*ভাবনার মায়াজাল!*
লিখেছেন লিখেছেন জোছনার আলো ২৬ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:০৬:২৬ দুপুর
শীত আসি আসি করছে। ঝরা পাতার মধুর নিক্বণে মুখরিত চারিপাশ! গাছ থেকে পাতা পড়া মাত্রই বাতাস এসে পাতাটাকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে.......... দূর থেকে বহু দূরে! অন্য পাতাদের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। চেনার উপায় নেই ........ঠিক একটূ আগেই কোনো পাতার জীবন চক্র সমাপ্তি হলো!
এমনি করে একদিন তো আমিও হারিয়ে যাবো.......কালের স্রোতে………. ঝরা পাতার মতন………….. মিশে যাবো হারিয়ে যাওয়া লোকের ভিড়ে…………….!
জীবনের হিসাব থাকবে পরে! মাঝে মাঝে আমি আমাকে খুঁজে ফিরি। কে আমি? এলাম কোথা থেকে? আবার কোথায় বিলীন হয়ে যাবো? কে পাঠালো এই পৃথীবিতে আমাকে? কে সেই জন? উত্তর তো একটাই......... মহান সুবহানাহুতায়ালা।
এই যে মহা বিশ্ব! কোটি কোটি নক্ষত্র,তারকা,নীহারিকা......কি সুনিপণভাবে স্থাপন করা হয়েছে। তাদের নির্দিষ্ট পরিক্রমণ পথ শুন্যের মাঝে এমন ছঁকে বাধা যে একটার সাথে আরেকটার কখোনো টোকাটুকি হচ্ছে না। আচ্ছা, যদি চলার পথে একটা তারকার সাথে আরেকটার ঠেকে যেতো! মহাপ্রলয় ঘটে যেতো! কি নিপুণভাবে পরিকল্পিত সব! কেউ বলে না এই মাহাবিশ্ব আমার!যিনি এসব সৃষ্টি করেছেন, একমাত্র তিনি-ই বলেছেন, ‘’এ মহা বিশ্ব এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছি আমি এবং এর উপ সার্বভৌম ক্ষমতা আমার’’ (আল-কোরআন)
হাশরের মাঠের একটি দিনের পরিমাণ হবে দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। এদিনের দীর্ঘতা দেখে মানুষ মনে করবে দুনিয়াতে তারা মাত্র সামান্য সময় বসবাস করেছিল।
আল্লাহ তাআলা বলেন, “ফেরেশতাগণ এবং রূহ্ (জিবরীল আঃ) আল্লাহর দিকে উর্ধগামী হবেন এমন একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। (সূরা মাআ’রিজঃ ৪)। কি হবে তখন!!
দুনিয়াতে আমরা যেই সূর্যের আলোপাচ্ছি তা বৈজ্ঞানিকদের হিসাব মতে আমাদের পৃথিবী থেকে কোটি কোটি মাইল দূরে অবস্থিত। হাশরের মাঠে সূর্য মানুষের মাথার উপরে মাত্র এক মাইলের দূরত্বে চলে আসবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “কিয়ামতের দিন সূর্য মানুষের মাথার উপরে চলে আসবে। মাত্র এক মাইলের ব্যবধান থাকবে।মানুষেরা তাদের নিজ নিজ আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে। মানুষের শরীরের পঁচা ঘাম কারো টাখনু পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো নাকের ডগা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।'' কি অবস্থা হবে! চোখ বন্ধ করে ভাবতে গেলেই অস্থির হয়ে উঠে মন।
মাঝে মাঝে মনে হয়, ঘরের ছাঁদ যেমন আমাকে মুক্ত আকাশ দেখতে বাধা দেয়। ঠিক তেমনি মনটাও জেনো দুনিয়া নিয়ে এমন ভাবে ব্যস্ত থাকে যে আল্লাহর কাছ থেকে দূরে ঠেলে দেয়!
“অন্তরের মধ্যে এমন একটি শূন্য জায়গা আছে, আল্লাহ্র সাথে সম্পর্ক ছাড়া যেটা পূরণ হওয়ার নয়। এর মাঝে এমন এক দুঃখ ভারাক্রান্ত জায়গা আছে, আল্লাহকে জানার আনন্দ এবং তাঁর প্রতি একনিষ্ঠ থাকা ছাড়া যা মোচন হওয়ার নয়। এর মাঝে এমনও একটি খালি জায়গা রয়েছে, যেটা আল্লাহ্র প্রতি ভালবাসা, তাঁর দিকে ফিরা এবং তাঁর স্মরণ ছাড়া পরিপূর্ণ হয়না। কাউকে যদি দুনিয়া এবং এর মধ্যবর্তী যা কিছু আছে, সব দিয়ে দেয়া হয় তবুও এই শূন্যতা ভরেনা।“ [ইমাম ইবনে আল-কাইয়্যুম আল-জাওযিয়া]
মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য হলো তার বিবেক......... পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট একটা মানুষ কে পশু বললে রেগে যায়। কিন্তু পশুকে মানুষ বললে সে রেগেও যায় না, আবার খুশিও হয় না। কারন, পশু জানে যে পশু! কিন্তু.........অনেক মানুষ জানে না যে সে মানুষ নয়......... মানুষের বেশে থাকা অমানুষ। মানুষ হয়ে অমানুষের মতো কাজ করছি নাতো?
মন কে বলি, কি চাও? দুনিয়া নাকি আখিরাত? একটু থামো। ভেবে দেখো। পারবে তো সহ্য করতে? তোমাকে পাঠানো হয়েছে তার নির্দেশিত পথে চলতে। চলছো কি?
মনটাকে প্রশ্ন করি, ‘মন !তুমি কোথায় চলছো?
‘কোথায় ছুটছো তুমি?কিসের নেশায় ছুটে চলেছো? সেই পথে? যেখানে আছ।।রক্ত,পুঁজে মাখানো পানি.........যেখানে আছে আগুনের কুন্ডুলি......... কাঁদা, থুতু আর কীটে ভরা পিচ্ছিল পথে? যেখানে......... দু চোখকে শুধুই আঁধার.........
একটু থামো। ভেবে দেখো। পারবে তো সহ্য করতে? তোমার সৃষ্টিকর্তাকে কি ভুলে যাচ্ছো এই দুনিয়ার মোহে পরে’? মনটা কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না। তখন নিজেকে অসহায় মনে হয়।খুব বেশি অসহায়!
বিষয়: বিবিধ
২৪৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন