*রুপকথার রাজ্যকথা*
লিখেছেন লিখেছেন জোছনার আলো ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৮:২৮:৫৫ রাত
ফুল পরী ডানায় চড়ে মেঘের রাজ্যে যাচ্ছিলো রুপকথা।সাথে আছে লালপরী,নীলপরী,জল পরী আর চঁন্দ্রকথা।পরীদের ডানায় চরে যেই না উড়তে গিয়েছে অমনি করে আটকে গেলো মায়াবতীর জালে। কত্তো চেষ্টা করছে নিযে কে মুক্ত করতে !কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। আরো বেশি জড়িয়ে যাচ্ছে জালে।হঠাত আলোর ঝলকানিতে চোখ খুলে নিজকে আবিষ্কার করলো তার বিছানায়।চাদরে জড়িয়ে আছে তার পা। কোথায় পরী আর কোথায় মায়াবতী! ঘড়ির দিকে তাকাতেই মাথা ঘুড়তে লাগলো ঘড়ির কাটার মতন করেই রুপকথার। ওম্মা! সাড়ে সাতটা বেজে গিয়েছে! কখন রেডি হবো আর কখন ক্লাশে যাবো?ভেবে ছিলাম প্রথম দিন একটু তাড়াতাড়ি যাবো।তা আর হলো না। আম্মুটা যে..... এতটুকু বিড়বিড় করে বলতেই মনে পড়ে গেলো সে তো এখন বাসায় নেই।হলের মধ্যে আম্মু আসবে কোথা থেকে!
আম্মুর কথা মনে পড়তেই মন খারাপ হয়ে গেলো রুপকথার। আম্মুতা যে কত্তো ভালো ছিলো তা গত দু দিন থেকে সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। ঘুম থকে কেউ ডাকছে না, নাশতা করার জন্য রাগ দেখাচ্ছে না, পড়ার জন্য কেউ বকুনী দিচ্ছে না। সর্বত্র জুড়ে শুধু নেই আর নেই। আম্মুটা কাছে নেই।
নাশতা করে ক্লাশের দিকে ছুটলো রুপকথা। নতুন ক্লাশ, নতুন ভার্সিটি,নতুন বন্ধু,নতুন টিচার,নতুন পরিবেশ সবকিছুই নতুন। তাই একটূ ভয় ভয় ও লাগছে তার। রুপকথা, তার ডিপার্টমেন্ট এক পা দু'প করে এগুচ্ছে। ক্লাশে তখনো টিচার আসেনি। টিচার আসতে আরো পাচ মিনিটের মতন বাকী। রুপকথা চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। কতশত ছেলে-মেয়েদের ভিড়ে নিযে কে কেমন জানি একা একা লাগছে।
একটু পরেই টিচার চলে এলো।ক্লাশ শেষ দরজার চিলেকোঠায় পা দিতেই তার দিকে কিছু মেয়ে এগিয়ে এলো। দেখে তো মনে হচ্ছে সিনিয়র আপু হবে। রুপকথার একটি স্বভাব হলো সে নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে কারো সাথে কথা বলতে পারে না। আর এখানে তো সবাই অপরিচিত।তাই, কথা বলার প্রশ্নই আসে না। মেয়েগুলো আত সামনে এসেই প্রশ্ন করলো, এ্যাই মেয়ে, আমাদের সালাম দিলে না ক্যান? বড়দের সালাম দিতে হয়। এই ভদ্রতাটুকূও শিখো নি আর আসছে ভার্সিটিতে পড়তে। সালাম দাও। অনেকটা ধমক সুরে বললো মেয়েটি। রুপকথা ওদের কথা শুনে যতটূকুটা ভয় পেলো তার চেয়েও বেশি অবাক হলো। সম্মান কি আর কেউ জোর করে আদায় করতে পারে নাকি।আজব তো!
রুপকথা চুপ করে রইলো। মেয়েগুলো আমার হুংকার দিলো।রুপকথা ভাবলো, সালাম দিয়েই বিদায় হই। সালাম দিয়ে তাদের পাশ কাটতে চাইলে মেয়েগুলো ওর পথ আগলে ধরলো।
-দাড়া ! কোথায় যাচ্ছিস? দেরীতে সাল্ম দিয়েছিস।তাই তোর এখন পানিশমেন্ট হবে।
রুপকথা এবার সত্যি-ই ভয় পেয়ে গেলো। এমনিতেই নতুন পরিবেশ।তার উপর আবার এসব ঝামেলা। ভয়ে ভয়ে বললো- ক-কি-কি শাস্তি?
-এখানে বিশ বার কানে ধরে উঠ-বস কর।
রুপকথা এবার একটু সাহস করে বলেই ফেললো, 'যদি না করি ?'
-যদি না করিস? শাস্তি আরো দ্বিগুণ। হলে থাকা বন্ধ। তুই তো রোকেয়া হলে থাকিস।তাই না? দেখবো কি করে থাকিস। আর টিচারদের কাছে মিথ্যে বলে ভার্সিটি ছাড়া করবো।তুই তো নতুন। তোকে কেউ বিশ্বাস করবে না। আমাদের সবাই চিনে। সো, করবি নাকি ভার্সিটি ছাড়ব তা তোর ইচ্ছে।
এবার রুপকথার চোখে পানি চলে এলো।এসব কি বলছে ওরা? চারপাশে কত ছেলে-মেয়ে।কেউ কিচ্ছু বলছে না। রুপকথা বাধ্য হলো ওদের কথা শুনতে। ওরা রুপকথা কে শারীরিক ও মানসিক লাঞ্চিত করে ক্ষান্ত হলো।
-শোন, এর পর থেকে এরুপ বেয়াদবী করলে কিন্তু আরো কঠিন শাস্তি দিবো।মনে থাকে যেনো।
রাগে,অপমানে ওর মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।অঝরে পানি পরছে দু'চোখ জুড়ে। কেনো ওমন করলো ওরা? রুপকথা কিচ্ছু জানে না।সারা দিন কাদলো।সারা রাত ঘুম এলো না চোখে।চোখের পাতা বন্ধ হলেই ওদের বর্বরতা ভেসে উঠে চোখের সামনে। বাসায় চলে যেতে ইচ্ছে হয় তার।
রাতের আকাশে ধ্রুবতারাটি জ্বলজ্বল করছে। রুপকথা এবার প্রতিবাদী হয়ে উঠলো।এসব অন্যায়।দিনের পর দিন অন্যায় সহ্য করার চেয়ে প্রতিবাদ করে মরে যাওয়া ভালো। অন্যায়কারী ও অন্যায় প্রশ্রয়কারী তো সমান অপরাধী। সে আর মেয়েগুলোকে প্রশ্রয় দিবে না। যেসব ছেলে-মেয়েরা র্যাগিং করে ওদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে।যারা ভুক্তভুগী তাদের নিয়ে আনদলন করবে এসবের বিরুদ্ধে। আর একদিন তো রুপকথাও হবে জুনিয়রদের সিনিয়র আপু।সে কখনোই এমন করবে না। রুপকথার রাজ্যে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিবে সে। মুয়াজ্জিনের সুর ভেসে এলো দূর থেকে।রুপকথা জায়নামাযে দু হাত তুলে প্রার্থনা করলো। আল্লাহ ওদের হেদায়াত দান করুক!
বিষয়: বিবিধ
২৬৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন