাইন। কত জনের মুখে ধিক্কার। আহা কতো পোস্ট! বলি বাপু একটু ধৈর্য্য ধরো। খবরের পেছনের খবরটা জানো। ওয়েট এন্ড সি....(সরি! ভাই আমি এখানে সাইদের পক্ষে ওকালতি করছি না! আপনি যখন জাজমেন্ট করবেন, দুই পক্ষের কথাই আপনাকে শুনতে হবে।)

তার পরের ঘটনা তো জানা। এখন রোমানা কানাডিয়ান সিটিজেন আর সাঈদ পরপারে......

কি দিয়েছে এই পরিবারটিকে উচ্চ ক্যারিয়ার?

কেস স্টাডি-২: বাবুল ভাই অনেক স্বপ্ন নিয়েই বিয়ে করেছেন। ভাবীর রূপ নয়, যোগ্যতা দেখেই বিয়ে করেছেন। ভাবী পরিবার পরিকল্পনা অফিসে চাকুরী করেন। সকাল বেলা বের হয়ে যান। আসেন শেষ বিকেলে কখনো সন্ধ্যায়। তিন মেয়ে নিয়ে তার পরিবার। আস্তে আস্তে মেয়েরা বড় হলো। আমার আম্মা কয়েকদিন বলেছে, বাবুল ভাইদের বাসায় গেলে ওনার খুব অবাক লাগে। মেয়েরা সবাই টিভি দেখা আর কোনমতে দুপুর বেলা ডিম ভাজি, আলু ভর্তা দিয়ে খেয়ে নেয়। মায়ের অনুপস্থিতিতে ছেলেদের সাথে মোবাইলে কথা বলে, বাসায় সব সময় ডিশ থাকে। মুভি একটাও বাদ পড়ে না। ঘরের ভেতর ঢুকলেই বোঝা যায় অনাদরের চাপ, অপরিষ্কার। বড় মেয়ে কিছুদিন আগে এক ছেলের সাথে পালিয়েছে। কি পেয়েছে তার পরিবার?

কেস স্টাডি-৩ : এক বড় ভাই প্রফেশনালি ডাক্তার। তার স্ত্রীও উচ্চ শিক্ষিতা। ভাবীর আবদার সে জব করবে। বড় ভাই স্ত্রীকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করলো। খুব বেশী কাজ হয়নি। একমাত্র ছেলের বয়স চার বছর। ভাইয়া সকালে নিজের চাকরিস্থল এবং বিকেলে চেম্বার করে। অন্যদিকে ভাবীও ৯-৬ টা পর্যন্ত অফিস করে। বাচ্চা থাকে কাজের বুয়ার কাছে। একদিন হঠাত বড় ভাই ফলো করলো, তার ছেলে রাগ করে বেশ কয়েকটি বাজে শব্দ ব্যবহার করলো...তিনি তো অবাক! বাবু কোথা থেকে এ সব শিখলো?! ভাইয়া এবং ভাবী দুজনেই জানতে পারলো সে এসব শিখেছে সমবয়সী কাজের বুয়ার ছেলের সহচর্যে এসে। কারণ কাজের বুয়া থাকে বস্তিতে।

এখন আপনি বলতে পারেন, রোমানা সাঈদের গল্প তো একটা একসেপশন। একসেপশন তো আর এক্সামপল হতে পারে না!

‍‍‌‌

দৈনিক ইত্তেফাকের ২৩.১০.২০১০ তারিখের একটি নিউজ তুলে ধরছি। দু:খিত লিংকটি কাজ করে না, তাই আংশিক তুলে ধরলাম:

রাজধানীতে বছরে পাঁচ হাজার বিয়ে বিচ্ছেদ

০০ ইয়াসমিন পিউ

বিয়ে বিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী শুধু রাজধানীতেই বছরে পাঁচ হাজার বিয়ে বিচ্ছেদ হচ্ছে। উচ্চবিত্তদের মধ্যে এর সংখ্যা বেশি। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সালিশ বোর্ডের কাছে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে আরো প্রায় ৫০ হাজার আবেদন। বিয়ে বিচ্ছেদে এসব আবেদনের ৭০ ভাগই করেছেন নারীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়েরা যত বেশি আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে ততই বিয়ে বিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে। তবে এটা বাঙালি সমাজের জন্য একটি অশনি সংকেত।

আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশে অনেক পরিবারই অসহায়। আমাদের সমাজে এখনো শত সহস্র মেয়ে আছে যারা মাসে তিন হাজার টাকার জন্য গার্মেন্টসে রক্ত পানি করা খাটুনি খাটে। তাদেরকে ছোট করে দেখার উপায় নেই।

আমরা ভুলে যাইনি রানা প্লাজায় আগেরদিন ফাটল দেখার পরও শুধু মালিক পক্ষের মাসিক বেতনের প্রলোভনে পড়ে অসহায় সেই বোনদের নির্মম পরিণতির কথা।



অনেক পরিবার আছে যাদের আয়ের উতস নারীর ইনকাম। এটাও অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।

আমরা শুধু বলতে চাই, যাদের পরিবারের ইনকাম যথেষ্ট, তারা চাকুরীতে না আসলেও পারে। যথেষ্ট ইনকামের ধারণাটা একেক জনের নিকট একেক রকম। আপনি যদি মনে করেন, আমার হাজব্যান্ডের ইনকাম দিয়ে আমার শাড়ীর দামই হয় না! সেটা তাহলে ভিন্ন কথা!

চাকুরী মানেই ক্যারিয়ার নয়। আপনি একজন ভাল লেখকও হতে পারেন। ভাল চিত্রকরও হতে পারেন। কিংবা আপনার অবসর সময়ে আপনি নিজস্ব পরিসরে নানান ব্যবসার সাথে জড়িত হতে পারেন। আজকাল অনেকেই বুটিকের ব্যবসা করছে। নানা ভাবেই আপনি আপনার প্রতিভা বিকশিত করতে পারেন। কিন্তু চাকুরী? চাকুরী মানেই ৯-৬ টা। আপনি হয়েতা বলবেন, ম্যানেজ করবেন। কয়দিন বসকে ম্যানেজ করবেন?

অনেকেই ইসলামে নারীর চাকুরী করার স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলছেন, কিন্তু তারা সেই সাথে বলছেন না..কোন মাপকাঠিতে নারীকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে?

অনেকে আবার খাদিজা রা: এর ব্যবসায়িক জীবনের উদাহরণও টেনেছেন। কিন্তু একবারও বলছেন না, স্বামীর প্রতি তাঁর প্রবল ভালবাসার কথা!

আবার কেউ কেউ নতুন পুত্র বধুকে শাশুড়ী কর্তৃক অফিস করার ধমকও তুলে ধরেছেন! হ্যাঁ, আমি যে কোম্পানীতে জব করি, আমাদের কোম্পানীর চেয়ারম্যান হচ্ছেন একজন মহিলা। এমডির ওয়াইফ। ম্যাডাম কখন অফিসে আসে জানেন? বিকাল ৩ টায়। থাকেন সন্ধ্যা... ৬টা পর্যন্ত। মাঝে মাঝে আসেন ই না!!!এটা হচ্ছে তার অফিস আওয়ার!

কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে কোন একটি দলের নেতাকর্মীদের এক হাত নিতেও ছাড়েননি! সৌদি হিজাব আর দেশীয় হিজাবের ফেরকাও তুলে ধরেছেন। ভাই, হিজাব নিয়ে তো নানা মতবেদ আছে। তবে অধিকাংশ স্কলারই বলেছেন, মুখ ঢেকে রাখার জন্য। এখন আপনি যদি বলেন, এটা হচ্ছে নারী প্রগতির অন্তরায় তাহলে আপনার সাথে এ নিয়ে বাহাস করার কোন ইচ্ছেই পোষণ করি না।

আপত্তিটা যেই জায়গায় সেটা হচ্ছে, আপনার রেসপনসিবিলিটি সম্পর্কে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। কোনটির প্রায়োরিটি বেশী সেটা আপনাকে বুঝতে হবে।

এখন আপনি যদি আমাকে মনে করেন, আমরা শিক্ষিত হয়েও কুতসিত মনের। ব্যাকডেটেড, গেঁয়ো..কিংবা নারী প্রগতির অন্তরায়। তহালে সেটা আপনার মনে হতেই পারে!

তবে এতুটুক মনে রাখবেন, আমরা চাই না আমাদের সমাজে আরেকটা রোমানা সাইদের জন্ম হোক। আমরা চাই, জায়নাব আল গাজালি , ডঃ আফিয়া সিদ্দিকি অথবা হামিদা কুতুবের সৃষ্টি হোক আমাদের পরিবার থেকে, সমাজ থেকে।

এটা যদি আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা (!) হয়ে থাকে সেটা মেনে নিলাম। কারণ কোন সুস্থ মস্তিষ্কের বাবা-ভাই-স্বামী কখনো চাইবে না তার মেয়ে-বোন-স্ত্রী রাত করে ঘরে আসুক, পরপুরুষের সাথে লর্ড ড্রাইভে যাক....

আমরা চাই এমন একটি পরিবার যেখানে হয়তো, অভাব থাকবে কিন্তু পারস্পরিক ভালবাসার কোন কমতি থাকবে না।

আমরা চাই এমন একটি বন্ধন যেথা মরণ ছাড়া আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না।

আমরা চাই এমন একটি পরিবার যেখানে হয়তো প্রাচুর্য্য থাকবে না, কিন্তু পারস্পরিক বিশ্বাসের ছিঁড় ধরবে না।

এখানেই তর্কের সমাপ্তি টানতে চাই।



বিষয়: বিবিধ

২৩৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File