দেড়লক্ষ মিম্বর যাদের করায়ত্বে তারা কেন গোটা পঞ্চাশেক মিডিয়ার প্রোপাগান্ডায় হতাশ?

লিখেছেন লিখেছেন মু নূরনবী ১৪ মে, ২০১৩, ০৩:৩৫:০০ দুপুর



বর্তমানে দেশে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম, কর্তাবাবু থেকে শুরু করে দিনমজুর, কর্পোরেট দুনিয়া থেকে রান্না ঘর পর্যন্ত তোলপাড় চলছে।

ইতিহাসের অন্যতম একটি গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার পারম্ভে দুই দুইটি মিডিয়াকে বন্ধ করে দেওয়া,দৈনিক আমারদেশ -শীর্ষ নিউজ ডট কম এর উপর সরকারী খবরদারী, সোনার বাংলা ব্লগ বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, শীর্ষ নিউজের সম্পাদক একরামুল হক এবং সোনার বাংলা ব্লগের সম্পাদক মোহায়মেনকে গ্রেফতার এবং নির্যাতন চলছে সমানতালে।

মিডিয়া তথা মুক্ত মতের উপর এমন দলন-পীড়ন বাংলার মানুষ আর একবার দেখেছিল ৭৩ সালে। যখন মাত্র চারটি পত্রিকা ছাড়া বাকি সব পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়। স্বভাবতই মানুষ ক্ষুব্দ। কিন্তু প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ৭৩ সালে অন্যান্য মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হলেও সাংবাদিক সমাজের মধ্যে ছিল ঐক্য। সরকারের এমন আচরণ ততকালীন সকল মিডিয়াকর্মীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। অথচ আজ মিডিয়ার কন্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া হলেও অন্যান্য স্টেশনের সহকর্মীদের প্রতিবাদতো দূরের কথা বরং কোথাও কোথাও উল্লাশ প্রকাশের ঘৃণ্য চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়েছে। অঘোষিতভাবে সবগুলো চ্যানেল সরকারের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে। তাই মানুষ আর আস্থা রাখতে পারছে না মিডিয়ার উপর।

গণমানুষের সেন্টিমেন্টের বিপরীতে গিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে মিডিয়া যে রোল প্লে করছে তা গণমানুষকে মিডিয়ার প্রতি আরো ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। মানুষ এখন মিডিয়ার উপর কোন মতেই আস্থা রাখতে পারছে না। যার কারণে মানুষ এখন স্যোসাল মিডিয়ার উপর ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

হেফাজতের শাপলা চত্ত্বর অবরোধ এবং সরকার পক্ষের রাতের অন্ধকারের ক্রাক ডাউন-ম্যাসাকার এর পর সরকার মিডিয়াগুলোকে বশে আনতে পারলেও দেশের সাধারণ মানুষকে বশে আনতে পারছে না। বরং ক্রমান্বয়ে তা আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। যদিও সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, হেফাজত ঘরে ঢুকে গেছে। কিন্তু আমার মতে, বলটা এখনো হেফাজতের কোর্টেই।

চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর এর মুক্তবাক নামক টকশোতে সে দিন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ এর একটি চমতকার যুক্তিও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মতিঝিলে ম্যাসাকারকালীন যে সংখ্যক হেফাজতকর্মীই উপস্থিত থাকুক না কেন তারা কোন না কোন মসজিদের ইমাম, কোন না কোন মসজিদের মুয়াজ্জিন। তারা যদি একযোগে সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় সরকার মতিঝিলকে খালি করতে পারলেও গজে ওঠা সে আন্দোলনকে দমাতে পারবে না।

চ্যানেলগুলোর অপপ্রচার/সরকারী কল্পকাহিনী প্রচারের সাথে হেফাজত যদি সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলে তাহলে তার ব্যাপ্তি কতদূর গড়াতে পারে-তার একটা সংখ্যাত্ত্ব নিয়ে আলোচনায় যাওয়া যাক।

দেশে বর্তমানে মসজিদের সংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ। একজন মুসলমান সপ্তাহের সাতদিন মসজিদে না গেলেও শুক্রবারের জুম্মার নামাজে সামিল হয়। ১৭ কোটি মানুষের দেশে যদি ৯০% মুসলমান হয়। তাহলে সুমলমানের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৩০ লক্ষ। তার মধ্যে যদি ৪৫% পুরুষ এবং ৩% মানুষ নানাবিধ কারণে শুক্রবারে মসজিদে যেতে না পারে তাহলে সে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৪২% বা ৭ কোটি ১৪ লক্ষ।

অন্যদিকে বিটিভি'র খবরে মানুষের যে আস্থা নাই, সেটা বোধ হয় বলার অপেক্ষা রাখে না। স্যাটেলাইন চ্যানেলগুলোর গ্রাহক সংখ্যা যদি ৫% হয় তাহলে তা দাঁড়ায় ৮লক্ষ ৫০ হাজার। এরমধ্যে ভিন্ন মতের লোকজন আছে। সেটাও যদি তিন লক্ষও হয়, তাহলে কি দাঁড়ালো?

এখন দেশের ১ লক্ষ ৫০ হাজার সমজিদ থেকে যদি ইমাম/মুয়াজ্জিনরা সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে থাকে, তাহলে বর্তমানে সরকারের আজ্ঞাবহ মিডিয়ার অনৈতিক প্রচারণা কতুটুক হালে পানি পাবে? বরং যে দাবানল জ্বলে উঠবে তা দমাবার শক্তিতো সরকারের নাই ই সরকারের মদদদাতা দাদাদেরও আছে বলে মনে হয় না। তাই সরকার মতিঝিলের আগুন আজ দেশের আনাছে কানাছে ছড়িয়ে দিয়েছে। এখন দরকার ইসলামপ্রেমী আলেম সমাজের ছোটখাট মত পার্থক্য ভুলে এক কাতারে এসে সরকারের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। তখন বিএনপির ন্যায় কমর ভাঙ্গা দলের কর্মসূচীর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না! ডিজিটের নীচে অবস্থানকারী রাম-বাম-নাস্তিকরাও সাহস করবে না আল্লাহ-রাসূল নিয়ে কটুক্তি করার।

পারবে কি দেশের আলেম সমাজ???

বিষয়: রাজনীতি

১৬৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File