স্কুলে যাওয়া বাচ্চাদের কাছে নতুন বছরে নতুন বই এর চেয়ে বড় উপহার আর কি হতে পারে?

লিখেছেন লিখেছেন শরীফ নজমুল ১৪ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৮:৫২:৪৬ সকাল

সড়ক পথে ঢাকার বাইরে যাবার সময় যে জিনিষটা অসম্ভব ভাল লাগে তা হলো দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত। আরেকটা জিনিষ নয়ন জুড়িয়ে দেয় তা হলো গ্রামের ছেলে-মেয়েদের সারি ধরে স্কুলে যাওয়া আসার দৃশ্য।



জানুয়ারীর দুই তারিখ ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিলাম। মাঝে মাঝেই হলদে ফুলে ছেয়ে যাওয়া সরিষার ক্ষেত দেখে মনটা ভরে যাচ্ছিল। দুপুরের দিক প্রত্যাশিত ভাবেই দেখা পেলাম স্কুল ফেরত শিশুদের। স্কুল ড্রেস পরা এক দল মেয়ে ফিরছে বাসার পথে।বেশ প্রাণোচ্ছল আর হাসি-খুশী। ওদের হাসি মুখ বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে সাহস যোগায়। উন্নয়নের বিভিন্ন সুচকে বাংলাদেশ যে ক্রমেই অগ্রসরমান, বেশ কিছু সুচকে যে আমরা ভারতের চেয়েও এগিয়ে ওরা যেন তার চাক্ষুষ প্রমাণ। সবার হাতে নতুন বই। অনেক নাই এর দেশেও একটা সাফল্য দেখে খুব ভাল লাগলো।



স্কুলে যাওয়া বাচ্চাদের কাছে নতুন বছরে নতুন বই এর চেয়ে বড় উপহার আর কি হতে পারে?

আমরা যখন প্রাইমারী তে পড়তাম তখন সরকার বই ফ্রি দিত না। নতুন বছর শুরু হলে অপেক্ষায় থাকতাম কখন আব্বা বই কিনে দিবে। বই বের হতে যেমন দেরী হতো তেমনি আব্বার শহরে যাওয়ার দেরী কিম্বা বিভিন্ন কারনে (হয়ত অর্থনৈতিক কোন ব্যাপার ছিল যা বুঝবার বয়স তখন হয়নি) বই পেতে বেশ দেরী হতো। হয়ত স্কুল শুরু করতাম খালি হাতেই, তারপর এক সময় বই পেতাম। আর হাইস্কুলে তো নতুন বই চোখে দেখবার মত সৌভাগ্যবান ছিলাম না। এক ক্লাস উপরে পড়া কোন বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পুরাতন বই কিনতাম। এক বছরের পুরাতন হলে বইয়ের গায়ে লিখা দামের দুই-তৃতীয়াংশ দাম দিতে হতো। আর দুই বছরের পুরাতন হলে অর্ধেক। আমি সাধারনত এক বছরের পুরাতন বই কিনতাম দুই-তৃতীয়াংশ দামে আর অর্ধেক দামে পরের বছর বেচে দিতাম। নিজের বই বিক্রির পর যে টাকা পেতাম তার সাথে আব্বার দেয়া ভুর্তকির টাকা যোগ করে নতুন বছরে পুরাতন বই কিনতাম। সেগুলিতে মলাট (সাধারনত সিমেন্টের ব্যাগ কিনে নিয়ে সেটা কেটে কেটে মলাট করা হতো) লাগিয়ে নতুন করতাম, দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানো আর কি।

এ বছর পহেলা জানুয়ারী কোমল মতি শিশুদের হাতে বই তুলে দিয়েছে সরকার। আমি নিশ্চিত কোন কোন প্রাইভেট অফিস পাওয়া যাবে জানুয়ারীর এক তারিখে তাদের ডায়েরী-ক্যালেন্ডার বের করতে পারেনি। সেখানে সরকারের পক্ষে কোটি কোটি ছাত্র-ছাত্রীর জন্য সময় মত বই ছাপিয়ে তা সারাদেশে ছড়ানো-ছিটানো স্কুলে পৌছিয়ে দেয়া, সোজা কথা নয়।

এই সাফল্যের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন। আমরা আশা করি সরকারের অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট গুলো এখানের সফলতার উপাদান গুলি (success factors) তাদের কাজের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ/গ্রহন করবেন।

বিষয়: বিবিধ

১৪৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File