ফেয়ার এন্ড লাভলীর রমরমা বাজার কি আমাদের সভ্যতার দিকে অগ্রগতির ইন্ডিকেটর?

লিখেছেন লিখেছেন শরীফ নজমুল ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৯:১১:৪৮ রাত

ফেয়ার এন্ড লাভলী কখনো-সখনও নয়, প্রতিদিন মাখা চাই, না হলে সেটা হবে নিজের সাথে চিটিং। কারন তা না হলে রঙ ফরসা হবে না, আর রং ফরসা না হলে পুরুষ দের চোখে তোমার কোন দাম নাই। এমন কি অফিসে মিটিং এর আগে পাচ মিনিট সময় পেলেও এর ফাকে মেখে নিতে হবে ফেয়ার এন্ড লাভলী। কারন, তা না হলে মিটিং-এ যে সমস্ত পুরুষ অংশগ্রহন করবে তাদের দৃষ্টি তোমার দিকে আকৃষ্ট হবে না, তোমার বিদ্যা এবং পজিশনের গুরুত্ব যাই হোক না কেন। কারন হে নারী, তোমাকে আমরা মা-হিসাবে কিম্বা বোন হিসাবে কিম্বা নিদেন পক্ষে একজন মানুষ হিসাবে দেখতে চাই না, কারন তা আমার দ্বায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়, নিজের লালসা কে দমন করার মত একটা কঠিন কাজের সম্মুখিন করে দেয়। আমরা চাই এমন নারী যে প্রথম দৃষ্টিতেই হৃদয় হরণ করবে, মনে লালসার ঢেউ তুলবে, যার পাশের সীটে বসবার কাড়াকাড়ি পড়বে। যার কাপড়ের স্বল্পতা দেখে আমার মনে দুঃখবোধ নয় বরং খুশীর সৃষ্টি হবে। এই কথা আমাদের শিখাচ্ছে আমাদের অল্প-শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত পুর্ব-পুরুষরা নয়, খোদ আধুনিক যুগের বহুজাতিক কোম্পানিগুলি।

নারী আজ অনেকদুর এগিয়েছে। এখন গ্রামেও দেখা যায় মেয়েরা সারি ধরে স্কুলে যাচ্ছে। ছেলেদের চেয়ে ভাল রেজাল্ট করছে। দেশ চালানো থেকে শুরু করে গারমেন্টস শ্রমিক সহ তারা বিভিন্ন পেশায় অংশগ্রহন করছে সমানতালে। এই ইন্ডিকেটর দিয়ে মাপলে সভ্যতার মানদন্ডে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি বলে মনে হয়।

কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? সভ্যতা আমরা কি দিয়ে মাপব?

এখনও বাবা-মা মেয়েটার গায়ের রং চাপা বলে দুঃখবোধ করে। কিভাবে মেয়ের বিয়ে দিবেন সেটা নিয়ে ভাবিত হন। কালো মেয়েটি পড়া-লিখা কিম্বা ক্যারিয়ার এর চেয়ে বেশী চিন্তা করেন কিভাবে তার গায়ের রঙ ফরসা করা যায়। গায়ের রঙ কালো হবার জন্য হীনমন্যতায় ভুগে। তাদের এই হীনমন্যতা আরো বাড়িয়ে তুলে বিজনেস করে যায় বহুজাতিক কোম্পানী আর বিউটি পারলার গুলো। চ্যানেলে চ্যানেলে হয় সুন্দরী প্রতিযোগিতা।

আমরা সভ্যতার দিকে এগিয়েছি অনেকদুর। বড় বড় দালান কোঠা হয়েছে। শিক্ষার হার বেড়েছে। মোবাইলে ফোন, কেবল টিভি এখন ঘরে ঘরে। সভ্যতার দমকে ঢেকি ছাটা চাল আর মাটির পিদিম আজ যাদুঘরে।

কিন্তু কতটুকু সম্মান আমরা দিয়েছি নারীকে?

একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা বলি। কর্পোরেট বেশ কিছু বড় কর্তা টিম বিল্ডিং করতে যাবেন ঢাকার বাইরে। বিলাস-বহুল এসি বাস ভাড়া করা হয়েছে। বাসের নিয়মিত সুপারভাইজর এই ট্রিপের জন্য অচল। বসদের মনোরঞ্জনের জন্য ভাড়া করা হয়েছে কিছু সুন্দরী তরুণী যাদের কাজই হলো স্বল্প-টাইট বসনে বড় স্যারদের পথে ড্রিংকস দেয়া। ধারনা করি এই তরুনীরা এ-লেভেল বা ভার্সিটির ছাত্রী হবেন। আর এই ধরনের পার্ট টাইম জবের জন্য গাত্রবর্ণ একটি বড় ডিসিসান ফ্যাক্টর। আমরা অফিসের বড় বস হয়েছি, টাকা দিয়ে কিনছি মেয়েদের দেহের সৌন্দর্য। আমাদের টাকা আছে তাই কাজেই সুন্দরী মেয়েরা আমাদের সেবা করবে, তাদের দেহ-সৌন্দর্যের কিছু দেখিয়ে আমাদের মনোরঞ্জন কবে, এটা যেন আমাদের প্রাপ্য অধিকার। পুজিবাদের এইযুগে টাকার কাছে বিক্রি হয় সবই। কাজেই এই বসরা যখন অফিসের কাজে মেয়েদের নিয়োগ দেন, অফিসের কাজের জন্য দেন নাকি ফ্রিতে নিজেদের মনোরঞ্জনের জন্য দেন তার সঠিক উত্তর জানবার জন্য মনের কথা পড়বার যন্ত্র আবিষ্কার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যখন কোন অফিস লিখে “equal opportunity employer, women are specially encouraged to apply” তখন উনারা মেয়েদের ওপারচুনিটি দেখেন না নিজেদের ওপারচুনিটি দেখেন সেটা একটা গবেষনার বিষয় হতে পারে।

আর তাইতো ফেয়ার এন্ড লাভলীর বিজ্ঞাপনের এত কদর, ব্যাবসার এত রমরমা।

আমাদের পুর্ব-পুরুষরা বলতেন “জাতের মেয়ে কালো ভাল, নদীর পানি ঘোলা ভাল”। আর আমরা ঘটা করে বলছি, গায়ের রঙ ফরসা না করতে পারলে হে নারী, তোমার অন্য কোন গুনের কোন দাম নাই। তাহলে আমরা সভ্যতার দিকে এগিয়েছি না পিছিয়েছি? ফেয়ার এন্ড লাভলীর বিজ্ঞাপন যতদিন চলবে, ততদিন আমরা নিজেদের সভ্য জাতি বলতে পারব কি? স্বাস্থের ক্ষতির কারণে যদি সিগারেটের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হয়, সামাজিক উন্নয়ন ও সভ্যতার পথে ক্যান্সার-সম বাধা সৃষ্টিকারী মেয়েদের রঙ ফরসা করার ক্রীমের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা উচিত নয় কি?

বিষয়: বিবিধ

১৩০৩ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

291539
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৫
হতভাগা লিখেছেন :
''কিন্তু কতটুকু সম্মান আমরা দিয়েছি নারীকে? ''


০ নারীকে তার প্রাপ্য সন্মানের চেয়ে অনেক বেশী সন্মান দেওয়া হয় আমাদের দেশে । নারীকে সমধিকার না , বরং পুরুষদের চেয়েও বেশী অধিকার দেওয়া হয় । ফলে নারীরা তাদেরকে দেওয়া এই অগ্রাধিকারকে স্বাভাবিক বলে মনে করে । এবং সব জায়গাতেই এটা চায় ।

নারীকে দেওয়া এই অগ্রাধিকার এই অতিরিক্ত সন্মান পারিবারিক অশান্তি তথা সামাজিক বিশৃঙ্খলা বাড়িয়ে দিয়েছে ।
291563
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৩২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ফেয়ার এন্ড আগলি(!) এর বিজ্ঞাপনগুলি চরম বর্ণবাদি। এগুলি আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু পয়সার জোড়ে সব সম্ভব!!!
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:২৪
235232

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 10348

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 917

"> মুক্তিযুদ্ধের কন্যা লিখেছেন : বর্ণবাদী হবে কেন? নবী মোহাম্মদ আফ্রিকার কালো মানুষকে বলতেন রেইজিং হেড(কিসকিসের মত মথা ওয়ালা) মানুষ।

Mohammed referred to Blacks as "raisin heads". (Sahih al-Bukhari vol. 1, no. 662 and vol. 9, no. 256).
291586
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১২:৫১
আফরা লিখেছেন : কালো হইলে ও সমস্যা আবার ফর্সা হইলে সমস্যা ইউরোপে কালো না বং বাদামী করার ক্রীম চলে ভাল ।
291629
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৫৬
শেখের পোলা লিখেছেন : এই কোম্পানি টাকে আফ্রিকায় পাঠানো দরকার৷ অনেক ব্যবসা হবে৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File