ব্লগার নোমান সাইফুল্লাহ ভাইয়ের আব্বার ইন্তেকাল। হতভাগা ভাইটি জানে না! দিন কাটছে অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠে।
লিখেছেন লিখেছেন মু নূরনবী ১৫ জুন, ২০১৩, ০৯:৫৮:৪৯ রাত
মাঝে মাঝে এত ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে অনেক কিছুই ঘটে গেলেও ঝহভ রাখা দুষ্কর হয়ে যায়। ঘটনার পরম্পরায় তখন নিজের কাছে নিজেকে ধিক্কার দিতে মন চায়।
আজ ও অফিসে কাজের চাপ একটু বেশী ছিল বিধায় কাজের মধ্যে ডুবে থাকার দরুন কয়েকজন ফ্রেন্ড কল দেওয়ার পরও রিসিভ করা হয় নি। এটা অবশ্য আমার পুরনো্ অভ্যাস-অলওয়েজ মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখা ।
একটু আগে অফিসের সকল কাজ গুছিয়ে ফেসবুক ওপেন করার পর প্রথম এক ফ্রেন্ডের স্ট্যাটাস থেকে চোখ আটকে গেল। সোনার বাংলা ব্লগের আমাদের প্রিয় নোমান সাইফুল্লাহ ভাইয়ের আব্বা প্রখ্যাত আলেম, ফেনী ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল হাসেম আজ সকাল নয়টায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রাজীউন)।
পরক্ষণেই সেই ফ্রেন্ডকে ফোন দিতে যাব এমন সময় দেখি তার কল। অনেকক্ষণ কথা হল।
নোমান সাইফুল্লাহ ভাইয়ের আব্বা ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের আপাদমস্তক একজন আমৃত্যু সৈনিক। তাঁর দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে অনেক ছাত্র তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছে, যারা আজ দেশ বিদেশে স্ব স্ব অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত। তারাও তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন এবং ভালবাসেন। তিনি অসুস্থ অবস্থায় তার বেশ কয়েকটা উদাহরণ স্বচক্ষে পেয়েছিও।
সরল, সদালাপী শ্রদ্ধাভাজন এই ব্যক্তিত্ব দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন গত কয়েকমাস ধরে।
প্রথম যখন ওনাকে ইবনে সীনা হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম তখন বালিশে হেলান দিয়ে বেডে বসে ছিলেন। নোমান সাইফুল্লাহর ছোট ভাই আমার ফ্রেন্ড সালমান যখন পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল সালাম দিতেই মৃদু হেসে বলেছিল তুমি কি কর? জানালাম ছোট একটা প্রাইইভেট ফার্মে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। তখন মনে হয়েছিল প্রাণখুলে দোয়া করলেন। যেভাবে নিজের ছেলেকে বাবা দোয়া করেন। এর পর কয়েকবার উনাকে ইবনে সীনা এবং ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে কেমোথেরাপী দেয়া হয়। সর্বশেষ ওনাকে দেখেছিলাম ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসাপাতালে। অনেকটা ভাবলেশহীণ । সে দিনই মনে হয়েছিল তিনি হয়তো আমাদের মাঝে আর বেশী দিন নেই!
নোমান ভাই আজ বিনাদোষে কারাঘারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। পিতার জানাজাটুকুও পায়নি। হয়তো পিতৃবিয়োগের খবর তিনি জানেনও না। যেভাবে তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর ওনার আব্বাকে গ্রেফতারের খবর জানানো হয়নি। পাছে শরীর আরো খারাপের দিকে যায় কিনা! আজ তাঁর আব্বাও তাকে না জানিয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।
জানি না এই শোক তিনি কিভাবে সইবেন। দেশে থেকেও পিতাকে শেষবারের মত দেখতে পারলেন না! তার চাইতে হতভাগা আর কে আছে?
একটু আগে সালমানকে যখন শান্তনা দিতে যাচ্ছিলাম, কি সান্তনা দেব! চোখের পানি যেন কোনভাবেই বাঁধ মানতেছিল না। অগত্যা তাড়াতাড়ি লাইনটাই কেটে দিলাম। শুনেছি ওনার জানাজায় নিকট অতীতের সেরা উপস্থিতি ছিল। দূর দূরান্ত থেকে অনেকে এসেছিল দীনদ্বার, সকলের প্রিয় এই ওস্তাদকে শেষ বিদায় দিতে । মহান আল্লাহর দরবারে সাক্ষী দিতে তিনি একজন ভাল এবং নেককার মানুষ ছিলেন। আল্লাহ যেন তাঁকে বহেশত নসীব করেন।
বিষয়: বিবিধ
১৯১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন