চেয়েছিলাম বাংলাদেশের উন্নয়ন দিয়ে পৃথিবীকে অবাক করে দিতে, তা না পারলেও নিজেদেরই অবাক করেছি নিজেদের বিভাজন দিয়ে
লিখেছেন লিখেছেন শরীফ নজমুল ০৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:৪৮:২৪ দুপুর
সবকিছু বুঝতে চাওয়া আমার আট বছরের ছেলের স্বভাব, এজন্য প্রচুর প্রশ্ন করে সে আমাকে। তার শিশু-সুলভ প্রশ্নগুলি আমিও চেষ্টা করি সহজ ভাবে বুঝিয়ে দিতে। কিন্তু ইদানিং তার কিছু প্রশ্ন নিয়ে খুব বিব্রত হতে হচ্ছে। কয়দিন আগে সে জানতে চাইল, পুলিশ কি সব সময় সরকারী দলে থাকে? প্রশ্নটা কঠিন। রাষ্ট্র আর রাষ্ট্র পরিচালনাকারী দল (তথা সরকারী দল) ভিন্ন ভিন্ন স্বত্তা সেটা বুঝবার ক্ষমতা কি তার হবে? যারা ক্ষমতায় থাকে, রাজনীতির অভিজ্ঞতা লব্ধ হয়ে যারা কেশ পাকিয়েছেন তারাই এর পার্থক্য বুঝে বলে মনে হয় না, আর আট বছরের বাচ্চা এটা কিভাবে বুঝবে? আরেক দিন সে জানতে চাইল, হরতাল কেন দেয়? আমরা স্কুলে যেতে পারিনা, সেটা কি ওরা বুঝে না? আরেকদিন জিজ্ঞেস করল হরতালে বাস চালানো মানা তাইলে বাস বন্ধ করে রাখলেই হয়, আগুল লাগিয়ে দেয় কেন? তাহলে তো হরতালের পরেও আর ঐ বাস চলতে পারবে না, তখন মানুষ কিভাবে যাবে? এ ধরনের প্রশ্ন থেকে তাকে থামানোর একটাই উপায়- ধমক দেয়া, কারন উত্তরটা আমারও জানা নাই। আমিও তাই করি, ধমক দেই, এত প্রশ্ন না করে পড়াশুনা কর, বড় হলে সব বুঝতে পারবে।
আসলে ওদের জন্ম যখন বাংলাদেশ বুঝতে তো হবেই। স্বৈরাচার এরশাদের পতনের আন্দোলন ছিল রক্তাক্ত কিন্তু প্রত্যশা ছিল স্বৈরাচারের পতনের পর গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে শান্তি ও উন্নতির সুবাতাস বইবে। যমুনার উপর বংগবন্ধু সেতু চালু হবার সময় ভেবেছিলাম আর কোন দিন হাইওয়েতে ট্রাফিক জ্যাম হবে না, কিন্তু নিয়তির খেল, প্রত্যেক বছর ঈদে বাড়ি যাবার সময় জ্যাম পাওয়া যায়। তেমনি এরশাদ পতনের পর মনে হয়েছিল আর হয়তো কোন দিন হরতাল দেখতে হবে না, আমাদের বাচ্চারা হরতালের গল্প শুনবে শুধুমাত্র, দেখতে হবে না কিভাবে সাধারন মানুষকে বলি দেয়া হয় স্বার্থান্বেষী মহলের ক্ষমতার রাজনীতিতে। আমর আশা করেছিলাম জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে আমারা শুধু সামনেই এগিয়ে যাব, আমাদের অগ্রগতি দেখে এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রবে। কিন্তু আমাদের সে আশা পুরণ হয়নি। গণতান্ত্রিক সরকারের লেবেলে আমরা প্রতিনিয়ত দেখেছি হরতাল, সংসদ বর্জন, মানুষ হত্য আর লাশের রাজনীতি। আমারা কোন জাতীয় ইস্যুতে দুই দলকে এক হতে দেখিনি (অবশ্য সাংসদদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি আর শুল্কমুক্ত গাড়ি কেনা ছাড়া)। আজকে যে শিশু তারা যখন তারাও একদিন বাবা হবে, তাদের সন্তান কেও হয়ত শিখাতে হবে কিভাবে হরতাল-অবরোধ মোকাবিলা করে বেচে থাকতে হয়। আমাদের এই দেশে ঘুর্ণিঝড়, সাইক্লোন, বন্যা যেমন অনিবার্য, তেমনি অনিবার্য রাজনৈতিক সংঘাত-হরতাল-অবরোধ, দোষারোপ আর লাশের রাজনীতি। অদ্ভুত এক বিভাজিত জাতি আমরা, যেখানে যুক্তির চেয়ে আবেগ বড়, সামনে যাবার চেয়ে যেন পিছনের দিকে যাওয়ায় যেন আকাংখিত!!
কিনতু আমরা বিভাজন নয়, ঐক্য চাই। গণতান্ত্রিকতার চর্চা চাই। পরিবারতন্ত্র থেকে বের হয়ে এসে জন কল্যাণমুখী নেতৃত্ব চাই। দারিদ্র থেকে মুক্তি চাই। সর্বোপরি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত বাংলাদেশ রেখে যেতে চাই। সেটা সম্ভব যদি আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারি।
কিন্তু সেদিন কি আসবে? স্বপ্ন দেখতেও আজকাল বড় ভয় লাগে। কারণ ইতিহাসের বড় শিক্ষা হচ্ছে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা গ্রহন করে না।
বিষয়: বিবিধ
১১৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন